Alapon

গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সংগ্রামী জীবন ও কর্ম

এক.
মৃত্যুশয্যায় শায়িত মহাবীর সাইফুল্লাহিল মাসলুল খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) ব্যাকুল হয়ে কাঁদছিলেন। কান্নার কারণ জানতে চাইলে তিনি বেদনা নিয়ে বললেন, “আমি শাহাদাতের ইচ্ছা নিয়ে এত বেশি যুদ্ধে লড়াই করেছি যে আমার শরীরের কোনো অংশ ক্ষতচিহ্নবিহীন নেই যা বর্শা বা তলোয়ারের কারণে হয় নি। এরপরেও আমি এখানে, বিছানায় পড়ে একটি বৃদ্ধ উটের মতো মারা যাচ্ছি। কাপুরুষদের চোখ যাতে কখনো শান্তি না পায়।” (নবম শতাব্দী, ইবনে খুতাইবাহ, পৃষ্ঠা- ২৬৭)

এ কথা শুনে খালিদের স্ত্রী বলেন, “আপনাকে ‘সাইফুল্লাহ’ (আল্লাহর তলোয়ার) উপাধি দেওয়া হয়েছে আর আল্লাহর তলোয়ার কখনো ভাঙতে পারে না; তাই আপনি শহিদ হিসেবে নয় বরং বিজয়ী হিসেবেই আল্লাহর কাছে যাচ্ছেন।” আর উলামায়ে কেরাম বলেন, “খালিদকে (রা.) স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করতেই হতো। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ‘সাইফুল্লাহ’ বা আল্লাহর তরবারি উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। যদি খালিদ যুদ্ধাবস্থায় শত্রুর আঘাতে প্রাণ দিতেন, তবে মনে হতো আল্লাহর তরবারি ভেঙ্গে গেছে; এমনটি হতেই পারেনা। কার্যসমাধা শেষে আল্লাহ তাঁর তরবারিটি নিজের কাছে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।”

খালিদের (রা.) তিরোধানের ৪৯৫ বছর পর, ১১৩৮ সালে ইরাকের তিকরিতের এক কুর্দি পরিবারে নাজমুদ্দিন আইয়ুবের গৃহে জন্মগ্রহণ করেন আল্লাহর আরেক তরবারি। নাজমুদ্দিন পুত্রের নাম রাখেন ইউসুফ। গভর্নর নিজামুল মুলকের মাদরাসায় পড়ালেখা করে কেটে যায় বাল্যকাল। জাগতিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের পাশাপাশি দামেস্কের আমীর সুলতান নুরউদ্দিন জেনগির (রহ.) নিকট সামরিক প্রশিক্ষণ নেন ইউসুফ।

এরপর চাচা আসাদুউদ্দিন শিরকুহ'র তত্ত্বাবধানে ফাতেমী শাসক আল-আদীদের পক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। প্রসঙ্গত, আব্বাসি খেলাফতের ক্ষয়িষ্ণুতাকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম বিশ্বের নানাদিকে প্রচুর স্বতন্ত্র শাসন গড়ে উঠেছিল। ফাতেমীরা ছিল এর অন্যতম।

চাচা আসাদউদ্দিন শিরকুহ'র মৃত্যুর পর আল-আদীদ ইউসুফকে মিশরের গভর্নর পদে আসীন করেন। নুরউদ্দীন প্রতিবাদ করেননি। তিনি জানতেন, শিয়া শাসকের অধিনে উজির হলেও ইউসুফ একনিষ্ঠ সুন্নী এবং তাঁরই হাতে গড়া তাসাউফের অভিনিবিষ্ট খাদিম। ১১৬৯ সালে নুরউদ্দিন জেনগির নির্দেশনায় ইউসুফ প্রথমবার ক্রুসেডারদের বিপক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং বিজয় লাভ করেন।

দুই.
ইতোমধ্যে তাঁর ইউসুফ পরিচয়টি হারিয়ে গেছে। তিনি হয়ে উঠেছেন আল্লাহর সিংহ সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী। ইতিহাস আরেক খালিদের উপাখ্যান রচনা করবে বলে কলম-কালি প্রস্তুত করছে।

একটু পেছনে ফিরে যাই। ৬৩৭ সাল, উত্তপ্ত সাহারা পেরিয়ে বাইতুল মুকাদ্দাসের পানে ছুটে চলেছেন আমিরুল মু'মিনীন উমর ইবনে খাত্তাব (রা.)। বহুদিন ধরে জেরুজালেম অবরোধ করে রেখেছে আবু উবায়দাহ ইবনে জাররাহ (রা.) এবং খালিদের (রা.) নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনী। খ্রিস্টানদের দাবী, তারা খলিফার হাতেই জেরুজালেমের চাবি সোপর্দ করবে। অবশেষে উমর (রা.) জেরুজালেমে পদার্পণ করলেন। উম্মতে মুহাম্মাদির (সা.) হাতে আল-কুদস বিজিত হল। মুসলমানদের প্রথম কিবলায় আযানের ধ্বনি শোনা গেলো।

ইউরোপের খ্রিস্টানরা ক্রুশ ছুঁয়ে জেরুজালেম পুনর্দখলের শপথ করলো। ১০৯৯ সালে আব্বাসি ও ফাতেমী খেলাফতের দৈন্যতা এবং কতিপয় স্বার্থপর মুসলিম শাসকের ভীরুতার সুযোগে সারা ইউরোপ একজোট হয়ে আক্রমণ করলো সিরিয়া ও ফিলিস্তিন। রক্তের বন্যা বইয়ে জেরুজালেম দখল করল ক্রুসেড বাহিনী। প্রায় ৭০ হাজার মুসলিম নর-নারীকে চরম নির্মমতায় শহীদ করা হয় সে যুদ্ধে। ক্রুসেডারদের ঘোড়ার পা মুসলমানদের রক্তে ডুবিয়ে সম্পন্ন হলো খ্রিস্টানদের প্রথম ক্রুসেড। ৪৬২ বছর পর আল-কুদস আবার খ্রিস্টানদের দখলে চলে গেল।

শিশুকাল থেকেই সালাহউদ্দিন শুনে আসছিলেন প্রথম ক্রুসেডের সেই মর্মান্তিক পরাজয় গাঁথা। কেমন একটি অনুভূতি যেন নাড়িয়ে যাচ্ছিল তাঁর শিশু-মন।
ঐতিহাসিক আল-মাকরিযি বলেন- সালাহউদ্দিনের বাল্যকাল গড়ে উঠেছিল তাসাউফের স্নিগ্ধ পরিবেশে। বাল্যকালেই তিনি কুরআনুল কারীম এবং ইমাম মালিকের (রহ.) মুয়াত্তা পাঠ করেছিলেন। কুরআন তিলাওয়াত ছিল তাঁর হৃদয়ের খোরাক। শায়েখ কুতবুদ্দিন আবুল মা'আলী নিশাপুরীর (রহ.) নিকট থেকে সালাহউদ্দিন তাসাউফের সবক গ্রহন করেন। সালাহউদ্দিন ছিলেন শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। মিশরে অবস্থানকালে তিনি তথায় শাফেয়ী, মালিকি এবং হানাফি মাযহাবের মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তিন.
আরব ইতিহাসবিদ ড. আলী সাল্লাবী তাঁর Sultan Salahaddin al-Ayyubi গ্রন্থে লিখেছেন, “সালাহউদ্দিন মিশরের প্রথম খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অন্তত তিনশজন সুফি ঐ খানকায় বসবাস করতেন, যারা ইলম ও তাকওয়ার জন্য সুপরিচিত ছিলেন। সালাহউদ্দিন তাঁদেরকে খাদ্য, বস্ত্র প্রদান করতেন। যে কোনো অভিযানে তাঁর সাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সুফি অংশগ্রহণ করতেন।”

ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.)ও একই মত প্রকাশ করেন। ইবনে আসীর আল-কামিল ফিততারিখ গ্রন্থে লিখেছেন, “সালাহউদ্দিন ছিলেন মসজিদ, মাদরাসা ও দরগাহসমূহের একনিষ্ঠ খাদিম। সুফিরা যখন মুরাকাবায় বসতেন, তাঁদের মুরাকাবা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সালাহউদ্দিন সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতেন।” ইমাম যাহাবীর (রহ.) মতে, “সুলতান নুরউদ্দিন জেনগি এবং সালাহউদ্দিন আইয়ুবী উভয়ের আকীদা ছিল সুন্নি আশ'আরী।

আল-মাকরিযি সালাহউদ্দিনে একান্ত সহচর কাজী বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদের বরাত দিয়ে লিখেছেন, “সালাহউদ্দিন সেনাবাহিনীর অধিকাংশ সদস্য ছিলেন সুলতানুল আউলিয়া সাইয়্যিদ আব্দুল কাদির জিলানীর (রহ.) মাদরাসা থেকে আগত এবং তাঁর মুরিদান। কতিপয় সৈন্য ছিলেন ইমাম গাযালীর (রহ.) প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা নিযামিয়ার ছাত্র। এরা বিভিন্ন মাযহাব এবং সুফি তরিকার অনুসারী ছিলেন। যখন সালাহউদ্দিন জেরুজালেম অভিযানের পরিকল্পনা করছিলেন, তখন তাঁর প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন বিখ্যাত ফকীহ ইবনে কুদামাহ হাম্বলি (রহ.)।”

সালাহউদ্দিনের মূল শক্তি ছিল তাঁর ঈমান ও তাকওয়া। দীর্ঘ ৮৮ বছর ক্রুসেডাররা বাইতুল মুকাদ্দাস কেবল নিজেদের শক্তি বলেই দখল করে রাখেনি। বিভক্ত মুসলিম বিশ্বের কতিপয় লোভি শাসককে নারী, মদ ও ঐশ্বর্যের টোপ দিয়ে অক্ষম করে রেখেছিল খ্রিস্টানরা। কিন্তু এসব আবর্জনার একটি ছিটাও আল্লাহর প্রিয় বান্দা সুলতান সালাহউদ্দিনের পদতল স্পর্শ করতে পারেনি।

১১৭০ সালে দারুম অবরোধ ও বিজয়ের মাধ্যমে সালাহউদ্দিনের ফিলিস্তিন অভিযানের সূচনা হয়। ১১৭১ সালে নুরউদ্দিন জেনগির পরামর্শে সালাহউদ্দিন মিশরকে আব্বাসি খেলাফতের অধীনস্থ করেন। এরপর কেরাক ও মন্ট্রিয়াল অভিযানে বের হন। ১১৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষদের দেখতে গেলে ক্রুসেডাররা সেখানে কৌশলে বিষ খাওয়ায় নুরউদ্দিন জেনগিকে, সে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সুলতান নুরউদ্দিন জেনগি (রহ.) শাহাদাত বরণ করলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন সুলতান সালাহউদ্দিন।

সে বছরই ক্রুসেডারদের দখলকৃত সিরিয়ার কিছু অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে তিনি বিজয় লাভ করেন। কুচক্রী মহল নুরউদ্দিন জেনগির বালক-পুত্রকে সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত করলেও জনগণ সালাহউদ্দিনকেই সুলতান বলে গ্রহন করে।

কৌশলে জেনগি বংশের সাথে সংঘাত এড়িয়ে মিশরে ফিরে এসে সালাহউদ্দিন মিশরের উন্নয়নে হাত দেন। ১১৭৭ সালে ক্রুসেডাররা যখন সিরিয়া পুনর্দখলে ব্যস্ত, তখন সালাহউদ্দিন আসকালানে অভিযান পরিচালনা করে ক্রুসেডারদের ভীত কাঁপিয়ে দেন। একদিকে তাঁকে সামলাতে হচ্ছিল ক্রুসেডারদের, অন্যদিকে দমিয়ে রাখতে হচ্ছিল লোভি শাসকদেরকে।

চার.
হাজারো প্রতিকূলতা মাড়িয়ে সালাহউদ্দিনের বাহিনী ১১৮২ সালে আইন জালুতে হাজির হয়। ওদিকে ক্রুসেড নেতা গাই অব লুসিগনান তার বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসে। কৌশলে তার পথ রুদ্ধ করে সালাহউদ্দিন ক্রুসেডারদেরকে দুটি শিবিরে ভাগ করে ফেলেন। বিভক্ত ক্রুসেডাররা সহজেই পরাভূত হয়। সালাহউদ্দিনের বাহিনী সামনে এগিয়ে গিয়ে মুখামুখি হয় রেনাল্ড অব শালিটনের।

এই রেনাল্ড সর্বদা হজযাত্রীদের আক্রমণ করতো এবং রাসূলুল্লাহ (স.)-কে অকথ্য গালিগালাজ করতো। সালাহউদ্দিন তাকে হত্যা করার শপথ করেছিলেন। কিন্তু অসুস্থ সালাহউদ্দিন এ যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেননি। বড় বিজয়ের পূর্বে এই ছোট ধাক্কাটি মুসলিম বাহিনীর জন্য একটি পরীক্ষা ছিল।

১১৮৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস। মাহে রমজানের শেষ রাত। দুনিয়া বেঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন। সালাহউদ্দিন তাঁর বাহিনী নিয়ে সারাটি রাত সালাতুত তারাবিহ ও কিয়ামুল লাইলে কাটিয়ে দিলেন। মহান মালিক রাব্বুল আলামিনের দরবারে ফরিয়াদ করলেন, “হে আল্লাহ! আজ যদি আমাদের জীবনের শেষ তারাবিহ হয়ে থাকে, তবে মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে এটুকু প্রার্থণা করছি মাবুদ, বাইতুল মুকাদ্দাসকে তুমি জয় করে দাও।”

অবশেষে ৩০ রমজান সকালে গাই অব লুসিগনান এবং রেনাল্ড অব শালিটনের সম্মিলিত বাহিনীর বিপক্ষে চুড়ান্ত যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় সালাহউদ্দিনের মুসলিম বাহিনী। সংঘটিত হয় সাহাবায়ে কেরাম-পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে মাহাত্ম্যপূর্ণ যুদ্ধ- জঙ্গে হিত্তিন। রক্তক্ষয়ী এ লড়াইয়ে সালাহউদ্দিনের বীরত্বগাঁথা ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।

ইনি কি সত্যিই সালাহউদ্দিন ছিলেন? নাকি অবসর ভেঙ্গে উঠে এসেছিলেন খালিদ ইবনে ওয়ালিদ? ইতিহাস আজো দ্বিধান্বিত! বুকে দুর্মদ তেজ নিয়ে শাহাদাতের সেহারা মাথায় পরে হাজার হাজার মুসলিম সৈন্য। অবশেষে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিজয় আসে। ক্রুসেড বাহিনী নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। গাইকে মুক্তি দেওয়া হয়। শপথ অনুযায়ী রেনাল্ডকে নিজ হাতে হত্যা করেন সালাহউদ্দিন।

সামনেই জেরুজালেম। ২রা অক্টোবর রাজা বেলিয়ানকে সহজেই অবরুদ্ধ করে মুসলিম বাহিনী।
জেরুজালেমের রাজতোরণ উন্মোচিত করে বিজয়ীর বেশে মাসজিদুল আকসায় প্রবেশ করেন বীর মুজাহিদ সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী রাহিমাহুল্লাহ। সেজদায় লুটিয়ে পড়েন মহান রবের সামনে। সমাপ্ত হয় দ্বিতীয় ক্রুসেড। আমাদের প্রথম কিবলা আমাদের হাতে ফিরে আসে।

পরাজিত সব খ্রিস্টান রাজাদেরকে বিনা বিচারে দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেন সালাহউদ্দিন। যুদ্ধের ময়দান ব্যতীত ইউরোপের কোনো রাজা (রেনাল্ড ব্যতীত), কোনো সামরিক-বেসামরিক বাহিনীকে তিনি হত্যা করেননি, করতেও দেননি।

পাঁচ.
৮৮ বছর আগে এই ক্রুসেডারদের হাতে ঝরা ৭০ হাজার মুসলমানের সমুদ্রসম রক্তের কোনো প্রতিশোধ নেননি সালাহউদ্দিন। রাহমাতুল্লিল আলামিন (সা.)-এর মক্কা বিজয়ের অনুপম আদর্শ তাঁর হৃদয়পটে জ্বলজ্বল করছিলো। ত্যাগ ও বদান্যতার দরূণ তিনি শত্রুশিবিরেও সমাদ্রিত ছিলেন। আজো ইউরোপে তিনি The Great Saladin নামে প্রশংসিত।

১১৯১ সালে গাই অব লুসিগনান ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ড দ্য লায়নহার্টকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় ক্রুসেড পরিচালনা করে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সালাহউদ্দিন তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেন। বিজয় অভিযান সমাপ্ত হয়।
দামেস্কে ফিরে গিয়েই সালাহউদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্লান্ত দেহখানি আর সঙ্গ দিচ্ছেনা।

কাজী বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদের মতে, “ক্বারী জাফর সালাহউদ্দিনের শিয়রের পাশে তিনদিন ধরে তিলাওয়াত করেছিলেন সুরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত। বারবার যে সালাহউদ্দিনকে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন রাব্বুল আলামিন, সেই সালাহউদ্দিন তাঁর দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। এবার গোলামকে মালিকের কাছে ফিরিয়ে নেওয়ার পালা।

১১৯৩ সালের ৪ঠা মার্চ মুসলিম জাহানকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ইন্তেকাল করেন ইমামুল মুজাহিদীন সুলতানুল মুসলিমিন গাজী আবু নাসির সালাহুদ্দীন ইউসুফ আইয়ুবী (রহ.)। ইবনে শাদ্দাদ বলেন, “মৃত্যুকালে তাঁর মোট সম্পদের পরিমান ছিল- এক দিনার ও ৫০টি দিরহাম।”
দাফনের জন্য ঋণ করতে হয়েছিল। পরদিন ইতিহাসের অবিস্মরণীয় এক জানাযা শেষে দামেস্কের উমাইয়া মসজিদের উত্তর-পশ্চিম কোণে সমাহিত হন সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী (রহ.)।

কিছুটা দুরে, হোমস শহরেই শায়িত আছেন তাঁর পূর্বসূরি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)। পরবর্তী দুটি সপ্তাহ শোকার্ত মুসলমানরা তাঁর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকে- উঠো সালাহউদ্দিন, উঠো!

সালাহউদ্দিনের জিহাদ আমাদেরকে দেখিয়েছে যে, আমরা যখন নিদ্রায় আচ্ছন্ন থাকি; আল্লাহর ওলীরা তখন মশগুল থাকেন আল্লাহর যিকরে। আর সেই ওলী-আউলিয়া যখন খানকা ছেড়ে ময়দানে এসে তরবারি হাতে নেন; তখন সারা বিশ্বকে দর্শক হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা। আজ সালাহউদ্দিন নেই, তাই নব্য ক্রুসেডারদের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত মুসলিম উম্মাহ পালহীন নৌকার মতো অথৈ সাগরে দুলছে। এরকম একজন দুঃসাহসী নেতার অভাব আজ বড় বেশি অনুভূত হচ্ছে মুসলিম বিশ্বে।

হে মুসলিম নায়ক, হে সেনাপতি, হে সুলতানুল মুজাহিদীন! আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন। আর আপনার ত্যাগের মহিমা প্রজ্বলিত করুন আমাদের মৃত অন্তরে।

- আলী ওসমান শেফায়েত
ইমেইল: [email protected]

পঠিত : ৫৬৯ বার

মন্তব্য: ০