Alapon

মহান আল্লাহর দুটি নাম এবং কিছু কথা...



আজ আমরা আল্লাহর দু'টি নাম নিয়ে কথা বলবো। আত-তাওয়াব এবং ক্ব-বিলিত তাওব।
আত-তাওয়াব নামটি কুরআনে ১১ বার এসেছে। এর অনেকগুলো অর্থ রয়েছে। শব্দটির ক্রিয়াপদ 'তা-বা' মানে শুরুর স্থানে ফিরে আসা। প্রত্যাবর্তন করা। আবার ফিরে আসা।
ইসলামে তাওবা অর্থ আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। তাওবা মানে আপনি আপনার মূল বা আসল অবস্থায় ফিরে আসেন। আর তা হলো আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক। অধিকাংশ সময় এটি কুরআনে আর-রহিম নামের সাথে যুক্ত হয়ে এসেছে। তাওয়াবুর রহিম। কারণ, আল্লাহ হলেন দয়ালু এবং তিনি আপনার তাওবা কবুল করবেন।

দুই-একবার এটি হাকিম নামের সাথে যুক্ত হয়ে এসেছে। তাওয়াবুন হাকিম। হাকিম মানে যিনি প্রজ্ঞাময় এবং ক্ষমতাশালী। আল্লাহর এমন উইজডম আছে যা আমাদের পক্ষে বুঝা সম্ভব নয়। যেমন- আমরা হয়তো বুঝবো না পৃথিবীতে কেন এতো অন্যায়, কেন এতো পাপাচার। কিন্তু আল্লাহ আমাদের একটি জিনিস জানিয়েছেন। কেউ এসব পাপাচারে জড়িয়ে পড়লে তার একমাত্র বাঁচার উপায় হলো তাওবা। এসব পাপ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হলো তাওবা।

এজন্য তাওবা ঐচ্ছিক কোনো কাজ নয়। তাওবা করা ওয়াজিব। এটি বাধ্যতামূলক। আল্লাহ কুরআনে আমাদের আদেশ করেছেন- "ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! আন্তরিকতার সাথে তাওবা করো।" এটি একটি আদেশ। আল্লাহ কুরআনে আমাদের জিজ্ঞেস করছেন- "তারা আল্লাহর সমীপে কেন তাওবা করেনা এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনা? অথচ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।" ৫:৭৪

আল্লাহ তাওবার সামনে কোনো প্রতিবন্ধকতা রাখেননি। কোনো বাধা রাখেননি। তিনি মূর্তিপূজকদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন, তিনি মুনাফিকদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন, তিনি মানবজাতির সবচেয়ে নিকৃষ্টদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন। তিনি বলেন- فَاِنۡ یَّتُوۡبُوۡا یَکُ خَیۡرًا لَّهُمۡ ۚ- যদি তারা তাওবা করে, তবে তা হবে তাদের জন্য উত্তম। (৯:৭৪)

আল্লাহ আমাদের আরো বলেছেন তিনি চান আমরা যেন তাওবা করি। یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیُبَیِّنَ لَکُمۡ وَ یَهۡدِیَکُمۡ سُنَنَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ وَ یَتُوۡبَ عَلَیۡکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ - আল্লাহ চান তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করতে, তোমাদেরকে তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শ প্রদর্শন করতে এবং তোমাদের তাওবা কবুল করতে। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (৪:২৬)

আল্লাহ আমাদের জন্য তাঁর বিধান আরো অনেক কঠিন করতে পারতেন। প্রতিটি পাপের জন্য তিনি আর্থিক কাফফারা নির্ধারণ করতে পারতেন। কিন্তু, মহাদয়ালু আল্লাহ আমাদের জন্য তাওবার বিধান দিয়েছেন। যার মাধ্যমে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই সকল পাপ মুছে ফেলা সম্ভব। এটি আমাদের ধর্মের সবচেয়ে বড় দয়া।

আমাদের সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ফেলার জন্য আমাদের শুধু একটি কাজ করতে হবে তা হলো আন্তরিকতার সাথে তাওবা করতে হবে। তাওবা করার জন্য আমাদের সময় বা অর্থের দরকার নেই। এটি আমাদের অন্তরের একটি অবস্থা মাত্র। যদি আমরা অন্তর থেকে এ তাওবা করতে পারি তাহলে আমাদের পাপগুলো যত বড়ই হোক না কেন ক্ষমা করে দেওয়া হবে। কারণ, আল্লাহ হলে আত-তাওয়াব।

তাওয়াব মানে প্রথমত, তিনি আমাদের তাওবার ধারণা দান করেছেন। আমরা নিজেদের বুদ্ধি থেকে এটি বুঝতে পারতাম না। এটি আল্লাহর দান।

দ্বিতীয়ত: তিনি আমাদের তাঁর দিকে ফিরে আসার আশীর্বাদ দান করেছেন।
তৃতীয়ত: তার দিকে ফিরে আসার এই আশীর্বাদ দান করার পর তিনি এটি কবুল করে নিবেন।

চতুর্থতঃ আরবি ব্যাকরণের নিয়মানুযায়ী তাওয়াব মানে তিনি এটি বার বার করবেন। নিয়মিত করবেন। আল্লাহ সর্বদা ক্ষমা করে দিবেন। যে ব্যক্তি সত্যিকারের তাওবা করবে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে।

খাঁটি তাওবা করলে কোনো হিসাব হবে না। সকল পাপ মাফ করে দেওয়া হবে।
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন- "আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন।" আমাদের স্কলাররা বলেছেন এর মানে হলো আল্লাহ ঐ পাপীদের ভালোবাসেন যারা তাঁর নিকট তাওবা করে। মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করুন। আল্লাহ পাপকে ভালোবাসেন না এবং পাপীদেরও নয়। কিন্তু তওবা করতে হলে তাওবাকারীকে তো একজন পাপী হতে হবে। তাহলে আল্লাহ ঐ পাপীদের ভালোবাসেন যারা অনুতপ্ত। যারা তাওবা করে।

আদম সন্তানদের সৃষ্টি করার একটি উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ যেন তাদের পাপগুলো মাফ করে দিতে পারেন। তিনি যেন দেখাতে পারেন তিনি হলেন আত-তাওয়াব। কারণ, ফেরেশতাদের তো তাওবার দরকার নেই। ক্ষমার দরকার নেই। আর আল্লাহ ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। আমরাই হলাম সেই সৃষ্টি যারা পাপ করার পর আল্লাহর নিকট ফিরে আসি এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি।

আল্লাহর আরেকটি নাম 'ক্ব-বিলিত তাওব' মানে যিনি তাওবা কবুল করেন।

- ড. ইয়াসির কাদি

পঠিত : ৬৫০ বার

মন্তব্য: ০