Alapon

কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলনে সহিংসতা : এক ঢিলে অনেক পাখি মারার ষড়যন্ত্র নয় তো ?


ঢাকায় কাদিয়ানীদের কেন্দ্রীয় উপসনালয় ও হেড কোয়ার্টাির

কাদিয়ানী সমস্যা এই উপমহাদেশের দীর্ঘদীনের এক সমস্যা। বাংলাদেশে যুগের পর যুগ এ সমস্যাকে জিইয়ে রাখা হয়েছে। কাদিয়ানীরা নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবী করে। কিন্তু মুসলমািন হিসেবে দাবী করার জন্য বাহ্যিক আবয়ব এবং মূখের বক্তব্যই সব নয়। একজন লোক নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করার জন্য তার মৌলিক কাজে অমুসলিমের সাথে এক বিরাট পার্থক্য রয়েছে। তবে সকল কাজের আগে তার মৌলিক বিশ্বাসের যায়গায় কুরআন এবং হাদীসে একজন মুসলমানকে যেভাবে মুসলমান হবার দাবী করে সেভাবে মুসলিম হতে হবে। মৌলিক বিশ্বাসের যায়গায় কাদিয়ানীদের বিশ্বাস এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মৌলিক আকীদা বিশ্বাসের সাথে বিরাট পার্থক্য রয়েছে।
স্রষ্টা বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করেন যে, এই পৃথিবী, মহবিশ্ব, যা আমরা দেখি, যতুটুকু আমরা জানি এবং এর যা কিছু আমার দৃষ্টি ও জানার অগোচরে সকল কিছুর স্রষ্টা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে তার খলিফা হিসেবে প্রেরণ করেছেন। এ খিলাফতের দায়িত্ব মানুষ কিভাবে পালন করবে এ জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হচ্ছেন হযরত আদম আ. এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হচ্ছেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.। যে বা যারা নবী মুহাম্মাদ সা.কে শেষ নবী হিসেবে স্বীকার করবে না, তারা যে পোষাকের যে বর্ণের, যে আদলের অথবা যে কাজের সাথেই সম্পৃক্ত থাকুক না কেন সে নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করতে পারে না।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. কে জীবনের সকল ক্ষেত্রে পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষভাবে মানতে হবে। কুরআন যেভাবে বলেছে এবং হাদীসে যেভাবে এসেছে এর ব্যতিক্রম করার কোনো সূযোগ নেই। এটি শুধু কর্মে নয় অথবা মৌখিক বিশ্বাসে নয়, সর্বপ্রথম আন্তরিক বিশ্বাসে এর গভীরতা হতে হবে খাদহীন। কুরআনে ঘোষিত হয়েছে :
‘‘প্রকৃতপক্ষে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে আল্লাহর রাসূলের জীবনে। এ আদর্শ ঐ ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে এবং আখিরাতে মুক্তি লাভের আশা করে’’
- সূরা আহযাব : ২১

রাসূল সা. পৃথিবীতে আগমণ করেছেন, অন্য সকল চিন্তা, মত মতবাদকে বাতিল করে একমাত্র কেবলমাত্র ইসলামকে বিজয়ী বেশে ঘোষণা করার জন্য। আল্লাহর ঘোষণা :
‘‘তিনিই সেই সত্তা যিনি তার রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দীন সহকারে প্রেরণ করেছেন। যাতে সেই দীনকে অন্য সকল দীনের ওপর বিজয়ী বেশে ঘোষণা করতে পারেন’’ - সূরা সফ : ০৯
কেউ কেউ কুরআন থেকে দলীল দিয়ে নিজ ইচ্ছাপ্রসূত ব্যাখ্যা দাড় করানোর চেষ্টা করেন। বিশেষ করে কাদিয়ানী সম্প্রদায় কুরআনে ঘোষিত খাতামুন নাবিয়্যিন শব্দের একটি নিজস্ব ব্যাখ্যা দাড় করায় যে, খাতাম শব্দের অর্থ ‘‘আংটি’’ এ আংটি মানে নবুয়্যাতী মোহর। এটি যখন যার কাছে থাকবে তিনিই নবী(নাউযুবল্লাহ) । কুরআনের কোনো আয়াতের নিজস্ব কোনো ব্যাখ্যা দাড় করানোর সূযোগ আল্লাহ কাউকে দেন নি। যুগের পর যুগ কুরআন নিয়ে রিসার্চ হবে যুগের প্রয়োজনে নতুন নতুন তাফসীর লিখিত হবে। মানুষের প্রয়োজনে এ থেকে সমাধান বের করা হবে। তবে কোনো ব্যাখ্যাই রাসূল সা. যেভাবে পেশ করেছেন, তার বিপরীত হতে পারবে না। কাদিয়ানীরা ‘‘খাতাম’’ শব্দের অর্থ করে থাকে ‘‘আংটি’’ এটি কাদিয়ানী মতবাদের উদ্ভাবক গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নিজস্ব মস্তিস্ক প্রসূত ব্যাখ্যা। যা কুরআনের মূল বক্তব্যের সাথে সাজুয্য রাখে না। কুরআনের কোন শব্দের কি ব্যাখ্যা হবে তা রাসূল সা. আমাদেরকে জানিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। এখানে ‘‘খাতাম’’ মানে শেষ। যার পর আর কিছু নেই। যার পর আর কোনো নবী আসবেন না। কুরআনের ব্যাখ্যার একটি ধারাবহিকতা আছে। প্রথম যুগের তাফসীরকারকরা কুরআনের তাফসীর লিখেছেন, সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের কাছ থেকে যে ব্যাখ্যা শিখেছেন তার আলোকে। পরবর্তীকালের তাফসীরকাররা একইভাবে পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করেছেন। কোনো তাফসীরকারকই নিজের মনমতো বা কুরআনের মূল অর্থের বিপরীত কিংবা ভুল কোনো ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন নি। যে বা যারা এভাবে করেছেন, তাদের তাফসীর বাতিল তাফসীল হিসেবে পরিত্যাজ্য হয়েছে। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে নবী দাবী করার মূল উৎস হচ্ছে, খাতামুন নাবিয়্যিন এর খাতাম শব্দের অর্থ করেছেন ‘‘আংটি’’ যা ইতঃপূর্বের কোনো গ্রহণযোগ্য তাফসীরের সাথে মেলে না।
মুহাম্মদ সা. কে নবী হিসেবে স্বীকার করার পর কেউ যদি অন্য কাউকে নবী হিসেবে বিশ্বসােই শুধু নয়, কারো কাছে নবুয়্যাতের সত্যতার দাবী করে তবে সেও কাফির হয়ে যাবে। ইমাম আবু হানিফার যুগে এক ব্যক্তি নবুয়্যাতের দাবী করে বলে ‘‘আমাকে সূযোগ দাও আমি নবুওয়্যাতের সংকেত চিহ্ন পেশ করবো।’’ এ কথা শুনে ইমাম আবু হানিফা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার কাছে সংকেত চিহ্ন অনুসন্ধান করবে সেও কাফির হয়ে যাবে’’১
খাতাম শব্দের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইমাম তাবারী তার রচিত বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাবারীতে লিখেছেন, ‘‘ নবুওয়্যাতকে খতম করা হয়েছে অর্থাৎ এর ওপর মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে,তা আর খোলা হবে না।’’
ইমাম গাযালী তার আল ইকতিসাদ ফিল ইতিকাদ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘‘ সমগ্র বিশ্বের মুসলিম সমাজ একবাক্যে এটি মেনে নিয়ছেন, যে মুহাম্মদ সা. এর পরে আর কোনো নবী আসবে না। একে টেনে হিচড়ে বিকল্প অর্থ খোজা বা এর বিপরীত কোনো অর্থ বের করার কোনো সূযোগ নেই।’’
কুরআনের এই আয়াতটিকে যদি আমরা সামনে নিয়ে আসি যে, আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা করেছেন :
‘‘রাসূল যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তা থেকে বিরত থাকো’’-সূরা হাশর : ০৭
এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে শুধুমাত্র কুরআনই নয় তিনি যা কিছু বলেছেন, তা কিছু করেছেন, যা কিছু তার দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে সবই এই আয়াতের অনুসরণে মানতে হবে। আর এগুলো আমরা পাবো হাদীসে। এখন আমি কয়েকটি হাদীস এখানে চয়ন করতে চাই
১. রাসূল সা. বলেন, বণি ইসরাঈলদের নেতৃত্ব করতেন আল্লাহর রাসূলগণ। যখন কোনো নবী ইন্তকাল করতেন তখন অন্য কোনো নবী তার স্থলাভিষিক্ত হতেন। কিন্তু আমার পরে আর কোনো নবী হবে না। হবে শুধু খলিফা।
২. রাসূল সা. বলেছেন, রিসালাত ও নবুওয়্যাতের ধারাবহিকতা খতম করে দেয়া হয়েছে। আমরা পর আর কোনো নবী বা রাসূল আসবে না।
এই বিশ্বাসের বিপরীত বিকল্প অন্য কোনো কিছু দাবী করলে সে নিজেকে মুসলিম দাবী করতে পারে না।
বাংলাদেশের মুসলমানদের দাবী
বাংলাদেশে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বসবাস অনেক আগে থেকেই । তারা তাদের ধর্ম পালন করুক এতে কারো কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি হচ্ছে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ভ্রান্ত ও বিধ্বংষী মতবাদ মেনে তারা নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করে। এ দেশের সকল আলেম, সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান সবার দাবী একটাই তারা তাদের নিজ ধর্মের নামে পরিচিত হোক। কিন্তু ইসলামী পরিভাষা, নবী, রাসূল, কুরআন ইত্যাদি বিষয়গুলো ব্যবহার করে নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবী করে।
ইসলামের চিরন্তন সত্য ও প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলোকে ব্যবহার করে তারা মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আসছে। এ থেকে তাদেরকে বিরত রাখার জন্য সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানের দাবী তারা নিজ ধর্মের নামে যেমন : কাদিয়ানী বা আহমদিয়া নামে পরিচিত হোক।
পঞ্চগড়ে সহিংসতার কারণ কী ?
পঞ্চগড়ে প্রতি বছর কাদিয়ানী সম্প্রদায় সালানা জলসা করে থাকে। এ বছর হঠাৎ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার কারণ কী ? কারা পরিস্থতি উত্তপ্ত করলো ? সাধারণ মুসুল্লিরা রাস্তায় প্রকাশ্যে পুলিশের সামনেই বিক্ষোভ করেছে। তবে কারা কাদিয়ানীদের বাড়িঘরে হামলা করলো। এ সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কি ভূমিকা পালন করেছে ? ঘটনা ঘটার সময় যে ফুটেজগুলো আছে, তা চেক করে দেখার আগেই সরকার বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন বি এন পি এবং জামায়াতে ইসলামীরি বিরুদ্ধে ঢালাও মন্তব্য প্রকৃত অপরাধী গ্রেফতারে কতটুকু সচ্ছতা বজার রাখবে তা বড় প্রশ্ন।

ঢাকার পরিবর্তে পঞ্চগড়ে সমাবেশ কেন ?
কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের হেড কোয়ার্টার ঢাকার বকশী বাজারে অবস্থিত। এখানে আগে প্রতি বছর তাদের সালানা জলসা হতো। গত দুই বছর যাবৎ দেশের সর্বশেষ সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে তাদের জলসা আয়োজনের কারণ কী ? সেখানে মাত্র দুটি গ্রামে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বসবাস। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কেন তারা জলসা করতে যাবে। যেহেতু তাদের হেড কোযার্টার ঢাকায়। তাদের জন্য তো ঢাকায় সমাবেশ করা সবচেয়ে নিরাপদ। কেন তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে জলসা করার জন্য গেল?
রেলমন্ত্রীর সামনে কাদিয়ানীরা যা বলেছে
রেলমন্ত্রী কাদিয়ানীদের বড়িঘর দেখতে গেলে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকেরা বলেছে, যে হামলাকারীরা আপনার চারপাশেই আছে। কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকদের এ বক্তব্য নতুন করে ভাবতে শেখায় তবে কি এর পেছনে অন্য কোনো মতলব আছে ?

[i]নারায়ণগঞ্জে কাদিয়ানী উপসনালয়[/i]

সরকার সমর্থক একটি ধর্মীয় সংগঠনের নেতা কর্মীরা ?
সরকার সমর্থক একটি ধর্মীয় সংগঠনের নেতা কর্মীরা ঘটনার শুরু থেকে শেষপর্যন্ত সরব ছিলো। এতোবড়ো ঘটনা ঘটার পর তারা চুপ হয়ে গেছে। সরকার, কাদিয়নী বা প্রশাসন কেউই তাদের নাম নিচ্ছে না। তবে কি তারাও কোনো ফায়দা তোলার মতেলবে ছিলো ?
ইসলাম কোনো অমুসলিমের বড়িঘরে হামলার অনুমতি দেয় না
রাসূল সা. বলেছেন, ‘‘সেই ব্যক্তি ‍মুমিন নয়, যার মূখ ও হাতের অনিষ্ট হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’’ একইভাবে অমুসলিমদের ব্যাপারে রাসূল সা. এর ঘোষণা হচ্ছে : ‘‘ যে ব্যাক্তি অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমের সম্পদ আত্তসাৎ করবে আমি কিয়ামতের দিন ঐ অমুসলিমের পক্ষে সাক্ষী দেবো’’ অতএব কোনো প্রকৃত মুসলমান এ ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটাতে পারে না। যারা এ কাজ ঘটিয়েছে তাদের নিশ্চয়ই কোনো দূরভিষন্ধি ছিলো। যার কিঞ্চিৎ কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকদের কথায় উঠে এসেছে।
কাদিয়ানীদের ধর্মীয় পরিচয় নির্দিষ্ট করার মধ্যেই সমস্যার সমাধান
বারা বার একই দাবী উচ্চারিত হচ্ছে, যে কাদিয়ানীদের নিজস্ব পরিচয়ে তারা পরিচিত হবে। তাদের বিশ্বাস এবং চিন্তার আলোকে তারা নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করতে পারে না্। এ বিষয়টি সূরাহা করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু কোন এ অজানা কারণে বিষয়টি জিইয়ে রাখা হচ্ছে।
এক ঢিলে অনেক পাখি মারার ষড়যন্ত্র না তো ?
ঘটনা ঘটার সময় সরকার এবং প্রশাসন নিশ্চুপ ছিলো। এমনকি সরকার সমর্থক ধর্মীয় যেই দলটির নেতা কর্মীদের সরব দেখা গেছে তাদের উস্কানি ছিলো কি না, তা খতিয়ে দেখার আগেই শুধুমাত্র বি এন পি এবং জামায়াতের নেতাদের গ্রেফতার করে কি এই মেসেজ দেয়া হচ্ছে যে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়। এখানে উগ্র জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাদের দমনের জন্য এই সরকারকে আগামীতে যে কেনোভাবে ক্ষমতায় থাকতে হবে?

পঠিত : ১০৫০ বার

মন্তব্য: ১

২০২৩-০৩-০৮ ২৩:১৪

User
রেদওয়ান রাওয়াহা

আসসালামুয়ালাইকুম ভাইয়া। মেহেরবানী করে লেখার শেষে বা শিরোনামের সাথে আপনার মূল নামটা যুক্ত করে দিবেন প্লিজ। এমন দারুণ লেখার জন্যে আল্লাহর কাছে আপনার হাইয়াতে তাইয়্যিবা দান কামনা করছি।

submit