Alapon

কুরআনে কেন নারীদের পুরস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়নি?



আল্লাহ পুরুষ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমুখী দৃষ্টি দিয়ে। তারা কিছু জিনিস চায়, আর শুধু এগুলোই তারা চায়। আল্লাহ তাদের চাহিদাগুলোকে কুরআনের একটি আয়াতে উল্লেখ করে দিয়েছেন। زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ ٱلشَّهَوَٰتِ مِنَ ٱلنِّسَآءِ وَٱلْبَنِينَ وَٱلْقَنَٰطِيرِ ٱلْمُقَنطَرَةِ مِنَ ٱلذَّهَبِ وَٱلْفِضَّةِ وَٱلْخَيْلِ ٱلْمُسَوَّمَةِ وَٱلْأَنْعَٰمِ وَٱلْحَرْثِ (যুইয়্যিনা লিননাসি হুব্বুশ শাহাওয়াতি মিনান নিসা ওয়াল বানীনা, ওয়াল ক্বনাতিইরিল মুক্বনতরাতি মিনায যাহাবি ওয়াল ফিদ্দতি ওয়াল খইলিল মুসাওয়ামাতি ওয়াল আন’আমি ওয়াল হারছ) [৩ঃ১৪] এটাই পুরুষ; ব্যাস।

একটি আয়াতেই সব তুলে ধরা হয়েছে। এগুলোই পুরুষ মানুষ চায়। তারা পছন্দ করে সুন্দরী নারী, তারা চায় প্রচুর অর্থ, তারা সন্তানাদি চায়, তারা চায় সফল ব্যবসা, অবিরত কাজ, أَنْعَٰمْ (আন’আম) এবং حَرْثْ (হারস) এবং তাদের বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা। পুরুষদের চাওয়া শেষ। এসব থাকলেই “আমি ভাল আছি।”

আল্লাহ কোথাও নারীদের জন্য এরকম কিছু বলেননি। আপনারা জানেন কেনো ? কারণ আল্লাহ নারীদেরকে একমাত্রিক চিন্তা পদ্ধতি দিয়ে সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ নারীদেরকে সৃষ্টি করেননি এক-কেন্দ্রীকভাবে যেভাবে তিনি পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষের মনস্তত্ত্ব অনেক বেশী সরল নারীদের মনস্তত্ত্বের তুলণায়, এমনকি অধুনিক মনোবিজ্ঞান অনুযায়ীও। এর অর্থ এটা না যে নারীরা নিকৃষ্ট, অথবা পুরুষদের তুলণায় তারা কম। তারা পুরুষদের তুলণায় অনেক বেশী জটিলতাপূর্ণ, তাদের মধ্যে অনেক কিছু ঘটে চলছে, পুরুষদের মধ্যে যা ঘটছে তার তুলণায়। এখানে তেমন কিছু ঘটছে না; আমাদের জন্য। এটা বেশী কিছু না; এটাকে একটি আয়াতে নিয়ে আসা যাবে আর আপনার কাজ শেষ। বুঝতে পারছেন ?

কিন্তু আমি ভদ্রমহিলাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাই, যা লক্ষ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, আমি চাই যে আপনারা জেনে রাখুন, وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِىٓ أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ (ওয়ালাকুম ফিহা মা তাশতাহি আনফুসুকুম ওয়ালাকুম ফিহা মা তাদ্দা’উন ৪১ঃ৩১) এটা আল্লাহর একটি প্রতিশ্রুতি গোটা মানবজাতির জন্য। আল্লাহ বলেছেন—"আর সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা কিছু তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা তোমরা দাবী করবে।"

আল্লাহ কোনো আকাঙ্ক্ষার নাম উল্লেখ করেননি; তিনি বলেছেন, তুমি তা-ই পাবে যা তোমার হৃদয় আকাঙ্ক্ষা করবে। এর অন্তর্ভুক্ত পুরুষ এবং এর অন্তর্ভুক্ত নারী। অন্য কথায়, চিন্তা করবেন না। কিছু নারী বলেন, “পুরুষরাই সবকিছু পেয়ে যাবে, আমরা কি পাবো ? কাম-অন, আমাকে বলুন।” আল্লাহ আপনাদেরকে বলছেন, আপনারা যা চাইবেন, আপনারা যা চাইবেন তাই পাবেন।

আমার কন্যাসন্তান আছে, আমি তাদেরকে ভালোবাসি, আর আমি চাই যে তারা জান্নাতে যাক। কিন্তু আমি আপনাদেরকে বলতে পারি, এটা কঠিন একটা বিষয়; কারণ, যখন আমি তাদেরকে কোনো দোকানে নিয়ে যাই, আর আমি বলি যে, তোমরা যা চাও তা নাও। এটা তাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ; এটা তাদের জন্য এতোটাই মানসিক চাপসৃষ্টিকারী; তারা এতোটাই মানসিক চাপে পড়ে যায়—কি নিবে সে বিষয়ে। “আমি বুঝতে পারছি না, আমি জানি না, আমি কি এটা নিতে পারি ?” “হ্যাঁ, তুমি এটা নিতে পারো।” “না, আমি এটা চাই না… ”

জান্নাতে আপনার সেই সমস্যা থাকবে না। আপনার সে সমস্যার সমাধান করে দেওয়া হবে।
এরপর আরেকটি বিষয় রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে, আমি এটা করার চেষ্টা করেছি আমার স্ত্রীর সাথে, আমার কন্যাদের সাথে, আমার তিনজন বোন আছে; আমি তাদের সাথে এটা করার চেষ্টা করেছি। কখনো তাদের মন খারাপ থাকে। আমি বলেছি, “তুমি কী চাও, বলো তুমি কী চাও। শুধু বলো। আমি করবো। সেটা যা-ই হোক, তুমি শুধু আমাকে বলো।” তাদের উত্তর—

“তুমি বুঝবে না।” আসলেই আমি বুঝি না। কিন্তু আমি এই বিষয়ে শেষ একটি কথা বলবো। শেষ একটা বিষয়, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, শেষ একটা বিষয়। আর এটা আসলে আমাদের সকলের উপলব্ধি করার জন্য। একটি সম্মান, আল্লাহ যা নারীদের দিয়েছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি; আল্লাহ জানেন, আমি বোনদেরকে খুশি করার জন্য এমনটা করছি না। আমি আপনাদের সাথে আজকে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট ঝমেলা করে ফেলেছি। তো এটা স্পষ্ট যে আপনাদেরকে খুশী করতেই আমি শুধু আগ্রহী নই। কিন্তু, আমি শুধু আপনাদেরকে কিছু বলতে চাই; একটি বাস্তবতার কথা।

আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, কুরআন নিয়ে আমার নিজের অধ্যয়ন থেকে যে, যখন জান্নাতের প্রসঙ্গ আসে, নারীদেরকে এমন সম্মান দেয়া হয়েছে যা পুরুষদেরকে দেয়া সম্মানের তুলণায় অনেক বেশী। এটা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। আপনাকে বাধ্যতামূলক একমত হতে হবে না। আর আমি আপনাদের বলছি এর ভিত্তিটি কী। আল্লাহ عَزَّ وَجَلَّ সূরা শূরাতে বলেছেন যে, যে সকল মানুষ অপরকে ক্ষমা করে দেয়, তাদেরকে একটি পুরস্কার দেয়া হবে; আর পুরস্কারটির বর্ণনা দেয়া হয়েছে, عَلَى الله (‘আলাল্লাহ) বলে। তাদের পুরস্কার হলো আল্লাহর দায়িত্বাধীন। অন্য কথায়, পুরস্কারটিকে বলা হয়নি—জান্নাত অথবা নদী। ফল-মূল অথবা বাড়ি। অথবা নারী, এরকম না। পুরস্কারটিকে বর্ণনা করা হয়েছে কী বলে ? আল্লাহর দায়িত্ব; আমি তোমাদের পুরস্কৃত করবো; এটুকুই তিনি বলেছেন।

আর এটা আমার বিশ্বাস যে, এই আয়াতটিতেই কুরআনের সবচেয়ে বড় পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে। কেনো? কারণ, আল্লাহ কুরআনকে দিয়েছেন সকল সময়ের জন্য সবচেয়ে অলঙ্কারপূর্ণ, সবচেয়ে নিখুঁত বক্তব্য হিসেবে। এই বক্তব্যটি সবকিছুকে বর্ণনা করতে পারে। কিন্তু এই মানুষদের পুরস্কারটি এতোটাই অবিশ্বাস্য যে, এটা ভাষার অতীত এমনকি কুরআনেও। একমাত্র যে জিনিসটা বলা যাবে তা হলো কি ? আল্লাহ তোমাদেরকে পুরস্কৃত করবেন। আল্লাহর কুরআনে উল্লেখ না করাটা যে, নারীরা কি পাবে, এটা ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য একটি ইঙ্গিত; আমার কথা মেনে নেয়াটা বাধ্যতামূলক নয়; আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে, এটি একটি ইঙ্গিত যে, আল্লাহ যা সংরক্ষিত রেখেছেন আমার মায়ের জন্য, আমার কন্যাদের জন্য, আমার বোনেদের জন্য, আমার স্ত্রীর জন্য; আল্লাহ আমাদের সকল মায়েদের, কন্যাদের, বোনেদের এবং স্ত্রীদেরকে জান্নাতের জন্য কবুল করুন; আল্লাহ তাঁদের জন্য যা রেখেছেন, তা হলো বর্ণনার অতীত; এটাকে ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা সম্ভব না।
এই বিষয়টি, যার জন্য এটাকে ভাষায় সীমিত করা যাবে না। এটা নারীদেরকে দেয়া একটা সম্মান। তাদেরকে বঞ্চিত করা না।

এটাই সেই চশমা যা দ্বারা আপনি আল্লাহর করুণাকে দেখবেন। এটাই নির্ধারণ করবে যে, আপনি আল্লাহ সম্পর্কে কেমন চিন্তা করছেন। "কেনো আল্লাহ কিছু বলেননি" এটা বলার পরিবর্তে আপনার বলা উচিৎ, "ওয়াও, আল্লাহ এটাকে বর্ণনার বাইরে রেখেছেন ! এটা একটা সারপ্রাইজ।"

এটাই আকর্ষণ। বুঝতে পারছেন বোনেরা ?

—নোমান আলী খান

পঠিত : ২৫৯ বার

মন্তব্য: ০