Alapon

তাওবা ও ইস্তেগফারের ফজিলত...



আমরা যখন কোন বিপদে পড়ি অথবা শারীরিক, মানসিক বা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হই তখন আমাদের অনেকেই সর্বপ্রথম নিজেদের ভাগ্যকে দোষারোপ করে। অনেকে তো আবার আবেগপ্রবণ হয়ে বলেই বসে " আল্লাহ কি আমাকে ছাড়া দুনিয়াতে আর কাউকে দেখেনা? পৃথিবীতে কি কষ্ট পাবার জন্য শুধু আমিই আছি? " ইত্যাদি ইত্যাদি আরো নানান ধরনের দীনবিধ্বংসী কথা।

আচ্ছা, আপনি নিজেই একটু চিন্তা করে দেখুন, শুধু ভাগ্যের দোহাই আর আল্লাহ তাআলার উপর অভিযোগ আরোপ করেই কি আমরা এই বিপদ আপদ থেকে মুক্তি পেয়ে যাব? আমাদের কি খুঁজে বের করা উচিত না যে এই বিপদ আপদে আটকে যাওয়ার পিছনে আমাদের নিজেদের কোন হাত আছে কিনা? আমাদের কি একটা বার ঠাণ্ডা মাথায় ভাবা উচিত না যে এই বিপদটা কি আমার নিজের কর্মফল নাকি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর দরবারে আমার মর্যাদা সমুন্নত করার জন্য আমার পরিক্ষা নিচ্ছেন ?

পবিত্র কুরআনুল কারীম আমাদের জন্য সান্তনার আধার। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য অনেক নবীর ঘটনা বর্ণনা করেছেন যারা আমাদের চেয়ে আরো অবর্ণনীয় কষ্টের সম্মুখীন হয়েছেন কিন্তু তারা কখনও রব্বুল আলামিনের উপর অভিযোগ আরোপ করেননি।

উদাহরণস্বরূপ আপনি হযরত ইউনুস আলাইহিস সালামের ঘটনার কথাই চিন্তা করুন। তিনি সমুদ্রের গভীরে, মাছের পেটে, তিন অন্ধকারের মধ্যে ছিলেন। আপনি আমি সেখানে থাকলে হয়তো দুশ্চিন্তা আর পেরেশানিতে মরেই যেতাম। কিন্তু আল্লাহর এই নবী সব দুশ্চিন্তা আর পেরেশানিতে উপেক্ষা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি একান্ত মনে পাঠ করছিলেন :
لا اله الا انت سبحانک انی کنت من الظالمین
(হে আমার প্রতিপালক) আপনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত।

হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালামও কঠিন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও কি একটাবারের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের উপর কোন অভিযোগ করেছিলেন? না করেননি। বরং তিনি কায়মনোবাক্যে রাব্বুল আলামীনের দরবারে দোয়া করেছিলেন :
رب انی مسنی الضر و انت ارحم الراحمین
হে আমার প্রতিপালক, আমি বিপদের সম্মুখীন হয়েছি আর আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।
কুরআনুল কারীম শুধু আমাদের ঘটনা শোনানোর জন্য অবতীর্ণ করা হয়নি বরং কুরআনুল কারীমকে দেয়া হয়েছে আমরা যেন এর থেকে নিজেদের জীবনের জন্য শিক্ষা নেই।
এই দুটো ঘটনা থেকে আমাদের জন্য বিশাল একটা শিক্ষা হলো, বিপদে পড়লেই আমরা যেন রাব্বুল আলামীনের উপর কোন অভিযোগ করে না বসি। আমরা যেন নিজেদের গুনাহের কথা স্মরণ করে রাব্বুল আলামিনের দরবারে সমর্পিত হই। আমাদের নিজেদের জীবনে যে ভুলগুলো হয়ে গেছে সেগুলোর জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে নিজেদের পবিত্র করি।
হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বিষয়ে একটি চমৎকার কথা বলেছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إنَّ العَبدَ ليُحرَمُ الرِّزقَ بالذَّنبِ يُصيبُه
নিশ্চয়ই বান্দাকে তার কৃত গুনাহের কারণেই রিজিক থেকে মাহরুম করা হয়।
(মুসনাদে আহমাদ : হাদিস নাম্বার : ২২৪৩৮)
الراوي : ثوبان مولى رسول الله صلى الله عليه وسلم المحدث : شعيب الأرناؤوط
المصدر : تخريج المسند لشعيب
الصفحة أو الرقم : ٢٢٤٣٨
خلاصة حكم المحدث : حسن لغيره
সুতরাং যখনই আমাদের থেকে কোন গুনাহ হয়ে যাবে বা আমরা আল্লাহ তায়ালার কোন নাফরমানিতে লিপ্ত হব তখনই আমাদের উচিত তাওবা-ইস্তেগফার করে নিজেকে পুতপবিত্র করে নেয়া। রাব্বে কারীমের দরবারে নিজেকে সমর্পিত করে দেয়া।

বিশ্বাস করুন, দুয়া-মুনাজাত আর কান্নাকাটির মধ্যে রব্বুল আলামীন যে আত্মিক প্রশান্তি আর অনাবিল স্বাদ রেখেছেন সেটা যদি পৃথিবীর রাজা বাদশাহরা জানতো তাহলে তারা সমস্ত সুখ-আহলাদ বাদ দিয়ে পুরো জীবন রাব্বুল আলামীনের তাসবীহ আর দুয়া-মুনাজাতেই লিপ্ত থাকত।

পঠিত : ৭০৩ বার

মন্তব্য: ০