Alapon

অল্প জীবনের বড় গল্প...



কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পেছনে একটা বড় পুকুর। পুকুর পাড়ের পিচঢালা রাস্তা দিয়েই হেঁটে যাচ্ছে মেয়েটা। সারারাত ওয়ার্ডে ডিউটি ছিল। নির্ঘুম, ক্লান্তশ্রান্ত শরীর আর ছেঁড়া স্যান্ডেলের বিড়ম্বনা এড়াতে একেবারেই নিরবে হাঁটছে সে। হাতে ভাজ করা এপ্রোন আর ছোট্ট একটা পারস। চারদিক কুয়াশাচ্ছন্ন শীতার্ত ভোর।সামনের ভাঙা দেয়াল, মরচেধরা ল্যাম্পপোস্ট, রঙওঠা বিলবোর্ড, কাকের কা..কা কোনো কিছুই তার ওপর প্রভাব পড়ছে না।
আচ্ছা, সেই মেয়েটার কি খবর? এখনো কি সে প্রতিদিন ঐ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়?

*মধ্যদুপুরে গুলিস্তানের ওসমান গণি রোড়ে জ্যামে আটকা পড়েছি। প্রচন্ড গরম আর গাড়ির প্যা পু তে অস্বস্তিকর অবস্থা। ময়লা শার্ট পরিহিত উষ্কখুষ্ক চুলওয়ালা ছেলেটা চকলেট বিক্রি করছে। এখানে চকলেট বিক্রির আড়ালে ভিক্ষাই মূল উদ্দেশ্য। প্রাইভেট কারের পেছনে বসা মহিলাকে ছেলেটা একটা চকলেট দিয়েছে।মহিলা তার ব্যাগ থেকে একটা একশো টাকার চকচকে নোট ছেলেটার হাতে দিল। ছেলেটার চোখে মুখে উপচে পড়া আনন্দ। ছেলেটা একশো টাকার নোটটা তার পরিচিত ছেলেমেয়েদের দেখানোর জন্য কদম বাড়ালো। মহিলার ডাকে পেছনে ফিরল সে।মহিলা, ছেলেটার দেওয়া চকলেটটার খোসা ছড়িয়ে নিজের হাতে ছেলেটার মুখে পুড়ে দিল।

বাসে থাকা আমার মতো অনেক যাত্রীই দৃশ্যটা অবাক বিস্ময়ে দেখল। মুহুর্তেই আমাদের সব ব্যস্ততা,গরম, ঘাম উবে গেল। চিন্তার জগতে নাড়া দিল।

আচ্ছা সেই একশো টাকা দেওয়া মহিলা,চকলেট বিক্রিকারী ছেলে তারা এখন কেমন আছে?

* মধুমিতা রেলস্টেশন। ট্রেন আসার সময় হয়েছে। দুইপাশের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ট্রেন চলে গেলেই তারা তাদের নিজেদের গন্তব্যে যেতে পারবে। একজন অল্প বয়সী নারী রিকশা থেকে নেমে তাড়াহুড়ো করে রেললাইনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তার থেকে খানিকটা দূরে আরেকটা বৃদ্ধ মহিলা দাঁড়িয়েছে। যে পদ্মা কিংবা যমুনার চর থেকে এসে রেললাইনের বস্তিতে নতুন বসবাস শুরু করেছে। হুইসেল বাজিয়ে আসতে থাকা ট্রেনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।

ট্রেন যাওয়ার পর যে ছিন্নভিন্ন লাশটা পাওয়া গেল সেটা কেউই চিনতে পারল না।
আচ্ছা সেই অল্প বয়সী নারী কেন রিকশায় চড়ে এসে আত্মহত্যা করেছিল? আর যে বৃদ্ধা সব হারিয়ে রেললাইনের বস্তিতে বসবাস করছিল সে কেন বেঁচেছিল?

*আচ্ছা, সেই সাদ্দাম - জিয়া হল মসজিদের মুয়াজ্জিনের কি খবর?

যার স্ত্রীকে ইসলাম গ্রহণের কারণে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আদালত প্রাঙ্গণে হ*ত্যা করেছিল। সে কি এখনো প্রতিদিন পাঁচবার মানুষকে "হাইয়্যা আলাল ফালাহ" বলে বলে ডাকে?

~ ফয়সাল মুহাম্মদ.

পঠিত : ২৫৩ বার

মন্তব্য: ০