Alapon

সাকিবের অবসরের পর ক্রিকেট দুনিয়া হবে মিরাজময়



মিরাজ আমাদের দ্বিতীয় সাকিব, এটা অনেকেই মানতে চায় না কিংবা সেভাবে চিন্তা করে না, কিন্তু ঠিকই বলে বেড়ায় বিসিবি আরেকটা সাকিব গড়তে পারেনি!

দেখুন, সাকিব যখন শুরু করে তখন বাংলাদেশ দলে কোন বিশেষজ্ঞ অলরাউন্ডার ছিল না, রফিক বোলিং অলরাউন্ডার ছিল, যিনি কয়েকবার টপে ব্যাট করলেও নিয়মিতই ৮/৯ এ ব্যাট করতো। ফলে সাকিকে শুরু থেকেই দলে ভালো মূল্যায়ন করা হয়েছিল। সেই জায়গা থেকেই আমরা পেয়েছি বিশ্বসেরা সাকিব।

অপরদিকে, মিরাজ যখন আসে, তখন আমাদের দলে আছে বিশ্বসেরা সাকিব, সাকিবের ছায়া হয়েই শুরু করতে হয়েছিল মিরাজকে। যেটা সাকিবের শুরুতে হয়নি। মিরাজ বিশেষজ্ঞ অলরাউন্ডার হলেও সে কয়েকবছর খেলেছে শুধু বোলারের মতো। ফলে মিরাজকে অলরাউন্ডার হিসেবে পারফর্ম করার জন্য বেশ স্ট্রাগল করতে হয়েছে এবং সে ইতিমধ্যে তার সামর্থ দেখিয়েছে দারুণ ভাবে।

আবারো ভাবুন, মিরাজ সাকিবের ছায়া হয়ে আছে এখনো, কিন্তু সাকিবকে কারো ছায়া হয়ে খেলতে হয়নি বাংলাদেশ দলে।

কে কতো ভালো ক্রিকেটার, কতটা মেধাবী কিংবা মাঠে কতটুকু কার্যকরী, আমি সেদিকে যাবো না। সাকিবের পর যদি আরেকটা সাকিবের কথা বলা হয়, সেটা অবশ্যই মিরাজ।

সাকিবের পেছনে থাকার পরও সে করে দেখাচ্ছে। তিনফরম্যাটেই নিজের যথার্থতা প্রমাণ করছে।

দ্বিতীয় সাকিব মানেই যে, হুবহু সাকিব হতে হবে এমন না। সাকিবের তুলনায় ৬০/৭০% পারফর্ম করলেও তাকে তার সময়ের সেরা পারফর্মার বলা যাবে।

সাকিবের পক্ষ হয়ে কেউ এখানে তর্কের দরকার নাই। সাকিব বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এবং ক্রিকেট দুনিয়ার সর্বকালের সেরা ৫/৬ জন অলরাউন্ডারের একজন হয়ে গেছে অলরেডি। অপরদিকে মিরাজকে অনেক পথ পারি দিতে হবে।

আমার এই লেখা শুধু দ্বিতীয় সাকিব না হওয়া যারা আক্ষেপ করেন, তাদের জন্য এবং মিরাজের পারফর্ম এবং সে বর্তমানে সাকিবের পাশাপাশি মোটামুটি ভালোই পারফর্ম করছে সেটা বলার চেষ্টা।

পরিসংখ্যানও মিরাজকে দ্বিতীয় সাকিব হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং বোলিংয়ে সাকিবের চেয়েও কিছুটা এগিয়ে রাখে মিরাজকে।

মিরাজ ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১২৭ ম্যাচে ২১৫৩ রান, ২ শতক ও ৫টা ফিফটি করেছেন।

পাশাপাশি বল হাতে ২৪২ উইকেট শিকার করেছেন। ইনিংসে ৫ উইকেট ৯ বার, ২ বার ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করেছেন।

অপরদিকে মিরাজের অভিষেক ম্যাচ থেকে এ পর্যন্ত সাকিব ১৪৪ ম্যাচ খেলে ৫১২৮ রান করেছেন, শতক ৫ টা।

বল হাতে ২৩৪ উইকেট শিকার করেছেন। ইনিংসে ৫ উইকেট ৯ বার।

২০১৬-২৩ এ মিরাজ সাকিবের চেয়ে ১৭ ম্যাচ কম খেলেও ৮ উইকেট বেশি শিকার করেছেন।

তবে সাকিব ব্যাট হাতে এই সময়ে মিরাজের চেয়ে অনেক এগিয়ে। মিরাজের ২১৫৩ রানের বিপরীতে সাকিব করেন ৫১২৮ রান। শতকও ৩ টা বেশি।

মিরাজ বোলিংয়ে কিছুটা এগিয়ে সাকিব থেকে। অপরদিকে সাকিব ব্যাটিংয়ে এগিয়ে। তবে সাকিব টপে ব্যাট করে, মিরাজ করে শেষের দিকে। বহু ম্যাচেও ব্যাটও পায় না। লাস্ট কয়েক বছর ধরে সুযোগ পাওয়ায় এই সময়ে ভালো ব্যাটিং করছে নিয়মিত।

মিরাজ ৭০ ওয়ানডেতে ৪৫ বার ব্যাট করতে নেমেছেন মাত্র। তার মধ্যে ৬ বার অপরাজিত ছিলেন ২০ রানের মধ্যেই। ৩৭ টেস্টে ৬৯ বার, ২০ টি২০ এ ১৮ বার।

অ-১৯ থেকেই মিরাজ বিশেষজ্ঞ অলরাউন্ডার হলেও জাতীয় দলে মিরাজ খেলেছে বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে। ফলে ব্যাটিংয়ে পিছিয়ে থাকার কারন অনেকটাই প্রকাশ্য।

মিরাজ যে দ্বিতীয় সাকিব সেটা বোলিং পরিসংখ্যান দেখলে আপনি জোর গলায় বলতে পারবেন। ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় সাকিব না বলা গেলেও ব্যাটিংয়ে পিছিয়ে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করেছি উপরে।

উপরের কথাটা আবারো বলছি যে, সাকিব বিশেষজ্ঞ অলরাউন্ডার হিসেবে খেলেছেন দলে শুরু থেকেই, তাকে কারো সাথে লড়তে হয়নি দলে। অপরদিকে মিরাজ সাকিবের প্রতিদ্বন্ধী না হলেও সাকিবের ছায়া হয়ে খেলতে হচ্ছে জাতীয় দলে। সেই সাথে তার সময়ে সাকিব, আফিফ, শেখ মাহেদীরা থাকায় মিরাজকে টি২০ এ অবজ্ঞা করা হয়েছে অনেকদিন।

একটা কথা পরিস্কার, ক্যালিস বিশ্বসেরা, সাকিব বিশ্বসেরা, জাদেজাও তাই। বেন স্টোকসও আলাদাভাবে আলো কেড়েছে। আমার বিশ্বাস মিরাজও তেমন হবে। মিরাজের মাত্র ২৬ চলছে। সাকিবের ৩৬। সাকিব যদি আরো ৩ বছরও খেলে, তখন মিরাজের হবে ২৯। মানে সাকিবের অবসরের পর মিরাজ ফিট থাকলে আরো ১০ বছর খেলতে পারবে। আমার ধারণা ও বিশ্বাস, সেই সময়টা ক্রিকেট দুনিয়া হবে মিরাজময়। বেঁচে থাকলে কথা আবারো।

১২/০৩/২০২৩ ইং

পঠিত : ২৫৯ বার

মন্তব্য: ০