Alapon

রুকন কী? কীভাবে জামায়াতের রুকন হয়?



জামায়াত শব্দটার সাথে রুকন শব্দটি জড়িত। রুকন মানে হলো খুঁটি। এখানে রুকন বলতে জামায়াতের খুঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ জামায়াত যাদের ওপর নির্ভর করবে। জামায়াতের কর্মীদের মধ্য যারা দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহকে সাক্ষী রেখে শপথ গ্রহণ করে তাদেরকেই জামায়াত রুকন বা সদস্য বলে।

জামায়াতে ইসলামী তাদের গঠনতন্ত্রে রুকন হওয়ার জন্য শর্ত রেখেছে ৮ টি

১. জামায়াত যে আকিদা উল্লেখ করেছে তা বুঝা ও নিজের জীবনের আকিদা হিসেবে গ্রহণ করা।
২. জামায়াত যে উদ্দেশ্য লক্ষ্য স্থির করেছে তা নিজের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে মেনে নেওয়া।
৩. জামায়াতের শৃঙ্খলা মেনে চলা
৪. ইসলাম নির্ধারিত ফরজ ও ওয়াজিবসমূহ অবশ্যই আদায় করা এবং কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা।
৫. হালাল উপায়ে উপার্জন করা
৬. অন্যের হক নিজের কাছে থাকলে তা পরিত্যাগ করা। হারাম উপায়ে অর্জিত সম্পদ ত্যাগ করা।
৭. জামায়াতের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের বিপরীত কোনো পার্টির সাথে জড়িত না থাকা
৮. জামায়াতের দায়িত্বশীলদের দৃষ্টিতে রুকন হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হওয়া।

৮ নং শর্ত যুক্ত করা হয়েছে এজন্য যে, দায়িত্বশীল দেখবেন তিনি শর্ত মেনে চলেন কিনা অথবা শর্ত মেনে চলতে প্রস্তুত কিনা।

দায়িত্বশীলরা এই প্রস্তুতি বুঝার জন্য কয়েকটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখেন।

১. যেহেতু দ্বীন কায়েমের জন্য রুকন হবেন তাই ইসলামের যথাযথ মৌলিক জ্ঞান থাকা দরকার। এজন্য রুকন হওয়ার জন্য সিলেবাস আছে। যারা রুকন হতে চান তাদেরকে প্রথমে সিলেবাসের বইগুলো পড়তে হবে। কমেন্টে বইগুলোর লিংক দেওয়া হবে।
২. প্রতিদিন কুরআন পড়তে হবে। মাসে কমপক্ষে ২৬ দিন।
৩. কুরআন তিলওয়াত সহীহ হতে হবে।
৪. কুরআনের কিছু বিষয়ভিত্তিক আয়াত মুখস্ত করা লাগবে।
৫. কুরআনের কিছু আয়াতের ব্যাপারে কয়েকটি তাফসির পড়ে নোট করা লাগবে।
৬. হাদিস প্রতিদিন পড়তে হবে। মাসে কমপক্ষে ১০০ হাদিস।
৭. কয়েকটি হাদিস মুখস্ত ও নোট করা লাগবে।
৮. ইসলামী সাহিত্য মাসে কমপক্ষে ৩০০ পৃষ্ঠা পড়তে হবে
৯. পুরুষদের নামাজ জামায়াতে পড়তে হবে। মাসে কমপক্ষে ১৪০ ওয়াক্ত। লাস্ট ৩ মাসে নামাজ কাজা করা যাবে না।
১০. অন্তত তিনজন ভাইকে ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত দেওয়া।
১১. তারবিয়াতি (প্রশিক্ষণ) বৈঠকে উপস্থিত থাকা
১২. ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর পথে খরচ করা। বাইতুল মালে (জামায়াতের ফান্ডে) আয়ের ৫% জমা দেওয়া।
১৩. মাসে কমপক্ষে ৯০ ঘন্টা আল্লাহর দ্বীন কায়েমের পথে খরচ করা।

দায়িত্বশীলরা এসব বিষয়ে তত্ত্বাবধান করবেন। একজন কর্মী এসব কাজ মোটামুটিভাবে আঞ্জাম দিতে পারলে তাকে রুকন হওয়ার আবেদন ফর্ম দেওয়া হয়। এরপর ঐ ভাই আমীরে জামায়াতের বরাবর রুকন হওয়ার জন্য আবেদন করবেন।

আবেদনের প্রেক্ষিতে ঐ ভাইয়ের সাথে কয়েকজন সিনিয়র দায়িত্বশীল সাক্ষাত করেন। সেখানে তারা বুঝার চেষ্টা করেন এই আবেদন করা ভাইটি ইসলাম যথাযথ বুঝেন কিনা এবং ইসলাম মানতে সচেষ্ট কিনা। যদি পজেটিভ হয় তাহলে তারা সুপারিশ করেন। সুপারিশ পেলে আমীরে জামায়াত তার আবেদন মঞ্জুর করেন। আর যদি সাক্ষাৎকারে দায়িত্বশীলরা সন্তুষ্ট না হন তবে আবেদনকারী ভাইকে আরো পড়তে ও কাজ করতে উৎসাহিত করেন।

আবেদন মঞ্জুর হলে আমীরে জামায়াতের স্থানীয় প্রতিনিধি (জেলা/মহানগর আমীর) আবেদনকারী ভাইকে রুকন হিসেবে গ্রহণ করেন এবং তাকে শপথ পড়ান।

একজন রুকন যেভাবে শপথ করেন,

//বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আমি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর গঠনতন্ত্রে বর্ণিত আকীদা উহার ব্যাখ্যাসহকারে ভালভাবে বুঝিয়া লওয়ার পর আল্লাহ রাব্বল আলামীনকে সাক্ষী রাখিয়া পূর্ণ দায়িত্ববোধের সহিত সাক্ষ্য দিতেছি যে,
১। এক ও লা-শারীক আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহার বান্দাহ ও রাসূল।
আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারিকালাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

২। আমি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য উহার ব্যাখ্যাসহকারে ভালভাবে বুঝিয়া লওয়ার পর অঙ্গীকার করিতেছি যে, দুনিয়ায় সামগ্রিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানব জাতির কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রদর্শিত দ্বীন কায়েমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্য অর্জন করাই আমার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্য হাসিলের প্রচেষ্টা চালাইবার জন্য আমি খালিসভাবে জামায়াতে ইসলামীতে শামিল হইতেছি।

৩। আমি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর গঠনতন্ত্র বুঝিয়া লওয়ার পর ওয়াদা করিতেছি যে,
আমি এই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জামায়াতের নিয়ম-শৃংখলা পূর্ণরূপে মানিয়া চলিব।
সর্বদাই শরীয়ত নির্ধারিত ফরয-ওয়াজিবসমূহ রীতিমত আদায় করিব এবং কবীরা গুনাহসমূহ হইতে বিরত থাকিব।
আল্লাহর নাফরমানীর পর্যায়ে পড়ে উপার্জনের এমন কোন উপায় গ্রহণ করিব না।
এমন কোন পার্টি বা প্রতিষ্ঠানের সহিত সম্পর্ক রাখিব না, যাহার মূলনীতি এবং উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য জামায়াতে ইসলামীর আকীদা, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এবং কর্মনীতির পরিপন্থী।

"ইন্নাস সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।"

আল্লাহ আমাকে এই ওয়াদা পালনের তওফীক দান করুন। আমীন।//

এই শপথ নিয়ে জামায়াতের কর্মীরা আজীবন ইকামাতে দ্বীনের কাজ করার উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং ইসলামী আন্দোলনের সাথে নিজের সব কার্যক্রম তথা জীবনকে জড়িয়ে নেয়। এর মাধ্যমে তারা তাদের স্বাধীন সত্তা হারিয়ে মালিকের একনিষ্ঠ দাসে পরিণত হয়। নিজে আল্লাহর দাস হয় এবং অপরকে আল্লাহর দাসে পরিণত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। অন্য অর্থে বলা যায় স্রষ্টার একনিষ্ঠ দাস হওয়ার মাধ্যমে সৃষ্টির দাসত্ব থেকে রুকনরা মুক্তি পায়।

একটা বিষয় মনে রাখবেন প্রিয় ভাইয়েরা! জামায়াতে ইসলামী আপনাদের দুনিয়াবি কোনো সুবিধা দেবে না। যদি কোনো সুবিধা পেয়ে যান সেটা আল্লাহ তায়ালার রহমত। জামায়াত করলে দুনিয়ার দৃষ্টিতে আপনি আর্থিক ও শারিরীকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। বিনিময়ে আল্লাহর কাছ থেকে পাবেন। এটা আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এজন্য আমরা আল্লাহর সাথে ব্যবসা করছি জান ও মাল দিয়ে যে ব্যবসার কথা আল্লাহ তায়ালা সূরা সফের ১০-১৩ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন।

আলহামদুলিল্লাহ! আমি এই শপথ নিয়ে রুকন হয়েছি। আপনারা যারা এখনো জামায়াতের রুকন হননি আপনাদেরকে রুকন হওয়ার জন্য উদাত্ত আহবান করছি। আসুন আমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য শপথ নিই। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাই।

জামায়াতকে জানুন। জামায়াতে যোগ দিন।
#গণসংযোগ_পক্ষ
#১মার্চ_১৫মার্চ

পঠিত : ৩১৭ বার

মন্তব্য: ০