Alapon

হাদিসের বর্ণনায় বিস্ময়কর তাওবা

বিস্ময়কর তাওবার ঘটনা। নবিযুগের মুসলমানগণ সোনার মানুষ। নবির পরশ পেয়ে তারা হয়ে উঠেছিলেন শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাদের প্রতিটি ঘটনা ও প্রতিটি কাজকর্ম ছিলো পরবর্তীদের জন্য শিক্ষা ও ইবরতে ভরপুর। ঠিক সেরকমই শিক্ষনীয় ঘটনা হলো মায়েজ আসলামি ও জনৈক গামিদি মহিলার তাওবার ঘটনা। হাদিসের বর্ণনা অনুপাতে সেই ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হলো।

আব্দুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রহিমাহুল্লাহ) এর বরাতে, তিনি তার পিতা থেকে হাদিস শুনিয়েছেন যে, মাইয ইবনু মালিক আসলামি নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এলে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! নিশ্চয়ই আমি আমার আত্মার উপর জুলম করেছি, অর্থাৎ ব্যভিচার করেছি। আমি চাই যে, আপনি আমাকে পবিত্র করবেন। তখন তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। পরের দিন সে আবার প্রিয় নবিজির কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ব্যভিচার করেছি। এবারও তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন।

এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক ব্যক্তিকে তার সম্প্রদায়ের লোকের কাছে পাঠালেন। লোক সেখানে গিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কি মনে করেন যে, তার মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে এবং সে মন্দ কাজে লিপ্ত হয়েছে? তারা প্রতি উত্তরে বললেন, আমরা তো তার মস্তিষ্কের বিকৃতি সম্পর্কে কোনো কিছু জানি না। আমরা তো জানি যে, সে সম্পূর্ণ সুস্থ প্রকৃতির।
এরপর মাইয তৃতীয়বার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আগমন করলো। তখন তিনি আবারও একজন লোককে তার গোত্রের কাছে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রেরণ করলেন। তখনও তারা তাকে জানালো যে, আমরা তার সম্পর্কে খারাপ কোনো কিছু জানি না এবং তার মস্তিষ্কেরও কোন বিকৃতি ঘটেনি। এরপর যখন চতুর্থবার সে আগমন করলো, তখন তার জন্য একটি গর্ত খনন করা হল এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার প্রতি (ব্যভিচারের শাস্তি প্রদানের) নির্দেশ প্রদান করলেন। সুতরাং তাকে পাথর নিক্ষেপ করা হল।

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর গামিদি এক মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ব্যভিচার করেছি। সুতরাং আপনি আমাকে পবিত্র করুন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ফিরিয়ে দিলেন। পরবর্তী দিন আবার ঐ মহিলা আগমন করলো এবং বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। আপনি সম্ভবত আমাকে ঐভাবে ফিরিয়ে দিতে চান, যেমনভাবে আপনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মাইযকে? আল্লাহর শপথ করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি গর্ভবতী। তখন তিনি বললেন, তুমি যদি ফিরে যেতে না চাও, তবে আপাততঃ এখনকার মতো চলে যাও এবং প্রসবকাল পর্যন্ত অপেক্ষা কর।

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর যখন সে সন্তান প্রসব করল- তখন ভূমিষ্ঠ সস্তানকে এক টুকরা কাপড়ের মধ্যে নিয়ে তার কাছে আগমন করলো এবং বলল, এ সন্তান আমি প্রসব করেছি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও তাকে (সন্তানকে) দুধ পান করাও। দুধপান করানোর সময় পার হলে পরে এসো। এরপর যখন তার দুধপান করানোর সময় শেষ হল তখন ঐ মহিলা শিশু সন্তানটিকে নিয়ে তার কাছে মহিলাটি আবার আগমন করলো- এমন অবস্থায় যে, শিশুটির হাতে এক টুকরা রুটি ছিল। এরপর বলল, হে আল্লাহর নবি! এইতো সেই শিশু, যাকে আমি দুধপান করানোর কাজ শেষ করেছি। সে এখন খাদ্য খায়। তখন শিশু সস্তানটিকে নবিজি কোনো একজন মুসলিমকে প্রদান করলেন। তারপর ব্যভিচারের শাস্তি তার উপর কার্যকর করার আদেশ দিলেন।

মহিলার বক্ষ পর্যন্ত গর্ত খনন করানো হল এরপর জনগণকে (তার প্রতি পাথর নিক্ষেপের) নির্দেশ দিলেন। তারা তাকে পাথর মারতে শুরু করল। খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একটি পাথর নিয়ে অগ্রসর হলেন এবং মহিলার মাথায় নিক্ষেপ করলেন, তাতে রক্ত ছিটকে পড়লো খালিদ (ইবনু ওয়ালিদ) (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর মুখমণ্ডলে। তখন তিনি মহিলাকে গালি দিলেন। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গালি শুনতে পেলেন। তিনি বললেন, সাবধান! হে খালিদ! সে মহান আল্লাহর শপথ, যার হস্তে আমার জীবন, জেনে রেখো! নিশ্চয়ই সে এমন তওবা করেছে, যদি কোন “হক্কুল ইবাদ” বিনষ্টকারী ব্যক্তিও এমন তওবা করতো, তবে তারও ক্ষমা হয়ে যেতো। এরপর তার জানাযার সালাত আদায়ের নির্দেশ দিলেন। তিনি তার জানাযায় সালাত আদায় করলেন। এরপর তাকে দাফন করা হলো।

(সহিহ মুসলিম: ১৬৯৫)

পঠিত : ২৪৪ বার

মন্তব্য: ০