Alapon

মিছিলে গুলি করে ৫০ জনকে হত্যা এবং জাসদের অফিস জালিয়ে দেয়ার দিন আজ


আজ ১৭ মার্চ। ১৯৭৪ সালের এই তারিখে এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সৃষ্টি হয় এক কালো অধ্যায়। আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিতে এদিন পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়ে অন্তত ৫০ জনকে হত্যা করে। এতে জাসদ সম্পাদক আ স ম আবদুর রবসহ দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হয়।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ২৩ বছরেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাষ্ট্রের জন্য শক্ত ভিত্তির কাঠামো নিয়ে একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে না পারাসহ তৎকালীন রাজনৈতিক ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তানের যুবকদের মধ্য হতেই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চিন্তা গড়ে ওঠে। তারা পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্র গঠনের। সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের মধ্যেই নিউক্লিয়াস গ্রুপ গঠন করে এ চিন্তার বিজকে বাস্তবে রূপায়নের পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন শুরু হয়। আস্তে আস্তে স্বাধীনতা সংগ্রাম পূর্ণতা লাভ করে। নতুন রাষ্ট্র তার অস্তিত্ব লাভ করে। দেশ স্বাধীন হবার পর এ যুবকরা হতাশ হয়। তারা দেখে যে স্বপ্ন বুকে লালন করে দেশ স্বাধীন করা হয়েছিলো সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ছাত্রলীগের নিউক্লিয়াস গ্রুপের নেতৃত্বেই গঠিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) জাসদের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর এম এ জলিল। একইভাবে ছাত্রলীগ থেকে নিউক্লিয়াস গ্রুপের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাসদ ছাত্রলীগ। জাসদ ছাত্রলীগ গঠিত হওয়ার পর আওয়ামী ছাত্রলীগ দূর্বল হয়ে যায় এবং দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে জাসদ ছাত্রলীগ প্রধান ছাত্র সংগঠন হিসেবে অবির্ভূূত হয়। জাসদের নেতৃত্বে শেখ মুজবুর রহমান সরকারের পদত্যাগ দাবীত তারা নতুন করে আন্দোলন শুরু করে। মূলত ১৯৭৩ সাল হতেই জাসদের নেতৃত্বে তুমুল সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সারাদেশে জাসদের ওপর চলে সরকারের নিপীড়ন নির্যাতন। তবে জাসদও সারাদেশে পাল্টা হামলা গুলি অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটায়।
১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ সরকারের নানান অনিয়ম, দূর্নীিতি, লুটপাট, জুলুম নির্যতনের বিরুদ্ধে জাসদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এ মিছিলে রক্ষীবাহিনী ও পুলিশের গুলিতে ৫০জন নিহত হওয়াসহ দুই শতাধিক জাসদ কর্মী মারাত্মক আহত হয় । জাসদ নেতৃবৃন্দের মতে, পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী নিহত অধিকাংশের লাশ গুম করে। তত্কালীন মুজিব সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন ও সীমাহীন লুটপাটের প্রতিবাদে জাসদের উদ্যোগে এদিন ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনসভায় ২৯ দফা দাবি আদায়ের প্রত্যক্ষ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সভা শেষে সন্ধ্যায় স্মারকলিপি প্রদানের জন্য মেজর এম এ জলিল ও আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে একটি মিছিল স্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর বাসবভনের উদ্দেশে রওনা দেয়। মিছিলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির কাছে পৌঁছলে রক্ষীবাহিনী ও পুলিশ মিছিলকারীদের ওপর
নির্বিচারে গুলি চালায়। টানা প্রায় একঘণ্টা যাবত্ চলে এ বেপরোয়া গুলি বর্ষণের ঘটনা। পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী বিক্ষোভকারীদের হত্যার পাশাপাশি চালায় গ্রেফতার অভিযান। এসময় পুলিশ জাসদ সভাপতি মেজর এম এ জলিল, সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রব, মহিলা সম্পাদিকা মমতাজ বেগম এবং জাসদ সমর্থিত কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনুসহ বেশ ক’জনকে গ্রেফতার করে। এদিন রাতে আওয়ামী লীগের গুণ্ডাবাহিনী জাসদের মুখপত্র দৈনিক গণকণ্ঠের অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। আর শেষ রাতে পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী গণকণ্ঠ অফিসে তল্লাশি চালায় ও ছাপার জন্য তৈরি কপি, সিলোফিন প্রভৃতি আটক করে। ফলে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। পর দিন অর্থাত্ ১৮ মার্চ সকালে পুলিশ দৈনিক গণকণ্ঠ সম্পাদক আল মাহমুদকে তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে এদিন (১৮ মার্চ) আওয়ামী লীগ নেতা গাজী গোলাম মোস্তফা, আব্দুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে রাজধানীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিক্ষোভকারীরা ‘স্বাধীনতার শত্রুরা হুঁশিয়ারি’, ‘সমাজতন্ত্রের শত্রুরা হুঁশিয়ার’, ‘সাম্রাজ্যবাদের দালালেরা বাংলা ছাড়ো’ ইত্যাদি সেম্লাগান সহকারে বিভিন্ন সড়ক প্রদিক্ষণ করে এবং বেলা ১২টার দিকে মিছিলকারীদের একাংশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে ভস্মীভূত করে।

পঠিত : ৩৬৭ বার

মন্তব্য: ০