Alapon

ভাব সম্প্রসারণ যেটা স্কুল লাইফে শিখেছিলাম, বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই প্রাসঙ্গিক..



অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে; তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে

মূল ভাবঃ অন্যায় হলো ন্যায়ের বিপরীত। যে কাজটা করা সমাজ কিংবা আইন সিদ্ধ নয় সেটাই অন্যায়। অন্যায় করা যেমন ঠিক নয়, তেমন অন্যায় মেনে নেওয়া সেটাও ঠিক নয়। অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দিলে সে তার অন্যায় কাজ কখনো ত্যাগ করবে না। বরং তার দেখাদেখি আরো অনেকে অন্যায় কাজ করবে। এতে সমাজ, জাতি, দেশ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই প্রতিটা মানুষের উচিত অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকা আর অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় না দিয়ে তার উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা। অন্যায়কারী ও অন্যায় প্রশ্রয়দাতা উভয়ই অপরাধী। তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গেছেন, “অন্যায় যে করে অন্যায় যে সহে; তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে”।

সম্প্রসারিত ভাবঃ ভালো মন্দ, ন্যায় অন্যায় নিয়েই এই সুন্দর পৃথিবী। পৃথিবীতে মানুষ ন্যায় কাজ যেমন করে তেমনি কিছু মানুষ লোভে পড়ে, কখনো কখনো নিজের স্বার্থে অন্যায় কাজ করে। আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা অন্যায় করে। অন্যায় ছোট হোক বা বড়, সেটাকে কখনোই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। কারণ, অন্যায়কারীকে যথাসময়ে শাস্তি দেওয়া না হলে তার দেখাদেখি আরও অনেকে এমন কাজ করতে শুরু করে। তাই আমাদের উচিত অন্যায়কারী ব্যক্তিকে সমাজে হোক বা আইনের সাহায্যে হোক উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া।

অনেকেই অন্যায়কারী ব্যক্তি পরিবারের সদস্য হলে বা আত্মীয় হলে তার অন্যায় গোপন করার চেষ্টা করেন, যেটি একেবারেই অনুচিত। অন্যায় ছোট্ট হোক বা বড়,অন্যায়কারীকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার মানসিকতা সবার ভেতরে থাকা উচিত। অন্যায়কারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে অনেকেই এতে শিক্ষা পাবে। আমাদের সমাজে অনেক সময় অনেক বিত্তশালী ব্যক্তি বা গণ্যমান্য ব্যক্তি অন্যায় করলে অনেকেই সেটা মেনে নেয়।কিন্তু এমনটা কখনোই হতে দেওয়া উচিত নয়।এতে করে ধীরে ধীরে অন্যায় করা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়।

আমরা আমাদের চারপাশে অনেক সময় অন্যায় কিছু হতে দেখলেও আমরা না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাই। এমনটা করা কখনোই উচিত নয়। এতে করে অন্যায় কারী প্রশ্রয় পায়। আমরা ভাবি,আমার সাথে তো হচ্ছে না, আমি এই ব্যাপার এড়িয়ে চলি। যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজের সাথে অন্যায় না হচ্ছে ততক্ষণ আমরা চুপ থাকি। এভাবে দেখা যায়, যখন নিজের বিপদ আসে তখন পাশে আর কাউকে পাওয়া যায় না। সবাই চেয়ে চেয়ে দেখে। তাই আমাদের সকলের উচিত অন্যায় হতে দেখলে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়ানো। হোক সেটা আইনের আশ্রয় নিয়ে বা সামাজিকভাবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে না তুললে সেই অন্যায় পুরো সমাজকে, দেশকে গ্রাস করে নেয়।

অন্যায়কারীর অন্যায় মেনে নেওয়া, এটাও সমান অপরাধ। অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে দাঁড়ালে অনেকে নানান ক্ষতির সম্মুখীন হন। কিন্তু তারপরও আমাদের উচিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে আওয়াজ তোলা।কথায় আছে, ‘একতাই বল’। সকলে একতাবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে একটু দেরিতে হলেও সুফল আসবে। কারণ ন্যায়ের শক্তির কাছো অন্যায় পরাজিত হতে বাধ্য।কিন্তু আমাদের সমাজে মানুষ অনেক ক্ষেত্রে অন্যায়ের সাথে আপোষ করে, এমনটা করা একেবারেই অনুচিত। এতে করে অন্যায়কারী আরো বেশি অন্যায় করে। অন্যায়কারী প্রভাবশালী হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমাদের সকলের উচিত নিজের পরিবারের সদস্যদের এসব বিষয়ে সব সময় শিখানো। একটা মানুষ পরিবারের কাছে যেটা শিখে সেটাই পরবর্তী জীবনে প্রতিফলিত হয়। তাই আমাদের উচিত নিজেদের পরিবারে,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই শিক্ষাগুলো দেওয়া। এতে করে তারা অন্যায় কাজ করা থেকে বিরত থাকবে।

মন্তব্যঃ এছাড়াও আমাদের সবার উচিত নিজের কাছে নিজেকে প্রতিজ্ঞা করা অন্যায় কাজ করবো না,কাউকে অন্যায় কাজে সাহায্য করবো না,অন্যায়কে মেনে নেব না। অন্যায়কারী অন্যায় কাজে প্রশ্রয় না পেলে সে ধীরে ধীরে অন্যায় কাজ থেকে দূরে সরে দাঁড়াবে।অন্যায়কারীকে অন্যায় কাজ থেকে দূরে সরাতে তার পরিবার, বন্ধু আর আত্মীয় স্বজনও সহযোগিতা করতে পারে।অন্যায় কাজের কুফল সম্পর্কে বুঝানো,অন্যায় কাজ করতে বাধা দেওয়া।

পঠিত : ২৯০ বার

মন্তব্য: ০