Alapon

চরম মিথ্যাবাদী বঙ্কিমচন্দ্র ও তার "রাজসিংহ"

বাংলার ইতিহাসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সবচাইতে মিথ্যাবাদী, ইতিহাস বিকৃতিকারী, ইসলাম বিদ্বেষী, গোড়া ঔপন্যাসিক ছিলেন। যদিওবা বাংলা ভাষার প্রথম স্বার্থক উপন্যাসের রচয়িতা ইনি তবুও তার "রাজসিংহ" উপন্যাসটি ইতিহাস বিকৃতির চরম পর্যায়ের স্বাক্ষী হয়ে আছে।



বঙ্কিমচন্দ্র তার শেখা প্রায় সবকটি গালি ‘রাজসিংহ ’ উপন্যাসে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেছে। ‘ম্লেচ্ছ’ হতে শুরু করে ‘যবন’ পর্যন্ত। এমনকি প্রাচীনকালে বৌদ্ধদের দেয়া ‘নেড়ে’ গালিটাকেও সে উহ্য রাখেনি। শুধু তাই নয়, তারা ম্লেচ্ছ, যবন, নেড়ে ছাড়াও মুসলমানদের পাষ-, পাপিষ্ঠ, পাপাত্মা, দুরাত্মা, দুরাশয়, নরাধম, নরপিশাচ, পাতকী, বানর, এঁড়ে, দেড়ে, ধেড়ে, অজ্ঞান, অকৃতজ্ঞ, ইতর এ জাতীয় কোনো গালি দিতে বাদ দেয়নি।

এমনকি তিনি এই উপন্যাসটিতে নারীর প্রতি চরম মানবতা লঙ্ঘনকারী সতীদাহ প্রথাকে হিন্দু বউদের স্বামীর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে বুঝাতে চেয়েছেন। বাস্তব জীবনেও তিনি সতীদাহ প্রথার কট্টর পক্ষপাতিত্ত করতেন।

আবার হিন্দু রাজা কর্তৃক কখনো কখনো মসজিদ ভাঙ্গার ডাক ও দিয়েছেন। মুসলিমদের বীরত্ব গাঁথা ভারতবর্ষ জয়ের ইতিহাস কে না জানে, অথচ তিনি দাবী করছেন মুসলিম যুদ্ধের সময় সামনে গরু রেখে যুদ্ধ করেছিলেন,তাই হিন্দুরা বিনা যুদ্ধে সেখান থেকে সরে যেতো আর মুসলিমরা এইভাবে ভারতবর্ষ জয় করে।

এমনকি মুঘল সম্রাট আরঙ্গজেবকে রানা রাজসিংহের বিপরীতে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যেন আরঙ্গজেবের মতো দুরাচারি সম্রাট ইতিহাসে দ্বিতীয়টি ছিলো না। আর রাজা রাজ সিংহকে এমনভাবে পরিচয় করিয়েছেন যে, তিনিই উপন্যাসের নায়ক হয়ে গিয়েছেন। অথচ সম্রাট আরোঙ্গজেবের কৃতিত্ব ভারতবর্ষের ইতিহাসগ্রন্থগুলোর রন্ধে রন্ধে ছুঁয়ে আছে। অথচ এসব ইতিহাস গ্রন্থগুলো বেশিরভাগ লেখকরাই হিন্দুধর্মের ছিলেন। তবুও উপন্যাসের প্রতিনিধিত্বকারী রানা রাজসিংহকে ইতিহাসবেত্তারাও তাদের ইতিহাস গ্রন্থে জায়গা দেননি। অথচ বঙ্কিমচন্দ্র কি পরিমাণ মুসলিম বিদ্বেষী হলে এইভাবে ইতিহাস বিকৃতি করতে পারেন তা সহজেই অনুমেয়।

"শতবর্ষের ফেরারি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়" প্রবন্ধের ২২ পৃষ্ঠায় আহমদ ছফা বলেন, … উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্র সত্যকে প্রকাশ করেন নি। দেবী চৌধুরানী আর আনন্দমঠে সেটা স্পষ্ট হয়।

একই প্রবন্ধের ২৩_২৪ পৃষ্ঠায় তিনি বলেন, …" হিন্দু-মুসলমানের সম্মিলিত লড়াইকে একক হিন্দুর লড়াই দেখাতে গিয়ে ইতিহাসের এমন একটা বিকলাঙ্গ অগ্রগতির খাত খনন করেছেন, যা বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসকে একটা কানা গলির ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছে, তার প্রভাব এতো সুদূরপ্রসারী হয়েছে, ভারতের জাতীয় ইতিহাস অদ্যাবধি স্বাভাবিক পথটির সন্ধান করে নিতে পারেনি। … হিন্দু-মুসলমানদের মিলনভূমি ভারতকে একটা সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিবর্তে হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর বঙ্কিমচন্দ্র ইতিহাসকে মেনে নিতে অস্বীকার করলেন … হিন্দু সমাজের উত্থানের উন্মেষ পর্বে রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের মধ্যে হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন এতোটা গাঢ়মূল হয়েছিলো যে, তার অভিঘাত মুসলমান সম্প্রদায়কে আরেকটি ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে ঠেলে দিয়েছিল"।

এসব হিন্দু কবি-সাহিত্যিকদের ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতা ও চরম বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন মুসলমানরা। বাংলা সাহিত্যের নামে বিকৃত ইতিহাস পড়িয়ে আমাদের প্রজন্মগুলোকে একেবারে ধ্বংসের দারপ্রান্তে এনে দিয়েছে কিছু নাস্তিক মননের বাঙালি সাহিত্যিকরা। এরা বাংলা সাহিত্যের নামে জ্ঞানের ভুবনে ডেকে আলোর পথ দেখায় অথচ এর ভিত্তিটাই মিথ্যে দিয়ে রচিত।

সুতরাং এই প্রজন্মের নিকট সঠিক, সত্য, নির্মল ইতিহাস তুলে ধরাই যেন সময়ের দাবী হয়ে দাড়িয়েছে।

—জোনায়েদ ইসলাম

পঠিত : ৪২০ বার

মন্তব্য: ০