Alapon

প্লিজ! জুলুম এবং নির্মমতার রশিকে আর প্রলম্বিত করবেন না


বিয়ে অনুষ্ঠানের অতিথিদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ

রাজশাহী নগরীতে একজন সাবেক শিবির নেতার বিয়ে অনুষ্ঠানে হানা দিয়ে বিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ এবং সেখানে আগত আটজন অতিথিকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। পুলিশের ভাষ্য মতে তারা সেখানে নাশকতার ষড়যন্ত্র করছিলো। এ গল্প অবশ্য আমরা বিগত ১৪ বছর যাবত শুনে আসছি। একই গল্প শুনতে শুনতে আর ভালো লাগে না। গল্পগুলো যতো সহজে পুলিশের ডায়রীতে লেখা হয়। এজাহারের পাতায় কম্পোজ করা হয় এবং আদালেতে উপস্থাপন করা হয়। বিষয়গুলো ততো সহজ নয়। একজন যুবকের জন্য বিয়ে তার জীবনের সবচেয়ে স্মৃতিময় বিষয়গুলোর একটি। এর পাশাপাশি একজন নারীর জীবনে বিয়ে তার জীবনকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে সাজাবার এক মহা আয়োজন। জীবনের এই চূড়ান্ত পরিবর্তনের ক্ষণে হঠাৎ সেই অনুষ্ঠানে পুলিশের হানা এবং বিয়ে বন্ধ করে দিয়ে আগত মেহমানদের মতো পৈশাচিক কাজ যারা করছেন, জানিনা তাদের বিবেকবোধ বলতে কিছু বাকী আছে কি না ?
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ মারফত যতটুকু জানা গেছে তার সারমর্ম হচ্ছে :
রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার আলীর মোড় এলাকার একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে বর পক্ষ হয়ে যোগ দেন রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুস সামাদ। কিন্তু পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই বিয়ে বাড়ি ঘেরাও করে অধ্যাপক আব্দুস সামাদ, শরিফুজ্জামান হাসান এবং কনে পক্ষসহ ৬জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং বিবাহ অনুষ্ঠান ভন্ডুল করে দেয়।


এই সেই বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি (ফেসবুকের সৌজন্যে প্রাপ্ত) যাকে পুলিশের খাতায় লেখা হয়েছে নাশকতার ষড়যন্ত্র

এই যে বিয়ে ভন্ডুল করার কাজটি পুলিশ করলো, এখন যেই পুলিশেরা এই কাজটি করলো, তাদের প্রত্যেকের অবশ্যই সন্তান আছে। তাদের সন্তানদের বিয়ে অনুষ্ঠানে যদি এমন ঘটনা ঘটে তকে তাদের কেমন লাগবে। এটা তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করা উচিৎ। যারা বিয়ে ভন্ডুল করলেন, তাদের আরো একটি বিষয় স্মরণ করা উচিৎ, হয়তো তাদেরকে দুনিয়ায় কারো কাছে এ বিষয়ে জবাবদিহী করতে হবে না। হয়তো বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ আরো একশত বছর ক্ষমতায় থাকবে। হয়তো এই পুলিশ ভাইয়েরাও আরো ১০০ বছর বাঁচবেন। কিন্তু কারো জীবনই চিরস্থায়ী নয়। প্রতিটি মানুষকে দুনিয়ার এ মোহমায়া ত্যাগ করে একদিন পরবর্তী জীবনের সীমাহীন জীবনের পথে পিাড়ি জামাতে হবে। সেই জীবনের শুরু হবে একটি বিচারের মাধ্যমে। সেই বিচার দিবসে এই জুলুমের কি কোনো জবাব দিতে হবে না? আল্লাহ কি আপনাদের এই সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবেন না ? সেই দিন আপনারা কি জবাব দিবেন ? নিজের হৃদয়ের জানালা যদি সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে না থাকে নিজের কাছে নিজে একটু প্রশ্ন করুন। পুলিশ যে এই ঘটনা এবারেই প্রথম করেছে এমন নয়। ইতোপূর্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ কর্তক এ ধরনের ঘটনা আরো সংঘটিত হয়েছে, এমনকি কোনো কারণ ছাড়াই জানাজার নামাজ থেকে মুসুল্লীদের গণগ্রেফতারের ঘটনাও বিরল নয়।
এ দেশের মানুষ জীবনের নির্মমতা বুঝতে শিখেছে নানান আচরণ আর ষড়যন্ত্র তত্বের মাধ্যমে। বিয়ে জন্ম মৃুত্য কোনো কিছুতেই যেন আমাদের করিৎকর্মা পুলিশ ভাইয়েরা থামছে না। এ ধরনের দুটি ঘটনা দিয়ে লেখার ইতি টানবো। ঢাকার একটি স্কুলের শিক্ষক ’’র’’ অদ্যাক্ষরে তার নাম। ২০১৫ সালে তার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়েছে , হলরুম ভাড়া করা হয়েছে। অতিথি দাওয়াত দেয়া হয়েছে। প্রায় পাচশত লোকের আয়োজন। বিয়ের আগে অতিথি দাওয়াত, অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে সে ব্যস্ত। বিয়ের ঠিক এক সপ্তাহ আগে কোনো কারণ ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করে নাশকতার মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দেয়া হয়। বেচারারা বিয়ে আটকে যায়। বিয়ে আটকে যাওয়ার চেয়ে বড়ো কথা এই সময়ে যে বাবা তার মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেছেন, এতো লোক দাওয়াত দিয়েয়েছেন, তার অবস্থাটা কেমন? একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন। যে মেয়েটি আর এক সপ্তাহ পরে বিয়ের পিড়িতে বসবে, তার অবস্থাটি কেমন? দীর্ঘ তিন মাস জেল খেটে সেই যুবক বের হয়েছে এবং পরে ঘরোয়া পরিবেশে মাত্র ১০/১৫ জন লোক নিয়ে তার বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়েছে। এর মাছে সেই যুবকের পরিবার আর মেয়ের পরিবারের ওপর দিয়ে কি পরিমাণ ঝড় বয়ে গেছে তা কি কেউ কল্পনা করতে পারে ? মেয়ের বাবাবে কতজন প্রশ্ন করেছে, কোন ধরনের প্রশ্ন করেছে, কিংবা মেয়েটিকে আত্মীয় বন্ধবীরা কি ধরনের প্রশ্ন করতে পারে, একটু ভাবুন তো?
ঢাকার একটি মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষকতার সুবাদে তার একটি লাইব্রেরীও ছিলো। ২০১৩ সালে তিনি দোকানে বসা হঠাৎ পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। দীর্ঘ তিন মাস কারা ভোগের পর যখন তার জামিন হয়, তখন তার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা, এমনকি ডাক্তার যে সম্ভাব্য তারিখ দিয়েছে তা অতি সন্নিকটে। কিন্তু জামিন হলেও তিনি বাড়িতে আসতে পারেন নি, কাশিমপুর কারাগারের গেট থেকে তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। এভাবে এক সপ্তাহ পর তার জামিন করা হলে আবার জেলগেটে তাকে গ্রেফতার করা হয়। একে একে ছয়বার জামিন হয় এবং ছয়বার তাকে জেলগেটে গ্রেফতার করে নতুন নতুন মামলায় আসামী করে জেলে প্রেরণ করা হয়। তিনি জেলে থাকা অবস্থায়ই তার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে। যেই মূহুর্তে স্বামীর সবচেয়ে বেশি কাছে থাকার কথা, তখন স্ত্রী তার স্বামী কাছে পায়নি। সন্তানের মূখ দেখার সূযোগ পাননি পিতা। এই গ্রেফতার, মামলা এবং আটকের কারণে বেচার শিক্ষকতার চাকুরিটি চলে যায়। সামান্য আয়ের উৎস লাইব্রেরিটিও ঠিকমতো পরিচালনা করতে না পারার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। দূর্বিসহ এক জীবন নিয়ে তিনি আজ সংগ্রাম করছেন। বাংলাদেশে এমন ঘটে যাওয়া হাজারো ঘটনার দুটি মাত্র উল্লেখ করলাম। নির্যতিত এ সব মানুষের ফরিয়াদ কি কারো কাছে পৌছে না ? অবশ্যই একজন দেখছেন, যার কাছে আমাদের সকলকে ফিরে যেতে হবে। সকল জুলুম একটি শেষ হয়। এই জুলুমেরও রশি টাান উচিৎ, নচেৎ আল্লহা এমন হেচকা টান মারতে পারেন যে কাউকে আর ছাড় দিবেন না।
কিন্তু বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার এবং তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার মূল শক্তি পুলিশ মনে হয় সহেজে থামবার পাত্র নয়। আরাভের মতো খুনিরা পালিয়ে গেলে তারা টের পায় না কেন ? কিন্তু বিয়ে অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতারা খাবার খাচ্ছেন, সেই খাবারের প্রতিটি লোকমায় নাশকতা হচ্ছে তা পুলিশ টের পায়। এটি যে সুষ্পষ্ট জুলুম তাতে কোনো সন্দেহ থাকা উচিৎ নয়। কোনো জুলুমই আল্লাহর নজরের বাইরে নয়। এটি সবারই মনে রাখা উচিৎ। সূরা ইবারহীমের ৪২-৪৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
‘‘যালিমরা যা করছে সে ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে কক্ষনো উদাসীন মনে কর না। তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত ঢিল দিচ্ছেন যেদিন ভয়ে আতঙ্কে চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা আতঙ্কিত হয়ে মাথা তুলে পালাতে থাকবে, দৃষ্টি তাদের নিজেদের পানে ফিরে আসবে না, আর তাদের দিল উড়ে যাবে। কাজেই মানুষকে সতর্ক কর সেদিনের ব্যাপারে যেদিন তাদের উপর ‘আযাব আসবে। যারা যুলম করেছিল তারা তখন বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে অল্পদিনের জন্য সময় দাও, আমরা তোমার আহবানে সাড়া দিব আর রসূলদের কথা মেনে চলব।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলনি যে, তোমাদের কক্ষনো পতন ঘটবে না? অথচ তোমরা সেই লোকগুলোর বাসভূমিতে বসবাস করছিলে যারা নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল আর তোমাদেরকে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়া হয়েছিল আমি তাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিলাম। আর আমি বহু উদাহরণ টেনে তোমাদেরকে বুঝিয়েও দিয়েছিলাম। তারা যে চক্রান্ত করেছিল তা ছিল সত্যিই ভয়ানক, কিন্তু তাদের চক্রান্ত আল্লাহর দৃষ্টির ভিতরেই ছিল, যদিও তাদের চক্রান্তগুলো এমন ছিল না যে, তাতে পর্বতও টলে যেত। (অবস্থা যতই প্রতিকূল হোক না কেন) তুমি কক্ষনো মনে কর না যে, আল্লাহ তাঁর রসূলগণকে দেয়া ওয়া‘দা খেলাপ করবেন, আল্লাহ মহা প্রতাপশালী, প্রবল প্রতিশোধ গ্রহণকারী’’
আল্লাহ যখন প্রতিশোধ নেয়া শুরু করবেন তখন তিনি কিন্ত মহা প্রতিশোধ নিবেন।

পঠিত : ৫১০ বার

মন্তব্য: ০