Alapon

ইফতার আয়োজনে সতর্কতা

রমজান মাসের ইফতার এক অনন্য ইবাদত। আল্লাহতায়ালা কর্র্তৃক ঘোষিত রোজাদারের জন্য রোজার প্রতিদানস্বরূপ দুই আনন্দঘন সময়ের একটি ইফতারি, অন্যটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ। আল্লাহর সাক্ষাতের সঙ্গে যোগকৃত আনন্দ হলো ইফতার। এর দ্বারাই বোঝা যায়, ইফতার কত ফজিলত ও বরকতময়। রোজাদার সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের আগ মুহূর্তে ইফতারি নিয়ে বসে থাকে; নির্দিষ্ট সময়ের এক মিনিট আগে ইফতার করে না। কোনো রোজাদারকে কোটি টাকা দিলেও সে ইফতারের দুই মিনিট আগে রোজা ভাঙবে না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ ও তার ইবাদতের প্রতি মুমিনের এ এক অনন্য ভালোবাসা। অথচ প্রগতিশীলতার নামে আমরা আজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রাজনৈতিক দল, বন্ধু সার্কেল, সমিতি, ফোরাম ইত্যাদি উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলগুলোকে প্রথাগত অনুষ্ঠানে পরিণত করেছি।

বেশ কিছুদিন আগ পর্যন্ত এসব আয়োজনের ব্যানারে লেখা থাকত ‘ইফতার মাহফিল’ কিন্তু মাহফিল শব্দে ভিন্ন ‘গন্ধ’ আসে, তাই মাহফিল কেটে নতুন যোগ হয়েছে ‘ইফতার পার্টি।’ এমনিতে রোজাদারের ইফতারি করানো অনেক সওয়াবের কাজ। সেই ধারণা থেকে একজন দুজন করে অনেক মানুষকে সামর্থ্যবানরা ইফতার করানোর শুরু করে। এটাই পরে নানা রূপে ও পরিসরে ইফতার মাহফিলে পরিণত হয়। কিন্তু হাল সময়ে এসে ইফতার মাহফিল হারিয়েছে তার মাহাত্ম্য ও ভাব গাম্ভীর্য। সারাদিন রোজা রেখে ইফতার পার্টি করে রোজাকে উপবাসে পরিণত করা শোভনীয় নয়। সত্যিকারের কোনো রোজাদার এমনটা করতে পারেন না। কেননা রোজাদার শয়তানের আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকে।

রোজার মাসে আল্লাহতায়ালা শয়তানকে বন্দি করে থাকেন। কিন্তু সেটা জিন শয়তান ইবলিসকে বন্দি করা হয়। মানুষ শয়তানদের বন্দি করা হয় না। ফলে তারা কথিত ইফতার পার্টি নাম দিয়ে শয়তানের মিলনমেলা আয়োজন করে। অনেকাংশেই আবার দেখা যায় রোজা না রেখেই ইফতার পার্টিতে যোগ দিচ্ছে; রোজাদার ভাব নিয়ে বসে থাকে। রোজাহীন মানুষ ইফতার পার্টিতে যোগ দিতে লজ্জা অনুভব করা উচিত। বিনা দাওয়াতে অংশগ্রহণ করাটা যেমন মন্দ স্বভাবের কাজ, তেমনি রোজা না রেখে রোজাদারের ভাব নিয়ে ইফতার পার্টি করাটা মন্দ স্বভাবের কাজ। রোজা বা ইফতারি কোনো ফ্যাশন নয়, এটা ধর্মীয় ইবাদত। এমন দ্বিধান্বিত কোনোভাবেই কাম্য নয়।

রোজা একটি ফরজ ইবাদত, এর নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে। রোজার প্রতিদান আল্লাহ স্বয়ং দেবেন বলে ঘোষণা রয়েছে। যারা জীবনভর রোজা-নামাজের বিরোধিতা করেছে তারাও এখন রোজার প্রশংসা করে।

তারা বলত রোজা উপবাস, এটা স্বাস্থ্যহানির প্রথম দ্বার। অথচ তারাই আজ প্লেটো-অ্যারিস্টটলের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘মস্তিষ্কের বিকাশের স্বার্থে উপবাস উপকারী। যারা চিকিৎসা বিজ্ঞান দিয়ে রোজাকে মোকাবিলার প্রয়াস চালাতেন, তারা আজ বলছেন; রোজা রক্তের কোলেস্টরেল কমায়, এটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অথচ কোনো মুমিন এসব উপকারের জন্য রোজা পালন কিংবা নামাজ আদায় করেন না। তারা এগুলো পালন করেন আল্লাহর হুকুম পালনের নিমিত্তে। সুতরাং মুমিনদের ইবাদতের অকল্যাণ নিয়ে হাজার কোটি যুক্তি ও তত্ত্ব শুনিয়ে ইবাদতবিমুখ করা যাবে না।

মুমিন-মুসলমানরা বিশ্বাস করে, আল্লাহতায়ালা কর্র্তৃক নির্ধারিত কোনো কিছুই অকল্যাণকর নয়। ইসলাম বিদ্বেষীরা মুমিনদের বিশ্বাস নিয়ে খেলতে না পেরে বর্তমানে নতুন মাত্রায় নিজেদের ইসলামের সেবক হিসেবে উপস্থাপন করতে বদ্ধ পরিকর। এরই একটি হলো- ইফতার পার্টির রেওয়াজ। সামর্থ্য থাকলে প্রতিদিন অথবা কোনো এক দিন এক বা একাধিক ইফতার করান, এতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। ইফতার মাহফিল কোনো ধর্মীয় বা সৎউদ্দেশ্যে (রোজাদারের সেবা, বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার স্বার্থে) করতে পারেন, কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, যদি না সেখানে শরিয়াবিরোধী কোনো অশালীন কাজ না করা হয়। তবে ইফতার মাহফিল যদি লোক দেখানোর জন্য হয়, সেখানে শরিয়াবিরোধী কোনো কাজ (গান শোনা, বাজে আলোচনা, পর্দার খেলাফ নানা কাজ) হয়, তবে তা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হবে না। এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয়।

পঠিত : ২২৪ বার

মন্তব্য: ০