Alapon

জান্নাতে যাওয়ার পূর্বশর্ত ও প্রতিবন্ধকতা




রহমত,মাগফিরাত এবং নাজাতের ঢালে মোড়ানো মাহে রমাদান আমাদের মাঝে আবারো উপস্তিত হয়েছে। চতুর্দিকে আনন্দের ঢল নেমেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার উপস্থিতিতে মসজিদগুলো যেন নতুনসাজে সজ্জিত হয়েছে। আল্লাহ তাআ’লা আমাদের এই পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ।

রমাদান মাস আসলেই সবার মনে একটা চাওয়া থাকে, তা হলো- আল্লাহ তাআ’লা যেন আমাদের অতীত জীবনের সমস্ত ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেন। এজন্য আমরা আল্লাহ তাআ’লার কাছে বেশি বেশি ইস্তেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করি।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমাদান মাস পেয়েও নিজের গুনাহ ক্ষমা করাতে পারলো না,তার জন্য ধ্বংস। সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ের দিকে মানুষ মুখাপেক্ষী হবে তা হলো- ক্ষমা। বলা যায়, এটা জান্নাতে যাওয়ার পূর্বশর্ত। কারণ, আল্লাহ তাআ’লা যদি কাউকে ক্ষমা না করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এজন্য আল্লাহ তাআ’লা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর সাথীদের ক্ষমা করে দেয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন-

অতএব, আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। (সূরা আলে ইমরান,আয়াত নং ১৫৯)

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআ’লা তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সেই সমস্ত ভুলগুলো ক্ষমা করবেন যা তাঁর তত্ত্বাবধানে রয়েছে। অর্থাৎ তাঁর যে সমস্ত হক আমাদের আদায় করার কথা ছিল কিন্তু আমরা করিনি কিংবা করতে পারিনি, শুধু তাই ক্ষমা করবেন। (যেমন- নামাজ, রোজা,হজ্ব ইত্যাদি) কিন্তু যে সমস্ত বিষয়গুলো বান্দার তত্বাবধানে থাকবে তথা বান্দার হক; তা কিন্তু আল্লাহ তাআ’লা ক্ষমা করবেন না। এমনকি যারা দ্বীনের জন্য আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণ করে তাঁদের থেকেও যদি কোন বান্দা কোন হক পেয়ে থাকে, তাহলে তা আল্লাহ তাআ’লা ক্ষমা করবেন না, যতক্ষণ না সংশ্লিষ্ট বান্দা ক্ষমা না করে। বলা যায়, এটিই হবে বান্দার জন্য জান্নাতে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা।

তাই, আমাদের উচিত, রমাদান মাসের এই সময়গুলোতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি মানুষকে ক্ষমা করে দেয়া এবং জানামতে কোন মানুষের হক নষ্ট করে থাকলে কিংবা কোন পাওনা থেকে থাকলে তা পরিশোধ করা। পরিশোধ করতে না পারলে ক্ষমা চাওয়া। নিজের কোন অধিকার কেউ হরন করে থাকলে তা ক্ষমা করে দেয়া এবং বড় পাওনা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিকে অবহিত করা। আমরা যখন অন্যজনকে ক্ষমা করে দিব তখন অন্যরাও আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবে। এভাবে আমাদের ক্ষমা করা এবং ক্ষমা চাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। কারণ, হাশরের ময়দানটা এমন কঠিন হবে যে, সেদিন কেউ কাউকে ক্ষমা করবে না।

এক সাহাবীকে লক্ষ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই ব্যক্তি হলো জান্নাতি। কেউ কোন জান্নাতি মানুষ দেখতে চাইলে একে দেখো। সে এমন কি আমল করে যার কারণে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জান্নাতী ঘোষণা করেছেন সেটা দেখার জন্য অন্য একজন সাহাবী তাঁর সাথে তাঁর বাড়িতে গেলেন। তাঁর সাথে থাকলেন। কিন্তু বিশেষ কোন আমল করতে দেখলেন না। তখন পর্যবেক্ষণকারী সাহাবী তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন-

আমি তো তেমন কোন আমল করি না। তবে একটি কাজ আমি নিয়মিত করি। তা হলো- রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিই। সুবহানাল্লাহ।

আর যারা বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআ’লা তাদের সব ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দেন, তাদের সম্মান বাড়িয়ে দেন এবং অজানা উৎস থেকে তাদেরকে বে হিসাব রিজিক দান করেন।

অতএব, আমাদের উচিত; আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেয়া। এই দু’টির সংমিশ্রণ ঘটলে আমাদের জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ হয়ে যেতে পারে ইনশা আল্লাহ।

~জাহেদুল ইসলাম

পঠিত : ২৬৭ বার

মন্তব্য: ০