Alapon

কুরআনের সাথে পথচলা : পর্ব ০১

কুরআনের সাথে পথচলা : পর্ব ০১
-মাছুম বিল্লাহ বিন নূর

কখন‌ও কি এমন হয়েছে যে কুরআন পড়তে গিয়ে কোনো আয়াতে চোখ আটকে গিয়েছে? কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলেন! মন বিগলিত হয়ে গেল‌। চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো‌। আয়াতটা বারবার তিলাওয়াত করছেন; ৬,৭,৮... বার। নিজেকে প্রশ্ন করলেন, "আমার অবস্থা কি? আমি কোথায় আছি? আমার পরিণতি কি হবে?"

ঠিক এমন‌ই একটি মুহূর্তের সাক্ষী হলাম আজকে। পবিত্র রমাদান মাসে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা সবচেয়ে মূল্যবান উপহার, জীবন চলার গাইডলাইন পবিত্র কুরআন সম্পূর্ণটা একবার অর্থসহ পড়ার লক্ষ্যে তিলাওয়াত করছিলাম ৩য়-৪র্থ পারা থেকে। সূরা আলে ইমরান। হৃদয়ে নাড়া লাগা শুরু হয়েছে ১২৯ নাম্বার আয়াত থেকেই। যদিও অর্থ পড়ছিলাম না, শুধু তিলাওয়াত। কিছু আয়াতের অর্থ আগে থেকে জানা ছিল বিধায় তিলাওয়াতের ফাঁকে ফাঁকে অর্থের দিকেও খানিকটা চোখ বুলালাম। একটা পর্যায়ে চোখ এসে আটকে গেল ১৮৫ নাম্বার আয়াতে‌।

কুল্লু নাফসিন যা-ইক্বাতুল মাউত!

খুব পরিচিত আয়াত। আমরা সাধারণত এমন এক সময় এটা তিলাওয়াত করে থাকি, যার জন্য তিলাওয়াত করি সে না এটা শুনতে পারে আর না বুঝতে পারে। কিন্তু আমরা খুব কম সংখ্যক‌ই এখান থেকে সবক নিয়ে থাকি।
অথচ এই একটি আয়াত‌ই আমাদের হেদায়াতের জন্য যথেষ্ঠ হতে পারে, যদি আমরা বিবেক-বুদ্ধি খাটাই।

আজকের মূল আলোচনা আয়াতের পরের অংশ নিয়ে। এখানে আল্লাহ তায়ালা মানবজীবনের সফলতা-ব্যর্থতার সবক দিয়েছেন।

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ ؕ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ ﴿۱۸۵﴾

"প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর ‘অবশ্যই কিয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী।"

তারাই সফল যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা (জাহান্নামের) আগুন থেকে রক্ষা করবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আয়াতের শেষাংশ থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, যারা আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে অগ্রাধিকার দেয় তারা সেদিন ব্যর্থ হয়ে যাবে। দুনিয়ার জীবনকে এখানে আল্লাহ তায়ালা ধোঁকার সামগ্রী বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ দুনিয়ার সুখ-সম্ভোগকে চাকচিক্যময় করা হয়েছে। আর শয়তান আমাদেরকে আখিরাতের পরিণতিকে দূরের বিষয় হিসেবে আখ্যা দিয়ে 'নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকির খাতায় শূণ্য থাক' নীতিতে দুনিয়ার চাকচিক্যে আচ্ছন্ন করে রাখে।

আয়াতের زُحْزِحَ (যুহযিহা) শব্দটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এর ব্যাখ্যায় শাইখ ড. আব্দুস সালাম আজাদী হাফিজাহুল্লাহ বলেন, "زُحْزِحَ শব্দটি উচ্চারণ করতে গেলেও একটা Wave (ঢেউ) তৈরি হচ্ছে। আমাদের জীবন থেকে সময়‌ও এভাবে একটার পর একটা ঢেউয়ের মতো বয়ে চলেছে অনন্তকালের দিকে। তাই প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে চিন্তা করতে হবে আমি আমার জীবন (সময়কে) যেভাবে অতিবাহিত করছি, তাতে কি আমি ক্রমাগত জান্নাতের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, নাকি জাহান্নামের দিকে ?

এই একটি শব্দ নিয়ে যদি কেউ চিন্তা করে তাহলে সে মুক্তির পথ পেয়ে যাবে। হেদায়াতের জন্য এই একটি শব্দ‌ও যথেষ্ঠ হতে পারে। যদি কেউ প্রতি মুহুর্তে ভাবে-
'আমার প্রতিটি কথা, কাজ, চালচলন, আচার-ব্যবহার, আমার চিন্তা, কর্মনীতি আমাকে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে ? আমার জীবন থেকে সময় নামক ঢেউ একের পর এক আছড়ে পড়ছে মৃত্যুর কোলে। আমি নিজেকে প্রতি মুহুর্তে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছি? জান্নাতের দিকে ? নাকি জাহান্নামের দিকে ?'

পঠিত : ৫১০ বার

মন্তব্য: ৪

২০২৩-০৩-৩১ ২৩:২৭

User
জোনায়েদ ইসলাম অনিক

মাশাআল্লাহ! খুব সুন্দর লিখেছেন ❤️

submit

২০২৩-০৪-০১ ২০:৩৫

User
Masum Billah Bin Nur :

শুকরান।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কুরআনের আলোয় জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন।

submit

২০২৩-০৪-০১ ১০:৫৯

User
জীবনের গল্প

শুকরিয়া, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জীবনকে কুরআনের আলোয় আলোকিত করুক

submit

২০২৩-০৪-০১ ২০:৩৫

User
Masum Billah Bin Nur :

আমিন।

submit