Alapon

যুগোপযোগী ইসলাম এবং মাওলানা মওদুদীর চিন্তা




ইমাম মওদুদী রহিমাহুল্লাহ বলেন-

“আমরা যাকে সত্য মনে করি, তার ‘যুগ’ যদি অতীত হয়েও থাকে তবুও আমাদের মধ্যে যুগের ‘কান’ ধরে সত্যের দিকে ফিরিয়ে আনার মতো ব্যক্তিত্ব ও আত্মজ্ঞান বর্তমান থাকা বাঞ্ছণীয়। কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তিত করা কাপুরুষের নীতি হতে পারে, কোনো আদর্শবাদী মানুষের নয়।”



উস্তাদ মওদুদীর এই বাক্যটি —যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে কঠোর অথচ এটাই ইসলামের মূল প্রাণ সত্তা এবং সত্যিকারের দাবি— থেকে আমরা এটাই শিখতে পারি যে, ইসলামকে যুগোপযোগী করার চিন্তা করা নয়, বরং আমাদেরকে যুগের কান ধরে যুগকেই করতে হবে ইসলাম উপযোগী। ইসলামকে যুগের খাচায় বন্দি করার চেষ্টা নয়, বরং যুগকেই ইসলামের খাচায় বন্দি করার মতো ঈমানী দৃঢ়তা ও ইলমি-আমলি-আখলাকি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। ইসলামের খাচায় যুগকে বন্দী করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে হবে।

এবং যারা যুগ পরিবর্তনের সাথে নিজ-আদর্শের পরিবর্তন করতে উঠে পড়ে লেগে যায়, তাদের সেই নীতিকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইমাম, ইমাম মওদুদী কাপুরুষোচিত নীতি বলেই দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বর্ণনা করেছেন।

মূলত মানুষের মাঝে এমন মনোভাব (ইসলামকে যুগোপযোগী করার মনোভাব) কেন সৃষ্টি হয়, সেটাও মাওলানা তার অন্য আরেকটি গ্রন্থে সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন।

উস্তাদ মওদুদী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন-
যে ব্যক্তি পাশ্চাত্যের মাপকাঠিতে বিশ্বাসী, তার নিকট তো ইসলামের প্রতিটি বস্তুই সংশোধনযোগ্য মনে হবে। সে ইসলামী নির্দেশাবলীর ব্যাখ্যা করতে বসলে তা পরিবর্তন করেই ছাড়বে।  ( বই: পর্দা ও ইসলাম)


এছাড়াও মানুষ সাধারণত দুনিয়ার স্বাভাবিক চমকপ্রদ জীবনের মান-মর্যদার জন্যেই একটু কথিত আধুনিক, কথিত যুগোপযোগী হতে চায়। সে কারণেই কেউ ইসলাম ছেড়ে অন্যদিকে রওয়ানা দেয়, আবার কেউ ইসলামটাকেই সেসব মতবাদের আলোকে সাজাতে চায়। আর সে বিষয়টা নিয়েও মাওলানা মওদুদী রহিমাহুল্লাহ মুসলমানদের সচেতন করে বলেছেন যে, "পার্থিব মান ও মর্যাদা আমাদের মাবুদ নয়-প্রভু নয়, তার মনস্তুষ্টির জন্য আমরা যত্র-তত্র ধাবিত হতে পারি না।"

আসলে আমরা আল্লাহর বিধানের ওপর ঈমান আনার পর, তথা মুসলিম হবার পরেও যদি ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় পরিমাপ করার বাটখারা সেকুলার-কাফিরদের কাছ থেকে খরিদ করি, তাহলে তো সেই বাটখারায় খোদাদ্রোহী-তাগুত-ফাসিকদের সবকিছুই উত্তম, শ্রেষ্ঠ, ভালো, অনুসরণযোগ্যই মনে হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহর প্রদত্ত আসমানী বিধানের সবটুকুই খারাপ মনে হবে।

আর যদি বাটখারা হিসেবে দীনকে গ্রহণ করতে পারি, আমাদের জীবনের দৈনন্দিন যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে খোদাদ্রোহী-তাগুত-ফাসিকদের বাটখারায় না মেপে আল্লাহ প্রদত্ত ওহীর ইলম দিয়ে মেপে মেপে দেখতে পারি তাহলে একেবারে সব স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ আর পরিস্কার হয়ে যাবে আমাদের কাছে। এবং ওহীকেই একমাত্র প্রণিধানযোগ্য মাপকাঠি হিসেবে ঠিক/গ্রহণ করতে পারলেই কুফরের মনস্তাত্ত্বিক পরাজয় ঘটবে, ইন শা আল্লাহ। না হয় আমরা ইসলামকে কাটছাঁট করতে করতে  এর বিধানকে বিকৃত করতে করতে পশমহীন কম্বলের মতোই পরিণত করে ফেলবো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদেরকে এসব থেকে মুক্ত রাখুন।

যে জান্নাত অর্জন করার জন্য ইসলামি আন্দোলনে শামিল হয়েছি, সে সুশোভিত সুরভিত মনোহর মনোরম জান্নাতের পথের বিরাম-বিরতিহীন এক অপ্রতিরোধ্য যাত্রী করুন। আর আমাদের জীবনের সকল কিছুই এই দীন থেকেই নেওয়ার মতো ইলম ও ঈমান প্রদান করুন।

আমাদের দীন হোক আমাদের রাজনীতি, আমাদের দীন হোক আমাদের সভ্যতার সুতিকাগার, আমাদের দীন হোক আমাদের সংস্কৃতি।

এমন দীন থেকে আল্লাহ  আমাদের হেফাজত করুন, যে দীনে সংস্কৃতি খুঁজতে হয় অন্য মতাদর্শ থেকে। যে দীনে রাজনীতি-অর্থনীতি ও সমাজনীতির সমাধান খুঁজতে হয় দীনের বাহিরে থেকে। আ-মী-ন, ইয়া রাব্বাল আ'লামিন!


~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৪৩১ বার

মন্তব্য: ০