Alapon

পৃথিবীর বুকে ধেয়ে আসছে আরও বড়ো ভূমিকম্প...



শুক্রবারে কিয়ামত হবে যতদূর জানি সহীহ হাদিস থেকে এমনটা জানা যায়। কোন এক ভোরে হয়তো এভাবেই আল্লাহর আজাব আমাদের গ্রাস করবে কিন্তু আমরা তওবা করার সুযোগটাও পাবনা। “(আসলে) আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের)

নিদর্শনসমূহ পাঠাই” (সূরা ইসরা : ৫৯) । ‘জনপদের অধিবাসীরা কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে যে আমার আজাব (নিঝুম) রাতে তাদের কাছে আসবে না, যখন তারা (গভীর) ঘুমে (বিভোর হয়ে) থাকবে!’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৭) । আল্লাহ অসংখ্য জাতিকে রাতের শেষ প্রহরের আজাব দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমাদের সেই নিশ্চিত ঘটনার আগেই আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদের ভূমিকম্পসহ সকল ধরণের কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে হেফজত করুন।

মহান আল্লাহ অতীত জাতির উপর প্রেরিত আজাব সম্পর্কে বলেন : “অতপর এদের সবাইকে আমি (তাদের) নিজ নিজ গুণাহের কারণে পাকড়াও করেছি, এদের কারো উপর প্রচ- ঝড় পাঠিয়েছি (প্রচ- পাথরের বৃষ্টি) {যেভাবে লূত জাতির উপর প্রেরণ করা হয়েছিল}, কাউকে মহাগর্জন এসে আঘাত হেনেছে {যেভাবে শুআইব (আ.)-এর জাতির উপর আঘাত হেনেছিল}, কাউকে আমি জমিনের নীচে গেড়ে দিয়েছি {যেভাবে কারুন জাতিদের উপর এসেছিল}, আবার কাউকে আমি (পানিতে) ডুবিয়ে দিয়েছি {নূহ জাতী ও ফেরাউন ও তার লোকদেরকে যেভাবে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল}, (মূলত) আল্লাহ তাআলা এমন ছিলেন না যে তিনি এদের উপর জুলুম করেছেন, জুলুম তো বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর করেছে”। (সূরা আল আনকাবূত : ৪০)

রাসুল (সা.) কিয়ামত সম্পর্কে বলেছেন, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং খুনখারাবি বাড়বে, তোমাদের সম্পদ এতো বাড়বে যে, উপচে পড়বে। (বোখারি, হাদিস নং : ৯৭৯)

“অচিরেই আমি আমার (কুদরতের) নিদর্শনসমূহ দিগন্ত বলয়ে প্রদর্শন করবো এবং তাদের নিজেদের মধ্যেও (তা আমি দেখিয়ে দিবো), যতোক্ষণ পর্যন্ত তাদের উপর এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এই (কুরআনই মূলত) সত্য; একথা কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার মালিক সবকিছু সম্পর্কে অবহিত?” (সূরা হা-মীম আস সিজদা : ৫৩)

“বল : আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর, তোমাদের উপর থেকে (আসমান থেকে) অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম, অথবা তিনি তোমাদের দল-উপদলে বিভক্ত করে একদলকে আরেক দলের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাতেও সম্পূর্ণরূপে সক্ষম।” (সূরা আল আনআম : ৬৫)

আল-বুখারী তার সহীহ বর্ণনায় জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন : যখন “তোমাদের উপর থেকে (আসমান থেকে)” নাযিল হলো তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “আমি তোমার সম্মুখ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”, অথবা যখন, “অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম” নাজিল হলো, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : “আমি তোমার সম্মুখ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”। (সহীহ আল বুখারী, ৫/১৯৩)

মুসলিমদের জন্য যেকোনো বিপদে দোয়া ইউনুস বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো সঙ্কট ও অস্থিতিশীল সময়ে এই দোয়া পড়া সুন্নত। আল্লাহর নবী ইউনুস (আ.) বিপদে পড়ে বারবার এই দোয়া পড়েছিলেন। তখন আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে তাকে সঙ্কট থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
অর্থ: তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তুমি পবিত্র সুমহান। আমি নিশ্চয়ই জালিমদের দলভুক্ত।

রাত্রে ঘুমানোর আগে একবার আয়াতুল কুরসি পড়ে নিতে পারেন। এই আয়াতের ফযিলত আল্লাহর কাছে সব চেয়ে বেশি। যে এই আয়াত পড়ে ঘুমোতে যায়, ঘুমন্ত অবস্থায় আল্লাহ তাকে, তার পরিবারকে ও তার প্রতিবেশীকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করেন।

প্রত্যেক মুসলমানের খুবই আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করা উচিত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি জনপদের মানুষগুলো ঈমান আনতো এবং (আল্লাহকে) ভয় করতো, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু তারা (আমার নবীকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করলাম। ’ (সুরা আরাফ : ৯৬)

তাই যখন কোথাও ভূমিকম্প হয় অথবা সূর্যগ্রহণ কিংবা ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে অতি দ্রুত তাওবা করা। তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা। মহান আল্লাহকে বেশি পরিমাণে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে মুক্তির জন্য দরিদ্র ও মিসকিনদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা এবং তাদের দান করাও উচিত। কেননা রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দয়া প্রদর্শন করো, তোমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে। ’ (মুসনাদে আহমদ)

ইতিহাসে আছে, ভূমিকম্প হলে উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তার গভর্নরদের দান-সদকা করার প্রতি জোর দিয়ে চিঠি লিখতেন। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, যা মানুষকে বিপর্যয় (আজাব) থেকে নিরাপদ রাখে। আর তা হলো, যথাসাধ্য সমাজে প্রচলিত জিনা-ব্যভিচার, অন্যায়-অবিচার রোধ করা। হাদিস শরিফে এসেছে, সমাজে ব্যভিচার বেড়ে গেলে ভূমিকম্প হয়।

বলা যায়, ধেয়ে আসছে আরও ভয়াবহ ভূমিকম্প। আমরা শুধু সতর্ক সংকেত দেখছি। সামনে আসল ঘটনা ঘটবে খুবই দ্রুত। তাই কালক্ষেপন না করে নিজেদের শুধরে নেওয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের রক্ষা করুন এবং নিরাপদ রাখুন।

পঠিত : ২২৯ বার

মন্তব্য: ০