Alapon

রমজানে আমরা যে ভুলগুলো সচরাচর করে থাকি...



রমজান মাসে মুসলিমরা সাধারণত যে ভুলগুলো করে থাকে তার মধ্যে আজ যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি তা হল সাহরি। বিখ্যাত আলেম ইবনে মুনযির (রহ.) বলেছেন, মুসলিম উলামাদের মধ্যে এ বিষয়ে ঐক্যমত রয়েছে যে রোজার পূর্বে সাহরি বাঞ্ছনীয়। সাহরি হলো রাতের খাবার, যা আপনি রোজা রাখার প্রস্তুতি হিসেবে খেয়ে থাকেন। রাসূল (সা.) বলেছেন - 'তোমরা সেহেরি খাও। কারণ, সেহেরি বরকত আছে।'[বুখারী ১৮২৩, মুসলিম ১০৯৫নং]

সুবহানাল্লাহ, সাহরি আমাদের জন্য বরকতময়। রাসুল (সা.) আমাদেরকে ইফতার ত্বরান্বিত করতে এবং সাহরি দেরিতে করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। সাহরি খেলে আশীর্বাদ শুধু আমাদের জন্য নয়, সমগ্র মুসলিম উম্মার উপর বর্ষিত হবে। মুসনাদে আহমদে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন—
‘সেহরি পুরোটাই বরকত। অতএব তোমরা সেহরি খাওয়া ছেড়ো না, এক ঢোক পানি হলেও পান করো। কারণ, যারা সেহরি খায়, আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারাও তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন”। [মুসনাদে আহমদ: ১১১০১]

রাসূল (সা.) আরো বলেছেন - তোমরা সেহেরি খেতে অভ্যাসী হও। কারণ, সেহরীই হল বরকতময় খাদ্য।[আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৪০৮১নং]

রাসূল (সা.) আমাদের সাহরি খেতে বলেছেন যাতে রাতের এই খাবার আমাদের শক্তি যোগায়, আমাদের রোজাকে যেন আমরা উপভোগ করি, ইবাদতে মনোনিবেশ করতে পারি, এবং অতিরিক্ত ক্ষুধায় যেন আমরা দুর্বল না হয়ে যাই। এই কারণে বিলম্বে সাহরি করা আমাদের জন্য বাঞ্ছনীয়। এই ক্ষেত্রে আরও একটি ভুল অনেকেই করে থাকেন - রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে বা রাত দশটা এগারোটার মধ্যে সাহরি খেয়ে ফেলেন। বস্তুত সাহরি খাওয়া উচিত ফজরের ঠিক আগে।

সাহরি আমাদের জন্য একটি আর্শিবাদ, কারণ সাহরি খাওয়ার জন্য আমাদেরকে ফজরের আগে উঠতে হয়। আমরা জানি আল্লাহর কাছে দু'আ করার জন্য রাতের শেষাংশ সর্বোত্তম সময়। আল্লাহ চান এই সময় আপনি দু'আ করুন, আল্লাহর কাছে চাইতে থাকুন, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করুন, এবং ফজরের নামাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন -
....وَٱلۡمُسۡتَغۡفِرِينَ بِٱلۡأَسۡحَارِ ....
...এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী...[৩:১৭]
...وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ...
...আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকত...[৫১:১৮]

কুরআনে দুইবার আল্লাহ বলেছেন যারা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সাহারের সময় অর্থাৎ ফজরের ঠিক আগে সেহেরি খাওয়ার সময়। আবু যিনাদ বলেন, 'যখন আমি আমার সাহরি শেষ করে নবীর মসজিদে গেলাম, আমি দেখলাম সবাই জেগে আছে এবং কুরআন পড়ছে বা নামাজ পড়ছে। আনাস (রাsmile বলেন, সুহুর এবং ফজরের আযানের মধ্যবর্তী সময় হলো কুরআনের ৫০ টি আয়াত পড়ার সময়। অর্থাৎ এই সময় খুব সংক্ষিপ্ত। কাজেই আপনাকে সাহরি খাওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে এবং যতটা দেরিতে সম্ভব সাহরি খেতে হবে। দেরিতে সাহরি করার আরেকটি বরকত হলো আপনি ঠিকই ফজরের নামাজের আগে উঠে পড়বেন, এবং সালাতুল ফজর মিস করবেন না।

আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত করেন যারা সাহরির ব্যাপারে যত্নশীল। আমাদের এটাও নিশ্চিত করতে হবে যেন আমরা দেরিতে সাহরি করি যেমন আমাদের রাসূল (সা.) এবং তাঁর সাহাবীরা করতেন। আমর ইবনে মায়মুন বলেছেন, সাহাবায়ে কেরামরা সর্বপ্রথম তাদের রোজা ভঙ্গ করতেন এবং যখন সাহরির সময় হত তখন তারা ফজরের ঠিক আগ পর্যন্ত তা বিলম্বিত করতেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা যেন আমাদের প্রচেষ্টাকে সর্বাত্মক করতে সাহায্য করেন, এবং আমাদের ভাল কাজগুলোকে কবুল করে নেন এই রোজার মাসে।

পঠিত : ৮৮৯ বার

মন্তব্য: ০