Alapon

বিদ্যানন্দ : মতবাদ ও ইন্টারফেইথ মিশনারী




গতবছর বিদ্যানন্দ আমাদের সাথে একটা গেইম খেলে। নেতৃত্ব থেকে সড়ে আসার নাটক সাজিয়ে দ্বীনি চেতনা লালনকারীদের প্রতি সাধারণ মানুষদের মাঝে এক প্রকার ঘৃণাবোধ তৈরি করে। এবং নিজেরা সিম্পেথি অর্জন করে নেয়। এই ধরণের সিম্পেথি গেইমগুলোতে নির্দিষ্ট চেতনাকে কালারিং করা যায় এবং সেই চেতনার ধারকবাহকদের ভিতর স্বীয় বিশ্বাসের প্রতি আপোষ এবং কৈফিয়তবাদী মানসিকতা ঢুকিয়ে দেয়া যায়। (ঐ সময়টাতে বিভিন্ন সেলিব্রেটির পোস্টে আমরা এর বাস্তবতা দেখতে পেয়েছি)। আর এই সুযোগে তারা যেই আদর্শ ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে সেটার জন্যও একটা নিরাপদ ও প্রশ্নহীন প্লেস তৈরি করা যায় সাধারণ লোকদের ভিতর।

বিদ্যানন্দ নিছক দাতব্য কোন প্রতিষ্ঠান নয়। বরং সেবার পাশাপাশি তারা নির্দিষ্ট আদর্শ মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটা কেবল দাবিই নয়; বরং তাদের বিভিন্ন কার্যক্রম ও ভাষ্যে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। কিছুদিন আগে তাদের পেইজ থেকে আপলোড করা এক পোস্টে দেখানো হয়, কিছু মাদ্রাসার ছাত্র পূজার ভোজ আয়োজনে খাবার গ্রহণ করছে।[১] যদিও সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কোন মাদ্রাসার ছাত্রই এই ধরণের আয়োজনে অংশগ্রহণ করেনি।[২] কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে তারা এই চিত্রগুলো দেখিয়ে মুসলিমদের ঈমানী গায়রাত ও কুফুরের প্রতি সহজাত ঘৃণাবোধকে নষ্ট করে দিতে চাচ্ছে। এর আগে তারা পূজার অনুষ্ঠান থেকে এক মাদ্রাসার ছাত্রকে পাঞ্জাবি প্রদানের একটি চিত্র বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকাতে ছড়িয়ে দেয়। [৩]

মানবতা ও সেবার নামে তারা এই ধরণের আরো অনেক চিত্র ও শ্লোগানকে প্রচার করছে। যেই চিত্র ও শ্লোগানগুলো ঈমান ও কুফুরের সীমানাকে মিটিয়ে দেয়। একজন মুসলিমের ঈমানকে নষ্ট করে কুফুরে প্রবেশ করিয়ে দেয়। এমনকি সংশ্লিষ্ট পোস্টগুলোর কমেন্ট বক্সে মুসলিম নামধারী আইডি সমূহের মন্তব্য দেখলে শিউরে উঠতে হয়। কত মুসলিম আজকে হিউম্যানিজম আর ইন্টারফেইথের ধর্মে দীক্ষিত হয়ে যাচ্ছে নিজের অজান্তেই।
আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বিষয় হল, আমরা আল্লাহর বান্দা। আমাদের সর্বপ্রথম পরিচয় হল আমরা মুসলিম। আমাদের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হল, আমাদের ঈমান। এই জায়গাগুলোতে কোন কম্প্রোমাইজের সুযোগ আল্লাহ আমাদের দেননি। আমরা আল্লাহর নির্ধারণ করে দেয়া অধিকার ও মানবতাকে বাস্তবায়ন করি। মানব রচিত কোন অধিকার ও মানবতার ধারণাকে আমরা বিশ্বাস করি না। বরং ঘৃণাসহ সেগুলোকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি।

আমাদের শরীয়ত অবস্থাভেদে অমুসলিমদেরকে তাদের অভাব, চিকিৎসা, আহার সহ এই ধরণের মানবিক জায়গাগুলোতে সাহায্য করার অনুমোদন দেয়। কিন্তু তাদের ধর্মীয়, কুফুরি, শিরকি আয়োজনে কোন ধরণের সহায়তা ও অংশগ্রহণের বৈধতা দেয় না। মহান আল্লাহ তা'য়ালা কুফুর ও শিরককে আমাদের কাছে ঘৃণিত করে দিয়েছেন। ফলে এর থেকে সর্বপ্রকার দূরুত্ব বজায় রাখি। আমাদের রব সৎ কাজে একে অপরকে সহায়তা করতে বলেছেন। কিন্তু কুফুর ও শিরকি কর্মকাণ্ড থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আমরা বিশ্বাস করি ধর্মে ধর্মে ভেদাভেদ আছে। এই ভেদাভেদ ঈমান ও কুফুরের। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দ্বীনে ইসলাম একমাত্র সত্য, বাকি সব ধর্ম মিথ্যা ও বাতিল। আমরা বিশ্বাস করি, একজন মানুষ যত ভাল কাজই করুক- ইসলাম গ্রহণ না করলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামে যাবে। এবং আমাদের একজন নিম্নতম মুসলিমও তার থেকে উত্তম। কিন্তু এই ভেদাভেদের কারণে আমরা আল্লাহপ্রদত্ত ন্যায়ের সীমাকে অতিক্রম করি না। আল্লাহর জন্যই আমাদের সম্পর্ক ও ভালবাসা, আল্লাহর জন্যই আমাদের বিচ্ছেদ ও ঘৃণা।

বিদ্যানন্দ ইসলামের এই মৌলিক বিশ্বাসগুলোতেই আঘাত হানছে। উপরোক্ত বিশ্বাসগুলো পোষণ করা ছাড়া কেউ মুসলিম থাকতে পারে না। মানবতার দোহাই দিয়ে এই বিশ্বাসগুলোকে তারা উগ্র হিসেবে আখ্যায়িত করছে। মানবতার দোহাই দিয়ে উল্লেখিত বিশ্বাসগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা, অস্বীকার করা কিংবা উগ্র মনে করার নামই হিউম্যানিজম। হিউম্যানিজম ইসলাম বিরোধী একটি দর্শন, ধর্ম ও বিশ্বাস। আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়তকে বাদ দিয়ে মানব কল্পনাপ্রসূত হিউম্যানিটির ধারণাকে প্রাধান্য দেয়া প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দ্বীনকে অস্বীকার করারই নামান্তর। আজ অনেক অবুঝ মুসলিম হিউম্যানিজমের ধর্মে দীক্ষিত হয়ে আল্লাহর দেয়া শরীয়তকে ঘৃণা করছে এবং সেটাকে উগ্র মনে করছে। এর পিছনে ভূমিকা রাখছে বিদ্যানন্দের মত সেবাদানকারী নানা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্ব। সুতরাং মানবসেবা করতে গিয়ে হিউম্যানিজমে দীক্ষিত হয়ে আমরা যেন আখেরাতে এর মূল্য না হারিয়ে ফেলি, আমরা যেন সেবার নামে নিজের ঈমানকে প্রত্যাখ্যান করে না বসি- সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এবং এই ধরণের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের ব্যাপারে মুসলিমদের ভিতর সচেতনা তৈরি করতে হবে।

পঠিত : ২৬০ বার

মন্তব্য: ০