Alapon

"নিরাপদে যাবো জান্নাতে "



শতো ব্যস্ততার বন্দরে নোঙর করে জীবন-তরি। সে-সব ব্যস্ততার ভিড়ে আজ কতোদিন কুরআন-হাদিস ছুঁয়েও দেখতে পারিনা। অথচ আল-কুরআন ছিলো রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামের হৃদয়ের বসন্ত। হৃদয়ের সেই যে বসন্ত, সে বসন্তের ফুল ফুটেছে তাঁর মুখে। তাঁর সকল কাজেকর্মে। আজ একটু ফ্রি আছি। এতোটা ব্যাস্ততা নেই। জীবনের ওপর স্বস্তির পরশ এনে দিতে একটু অবসরের প্রয়োজন। সালাতে ফজরের সুমধুর আজান-ধ্বনি শোনার পর ঘুম থেকে উঠে শীতল পানিতে পবিত্র হয়ে গিয়ে হাজির হলাম মাসজিদে। শামিল হলাম সালাতুল ফজরের জামায়াতে।


সালাত শেষে তানিম আজ সকল মুসল্লিকে সময়-সুযোগ থাকলে বসতে বলেছে। অনেকেই বসেছে। আমিও বসেছি। আমাকে দেখেই তানিম মুচকি হেসে দিয়েছে। ওর কুচকুচে কালো দাড়ি সমেত সুন্দর মুখাবয়বের মুচকি হাসির মিষ্টতা আমার হৃদয় ছুঁয়েছে!


তানিমের হাদিস পাঠ শেষ হবার পর আমরা মাসজিদ হতে বের হয়ে চলছি বাড়ির পানে, ভোরের স্বচ্ছ-পবিত্র বাতাসের স্নিগ্ধতা গায়ে মেখে মেখে। আসলে ভোরের যে পবিত্র বাতাস, সেই বাতাসের আদর যখন শরীর ছুঁয়ে দেয় তখন সারাটাদিন মনটা ফুরফুরে থাকে। সতেজ থাকে। সেই সতেজতা বয়ে বেড়ায় সারা দেহের প্রতিটা অঙ্গে অঙ্গে। শিরা-উপশিরায়। রক্তকণিকায়।


আমাদের পাশ দিয়েই শফিক চাচা অতিক্রম করে দোকানের দিকে যাচ্ছেন। আমরা সালাম দিলাম। কিন্তু পেছন দিক থেকে পরশ ও তমল আসলো সামনে। ওরা না আমাদেরকে সালাম দিলো না শফিক চাজাকে সালাম দিলো। আমি এতে ভীষণ ব্যাথিত হলাম। কিন্তু তানিম রাখঢাক না করে তাঁদের সালাম প্রদান করলো। ওরা চোখে তুলে তাকাতেই তাদের চোখের অবস্থা দেখে আমি নিদারুণ ভড়কে গেলাম ! ওদের চোখগুলো রক্তজবার মতোন কী টুকটুকে লাল। মাসজিদে সালাতেও তাদের দেখিনি আমরা। আমার বুঝতে বাকী রইলো না যে, ওরা সারারাত জেগে জেগে মাদকের ভয়ংকর নেশায় মেতে উঠেছে।

তানিম যেমন কৌশল জানে তেমনি বুঝাতেও জানে। সহজ করে সব বিষয় মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সে দারুণ রকমের পটু। দাওয়াতি কাজে, সত্য ও সুন্দরের দিকে তার কৌশলী আহ্বানের জুড়ি নেই।

তোহ আমরা হাঁটতে হাঁটতে ওদের প্রায় কাছাকাছি। তবে সামান্য একহাত পেছনে আমরা। এর মাঝে তানিম হঠাৎ করে মাদকের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি, আর্থিক, সামাজিক, ধর্মীয়সহ সব ধরনের ক্ষতির কথা একটু একটু করে বলে শেষ করেছে আমাকে। একটু জোরেশোরে। যেনো আশেপাশের লোকজনও শুনতে পায়।

আমরা প্রায় বাড়ির কাছাকাছি। পাখির কিচিরমিচির ধীরে ধীরে কমে আসছে। আর সোনারঙা সূর্যটা আস্তে আস্তে তার নরম আলোর কিরণটাকে ঝাঁজালো রোঁদে রূপান্তর করছে। এর মধ্যেই তানিম বলে উঠলো দোস্ত আজকে বাড়িতে ফেরার পূর্বে তাহলে আমরা একটা হাদিস দিয়ে আজকের ভোরের বাতাস মাখানো আলাপন শেষ করি। কেমন? আমিও মাথা নেড় সায় দিলাম। তানিম শুকনো একটা কাশি দিয়ে লেকচারারের মতো করেই বলতে লাগলো, দ্যাখো দোস্ত, আমরা সকলেই জান্নাতে যেতে চাই। আমরা চাই আমাদের ঠাঁই হোক ফিরদৌসের সবুজ আঙিনায়। আরো চাই সেই জান্নাতে যাওয়াটা আমাদের জন্যে যেনো হয় নিরাপদ নিশ্চিন্ত। তো সে নিরপাদে জান্নাতে যাওয়ার উপোয় বলে দিয়েছেন আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হাদিসটার বর্ণনাকারী হলেন আব্দুল্লাহ ইবন সালাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেন নবিজী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;
‘হে মানব সকল ! তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন করো, (অভাবীদের) আহার করাও, এবং গভীর রজনীতে দুনিয়ার মানুষেরা যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন স্বলাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করো। তাহলে নিশ্চিন্তে জান্নাতে গমন করতে পারবে। (রিয়াদুস সালেহীন: তৃতীয় খন্ড-১১৬৭)
হাদিসটা শুনেই আমার মনের মাঝে এক চিলতে আনন্দ ঝলমলিয়ে উঠলো। আমি আনন্দের সাথে বলে উঠলাম হ্যাঁ’রে দোস্ত, আজ থেকে মৌলিক ইবাদতের পাশাপাশি এই তিনটে কাজের ব্যাপক প্রচলন করবো। আর জান্নাতুল ফিরদৌসে গমন করবো ভাবনাহীন। নিরাপদে। নিশ্চিন্তে।


আমরা একে অন্যকে সালাম বিনিময় করে যার যার বাড়ির দিকে রওয়ানা করার সময় সামনে থেকে হঠাৎ তমল আমাদের সালাম দিয়ে উঠলো। সাথে পরশও। মিষ্টি হাসিতে তাদের সালামের জবাব দিয়ে আমরা হাঁটা ধরলাম বাড়ির পানে।


~রেদওয়ান রাওয়াহ

পঠিত : ১২০ বার

মন্তব্য: ০