Alapon

কিয়ামত কখন হবে ?

কিয়ামতের দিনক্ষণ নিয়ে কাফের-মুশরিকদের খুব আগ্রহ আর তাড়াহুড়ো ছিল। রাসূলুল্লাহ (স.) কে তারা বারবার প্রশ্ন করতো, কবে আসবে সেই ক্ষণ ? কবে হবে কিয়ামত?

আল্লাহ বলেন,

یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ السَّاعَۃِ اَیَّانَ مُرۡسٰہَا ؕ قُلۡ اِنَّمَا عِلۡمُہَا عِنۡدَ رَبِّیۡ ۚ لَا یُجَلِّیۡہَا لِوَقۡتِہَاۤ اِلَّا ہُوَ ؕۘؔ ثَقُلَتۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ لَا تَاۡتِیۡکُمۡ اِلَّا بَغۡتَۃً ؕ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ کَاَنَّکَ حَفِیٌّ عَنۡہَا ؕ قُلۡ اِنَّمَا عِلۡمُہَا عِنۡدَ اللّٰہِ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۸۷

তারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করে, ‘তা কখন ঘটবে’? তুমি বল, ‘এর জ্ঞান তো রয়েছে আমার রবের নিকট। তিনিই এর নির্ধারিত সময়ে তা প্রকাশ করবেন। আসমানসমূহ ও যমীনের উপর তা (কিয়ামত) কঠিন হবে। তা তোমাদের নিকট হঠাৎ এসে পড়বে। তারা তোমাকে প্রশ্ন করছে যেন তুমি এ সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকট আছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না’। (সূরা আ'রাফ : ১৮৭)


وَ یَقُوۡلُوۡنَ مَتٰی ہٰذَا الۡوَعۡدُ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ {۲۵} قُلۡ اِنَّمَا الۡعِلۡمُ عِنۡدَ اللّٰہِ ۪ وَ اِنَّمَاۤ اَنَا نَذِیۡرٌ مُّبِیۡنٌ ﴿۲۶﴾
আর তারা বলে, ‘সে ওয়াদা কখন বাস্তবায়িত হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই নিকট। আর আমি তো স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র’। (সূরা মুলক : ২৫-২৬)


আল্লাহ সময়টা গোপন রেখেছেন। তিনি বলেন,

[q]اِنَّ السَّاعَۃَ اٰتِیَۃٌ اَکَادُ اُخۡفِیۡہَا لِتُجۡزٰی کُلُّ نَفۡسٍۭ بِمَا تَسۡعٰی ﴿۱۵﴾

‘নিশ্চয় কিয়ামত আসবে; আমি তা গোপন রাখতে চাই যাতে প্রত্যেককে স্বীয় চেষ্টা-সাধনা অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া যায়’। (সূরা ত্বহা - ১৫)


یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ السَّاعَۃِ اَیَّانَ مُرۡسٰہَا ﴿ؕ۴۲﴾ فِیۡمَ اَنۡتَ مِنۡ ذِکۡرٰىہَا ﴿ؕ۴۳﴾ اِلٰی رَبِّکَ مُنۡتَہٰىہَا ﴿ؕ۴۴﴾

তারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, ‘তা কখন ঘটবে’? তা উল্লেখ করার কি জ্ঞান তোমার আছে? এর প্রকৃত জ্ঞান তোমার রবের কাছেই। (সূরা নাযিয়াত : ৪২-৪৪)


আল্লাহ সময়টা গোপন রেখেছেন। অথচ এই যুগে মুসলিমরা এসব নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। যেখানে আল্লাহ তায়ালা নিজেই এই সময়টা গোপন রেখেছেন, সেখানে এর দিন-তারিখ বা কোন বছর বা শতাব্দীতে এটি সংঘটিত হবে, এসব বলার হেতু কী ? বিশেষ করে কিছু স্বনামধন্য আলেমগণ এটা নিয়ে খুব বিশ্লেষণ করছেন। তাঁরা না পারেন ঘন্টা-মিনিট সহ বলে দিতে‌ যে কবে-কখন কিয়ামত সংঘটিত হবে। অথচ উম্মাহ হাজারটা জটিল সমস্যায় জর্জরিত। গভীর এক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করছে প্রতিটি ক্ষণ। সেসব নিয়ে আর‌ও অনেক কাজ করার আছে।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৯০% মুসলিম ছাত্র কুরআন পড়তে জানে না। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলকে (স.) তাঁদের সত্তা ও গুণাবলীতে তাঁদের সাথে পরিচিত নয়, এমন তরুণদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। প্রগতিবাদের নামে যাচ্ছেতাই সাহিত্য পড়ে ঈমানকে সন্দহযুক্ত করে রেখেছে যুবসমাজের একটা বড় অংশ। অথচ এসব নিয়ে কোনো কর্মসূচি নেই। নেই প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা।

আর আমরা পড়ে আছি, কিয়ামত কবে হবে, কিভাবে হবে, ফেইসবুকে লাইভ দেখা যাবে কিনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। হ্যাঁ, কিয়ামত তো অবশ্যি হবে। তার পূর্বে দাজ্জালের ফিৎনার ব্যাপারটিও রয়েছে বটে। এই ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (স) আমাদেরকে সতর্ক করেছেন।

আল্লাহ বলেন,

فَذٰلِکَ یَوۡمَئِذٍ یَّوۡمٌ عَسِیۡرٌ ۙ﴿۹﴾
আর সেদিন হবে কঠিন দিন।
(সূরা মুদ্দাসসির : ০৯)



اِنَّاۤ اَنۡذَرۡنٰکُمۡ عَذَابًا قَرِیۡبًا ۬ۚۖ یَّوۡمَ یَنۡظُرُ الۡمَرۡءُ مَا قَدَّمَتۡ یَدٰہُ وَ یَقُوۡلُ الۡکٰفِرُ یٰلَیۡتَنِیۡ کُنۡتُ تُرٰبًا ﴿٪۴۰﴾

নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে একটি নিকটবর্তী আযাব সম্পর্কে সতর্ক করলাম। যেদিন মানুষ দেখতে পাবে, তার দু’হাত কী অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কাফির বলবে ‘হায়, আমি যদি মাটি হতাম’! (সূরা নাবা : ৪০)


কিয়ামত দিবসের ভয় দেখিয়ে আল্লাহ মূলত আমাদের দুনিয়ার জীবনের আমলের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে আমরা সেই ভয়বহ দিনের কি প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার ঈমান কতটুকু মজবুত, কতটুকু আমল আমি করছি, রবের আনুগত্যের মানদণ্ডে নিজেকে উত্তীর্ণ করতে পারছি কিনা।

[b]কিন্তু আমরা কি নিয়ে পড়ে আছি ?


কিয়ামতের আলোচনায় সর্বদাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরষ্কার, শাস্তি বা ভীতি প্রদর্শন করেছেন। আর কিছু নিদর্শন বলে দিয়েছেন, কিন্তু দিনক্ষণ ঠিক করে দেননি। আর গায়েবের বিষয় নিয়ে গবেষণা করাটাও উম্মতের কাজ নয়। এটা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও করেননি‌। তিনি সবসময় তাঁর উম্মতকে সতর্ক করতে চেয়েছেন কিয়ামতে ভয়াবহতা থেকে। দাজ্জালের ফিৎনা থেকে।

এক হাদিসে তিনি বলেন,
সালিম (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মাঝে দাঁড়ালেন। প্রথমে তিনি আল্লাহ তা‘আলার যথাযথ প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জাল সম্পর্কে উল্লেখ করলেন। আর বললেন, আমি তোমাদের দাজ্জাল হতে সতর্ক করে দিচ্ছি। প্রত্যেক নবীই তাঁর সম্প্রদায়কে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। নূহ (‘আঃ) তাঁর সম্প্রদায়কে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে তার সম্পর্কে এমন একটি কথা জানিয়ে দিব, যা কোন নবী তাঁর সম্প্রদায়কে জানাননি। তোমরা জেনে রাখ যে, সে হবে এক চক্ষু বিশিষ্ট আর অবশ্যই আল্লাহ এক চক্ষু বিশিষ্ট নন।
(সহিহ বুখারী : ৩০৫৭)


তিনি নিজেও দাজ্জালের ফিৎনা থেকে আশ্রয় চাইতেন।
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন যে, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে, সালাতের ভিতরে দাজ্জালের ফিতনা হতে পানাহ চাইতে শুনেছি।
(সহিহ বুখারী : ৭১২৯)


এই ব্যাপারে আর‌ও অসংখ্য হাদিস রয়েছে, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কিয়ামত, কিয়ামতপূর্ব ফিৎনা ইত্যাদি থেকে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। ঈমান মজবুত করতে বলেছেন, ফিৎনার ধরন উল্লেখ করে তা থেকে বাঁচার পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন। নিজে এই ফিৎনা থেকে বাঁচার দোয়া করেছেন, উম্মতকে দোয়া করতে উৎসাহিত করেছেন। এর বাইরে গিয়ে তিনি এর দিনক্ষণ বের করার জন্য নিজে যেমন চেষ্টা করেননি, কোনো সাহাবিকে এই দায়িত্ব‌ও দেননি এমনকি তাঁর কোনো কথায় এটাও প্রতীয়মান হয় না যে, তিনি তাঁর উম্মতকে এটা নিয়ে গবেষণা করতে বলেছেন। এই বিষয়ে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের (স.) সতর্কবাণী আমাদের জন্য যথেষ্ঠ।

আমাদের উচিত এই সীমার মধ্যেই অবস্থান করা। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল (স.) এই ব্যাপারে যতটুকু সতর্ক করেছেন, যতটুকু প্রস্তুতি নিতে বলেছেন, আমরা তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকি। যেহেতু এটা গায়েবের বিষয়, আগ বাড়িয়ে গবেষণা করার সুযোগ কোথায় আর প্রয়োজনটাই বা কী ? হ্যাঁ, কিয়ামতের ভয়াবহতা, তা থেকে বাঁচার উপায়, ঈমান মজবুতিকরণ ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপাক আলোচনা হ‌ওয়া উচিত, কিন্তু দিনক্ষণ নয়।

আসুন উম্মাহর প্রকৃত সমস্যা সমাধানের দিকে দৃষ্টি দিই। উম্মাহর সদস্যদের ঈমান রক্ষা ও মজবুতির জন্য কাজ করি। আমাদের যুবসমাজকে অধঃপতন থেকে রক্ষা করি। অযথা বিষয় নিয়ে পড়ে থেকে সময় নষ্ট না করি। এখনও অনেক কাজ বাকি। মঞ্জিল অনেক দূরে। পথিকদের রসদ কম, আরোহীরা দূর্বল। এখানে ফোকাস করা প্রয়োজন।

আল্লাহ আমাদের সকল ধরনের ফিৎনা থেকে হেফাজত করুন। নিজেদেরকে উম্মাহর সম্পদ হিসেবে তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

পঠিত : ৩১৭ বার

মন্তব্য: ০