Alapon

অ্যান্ড্রূ টেইট কাদের ক্ষতি করে গেলো?



লিবারেল গোষ্ঠী একটা লম্বা সময় পর্যন্ত নিজেরা সমস্ত সামাজিক আর রাজনৈতিক ম্যাসেজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। তাদের বয়ানের বাইরে কিছু গেলেই তারা তাঁকে একঘরে করে ফেলত। কত শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন, কত ছাত্রের শিক্ষাজিবন শেষ হয়ে গেছে কেবল লিবারেল দের বিরুদ্ধে টু শব্দ করায়। তাই পশ্চিমের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেউ ফেমিনিজম কিংবা সমকামীতার বিপক্ষে বলার সাহস করতো না, অ্যাকাডেমিয়াতে হাজার সত্য হলেও নারীবাদের বিপক্ষে একটা পেপার পাবলিশ করতে পর্যন্ত দিত না।
এভাবে ভালোই চলছিল, পশ্চিমারা এর অধিকাংশটা হজমও করে নিয়েছিল।
কিন্তু মাঝখান থেকে হঠাত অ্যান্ড্রু টেইট এসে প্রশ্ন করতে শিখিয়ে গেল। আর বিরাট ক্ষতি করে গেল লিবারেল গুন্ডাগিরির।

১। ফেমিনিস্ট
অ্যান্ড্রূ টেইট সবচে বেশী ক্ষতি যে গোষ্ঠীর করেছে তারা হলো, ফেমিনিস্ট। ২০২২ সালে এসে এইসব ফেমিনিস্টগুলো কী ঘূর্ণাক্ষরেও ভেবেছিল, কেউ তাদের মুখের উপর বলতে পারবে, ফেমিনিজম ভূয়া আর ফেমিনিস্টরা ভন্ড, এই আইডিওলজি পুরুষদের উপর অবিচার করে চলেছে, তারচে কয়েক গুণ বেশি ক্ষতির শিকার নারীরা হয়েছে।

এমনও ঘটেছে, ফেমিনিস্টগুলো হয়তো একটা থিওরি দাড় করাতে ১০-১৫টা রিসার্চ পেপার, ২-৩ টা বই পাবলিশ করেছে। আর অ্যান্ড্রু টেইট একটা ৪০ সেকেন্ডের একটা ভিডিওতে সেই থিসিসের সার্জারি করে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। তাও আবার এমন সহজ যুক্তি দিয়ে, যার সাথে যেকোনো সুস্থ মানুষই একমত হবেন।

এবার আসল মজাটা হলো, ঐ থিসিসগুলো পড়েছে মাত্র এক-দেড়শো মানুষ, আর অ্যান্ড্রুর ভিডিওটা দেখেছে কয়েক কোটি।

জনি ডেপ আর অ্যাম্বারের মামলা যেমন #Metoo এর কবর রচনা করে দিয়েছে, তেমনি অনেকগুলো ফেমিনিস্ট ন্যারেটিভ আর কখনোই মেইন্সট্রিমে আসতে পারবে না, অ্যান্ড্রু অনেক কার্যকর কিছু করে দিয়ে গেল।

অ্যান্ড্রু টেইটকে বাকি অ্যাক্টিভিস্টদের মত ক্যান্সেলও করতে পারেনি, কারণ সে পয়সাওয়ালা। যেসব কচি ফেমিনিস্ট দিনরাত অ্যান্ড্রু টেইটকে গালাগাল করে, অ্যান্ড্রু যদি নিজের ইয়াটে পার্টির দাওয়াত দেয়, দিব্যি ইয়েস ড্যাডি বলে হাজির হয়ে যাবে।

২। বয়েজ ইস্যু

পশ্চিমা মিডিয়া দিনে ২৪ ঘণ্টা পশ্চিমা পুরুষদের যা হতে বলে তার সারমর্ম এই,
একজন নারী যা ইচ্ছে করতে পারবে, তুই করতে গেলে হ্যারাসমেন্ট আর রেইপ অ্যালিগেশন দিয়ে জেলে পাঠাবে ,কোন মেয়ে চড় মেরে বসলে পালটা আঘাত করতে পারবি না, বিয়ের ৫ বছরের মাথায় বউ ডিভোর্স দিয়ে সারাজীবন কষ্ট করে জমানো বাড়িটা প্লাস স্যালারির অর্ধেক নিয়ে যাবে, কিছু বলতে পারবি না, এরপর হোমলেস হবি কি সুইসাইড করবি সেটা তোর ব্যাপার। এই ন্যারেটিভ গত ২০-৩০ বছর ধরে বিলিয়ন-বিলিয়ন টাকা ঢেলে পুশ করা হয়েছে। পশ্চিমা পুরুষরা তা মেনেও নিচ্ছিল। কিন্তু অ্যান্ড্রু টেইট এসে কিছু প্রশ্ন করা শুরু করলো

তবে তরুণদের ব্যাপারটা গ্লোবাল। বিশ্বের ১৮-৩০ বছর বয়সী পুরুষদের ৮০ ভাগই একাতীত্বে ভোগে। এদের কেউ গোণায় ধরে না, এদের জন্য কোনো টিভি শো হয় না, তিরিশে পৌছে পয়সা আয় করার আগ পর্যন্ত এদের কেউ এক পয়সার দাম দেয় না। ফলে এদের সঙ্গী হয় পর্ন, অস্বাস্থ্যকর খাবার আর ভিডিও গেইম। আর ৯০-২০০০ দশকে জন্মানো জেনারেশন পুরো দুনিয়াতেই মোটামুটি ইংরেজীতে দক্ষ হয়ে ওঠে, বলতে না পারলেও বুঝতে পারে। এই কারণেই অ্যান্ড্রুর ম্যাসেজ ইউরোপের ধনী দেশগুলোতে যেমন সাড়া ফেলেছে, তেমনি ফিলিপাইন, মালেশিয়ার মত দেশেও সে সমান জনপ্রিয়।

পশ্চিমা মিডিয়া যেমন তরুণদের সমস্ত পুরুষালী বৈশিষ্ট্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে, পৌরুষ খারাপ- এই জিনিস গেলাচ্ছিল তখন অ্যান্ড্রু টেইট কিছু জিনিস সামনে নিয়ে আসলো। সে তরুণদের এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে, এই সিস্টেম তরুণদের শত্রু। একে পরাজিত করার উপায় হলো, সেই ট্রাডিশনাল পৌরুষ ফেরত আনা। নিজের সুঠাম দেহ আর ডিসেন্ট ইনকাম, এ অর্জনের আগে দুনিয়ার কেউ তোমাকে পাত্তা দেবে না। এই ম্যাসেজ এত সাড়া ফেলেছে, ফিটনেস ইনফুয়েন্সার হামজা আহমেদের মতে, এক অ্যান্ড্রু টেইট যত ছেলেকে জিমে পাঠিয়েছে, পুরো দুনিয়ার বাকি ইনফ্লুয়েন্সাররা মিলেও এত পারেনি।

এখন মিডিয়ার এমন তেলেবেগুনে জলে ওঠার কারণ হলো, অ্যান্ড্রুর ম্যাসেজ অনেক প্রাক্টিকাল। যে ছেলেটা তার কথা শুনে জিমে যাচ্ছে, এবং জীবনে প্রথমবারের মত পজিটিভ কিছু ফিল করতে পারছে, তাঁকে তো মিডিয়া ৫০০ নিউজ করেও বিশ্বাস করাতে পারবে না যে অ্যান্ড্রু টেইট একজন খারাপ লোক।
ওদের বড় ক্ষতিটা এখানেই।

৩। ভন্ড ডানপন্থি
পশ্চিমের ডানপন্থি আন্দোলনগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, একটা ট্রাডিশনাল খ্রিস্টান আরেকটা শ্বেতাংগ বর্ণবাদি গ্রুপ। এই দুই গ্রুপই শুরুর দিকে অ্যান্ড্রুর সাথে একমত ছিল। কারণ ওই কমন শত্রু, ফেমিনিজম, লিবারেলিজম। কিন্তু অ্যান্ড্রু মুসলিম হবার পর থেকেই ওদের ভন্ডামি প্রকাশ পেতে থাকলো।


অ্যান্ড্রু টেইট এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন, ডেমোক্রাটিক ব্লকের মোকাবেলা করার জন্য ইসলাম ছাড়া আর কোনো কার্যকর শক্তি বাকি নেই, তা সে ফেমিনিজম হোক কিংবা পুরো লিবারেলিজম। তার যুক্তি ছিল, ক্রিশ্চিয়ানিটি তার শক্তি হারিয়েছে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে, কোন শক্ত ভিত্তি বাকি নেই, কোন বিধিনিষেধও নেই। যে কারণে ফেমিনিস্টের দল "God is a Women" কিংবা "Jesus is Trans" জিকির তুললেও খ্রিস্টানদের কিছুই করার থাকে না।

তো এই ভুয়া ডানপন্থিদের কদর্য চেহারাটা বেরিয়ে আসে অ্যান্ড্রুর অ্যারেস্টের পর। এতদিন মাথায় করে রাখলেও এখন নানান অভিযোগ নিয়ে আসছে। ইসরায়েলপন্থি ভন্ড যেমন ম্যাট ওয়ালশ, বেন শাপিরো কিংবা জর্ডান পিটারসন সবাই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে।
অ্যান্ড্রু শুধু এদের মৌলিকভাবে দেউলিয়া প্রমাণ করেছে তাই-ইনা, বরং সে ব্যক্তিগতভাবে এত আধ্যাত্মিক প্রভাবশালী যে শুধু তাঁকে দেখেই একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তরুণ ইসলাম গ্রহণ করেছে বা মুসলিম তরুণ দ্বীনের পথে ফিরেছে। যা এইসব ভন্ড ডানপন্থিদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। অ্যান্ড্রু এইসব ভন্ডদেরও ক্ষতি করে গেল।

পঠিত : ২২৫ বার

মন্তব্য: ০