Alapon

কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই



বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে চলছে ধারণা কল্পনার খেলা। ২০১৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর হাতিরঝিলে জমকালো আলোক উৎসব করে হাসিনা সরকার। আমাদের জানানো হয়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে ২০২৩ সালে এসে সেই সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৬ হাজার ৫৫০ হাজার মেগাওয়াট।

কিন্তু আসলে আমাদের সক্ষমতা কত?
যদি পিডিবির কথা সত্য ধরে নেই তাহলে আমাদের সক্ষমতা কোনোভাবেই ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি নয়। পিডিবি বলেছে, গত চাঁদরাতে অর্থাৎ ২১ এপ্রিল রাতে সর্বোচ্চ উৎপাদন ও সরবরাহ হয়েছে। আর সেটা হলো ১৬ হাজার ৩৩ মেগাওয়াট। এর মধ্যে আমদানিকৃত পাওয়ার ছিল ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট।

পিডিবির হিসেব অনুযায়ী আমদানি অংশটুকু বাদ দিলে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৩৩ মেগাওয়াট। যদিও পিডিবি জানিয়েছে তারা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উৎপাদন করেছে আর তা হলো ১৫ হাজার ৬০৪ মেগাওয়াট।

আমাদের চাহিদা কত?
চাঁদ রাতেও প্রচুর লোড শেডিং করতে হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের থেকেও বেশি। আমাদের চাহিদা কত এই বিষয়ে পিডিবি'র সঠিক ধারণা নেই। সঠিক হিসেব করা কঠিন হলেও ধারণা করা যেতে পারে। এই বিষয়ে এ সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে বাংলাদেশের গড় চাহিদা ৯ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট।

অথচ এই ধারণা সঠিক নয়। ১৬ হাজার ৩৩ মেগাওয়াট সরবরাহ করেও প্রচুর লোড শেডিং-এর মুখোমুখি হয়েছে দেশ। ২৬ হাজার মেগাওয়াটের উৎপাদন সক্ষমতায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদায় লোড শেডিং হওয়ার কথা না। অথচ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ এখন থাকে না বললেই চলে।

দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা কত এর সঠিক হিসাব নেই। বিতরণকারী বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থার প্রাক্কলনের ভিত্তিতে বিদ্যুতের চাহিদা হিসাব করা হয়। একই অবস্থা বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতারও। কাগজে-কলমে ২৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি (আমদানিসহ) উৎপাদন সক্ষমতা বলা হলেও, প্রকৃতপক্ষে তা অনেক কম। ফলে সদ্য বিদায়ী রোজায় সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড হলেও, লোডশেডিং সামাল দেয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১০-১২ শতাংশ সবসময়ই রক্ষণাবেক্ষণে থাকে। তাই চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা ১৫ শতাংশ বেশি রাখলেই চলে। বাংলাদেশে চলতি মাসে সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এ হিসাবে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকা উচিত। যদিও তেমনটি হয়নি। বরং বর্তমানে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা নেই। অথচ বলা হচ্ছে সক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। এই যেন কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই।

যদিও প্রকৃতপক্ষে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অনেক কম। বর্তমানে দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয়। চলতি মাসে শুধু দু’দিন সক্ষমতা ছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এর মধ্যে ২১ এপ্রিল রাত ৯টায় (পিক আওয়ার) সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল (আমদানিসহ) ১৬ হাজার ৩৩ মেগাওয়াট। এর আগের দিন (২০ এপ্রিল) রাত ৯টায় সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৬ হাজার ৩০ মেগাওয়াট। তবে জ্বালানি সংকটে ওই দু’দিনও ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি।

যদিও সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যেও ফাঁকি রয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। কারণ ১৭-১৯ এপ্রিল পরপর তিন দিন সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড গড়লেও শুধু সন্ধ্যা থেকে রাতের কিছু সময় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। পরে তা কমিয়ে আনা হয়। এমনকি সর্বোচ্চ উৎপাদনের (রাত ৯টা) তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে বড় ধরনের লোডশেডিং হয়েছিল। উৎপাদন আরও কমিয়ে দেয়া হয়। এতে ওই সময় দিনেও বড় ধরনের লোডশেডিং হয়েছে।

পিডিবি'র কোন তথ্য সঠিক?
উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট
উৎপাদন হচ্ছে ১৫ হাজার মেগাওয়াট
সর্বোচ্চ চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট

এই তথ্যগুলো সঠিক হলে লোডশেডিং-এ নাকাল হওয়ার কথা না। সে সক্ষমতা আসলে সক্ষম নয় সেই সক্ষমতা দিয়ে আমরা কী করিব?

এক অকর্মণ্য লোক তার ভাঙা ঘরের বারান্দা বসে তার বউকে বলছে,
- কয়েকদিন পর সামনের এই জায়গাটাতে একটা দো-চালা টিনের ঘর বাঁধলে কেমন হয়?
- (বউ অবাক হয়ে) ঘরে বাজার নাই তিন দিন ধরে। আপনে কোনো কামে যাচ্ছে না। দো-চালা ঘর আসবে কোথা থেকে?
- আমি তো কল্পনা করতেছি। কল্পনা করতে তো টাকা খরচ হয় না।
- কল্পনায় যেহেতু ঘর তুলতেছেন, তাহলে আর টিনের ঘর কেন? তিনতলা পাকা দালান তুলেন।

গল্পের মতো আমাদেরও দাবি। কল্পনায় সক্ষমতার গল্প যেহেতু তৈরি করতেছেন তবে ২৬ হাজার কেন? ১ লক্ষ মেগাওয়াটের কল্পনা করে উৎসব করেন। হাতিরঝিলে আরো আতশবাজি উৎসব করেন।
এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে সক্ষম হয় নাই, ২৬ হাজারের গল্প ফেঁদে বসে আছে!

পঠিত : ২৭৬ বার

মন্তব্য: ০