Alapon

আজ অধ্যক্ষ আবু তাহেরের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী



আজ ৯ মে। ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবু তাহেরের আজ ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী।

অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহেরের জন্ম ১৯৪৯ সালে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার গহিরায়। চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জ ছোবহানিয়া মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন শেষে চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসা হতে ১৯৬৮ সালে ফাজিল ও ১৯৭০ সালে কামিল পাশ করেন।

১৯৭১ সালের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি অন্যান্য ইসলামপন্থী নেতাদের মতো বিপদে পড়ে যান। তিনি চট্টগ্রাম শহরে আল বদর বাহিনীর নেতা ছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পনের পর আল বদর বাহিনী বিপদে পড়ে যায়। এরপরেও আবু তাহের ভাইয়েরা রণে ভঙ্গ দেননি। চট্টগ্রাম শহরে যাতে ভারতীয় মুশরিক বাহিনী ঢুকতে না পারে সে জন্য তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। কিন্তু সেই প্রতিরোধ বালির বাঁধের মতো ছিল। একদিকে শহরের ভেতরে মুশরিকদের সহযোগীদের উৎপাত অন্যদিকে ট্রেইন্ড ও ভারি অস্ত্রসজ্জিত ভারতীয় বাহিনী।

টিকতে না পেরে আল বদর বাহিনী পিছু হটে। আল বদর বাহিনীর সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয় যাতে শহর ছেড়ে হিজরত করে। আবু তাহের ভাই শহর ছেড়ে চলে যান কক্সবাজার। সেখানে লবণ শ্রমিক হিসেবে শ্রমিকদের সাথে কাজ করতে থাকেন। কিন্তু বেশিদিন পরিচয় লুকিয়ে রাখতে পারেন নি। আওয়ামী লীগাররা তার পরিচয় জানার কাছাকাছি চলে। তাকে বার বার জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় আবু তাহের ভাই সেখান থেকে ছোট একটি নৌকায় করে বিশাল বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে আরাকান হিজরত করেন। রোহিঙ্গাদের সাথে থাকার চেষ্টা করেন। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে আবার হিজরত করেন মিয়ানমারের তৎকালীন রাজধানী রেঙ্গুনে।

রেঙ্গুনে একটি কারখানায় শ্রমিকের চাকুরি নেন। বলাবাহুল্য যে, আল বদর বাহিনীর সদস্যরা কখনোই 'শিক্ষিত' এই পরিচয় দিতেন না। এতে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতো। রেঙ্গুনে একদিন ফজর নামাজ পড়ার সময় নামাজে ইমাম সাহেবের ভুল সংশোধন করে দেন। ইমাম সাহেব বুঝতে পেরেছেন এই ব্যক্তি সাধারণ শ্রমিক নন। কারণ শ্রমিকের সূরা ইমরান মুখস্ত থাকার কথা না।

ইমাম সাহেবের চাপাচাপিতে আবু তাহের ভাই তাঁর আসল পরিচয় দেন। মিয়ানমারের সেই ইমাম সাহেব আবু তাহের ভাইয়ের জন্য একটি মসজিদে ইমামতির চাকুরির ব্যবস্থা করেন। এরপর আবু তাহের ভাই ঢাকার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন।

ঢাকায় পরিস্থিতি বুঝে কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি রেঙ্গুন থেকে ঢাকায় চলে আসেন। টঙ্গি কলেজে ভর্তি হন। আবার পড়ালেখা ও ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ঢাবিতে ভর্তি হন। তিনি টঙ্গী কলেজ হতে এইচ.এস.সি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৭৭ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএসএস ও ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস পাশ করেন। ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠা হলে ছাত্রশিবিরের ঢাবির নেতা হন।

আল বদর বাহিনীর কমান্ডার আবু তাহের ভাই বেঁচে গেলেন, ইসলামবিরোধীদের হাতে চলে যাওয়া জনপদকে নতুনভাবে গড়তে নতুন সংগ্রাম শুরু করেন। সেই সংগ্রামে ইসলামকে আবারো সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। তাদের সেই চেষ্টার ফলে এদেশে ইসলামবিরোধী মঞ্চ 'ঘাদানিক' ও 'গণজাগরণ মঞ্চ' সংঘটিত হলেও হালে পানি পায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় তিনি ১৯৭৯ সালে ডাকসুর তাহের-কাদের পরিষদে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে। মাওলানা আবু তাহের দেশের বৃহত্তম ইসলামী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৩য় সভাপতি হিসেবে ১৯৮০ ও ১৯৮১ এই দু'সেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

আবু তাহের ভাই বেঁচে গেলেও আল বদর বাহিনীর অনেক ভাই শাহদাতবরণ করেছেন। লীগের গুন্ডা, ভারতীয় বাহিনী, বামপন্থী পান্ডা ও কাদের সিদ্দিকীর মতো ডাকাতেরা বহু ভাইকে জবাই করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে।

ছাত্রশিবির থেকে বিদায় নিয়ে কর্মজীবনের শুরুতেই তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর ডবলমুরিং থানার একটি স্বনামধন্য স্কুল এন্ড কলেজ আল-জাবির ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে চট্টগ্রামে সমাজসেবা, সমাজ-সংস্কার, সংবাদ পত্র প্রকাশ ও শিক্ষা খাতের প্রসারে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখেন।

মাওলানা আবু তাহের সাদাসিদে জীবন যাপন করতেন। তিনি প্রায় ১৪ বছর জামায়াতের চট্টগ্রাম মহানগরের আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সাল থেকে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।

দ্য ডেইলী কর্ণফুলী পাবলিকেশন্স এর চেয়ারম্যান, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা ইসলামিক সেন্টার এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকার বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ও ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটির গবেষণা কর্মকর্তা ছিলেন।

২০২০ সালের ৯ মে তিনি মহান রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দিয়ে ইন্তেকাল করেন। মহান রাব্বুল আলামীন তাঁকে ক্ষমা করুন ও জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন।

পঠিত : ১৫৮ বার

মন্তব্য: ১

২০২৩-০৫-০৯ ১৬:৫৩

User
Masum Billah Bin Nur

আল বদর ও এই ধরনের সংগঠনগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো, এমন কোনো ব‌ই আছে ?

submit