Alapon

বোধদয়



০১.
আমি যতোই নিজেকে আধুনিক, যুগোপযোগী, প্রগতিশীল, মনোনশীল হিসেবে উপস্থাপন করেছি বা করতে চেয়েছি; ততোই আমি শেকড় হারিয়েছি। ততোই আমি আল্লাহর দীনের সীমানার বাইরে চলে গিয়েছি। যাদেরকে তুষ্ট করতে গিয়ে আমি এতো এতো প্রগতিশীল হবার চেষ্টা সাধনা করেছি, দিন শেষে দেখলাম তারা কখনোই আমার প্রতি পূর্ণ তুষ্ট হয়নি। আসলে তারা কখনো তুষ্ট হবেও না আমার প্রতি। যতক্ষণ না আমি আল্লাহ প্রদত্ত শাশ্বত দীনকে পরিপূর্ণ পরিত্যাগ না করি। কুরআন তো আমাকে সেই সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছে যে,
"কাফিররা তোমার প্রতি ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবে না— যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তাদের মতোই হয়ে না যাও!" [আল-বাক্বারাহ ১২০]

আমি হিসেব নিকেশ করে দেখলাম, খোদার দীনের চিরন্তন দুশমনদেরকে আমি কখনোই সন্তুষ্ট করতে পারবো না। কখনোই না। যেহেতু তাদেরকে আমি সন্তুষ্টই করতে পারবো না, তাহলে আমি আমার রবের বিধানের বাহিরে কেন যাবো? আর আমি আমার রব মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লাকেও তাঁর বিধানের বাইরে গিয়ে বা তাঁর বিধানকে নিজের উদগ্র নফসের অনুকূলে ব্যাখ্যা করে কি সন্তুষ্ট করতে পারবো? মহান মালিকের একজন একান্ত অনুগত বান্দা হিসেবে গড়ে ওঠতে পারবো? পারবো না তো। সম্ভব নয় যে.....

অথচ এই আমি নিজেকে মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরেও কথিত প্র‍্যাগমেটিক, প্রগতিশীল, বাস্তবিক, মডারেট, ইত্যাদি হতে গিয়ে, কাফিরদের চোখে নিজেকে কিউট প্রমাণ করতে গিয়ে আল্লাহর পবিত্র দীনের, রব্বুল আলামিনের পবিত্র বিধানের বিকৃতি করে মহান মালিকের সন্তুষ্টির যে পথ, সে পথ থেকে নিজেকে ধীরে ধীরে বহু ক্রোশ দূরে নিক্ষেপ করছি। নিজের ঈমান আকিদা ও আমলকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি। সাথে অন্যদেরও....

০২.
গত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন নওমুসলিম নারী ইসলামি চিন্তাবিদ, মরহুমা উস্তাযা মরিয়ম জামিলার (রহ.) একটি কথা আমার এই কথিত যুগোপযোগী হবার ধ্যান-ধারণা, মন-মনন ও চিন্তা-চেতনাকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে! আমার ভেতর জেঁকে বসা ও চেপে থাকা নেক সুরতের সব ইবলিশি ধোঁকা এবং সকল প্রকার জাহিলিয়াতের পর্দাকে টেনেহিঁচড়ে ছিড়ে ফেলে দিয়েছে। তিনি আমার মতো ইসলাম প্রেমি অথচ ইসলাম ও জাহিলিয়াতের সমন্বয় সাধকদের উদ্দেশ্যেই যেনো বলেছেন —

"আমরা যারা জীবন-বিধান হিসেবে ইসলামকে মেনে চলতে চাই, তাদেরকে এটা মনে রাখতে হবে যে, ইসলাম বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা এই দীন মেনে চলার কারণে প্রতিক্রিয়াশীল আখ্যায়িত হওয়ায় তাদের ভীত হওয়া উচিৎ নয়। আমাদের অবশ্যই বুঝা উচিৎ যে, তাদের দেওয়া এই আখ্যা আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না। বরং আমরা ইসলামকে কথিত যৌক্তিক, আধুনিক, বৈজ্ঞানিক, গতিশীল, উদার ও প্রগতিশীল করে কাফিরদেরকে তুষ্ট করার চেষ্টা করাটাই আমাদের জন্য ক্ষতিকর।"


সে কারণেই আমি এখন কথিত যুগোপযোগী নয়, বরং আমি নিজেকে দীন উপযোগী করার চেষ্টা করছি। আমি এখন দীনকে যুগের খাচায় বন্দি নয়, বরং যুগের কান ধরে যুগকেই করতে চাই ইসলামের খাচায় বন্দি। আমি এখন পৃথিবীর একজন মানুষকেও আল্লাহর দীনকে উপেক্ষা করে সন্তুষ্ট করতে চাই না, বরং আমি দীনের প্রয়োজনে সবাইকে অসন্তুষ্ট করে হলেও আমার মহান রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লাকে সন্তুষ্ট করতে চাই।

০৩.
এই যে আমি সকলকে অসন্তুষ্ট করে হলেও আমার রব মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লাকেই কেবল আমি সন্তুষ্ট করতে চাই— আমি জানি, আমার এই পথ খুব বেশি মসৃণ হবে না। আমার এই পথ চলায় আমাকে নিয়মিতই শুনতে হবে নানাবিধ কটুকথা। আমাকে নিয়মিতই বিদ্ধ হতে কটুকথা বা তিক্ত কথার বানে। তিরস্কার ও উপেক্ষার তিরে। আমাকে প্রতিনিয়তই শুনতে হবে একগুঁয়ে, চর ম পন্থী, বাস্তবতা বিবর্জিত, হুজুর, কট্টরপন্থী ইত্যাদিসহ নানাবিধ তিক্তসব কথাবার্তা।

আমি এ-ও জানি, আমার এই অবস্থানের কারণে আমার অনেক কাছের মানুষও দূরে সরে যাবে। যারা সেই সু-দীর্ঘ সময় থেকে আমার পাশে থেকে আমাকে নানাভাবে সাহস ও সমর্থন যুগিয়েছেন, নিজের মানুষ-আপন মানুষ কিংবা নিজেদের লোক বলে তুলনাহীন তৃপ্তি পেয়েছে—এমন অগণিত কাছের মানুষও এখন আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। আমার বলা, আমার চলা, আমার পথ ও পন্থা অপছন্দ করে আড়াল হয়ে যাবে। তবুও আমি সজ্ঞানে-স্বেচ্ছায় আমার রবকে সন্তুষ্ট করে পরিপূর্ণভাবে তাঁর দীনকে অনুসরণ করে সেই পথে অগ্রসর হবার এক দুঃসাহসিক ঝুঁকি নিয়েছি!

সর্বশেষ আমি এ মহা সত্যিটাও জানি যে, দুনিয়ার বুকে এই পথে চলাটা ভীষণ কণ্টকাকীর্ণ হলেও এ পথের চূড়ান্ত গন্তব্য হচ্ছে জান্নাতুল ফেরদৌসের সেই চির সবুজ মোহনায়—যার পরিধি আসমানসমূহ ও জমিনের সমান, যা কেবলই মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। [ সূরা আলে ইমরান :১৩৩]

হ্যাঁ, আর ঠিক এ কারণেই দুনিয়ার বুকে এখন আমি যেকোনো কিছু করার আগেই নিজেকে নিজে এই প্রশ্নটা করতে শিখে গিয়েছি যে —

“সে কী পেলো যে আল্লাহকে হারালো ?
সে কী হারালো যে আল্লাহকে পেলো?”


~রেদওয়ান রাওয়াহা
২০.০৫.২৩

পঠিত : ১৯১ বার

মন্তব্য: ০