Alapon

ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি



শুষ্ক, নিরস ও স্বাদহীন এই আন্দোলন; তবুও দলে দলে মানুষের অংশগ্রহণ সত্যের স্বাভাবিক আকর্ষণ।
সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রহsmile

দাওয়াত মুমিন জীবনের অন্যতম মিশন। মুসলিম বলতেই সে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিবে সকল মানুষকে। সমস্ত নবিদের আবির্ভাবের অন্যতম লক্ষ্য ছিল, মানুষকে দাওয়াত দিয়ে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসা। শেষ নবি হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর নবুওয়াতের ধারা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এই দাওয়াত প্রচারের দায়িত্ব আসে মুসলিমদের উপর। তাই ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেয়া ব্যক্তি হিসেবে প্রতিটি মুসলমানের উপর আল্লাহ প্রদত্ত নববি দায়িত্ব। তবে ইসলাম প্রতিষ্টার জন্য প্রয়োজন সামষ্টিক দাওয়াত। অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে এই কাজের আঞ্জাম দেয়া। ফলে সমগ্র মানবগোষ্ঠীর কাছে ইসলাম পৌঁছানোর কাজটি সহজ হয়ে যায়।

সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী রহঃ। আল্লাহ প্রদত্ত নববি দায়িত্বের গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাহেলিয়াতে ঢাকা পড়ে যাওয়া উপমহাদেশের মানুষদের বিশেষত মুসলমানদের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে সামনে অগ্রসর হয়। গঠন করে ইসলামী জামায়েত। ইসলামী জামায়েত গঠন করে মানুষকে দাওয়াত দেয়ার কাজটি শুরু করেন।

১৯৪৫ সালের ১৯শে এপ্রিল দারুল ইসলাম পাঠানকোটে অনুষ্ঠিত এমন একটি সম্মেলনে ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি উপর আলোচনা পেশ করেন। যেটি পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশিত হয়।

ভূমিকাসহ মোট ১২টি পয়েন্টে বইটি সজ্জিত।
☑️পয়েন্ট গুলো হলো-
• ভূমিকা
• সম্মেলনের উদ্দেশ্য
• আমাদের দাওয়াত
• মুনাফিকীর মূলকথা
• কর্মীয় বৈসাদৃশ্যের তত্ত্বকথা
• নেতৃত্বে মৌলিক পরিবর্তনের আবশ্যকতা নেতৃত্বের পরিবর্তন কিরূপে হইবে
• বিরুদ্ধতা ও উহার কারণ
• আমাদের কর্মনীতি
• আলিম ও পীর সাহেবদের দোহাই
• দরবেশীর বিদ্রুপ
• জামায়াতের কর্মীদের প্রতি উপদেশ

শুষ্ক, নিরস ও স্বাদহীন এই আন্দোলন ; তবুও দলে দলে মানুষের অংশগ্রহণ সত্যের স্বাভাবিক আকর্ষণ। কথাটি ভূমিকায় উল্লেখ করেন লেখক ; যা ইসলামী আন্দোলনের মূল মেসেজ বহন করে।
✅আমাদের দাওয়াতে লেখক উল্লেখ করেন, মূলত ৩টি বিষয়ে আমরা দাওয়াত দিচ্ছি।
এক. সাধারণভাবে সকল মানুষকে বিশেষভাবে মুসলিমদেরকে আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ করার আহ্বান-
বাস্তব জীবন হতে মুনাফেকি ও কর্ম বৈষম্য দূর করা
নেতৃত্বের আমূল পরিবর্তন।

দাওয়াতের এই জিন্দেগী যারা গ্রহণ করবে তাদের মধ্যে মুনাফিকীর লেশমাত্র থাকতে পারবে না। লেখকের মতে, মুনাফিকী হলো,নিজের ইমান,আমল এবং আকিদা বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত দেখতে পেয়ে সন্তুষ্ট থাকা এবং সে জীবন-বিধান পরিবর্তন করে তদস্থলে নিজের বিশ্বাস এবং আদর্শের অনুরূপ বিধান প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা না করা। পাশাপাশি নিজের আদর্শের বিপরীত জীবন ব্যবস্থার উপর সন্তুষ্ট থেকে এর মধ্য থেকে নিজের উপকার হাসিলের জন্য সুযোগ খুঁজা।

মুখে আল্লাহর উপর ঈমান আনার ঘোষণা দিয়ে বাস্তব জীবনে তাঁর বিধিবিধান উপেক্ষা করে চলা, নামাজে তাঁর ইবাদতের ঘোষণা দিয়ে বাইরে এসে বিপরীত কাজ করা, তাঁর কাছেই সাহায্য চাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের কাছে সাহায্য চাওয়া, তাঁর দাসত্বের কথা বলে মানুষের রচিত বিধানের দাসত্ব করায় হলো কর্মীয় বৈসাদৃশ্য- যা স্পষ্ট মুনাফিকী ভিন্ন আর কিছু নয়।


আর জীবনের সকল ক্ষেত্রে এক আল্লাহর দাসত্ব মেনে নেয়া, প্রতিটি বিধান তাঁর নির্দেশের অনুরূপ মেনে চলার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নেতৃত্ব। কারণ, নেতার নির্দেশ ছাড়া কোন কাজ যথাযথভাবে আঞ্জাম দেয়া কারো পক্ষে সম্ভবপর নয়। এজন্য মাওলানা বলেন, বর্তমান প্রচলিত নেতৃত্ব শিরক, কুফর,পাপাচার এবং খোদাদ্রোহীর উপর প্রতিষ্ঠিত। কাজেই যতদিন এদের হাত থেকে এই নেতৃত্ব নিয়ে খোদার একনিষ্ঠ বান্দাদের হাতে হস্তান্তর করা যাবে না, ততোদিন পর্যন্ত এই দুনিয়াতে খাঁটি মুসলমানের ন্যায় জীবন যাপন করা যাবে না। এজন্য দুনিয়ায় একজন সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ আনুগত্য করে জীবন যাপন করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নেতৃত্বের আমূল পরিবর্তন। অর্থাৎ খোদাদ্রোহী লোকদের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে খোদার একনিষ্ঠ বান্দাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য চেষ্টা করা।

এটা তখনই সম্ভব হবে যখন সত্যিকারের একটা দল থাকবে, যারা ইমান, আমল, সততা নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও বিশ্ব পরিচালনায় কাফিরদের চেয়ে শক্তিশালী যোগ্যতা অর্জন করবে, তখন আল্লাহ তাআ'লা সেই আল্লাহ ওয়ালা লোকদের উপর ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।

পীর দরবেশীদের বিরোধিতার কারণ উল্লেখপূর্বক সংগঠনের কর্মনীতি কী হবে তা উপস্থাপন করে জামায়াতের কর্মীদের প্রতি কতিপয় উপদেশ দিয়ে মাওলানা আলোচনা শেষ করেন।

বইটির শুরুতে সূচীপত্র দেয়া হলে বই সম্পর্কে সহজেই একটা ধারণা নেয়া যেতো এবং বই সম্পর্কে ধারণা নিতে পাঠকের সুবিধা হতো।

এই পয়েন্টা বাদ দিলে এককথায় বলা যায়, বইটিতে দাওয়াতের মূল লক্ষ্যগুলো স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে, যা প্রকৃত একজন মুসলিমকে দাওয়াতী জীবন পরিচালনার জন্য সংগঠিত হওয়ার প্রতি বইয়ের প্রতিটি পাঠককে উৎসাহিত করবে ইনশা আল্লাহ।

বই: ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
লেখক: সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রহsmile
প্রকাশক: আবু তাহের মুহাম্মদ মাসুম
২৮তম মুদ্রণ: অক্টোবর ২০২২
মূল্য: ২০

||রিভিউ লেখক||

~জাহেদুল ইসলাম

পঠিত : ১০৬১ বার

মন্তব্য: ০