Alapon

বুক রিভিউঃ চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান



ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য চরিত্র এক অমূল্য সম্পদ। আর সেই চরিত্র অর্জনের পন্থাসমূহ অত্যন্ত সাবলীল ভাবে বর্ণিত হয়েছে 'চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান' বইটিতে। বইটি নঈম সিদ্দিকীর লেখা একটি বিশেষ প্রবন্ধ যা বিশ শতকের ষাট দশকে প্রথম দিকে উর্দুতে লাহোর থেকে প্রকাশিত হয় এবং ষাটের দশকেই বাংলায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়। মূল উর্দু প্রবন্ধটির নাম ছিল 'তা'মীরে সীরাত কে লাওয়াযিম'।

নঈম সিদ্দিকী ছিলেন উপমহাদেশের ইসলামী আন্দোলনের একজন প্রথম সারির নেতা। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, উপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও গবেষক। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাতের উপর লেখা তার 'মুহসিনে ইনসানিয়াত' নামক সীরাত গ্রন্থটি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। যা বাংলায় 'মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সা.)' নামে অনূদিত হয়।

বইটির শুরুতেই লেখক মানুষের তৎপরতার বিরুদ্ধে শয়তানের চ্যালেঞ্জের বিষয় তুলে ধরেন। লেখকের ভাষায়,
এ যুগে একদিকে পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ও স্বার্থপূজারী সভ্যতা আমাদের জাতির নৈতিক পতনকে চরম পর্যায়ে উপনীত করেছে, অন্যদিকে চলছে সমাজতন্ত্রের নাস্তিক্যবাদী চিন্তার হামলা।

ফলে ইমান ও চরিত্র নিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বলে আমাদের দুনিয়ার ঝামেলা ত্যাগ করে একাকী মুসলমানিত্ব বজায় রাখলেই চলবে না। বরং সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইমান ও চরিত্র সমুন্নত রেখে টিকে থাকার মধ্যেই সার্থকতা বিদ্যমান।

লেখক ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের চরিত্র অর্জনের জন্য তিনটি উপায় বলে দিয়েছেন।
১. আল্লাহর সাথে যথাযথ সম্পর্ক
২. সংগঠনের সাথে সম্পর্ক এবং
৩. সহযোগীদের সাথে সম্পর্ক

আল্লাহর সাথে যথাযথ সম্পর্কঃ
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনই আমাদের প্রথম ও প্রধান প্রয়োজন। এ ব্যাপারে লেখক চারটি বিষয় উল্লেখ করেন। প্রথমত মৌলিক ইবাদতসমূহ কোনোরকমে আদায় করলেই হবে না তা পূর্ণ নিয়মানুবর্তিতা ও সচেতনতার সাথে আদায় করতে হবে। দ্বিতীয়ত কোরআন ও হাদিস সরাসরি অধ্যয়ন করতে হবে এবং ইসলামী সাহিত্য নিয়মিত অধ্যয়ন করতে হবে। ইসলামী সাহিত্যসমূহ বার বার পড়া অত্যন্ত জরুরি। তৃতীয়ত নফল ইবাদতের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব সর্বাধিক। চতুর্থত সার্বক্ষণিক জিকির ও দোয়া ইত্যাদির মাধ্যমে মুসলমান নিজেকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত রাখে।

সংগঠনের সাথে সম্পর্কঃ
সাংগঠনিক শৃঙ্খলা মজবুত করা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের এক অপরিহার্য দায়িত্ব। কারণ এ ব্যাপারে কর্মীদের পরকালীন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। এ ব্যাপারে আদেশ, আনুগত্য, দায়িত্বশীল, কর্মী সবমিলিয়ে এক ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। আর এই ভারসাম্য রক্ষায় আনুগত্যের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামে সৎকাজের আনুগত্য করা যেমন ফরজ তেমনি সৎকর্মের সীমার বাইরে আনুগত্য করতে নিষেধ করা হয়েছে। অন্যথায় তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুনাফেকির পর্যায়ে চলে যেতে পারে। আবার দায়িত্বশীলদেরও তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। তবেই সংগঠনের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

সহযোগীদের সাথে সম্পর্কঃ
এ পর্যায়ে আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক যথার্থ নৈতিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে বলা হয়েছে। আর এই নীতিগুলো সুরা হজুরাতে বিবৃত করা হয়েছে। যেমন কোনো খবর শোনার সাথে সাথে সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ না করা, মুসলিমদের যাবতীয় বিবাদ দূর করে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা, পরস্পরের দোষ খুঁজে না বেড়ানো, অসম্মানজনক নাম ব্যবহার হতে মুসলমানদের বিরত থাকা, গোয়েন্দাগিরি না করা, গিবত না করা ইত্যাদি।

বইটিতে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক অর্জনের উপায় থেকে শুরু করে মুসলমানদের নৈতিক গুণাবলীর দিকে আলোকপাত করা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য বইটি একটি অবশ্যপাঠ্য বই। বইটি অধ্যয়নের পর তা যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে তারা নিজেদের চারিত্রিক উন্নয়ন সাধিত করে একটি পরিশুদ্ধ অন্তরের সাথে দ্বীন কায়েমের কাজ করতে পারবে। তাছাড়াও সাধারণ মুসলমানগণ বইটি অধ্যয়নের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের গুরুত্ব কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারবে এবং প্রয়োজনীয় চরিত্র গঠন করতে পারবে।

#বুক_রিভিউ
বইঃ চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
লেখকঃ নঈম সিদ্দিকী
অনুবাদকঃ আব্দুল মান্নান তালিব
প্রকাশনীঃ আইসিএস পাবলিকেশন

পঠিত : ৭৭৬ বার

মন্তব্য: ০