Alapon

জামায়াত কি ফিরে আসছে ?


একটি টিভি চ্যানেলের একজন উপস্থাপিকা গতকাল একটি টকশোতে একজন সাবেক পুলিশ প্রধানকে প্রশ্ন করেছেন, জামায়াত কি আবার ফিরে আসছে?
ঐ উপস্থাপিকার কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রশ্নের কারণে আমি অবাক হইনি। যাদের আত্মা এবং বিবেক অন্য কোথাও বন্ধক দেয়া থাকে তারা কোনো ইতিবাচক বিষয় ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে পারে না। জামায়াতে ইসলামীর ফিরে আসার কি হলো? জামায়াতে ইসলামী কি মরে গিয়েছিলো? না কি জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত সকল নেতা কর্মীরা দুনিয়া থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছিলো? এখন তারা সেই অজানা গ্রহ থেকে বাংলাদেশে অবতরণ করছে?
ঐ উপস্থাপিকার হঠাৎ এমন কেন মনে হলো? এমন মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ তো অবশ্যই আছে। বিগত চৌদ্দ বছর যাবৎ জামায়াতে ইসলামীর ওপর সরকারের তরফে এমন কোনো দমন পীড়ন নেই যা করা হয় নাই। সকল অফিস তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রথম সাড়ির সকল নেতাকে ফাসিতে হত্যা করা হয়েছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সাড়ির সকল নেতার নামে গড়ে শতাধিক করে। পরিচিত কোনো নেতা কর্মীকে বাদ দেয়া হয়নি যাকে অন্তত একবার গ্রেফতার করা হয়নি। জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল হিসেবে পরিচিত যে কোনো লোকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, হাসপাতাল, ক্লিনিক, কোম্পানী সব যায়গায় পুলিশ নানা অজুহাতে হানা দিয়ে তাদের গ্রেফতার করে এক লাইনের একটি প্রেস নোট দিয়েছে যে, তারা গোপন বৈঠক করছিলো অথবা তারা নাশকতার ষড়যন্ত্র করছিলো। জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা মিছিল করার সাথে সাথে পুলিশ হয় সেখানে গুলি করেছে নয়তো বা, অতর্কিত হামলা করে বিপুল সংখ্যক লোককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে নির্মম নির্যাতন করেছে। এই দমন পীড়নের মাত্রা এতোটাই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গিয়েছে যে, বিয়ের অনুষ্ঠান হতে বরসহ অতিথিদের গ্রেফতার, রমজান মাসে তারাবীহ নামায আদায়রত ইমাম ও মুসুল্লীদের গ্রেফতার, পিতার জানাজা হতে সন্তান গ্রেফতার, ব্যক্তি মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানের এ জি এম হতে সকল অংশগ্রহণকারীরে গ্রেফতার তাদের রুটির ওয়ার্ক ছিলো। বিশ^বিদ্যালয় পড়–য়া ছেলের টেবিলে কুরআন কেন? এ জন্য তাকে গ্রেফতার করে তার ছাত্রত্ব বাতিল। আবরারের মতো তরুণরা কেন সহপাঠীদের নামাযের জন্য ডাকে, এ জন্য তাকে শিবির আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার। এ সব কাজের সাথে ছিলো গুম, খুন আর ধরে নিয়ে গিয়ে নাই করে দেয়ার নানামূখী তৎপরতা। তাদের অপরাধের ফিরিস্তি এতো বড়ো যে লিখে শেষ করার মতো নয়। এরপরও জামায়াতে ইসলামী তাদের নিয়মতান্ত্রিক সকল কর্মসূচী পরিচালনা করে গিয়েছে। শত জুলুম নির্যাতন সহ্য করে অসহায় মানবতার পাশে দাড়িয়েছে। যেখানে এ দলের ৪/৫ জন লোক কোথাও একত্র হওয়ার পর পুলিশ সংবাদ পেলে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং সাথে সাথে নাশকতা তত্বের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়ে যায়- এরপর রিমা-ের নামে চলে নানামূখী নির্যাতন। ঐ সব টিভি চ্যানেলগুলো কখনো এসব অন্যায় আর জুলুমের বিষয়টি জনগণের সামনে আনেনি বরং ফ্যাাসবাদী সকল কর্মকা-কে জাস্টিফাই করার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে ঘৃণ্যভাবে উপস্থাপনের যতো প্রকার চেষ্টা আছে তা তারা করেছে এবং করে যাচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো এতো দমন পীড়নের পরেও জামায়াতে ইসলামী যে কোনো দূর্যোগ দুর্বিপাকে মানবতার পাশে থেকেছে।

বিগত বন্যায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান নিজে কাধে করে ত্রাণের মালামাল বহন করেছেন। করোনাকালীন সময়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন বিতরণ, চিকিৎসা সেবা প্রদান। অগ্নিকাণ্ড ও সড়ক দূর্ঘটনায় আহত নিহতদের পরিবারে সহায়তা, জামায়াতে ইসলামীর সহায়তা কার্যক্রম হতে নৌকাডুবিতে হিন্দু তীর্থযাত্রী যারা মারা গেছে তারাও বাদ যায়নি। দরিদ্র মানুষের আত্ম কর্মসংস্থানের জন্য রিক্সা ভ্যান বিতরণ, সেলাই মেশিন বিতরণ, স্বল্প পুজিতে ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য করজে হাসানা প্রদান। এতো কিছুর পরও জামায়াতে ইসলামী এ সকল কাজে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের চেয়ে এগিয়ে আছে। এগুলো কোনো কিছুই কি ওনাদের চোখে পড়েনি? হ্যা পড়েছে, তবে জামায়াতের সকল এতিবাক কার্যক্রমকে ওনারা হাইড করে প্রথম সাড়ির মিডিয়া হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার কসরৎ করছেন, সে চেষ্টাগুলো আস্তে আস্তে বালির বাধের মতো ভেঙে যাচ্ছে।

ঐ উপস্থাপিকার কথার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে এখন মূল সমস্যা জামায়াতে ইসলামী পূর্ণ শক্তি নিয়ে ময়দানে হাজির হওয়া। ওনাদের কাছে বিগত চৌদ্দ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন কোনো সমস্যাই না, বিনা ভোটে সরকার গঠন হয়ে যাওয়া, দিনের ভোট রাতে হওয়া। সুপ্রীম কোর্টের মতো যায়গায় সন্ত্রাসী আক্রমণ এবং নির্বাচনকে বানচাল করা। ব্যাংক লুটপাট, শেয়ার বাজার ধ্বংস, অর্থনীতি শেষ করে দেয়া, বিদেশে টাকা পাচার। ছাত্রলীগের একজন জেলা পর্যায়ের সভাপতিই পাচার করেছেন দুই হাজার কোটি টাকা। দিনে দুপুরে পিটিয়ে মানুষ হত্যা, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের দানবীয় কার্যক্রম। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, সীমাহীন, দূর্ণীতি, লুটপাট কোনো কিছই ওনাদের কাছে সমস্যা মনে হয় না। এমনকি সুপ্রীম কোর্ট বারের নির্বাচিত তিনজন ভাইস প্রেসিডেন্টকে পুলিশ টেনে হিচড়ে নিয়ে গেলো, এটাও তাদের কাছে সমস্যা না। সমস্যা জামায়াতে ইসলামী আবার প্রকাশ্যে সকল কার্যক্রম করতে পারা। এ বিষয়ে ওনারা আতঙ্কিত, ভীত, শংকিত।
ওনাদের আতঙ্ক, ভীতি এবং শংকার কারণ হলো- ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের যে ফল ওনারা এতোদিন ভোগ করেছেন এবং ফ্যাসিবাদের সকল কার্যক্রমকে যেভাবে জাস্টিফাই করেছেন, সে রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটি ক্ষীণ রেখা তৈরী হওয়ায় ওনারা আতঙ্কিত।
ঐ উপস্থাপিকা ভালো করে জানেন যারা জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবির করে তারা নৈতিকভাবে সৎ, তারা ধর্ষনের মতো জঘন্য কাজে জড়িত নয়। তারা মাদক নেশা, ধুমপান, ইভটিজিং, দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট, চুরি, ডাকাতি, গুম, খুন, অর্থ পাচার, চোরাচালান, পিটিয়ে মানুষ হত্যাসহ জঘণ্য সকল অন্যায় থেকে দূরে থাকেন।
এ সকল কার্যক্রমে বলীয়ান চরিত্রবান? তথাকথিত সূর্য সন্তানর যারা নিয়মিত পত্রিকায় হেডলাইন হয়, তাদের প্রতি ওনাদের হৃদয়ে যে ভালোবাসা সে ভালোবাসার টানে ওনারা এখন চোখে শর্ষে ফুল দেখা শুরু করেছেন।

জামায়াতে ইসলামী তো তেমন কিছুই করেনি। শুধুমাত্র একটি মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে মাত্র। এ জন্য চারজন আইনজীবী গিয়েছিলেন, ডি এম পি কমিশনার কার্যালয়ে। তাদের সাথে পুলিশের ন্যাক্কারজনক ঘটনার সামান্য প্রতিবাদেই ওনাদের এতাদিনের মিথ্যার সাম্রাজ্যে কাপন ধরলো?
মজার বিষয় হলো, তিনি কিন্তু পুলিশের ন্যাক্কারজনক আচরণকে অন্যায় মনে করেন নি, বরং জামায়াতে ইসলামী একটি প্রকাশ্য সমাবেশ করবে। এই ভয় এবং আতঙ্কে উনি দিশেহারা। মিথ্যার প্রাসাদে সত্যের আঘাত আসে কি না, সেই ভয়ে ওনারা আজ প্রকম্পিত।

পঠিত : ৪০৪ বার

মন্তব্য: ০