Alapon

বাই সাইকেল হতে পারে নিরাপদ বাহন


আজ ৩ জুন বিশ্ব বাই সাইকেল দিবস। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই বাই সাইকেলের প্রচলন আছে। অতি সহজে কাছাকাছি দূরত্বে যাতায়াতের জন্য অতি উত্তম একটি বাহন বাই সাইকেল। প্রথাগত যে কোনো যানবাহনের তুলনায় এর ব্যয় সকল দিক থেকেই কম। এক সময় তরুণদের প্রিয় বাহন ছিলো বাই সাইকেল, এখন যে স্থানটি দখল করেছে মোটর সাইকেল। শুধু তরুনেরাই নয়। দুই দশক আগেও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ কাছাকাছি দূরত্ব পাড়ি দেবার জন্য বাই সাইকেল ব্যবহার করতো। গ্রামের মেঠোপথে স্কুল কিংবা কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের দীর্ঘ

সাইকেলের সাড়ি দেখতে ভালোই লাগতো। শুধু ছাত্র ছাত্রীই নয়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বেসরকারী সংস্থার কর্ম চারী, ডাক হরকরা অনেকেই ১৫-২০ মাইল পথ অনায়াসে বাই সাইকেলে পাড়ি দিতো। আজ সে স্থানটি দখল করেছে মোটর সাইকেল। যান্ত্রিক বাহনের দৌড়াত্বের পেক্ষাপটে আর পুজিাবদী চিন্তার দৌড়াত্বের কারণে অধিকাংশ উঠতি বয়সের তরুণদের চিন্তার স্থানটি এমন হয়েছে যে, তার যাতায়াতের জন্য একটি মোটর সাইকেল অবশ্যই দরকার। দুই দশক আগেও এমন ছিলো না। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে আমি যখন জেলা শহরে কলেজের ছাত্র ছিলাম, তখন কোনো সহপাঠী বা বড় ভাই কিংবা কোনো ছাত্র নেতাকে মোটর সাইকেলে কলেজে আসতে দেখিনি। জেলা-উপজেলার সকল স্কুল কিংবা কলেজে বাই সেইকেল স্টাণ্ড থাকতো। শহর থেকে দূরের গ্রাম হতে যারা কলেজ কিংবা স্কুলে আসতো তারা বাই সাইকেলে চড়ে ক্লাস করার জন্য আসতো। তখনকার সময়ে ১/২ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে আসা ছিলো অতি স্বাভাবিক বিষয়। এখন শহর কিংবা গ্রামে অটো রিকশা, বাস টেম্পো আর মোটর সাইকেলের দৌড়াত্ব এমনভাবে বেড়েছে মানুষ পায়ে হেটে কোথাও যাবার চিন্তাও করতে পারে না। একইভাবে তরুণদের মধ্যে বাই সাইকেল চালনা যেন কোনো কোনো ক্ষেত্রে লজ্জার বিষয় হয়ে গেছে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে উঠতি বয়সের তরুণরা এখন মোটর সাইকেলকে তাদের জীবনের অনুসঙ্গ বানিয়ে ফেলেছে। খুব কাছাকাছি যাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তারাও মোটর সাইকেল ব্যবহার করছে। কোনো প্রয়োজন ব্যতীত শুধুমাত্র বন্ধুদের নিয়ে ঘোরার জন্য অনেকে মোটর সাইকেল কিনছে। এ সকল তরুণরা নিজের জীবনের মূল্য উপলব্ধি করার আগেই ইঞ্জিন চালিত এ বাহনে ওঠার পর অনেক ক্ষেত্রেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটেই চলছে। বাংলাদেশের সড়ক দূর্ঘটনার একটি বড়ো কারণ মোটর সাইকেলের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার। পেশাগত এবং সামাজিক দায়িত্বের কারণে আমোকেও মোটর সাইকেল ব্যবহার করতে হয়। তবে উঠতি বয়সের তরুণরা যখন আমার দুপাশ দিয়ে সাই সাই করে মোটর সাইকেল নিয়ে ছুটে যায়, তখন ধাবমান মোটর সাইকেলের চাকার ঘূর্ণনে দেখে আমি মাঝে মাঝে ভয় পেয়ে যাই। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অনিয়ন্ত্রিত যানজটে যে পরিমাণ সময় অপচয় হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেউ কেউ বাসের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকে। এখানে অযান্ত্রিক যানবাহন রিকশার স্থান দখল করেছে ব্যাটারী চালিত রিকশা। যার কোনো অনুমোদন নেই। যান্ত্রিক রিকশাগুলোর চালকরা মূলত কোনো প্রকার সড়ক আইন না মানার কারণে এগুলো একদিকে দূর্ঘটনা ঘটাচ্ছে অপরদিকে রিকশার কারণে যানজটের পরিমাণও বাড়ছে। ঢাকা শহরের বসবাসরত অনেক সন্তানের পিতা-মাতা দুইজনই কর্মজীবী । কর্মজীবী পরিবারের সন্তানরা কিংবা যাদের পিতা-মাতার পক্ষে সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসা সম্ভব হয় না। অনেক স্বল্প আয়ের চাকুরীজীবী আছেন যাদের পক্ষে মোটর সাইকেল কেনা সম্ভব নয়, তাদের জন্য বাই সাইকেল হতে পারে অতি উত্তম বাহন। যানজট নিরসন এবং দূর্ঘটনা রোধে দেশের সকল শহরে বিশেষ করে ঢাকা শহরে বাই সাইকেলের জন্য পৃথক লেন কিংবা বিশেষ সড়ক তৈরীর বিষয়টি আশা করি কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন।

পঠিত : ৩৪১ বার

মন্তব্য: ০