Alapon

“ জাহান্নামের গরম বনাম দুনিয়ার গরম”



কী এক আশ্চর্য গরম! কী তীব্র তাপদাহ !! মনে হয় জীবনটা আজকে আর এখনই শেষ হয়ে যাবে। রূহটা মনে হয় গরমের তীব্রতায় আমার দেহ থেকে উড়াল দিতে পারলেই বাঁচে। সারাদিন দেহ থেকে দরদর করে ঘামের বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই। এই তীব্র গরমে না করা যায় ঠিকমত পড়াশোনা, না পরা যায় বসে বসে কাজ করা, না যাওয়া যায় একটু শান্তিতে ঘুম!

আসমান থেকে মনে হয় রোদ না, আগুনের ফুলকি ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। বাহিরে হাটতে গেলে মনে হয় শরীরের চামড়াগুলো জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কীভাবে এই তীব্র তাপদাহ থেকে বাঁচতে পারি? কীভাবে পেতে পারি এই অসহনীয় জ্বালা থেকে মুক্তি? একবার মনে হয়েছে, মরলেই বুঝি মুক্তি! কিন্তু নাহ, মরলেই মুক্তি নেই। যদি ঈমান নিয়ে মরতে না পারি, তাহলে আখিরাতে আছে এরচেয়েও বেশি ভয়াবহ যন্ত্রণা। এর চাইতেও উত্তপ্ত উনুন। পবিত্র কুরআন আমাদেরকে জানাচ্ছে-

لَوَّاحَةٌ لِّلْبَشَرِ

অর্থাৎ, ওটা (জা হা ন্না মের আ গু ন) দেহের চামড়া দগ্ধ করে দেবে। [ সূরা : মুদ্দাসসির -২৯]


সূরা মা'আরিজে বলা হয়েছে,

نَزَّاعَةً لِّلشَّوَىٰ

অর্থাৎ, যা দেহ হতে চামড়া খসিয়ে দেবে। ( সূরা : মাআরিজ - ১৬)


সূরা তাওবায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন-
.
قُلۡ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرࣰّاۚ لَّوۡ كَانُوا۟ یَفۡقَهُونَ
অর্থাৎ, বলে দিন, জাহান্নামের আগুন এর চেয়েও বেশি গরম। যদি তারা বুঝতো। ( সূরা তাওবাহ: ৮১)


আবার আল্লাহর রাসূলের (ﷺ) হাদিস থেকেও আমরা জা হা ন্না মের এই উত্তপ্ত অগ্নি সম্পর্কে জানতে পারি। রাসূলে আকরাম (ﷺ)বলেন,
“আমাদের (দুনিয়ার) এই আগুন জাহান্নামের সত্তর অংশের এক অংশ।”

সাহাবায়ে কেরাম জিগ্যেস বললেন , হে আল্লাহর রসূল! (দুনিয়ার আগুনই) তো যথেষ্ট ছিলো। তিনি বললেন, “তাতে (দুনিয়ার আগুনে) উনসত্তর অংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রত্যেক অংশের উত্তাপ এই আগুনের মতো।” (বুখারী-মুসলিম)


অন্যত্র তিনি বলেন,
“গ্রীষ্মের এই প্রখর উত্তাপ দোজখের অংশ।” (বুখরী-৫৩৯, মুসলিম-৬১৫)


কারা থাকবে এই উত্তপ্ত উনুনে?

০১. সত্য ছেড়ে যারা মিথ্যের পথ বেছে নিয়েছে। আর পরকালে এদের আমলনামা বামহাতে দেওয়া হবে।

০২. এছাড়াও যারা আল্লাহকে অবিশ্বাস করতো। আখিরাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো।

চলুন কুরআনুল কারিম থেকেই জেনে আসি। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে-

وَأَصْحَابُ الشِّمَالِ مَا أَصْحَابُ الشِّمَالِ (৪১) فِي سَمُومٍ وَحَمِيمٍ (৪২) وَظِلٍّ مِّن يَحْمُومٍ (৪৩) لَّا بَارِدٍ وَلَا كَرِيمٍ (৪৪)
অর্থাৎ, আর বাম হাত-ওয়ালারা, কত হতভাগা বাম হাত-ওয়ালারা! (যাদেরকে বাম হাতে আমলনামা দেওয়া হবে।) তারা থাকবে অতি গরম বায়ু ও উত্তপ্ত পানিতে। কালোবর্ণ ধোয়ার ছায়ায়। যা শীতলও নয়, আরামদায়কও নয়। (ওয়াক্বিআহ : ৪১-৪৪)।


যারা পরকাল অস্বীকার করতো, আল্লাহর বাণীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো, তাদের সম্পর্কে কুরআন আমাদেরকে জানাচ্ছে যে,

,وَيْلٌ يَوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِينَ (২৮) انطَلِقُوا إِلَىٰ مَا كُنتُم بِهِ تُكَذِّبُونَ (২৯) انطَلِقُوا إِلَىٰ ظِلٍّ ذِي ثَلَاثِ شُعَبٍ (৩০ لَّا ظَلِيلٍ وَلَا يُغْنِي مِنَ اللَّهَبِ (৩১) إِنَّهَا تَرْمِي بِشَرَرٍ كَالْقَصْرِ (৩২) كَأَنَّهُ جِمَالَتٌ صُفْرٌ (৩৩)

অর্থাৎ, সেদিন দুর্ভোগ রয়েছে (আল্লাহর আয়াতের ওপর) মিথ্যারোপকারীদের জন্য। তোমরা যাকে মিথ্যাজ্ঞান করতে, চলো আজ তারই দিকে। চলো তিন শাখা বিশিষ্ট ছায়ার দিকে। যে ছায়া শীতল নয় এবং যা তোমাদেরকে অগ্নিশিখা হতেও রক্ষা করবে না। সে আগুন প্রাসাদের মতো বড়ো বড়ো স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করবে। নিক্ষেপের সময় যা দেখে মনে হবে, ওটা যেন হলুদ বরণ উট। (মুরসালাত :২৮-৩৩)


এমনকি জাহান্নামের আগুন যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অবিশ্বাসকারীদেরকে দেখবে, তখন তা হুংকার আর গর্জন দিতে থাকবে। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে ,

بَلْ كَذَّبُوا بِالسَّاعَةِ ۖ وَأَعْتَدْنَا لِمَن كَذَّبَ بِالسَّاعَةِ سَعِيرًا (11) إِذَا رَأَتْهُم مِّن مَّكَانٍ بَعِيدٍ سَمِعُوا لَهَا تَغَيُّظًا وَزَفِيرًا (12)
অর্থাৎ, বরং ওরা কিয়ামতকে মিথ্যা মনে করে। আর যারা কিয়ামতকে মিথ্যা মনে করে, তাদের জন্য আমি জ্বলন্ত জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছি। দূর হতে (জাহান্নাম) যখন ওদেরকে দেখবে, তখন ওরা তার ক্রুদ্ধ গর্জন ও চিৎকার শুনতে পাবে। (ফুরকান : ১১-১২)


এই যখন অবস্থা কিয়ামতের, এই যখন ভয়াবহ চিত্র পরকালের। তখন এই যে দুনিয়ার তীব্র-তাপদাহ, তাকে খুবই তুচ্ছ মনে হয়। আর সে কারণেই একান্তে অনুনয় স্বরে, নিবিষ্ট মনে, দুনিয়ার এই অসহ্য তাপদাহকে সহ্য করে শিল্পীর সুরে সুর মিলিয়ে আল্লাহর কাছে বলি,
মালিক তুমি জান্নাতে তোমার পাশে,
একটা ঘর বানিয়ে দিও।
সে বিভীষিকাময় মহাদিনে,
তোমার প্রতিবেশী করে নিও।


তোমার প্রতিবেশী হয়ে হাশরের হলে থাকতে পারলে তো কোনো আগুন-উত্তাপ কিছুই আর আমাকে ছোবে না.....

~রেদওয়ান রাওয়াহা
০২.০৬.২৩ ইং

পঠিত : ১৪৮৪ বার

মন্তব্য: ০