Alapon

পরিবেশ রক্ষায় আমাদের করণীয়

মাওলানা মেহেদি হাসান


সুস্বাস্থ্য মানুষের জন্য আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এক অফুরন্ত নেয়ামত। আল্লাহ তা’আলা মানুষের জন্য বসবাসের উপযোগী করে সৃষ্টি জগত সাজিয়েছে। জীবনধারণের জন্য মাটি,পানি, বায়ু, অগ্নি,জড়-জীব,উদ্ভিদ, গাছ-গাছালি, বৃক্ষরাজি, ফুল-ফল এ সকল সৃষ্টিই (জীব ও জীবনের) জন্য। মানুষের জীবন সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করে উদ্ভিদের ওপর। মানুষের জীবনের অন্যতম উপাদান হলো ”অক্সিজেন”। অক্সিজেন তৈরি হয় উদ্ভিদ থেকে যা আমরা নিয়মিত সরবরাহ করে থাকি। এবং আমাদের শরীর থেকে নিঃসরিত ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে আমাদের পরিবেশকে বসবাস উপযোগী করে। সুস্থ জীবনের জন্য সুস্থ পরিবেশে বসবাস করা একান্ত জরুরি। আমাদের দেশে ক্রমেই স্বাস্থ্যকর জীবন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, এর থেকেও খারাপ সংবাদ হলো বিশ্বজুড়ে পরিবেশ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের এক প্রতিবেদনে, গত ২৮ মে ২০২৩ তারিখে বলা হয়। বিশ্বের অস্বাস্থ্যকর ও দূষিত শহরের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর প্রথম। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষায় প্রতি বছর ৫ জুন পালিত হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস।
এই দিবসকে কেন্দ্র করে ৫ ই জুন সরকারি ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান নানামূখী কর্মসূচি পালন ও পদক্ষেপ নিয়ে থাকে , যা আমাদের আশানুরুপ বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে পারছেনা। এ অবস্থায় আমাদের সবার যায়গা থেকে বসবাস উপযোগী শহর গড়তে সবার সহযোগীতা ও কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বৃক্ষরোপণের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন!
হাদীসে আসছে,
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন: যে কোন মুসলিম ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা থেকে পাখি কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ থেকে সাদাকা বলে গণ্য হবে। বুখারী-২১৬৯
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন: যদি তোমরা নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায় তবে সে যেন চারাটি রোপণ করে দেয় । মুসনাদে আহমাদ-১২৯০২
রাসূল (সা.) বলেছেন: তোমরা বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে না! গাছ লাগানো ও পরির্চযা করা গুরুত্বপূর্ণ সাদাকা। যখন কোন মুসলিম গাছ লাগায় অথবা ফসল বুনে আর মানুষ ও পশুপাখি তা থেকে ফুল, ফল, কাঠ, ছায়া অর্থাৎ তার থেকে যে কোন উপকার পায় ; তা রোপণকারীর আমল নামায় সাদকায় জারিয়া হিসেবে লেখা হবে। রোপণকারী ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করলেও ইহার সওয়াব পাবে। বুখারী- ২৩২০
বৃক্ষ বা গাছ হলো প্রকৃতির অলংকার! গাছ যখন কাটা হয় তখন প্রকৃতির অলংকার বিনষ্ঠ হয়। আমাদের উচিত বৃক্ষরাজীর যত্ন নেওয়া ও ছোট-বড়ো সবাইকে সচেতন করা।
যে পদক্ষেপ পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হবে, তার কিছু নমুনা পেশ করছি:
*আমাদের ঘনবসতিপূর্ণ দেশে পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণের মাধ্যমেই ”সম্ভব” দারিদ্র্য বিমোচন করা, প্রাণী সম্পদ রক্ষা করা, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ রক্ষায় অবদান রাখা।
* পলি ব্যাগ, প্লাস্টিকের বোতল বা বৈয়ম যা একবার ব্যবহার করা যায় এরকম প্লাস্টিকের ব্যবহার আমাদের বর্জন করতে হবে।
* গাছ আমাদের শুধু অক্সিজেন জোগান দেয় না প্রকৃতিকে সবুজ-শ্যামল করে তোলে। এ জন্য আমাদেরও গাছের চাহিদা পূরণ করতে হবে। যেমন: সঠিক সময়ে যত্ন নেওয়া, সেচ দেওয়া ,পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা।
* অধিকাংশ বিদুৎ উৎপন্ন হয় কয়লা পুড়িয়ে। এর ফলে প্রচুর গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। গ্রিন হাউস গ্যাস, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রাস অক্সাইড পরিবেশ দূষণ ঘটায়। এ থেকে পরিবেশকে বাচাঁতে হলে সোলার পাওয়ার ও উইন্ড পাওয়ারের ব্যবহার বাড়াত হবে।
* পানি অপচয় না করা ও পানি নষ্ট যাতে না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা।
পরিবেশ হলো সেই জায়গা যেখানে আমাদের সবার মিলনমেলা, যেখানে আমাদের সকলের স্বার্থ বাস্তবায়িত হয়। তাই আমাদের উচিত! সমাজের সবাইকে সাথে নিয়ে, টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। যার মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পাবে একটি বাসযোগ্য পরিবেশ।
আল্লাহ হাফিজ

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
[email protected]

পঠিত : ৩৪৬ বার

মন্তব্য: ০