Alapon

হেফাজতে ইসলাম ও আওয়ামী রাজনীতি


বাংলাদেশের সবুজ উদার জমিনের সাথে এ দেশের মানুষের চিন্তা বিশ্বাস এবং চেতনার এক অভ‚তপূর্ব মেলবন্ধন রয়েছে। এ জনপদের কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে এখানকার মানুষ কখনো কোনো ধর্মহীন বিশ্বাসের সাথে নিজেদের জীবনপ্রণালীকে একাকার করে নেয়নি। হেফাজতের আন্দোলনে শামিল হয়ে এ দেশের অযুত জনতা তাদের ঐতিহ্য, আদর্শ আর বিশ্বাসের জানান দিয়েছিল। বাংলাদেশের কিছু পথভ্রষ্ট বøগারের ইসলাম বিদ্ধেষী কার্যকলাপ এবং রাজনৈতিক এক মহা সংকটকালে হেফাজতের উত্থান। হেফাজতের ডাকে সাড়া দেয় বাংলাদেশের আবাল বৃদ্ধ যুবক জনতা। এ জনপদের মানুষের আদর্শ বিশ্বাস ও চেতনার অগ্নি স্ফুলিঙ্গ হিসেবে হেফাজতের আবির্ভাব। হেফাজতে ইসলাম আন্দোলনের যে দাবানলের উম্মেষ ঘটিয়েছিল সে দিকে যদি তাকাই তবে দেখতে পাই- জনতার বাঁধ ভাঙ্গা ¯্রােত আসছে। মিছিলের পর মিছিল রাজপথকে প্রকম্পিত করছে। সরকারের তরফে অঘোষিত কারফিউ, গাড়ি, লঞ্চ সব বন্ধ কিন্তু মানুষ রাজধানীমূখে আসছে। সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে তারা এসেছিলো রাজধানীতে। ২০১৩ সালের এপ্রিল ও মে মাসে দুটি বড় সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে মহাসমাবেশ এবং মে মাসে ঘোষিত ঢাকা অবরোধও অবশেষে সমাবেশে রূপ নেয়। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে এতো বৃহৎ সমাবেশ জনগণ দেখেনি। অরাজনৈতিক সংগঠনের রাজনৈতিক উত্থান সকল মহলকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। রাজধানী অভিমুখে জনতার আছড়ে পড়া ঢেউয়ের পেছনে অতি লোভনীয় কিছু পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস ছিলো না। হৃদয় কোণে লালিত আদর্শ, বিশ্বাস ও ভালবাসার টানেই জনতা হেফাজতের আন্দোলনের প্রতি সাড়া দিয়েছিল।
বর্তমান সরকার কর্তৃক গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জনাব আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদÐের আদেশ দেয়। যাবজ্জীবন কারাদÐের আদেশকে মৃত্যুদÐে রুপান্তরের দাবীতে একদল যুবক শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচী শুরু করে। শাহবাগের গণজমায়েতকে ফলপ্রসূ করার জন্য সরকার এবং তাদের সমর্থক সকল প্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতা দিতে থাকে। সকল মিডিয়া একযোগে সার্বক্ষণিক লাইভ প্রচার করতে থাকে। স্কুল কলেজের কোমল মতি শিশুদের এ সমাবেশে আসতে বাধ্য করা হয়। নামে বেনামে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে সরকার দলীয় কর্মীরা প্রতিদিন এ জমায়েতকে ভারী করার চেষ্টা করতে থাকে। তিন বেলা খাবার আর নানান সূযোগ সুবিধা দিয়ে একে ফুলিয়ে ফাপিয়ে বড়ো করার কসরৎ চলতে থাকে নিয়মিত। সময়ের কাটার সাথে সাথে শাহবাগের তথাকথিত গণজানগরণ মঞ্চের আসল উদ্দেশ্য উম্মোচিত হতে থাকে। যুদ্ধাপরাধ বিচার নয় ইসলাম উৎখাতই যে তাদের আসল উদ্দেশ্য, সে থলের বিড়াল বেড়িয়ে পড়তে শুরু করে। বাংলাদেশের জনগণের ঘাড়ে ভর করা চরম ফ্যাসিবাদকে স্থায়ী করার এক জঘন্য পরিকল্পনায় যে শাহবাগের উত্থান তা আস্তে আস্তে প্রকাশিত হয়ে যায়। শাহবাগের উদ্যোক্তাদের প্রায় সকলেই ছিলো বøগার। বøগাররা নিয়মিত আল্লাহ, রাসূল, ঈমান, নামায, রোযা, হজ্জ,কুরবানীসহ ইসলামের সকল বিধি বিধানগুলোকে নিয়ে নিয়মিত জঘণ্য সব বøগ লিখতো। এ লেখাগুলো যখন মানুষের সামনে প্রকাশিত হতে থাকে তখন মানুষ বুঝতে পারে এরা আসলে কারা, এদের উদ্দেশ্য কী ? শাহবাগের বিরুদ্ধে তাই শাপলার উত্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের ঝাকুনি দিতে সক্ষম হয়। শুধু শাপলা চত্ত¡রের সমাবেশই নয়, সারাদেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যন্ত হেফাজতের আন্দোলনের ঢেউ লাগে।
শাহবাগের বিপরীতে শাপলার উত্থান এ দেশের মানুষকে তাদের শেকড়কে আকড়ে ধরে দৃঢ় থাকার জন্য নব প্রেরণায় উজ্জীবিত করে। শাহবাগের প্রতি জনগণের সিম্প্যাথি সংগ্রহের জন্য মাসাধিককালব্যাপী সরকার সমর্থক সকল মিডিয়ার যে প্রচেষ্টা তা মুখ থুবড়ে পড়ে। জনতা শাহবাগীদের ফাসির দাবীতে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হয়। তাদের মনে ক্ষোভ, যারা আমাদের প্রিয় নবীকে নিয়ে জঘন্য ভাষায় গালি দিয়েছে, আল¬াহ ও কুরআন, হাদীসকে নিয়ে ব্যঙ্গ করেছে। ব্যঙ্গ করেছে নামাজ,রোজা, হজ্জ, যাকাত, ঈদ ও কুরবানী নিয়ে। জনতা এসেছে তাদের সেই জঘন্য অপকর্মের প্রতিবাদ জানাতে। তাদের এ প্রতিবাদী মিছিলকে স্বাগত জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। সফেদ পাঞ্জাবী পড়া মানুষগুলোকে মনে হয়েছে জান্নাতী কোনো কাফেলা সম্মূখপানে ছুটে চলছে। শাহবাগ চত্তরের মতো এখানে রজনীগন্ধ্যা হাতে প্রিয়ার হাত ধরে ছুটে চলা কোনো কপোত কপোতীর দৃশ্য ছিলো না। রমনীর হাত থেকে সুগন্ধী রুমালের খুশবু গ্রহণের ব্যবস্থা ছিলো না। প্রিয়ার বাহুর মাঝে নিজেকে সঁপে দেয়ার পরিবর্তে এখানে শংকা ছিল, আশংকা ছিল-সরকারী দলীয় কর্মী বাহিনী এবং পেটুয়া বাহিনীর লাঠি, গুলির। সরকার এবং মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীগুলোর পক্ষ থেকে গাওয়া ঘিয়ের বিরিয়ানীর ব্যবস্থা ছিলো না। তবে গ্রামীন যে মানুষগুলো রাজধানীতে ছুটে এসেছে ঈমান ও বিবেকের টানে। তাদেরকে শহরবাসী আপ্যায়িত করেছে হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা দিয়ে। সে ভালবাসা হৃদয়ের গহীনের। তাতে কোন কৃত্রিমতা ছিলো না। এ ভালবাসা ছিল সব কিছু উজার করে দেবার। কারো হাতে পানির বোতল, কারো হাতে টিস্যু পেপার, কারো হাতে শরবতের গøাস, কেউ আপ্যায়িত করছেন শশা, তরমুজ, কলা দিয়ে। কেউবা বাসা থেকে তৈরী করে এনেছেন রুটি, অনেকেই দোকান থেকে কিনে ,এনেছেন পাউরুটি, বিস্কুট যে যেভাবে পারছেন আগত মানুষগুলোকে আপ্যায়ন করানোর চেষ্টা করেছেন। কে কার আগে আপ্যায়ন করাবেন তার প্রতিযোগিতা চলেছে। যেন আপ্যায়ন করানোর মধ্যেই মহা তৃপ্তি।
অজানা অখ্যাত মানুষগুলো প্রকৃত মানবতা এবং মানবিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছিল সেদিন। যারা আপ্যায়ন করিয়েছেন এবং যারা মিছিল নিয়ে এসেছেন সবারই একটাই দাবী ছিলো, আমাদেরকে আমাদের বিশ্বাস ও আদর্শ নিয়ে বাঁচতে দাও, আমার নবীর শানে বেয়াদবী বন্ধ কর, আল¬াহ, কুরআন, হাদীস, নামাজ, রোজা নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রæপ বন্ধ কর। মুসলমানদের কাছে তার ঈমান সবচেয়ে বড় সম্পদ। সেই সম্পদের উপর যখন কেউ ছুড়ি চালায় ঈমানদাররা আর তখন ঘরে বসে থাকতে পারে না। জনতার এ ¯্রােত প্রমাণ করেছে আমাদের চিরায়ত বিশ্বাসগুলোর ভিত্তিমূলে আঘাত কওে কেউ টিকতে পারবে না। শাহাবাগে ফ্যাসিবাদের উত্থানে পরিবেশ এমন দাড়িয়েছিল যে, দাড়ি-টুপি নিয়ে রাস্তায় চলাচল নিরাপদ নয়, ইসলামের পক্ষে কথা বললে মৌলবাদী, যুদ্ধাপরাধী, ইসলামী রাজনীতিবিদরা কোনঠাসা, ইসলামের নামে সভা-সমিতি বা সংঘ করলে তা বড় অপরাধ, ইসলাম মানেই ভয়ংকর কিছু। ইসলামপন্থী জনতার মাঝে ভয়-শংকা, তাদের মধ্যে আত্মগোপনে থাকার একটি পলায়নপর মনোবৃত্তি। সাধারণ জনতার মনে এই চিন্তা, ইসলাম ও ইসলামী আদর্শ নিয়ে বুঝি এই দেশে আর বসবাস করা যাবে না। সেই জনতার মাঝে নতুন করে আশা জাগিয়েছে ৬ এপ্রিলের লংমার্চ এবং ৫ মের ঢাকা অবরোধ-যা পরবর্তীতে শাপলার সমাবেশে রুপান্তরিত হয়েছে। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশে ইসলাম যেন নতুনভাবে আভির্ভূত হয়েছিলো। নারায়ে তাকবীর শে¬াগানে মূখরিত হয়েছিলো রাজপথ। যেই মানুষগুলো কখনো জনসভায় বক্তব্য দেন নি ঐ দিন তারা ছিলেন রাজপথের জনসভার মধ্যমনি। যারা কখনো মিছিলে যোগদান করেন নি তারাই মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
শাহবাগে ফ্যাসিবাদের যে উত্থান হয়েছিলো তা বাংলাদেশের মানুষকে দুভাগে বিভক্ত করে ফেলেছিলো। একদিকে ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী ঈমানদাররা, অপর দিকে ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক সম্প্রদায়। প্রথমভাগে দেশের সিংহভাগ মানুষ, দ্বিতীয়ভাগে গুটিকয়েক বাম-রাম-নাস্তিক ও তাদের পৃষ্ঠপোষকগণ। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে এ গুটিকয়েক মানুষের পক্ষ অবলম্বন করে সরকার এবং সরকার সমর্থক সকল মিডিয়া দেশের সিংহভাগ মানুষের বিপক্ষে পরিস্থিতি এমন করেছিলো যে শাহবাগই যেন বাংলাদেশ। দেশের অধিকাংশ মিডিয়া আওয়ামী এবং বাম সমর্থক হওয়ায় যে কোনো বিষয়েই সরকারের পালে খুব দ্রæত হাওয়া লাগে এবং তারা অতি সহজেই জনমতকে জবরদস্তিমূলকভাবে তাদের পক্ষে রাখার চেষ্টা করে। শাহবাগে তথাকথিত গণজাগরণের নামে সরকার এবং সরকার সমর্থক মিডিয়াগুলোর এই বাড়াবাড়ি জনগণ দেখেছে অনেকদিন ধরে। কিন্ত যখন অতিষ্ঠ জনতার হৃদয়ের ভাষাগুলোকে ক্ষোভে-বিক্ষোভে রুপ নেয় এবং জনতার মনের ভাষাগুলোকে দাবী আকাওে পেশ করে হেফাজতে ইসলাম। তখন এ আন্দোলনের পক্ষে জনতার তীব্র ¯্রােত সরকার এবং তার সহযোগীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা শাহবাগের কালো শাপের বিষাক্ত দাত গুলো খসে পড়ে, তীব্র নখর উচিয়ে ধেয়ে আসা হিং¯্র শাপদের নখগুলি ভোতা হয়ে যায়, উম্মত্ত হায়েনার অট্টহাসি ¤øান হয়ে তা বিষাদে রূপ নয়। শাহবাগের সেই গণজাগরণ যেন কোনো পঁচা দুর্গন্ধময় লাশ। এর বিপরীতে শাপলার রক্ত যুগের পর যুগ অজুত জনতাকে শাহাদাতের তামান্নায় উদ্দীপ্ত করবে।
৫ মে হেফাজতের সমাবেশকে ঘিরে ৬ মে সরকারের যে ম্যাচাকার ঘটিয়েছে, ইতিহাসের পাতায় তা জঘন্য গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। শাপলার দগদগে ক্ষতকে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলেও ঈমানী চেতনায় উদ্দীপ্ত জনতা সহজে এগুলো ভুলবে না। সেদিন কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আর কতজন আহত হয়েছে সে আলোচনায় আমরা যাবো না। তবে শাপলা ম্যাচাকারের আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশন। তার আগে খড়গ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে আমার দেশ পত্রিকার ওপর। হেফাজতের হত্যাকাÐ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ প্রতিবেদন পেশ করায় এর সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়েছে, অধিকারের রেজিষ্ট্রশন বাতিল করা হয়েছে। এরপর একের পর এক মামলা হতে থাকে হেফাজতের নেতাদের নামে। সারাদেশে চলে আলেমদের গ্রেফতার। হেফাজতের নেতাদের নামে এখন মামলার সংখ্যা দুই শতাধিক। সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অনেকেই ছাড়া পেয়েছেন। সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে বাকীরাও হয়তো দ্রæত মুক্তি পাবেন। হেফাজতের রক্তাক্ত আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবেন তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কওমী মাদরাসার সনদের সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকারের সাথে তাদের এখন একটি যোগাযোগ আছে। এ বিষয়টিকে এক একজন একভাবে ব্যাখ্যা করছেন। হয়তো সরকারের সাথে তাদের এখন একটি গভীর যোগাযোগ আছে। সরকারের সাথে তাদের যোগাযোগ ও সংলাপ কতটুকু ঠিক, কতটুকু বেঠিক আগামীর ইতিহাসই তা বিচার করবে। তবে শাহবাগী ফ্যাসিবাদের বিপরীতে হেফাজতের উত্থানকে খাটো করে দেখার সূযোগ নেই।
হেফাজতের নেতাদের অতি বিশ্বাস এবং আত্ম বিশ্বাস হয়তো বাস্তব অবস্থার চেয়ে অনেক বেশি ছিলো। তারা হয়তো ভেবেছেন শুধুমাত্র কওমী মাদরাসার ছাত্রদের দ্বারাই একটি আন্দোলনকে চ‚ড়ান্ত মঞ্জিলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে বাস্তবতা অতি কঠিন। ঈমানী চেতনায় বলিয়ান প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিকই হেফাজতের দাবীগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এ দেশের জনগণের আবেগ আছে, ভাবাবেগ আছে। ইসলাম প্রশ্নে তারা যতটা আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, ইসলামকে মানার ক্ষেত্রে তারা ততোটা আগ্রহী নয়। এই জনপদে ইসলামের প্রচার প্রসার এবং ইসলামী শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে আলেমদের অবদান সর্বাগ্রগণ্য। ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে দেশে নানা ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। দেশের আপামর জনতার অধিকাংশ জীবনের শুরুতে মক্তবে দীনি শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। যেটিকে ইসলামী শিক্ষার প্রাথমিক কেন্দ্র বলা যায়। ইসলামী উচ্চ শিক্ষার জন্য আলিয়া এবং কওমী দুটি ধারা চালু রয়েছে। ইসলামী শিক্ষার প্রসারে দুটি ধারারই সমান অবদান রয়েছে। কোনো এক অজানা কারণে এ দুটি ধারার মধ্যে এক ধরনের বৈরীতা সৃষ্টির চেষ্টা সব সময় দেখা যায় এবং এক ধারার লোক অন্য ধারার লোককে আপন করে নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো এক আজানা বিভেদের রেখা টানা আছে। তা সত্বেও হেফাজতের আন্দোলনে কওমী ধারার আলেমগণ নেতৃত্ব দিলেও আলিয়া, কওমী, সাধারণ জনগণ সকলেই এই আন্দোলনের সাথে একাত্ত¡তা প্রকাশ করেছিল। হেফাজত যে দাবীগুলো নিয়ে ময়দানে আবির্ভূত হয়েছিলো তা কোনো একক গোষ্ঠী বা দলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ছিলো না। প্রতিটি ঈমানদার মুসলমানের প্রাণের দাবী ছিলো এতে সন্নিহিত। দেশের আপামর জনতার একচ্ছত্র সমর্থন থাকা সত্তে¡ও কেন এ আন্দোলন আজ ¤্রয়িমান কিংবা কেন তারা সরকারের অনুগত হয়ে নিশ্চুপ হয়ে আছে তার ইতিবাচক এবং নেতিববাচক আলোচনা অনেক কিছুই আছে, তবে দাবীগুলোর সাথে কোনো ঈমানদার মুসলমানের দ্বিমত করা কোনো সূযোগ নেই। হেফাজতের তের দফা দাবীগুলো অতি সংক্ষেপে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য তুলে ধরতে চাই :
১.সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন এবং কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আইন বাতিল করা।
২.আল্লাহ রাসূল (সঃ) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাশ করা।
৩.কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক মুরতাদ এবং আল¬াহ, রাসূল, কুরআন, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত নিয়ে কুৎসা রটনাকারী বøগার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তি দানের ব্যবস্থা করা।
৪.ব্যক্তি, বাক স্বাধীনতার নামে সব ধরনের অনাচার,ব্যভিচার,নারী পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্জলনসহ বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৫.ইসলাম বিরোধী নারী নীতি ও ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৬.ভÐ নবী দাবীদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অনুসারী কাদিয়ানীদের সরকারীভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
৭.মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং কলেজ ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
৮.জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে নির্বিঘেœ নামাজ আদায়ে বাঁধা বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।
৯. রেডিও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি, টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক সিনেমায় নেতিবাচত চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস পড়িয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।
১০.পার্বত্য চট্টগ্রাসহ দেশব্যাপী ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত এন.জি.ও এবং খ্রীষ্টান মিশনারীদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরা বন্ধ করা।
১১.রাসূল প্রেমিক আলেম ওলামা মাদরাসার ছাত্র তৌহিদী জনতার ওপর হামলা, দমন পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ, গণহত্যা বন্ধ করা।
১২.অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব আলেম,ওলামা,মাদরাসার ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে মুক্তি দান, দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণসহ দুস্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
১৩.বাংলাদেশে সংখ্যালঘূ সম্প্রদায়সমূহের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
‘হেফাজতে ইসলাম’ প্রথম জনগণ ও সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে চট্টগ্রামে শাহবাগীদের সমাবেশ করতে না দিয়ে। সরকারের সকল মহল যৌথভাবে চেষ্টা করেও চট্টগ্রামে শাহবাগীদের সমাবেশ করাতে পারেনি-হেফাজতে ইসলাম নামক একটি নব প্রতিষ্ঠিত অরাজনৈতিক সংগঠনের বাঁধার কারণে। এর পর সবার টনক নড়ে যখন সকল বাঁধা,প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে ৬ এপ্রিল মতিঝিলে মহা গণজাগরণ সৃস্টি হলো। এরপর থেকে সরকার এবং সরকার সমর্থক বাম মিডিয়া রাজনৈতিক দলগুলো একযোগে নেমে পড়লো অপপ্রচারের যুদ্ধে। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবী মানলে দেশ মধ্যযুগীয় বর্বরতার যুগে চলে যাবে, আফগানিস্তান হয়ে যাবে, পাকিস্তান হয়ে যাবে। সত্যিই কি তাই? মূলত হেফাজতে ইসলামের ১৩ টি দাবী প্রতিটি ঈমানদার মুসলমানের প্রাণের দাবী, দেশপ্রেমিক জনগণের দাবী। কোন ঈমানদার মুসলমান জেনে বুঝে এ দাবীগুলোর বিরোধিতা করতে পারে না।
জনগণের অযুত সমর্থন এবং ভালোবাসা সত্তে¡ও তবে কেন হেফাজতে ইসলাম তাদের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলোনা? এ প্রশ্ন হয়তো সামনে আসতে পারে। অনেকেই হয়তো প্রশ্ন তোলেন কোন আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে ২০১৩ সালের ৫ মে অবরোধের পরিবর্তে শাপলায় সমাবেশ করে রাতে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো? হয়তো সকল প্রশ্নের জবাব একদিন আসবে। হেফাজতের নেতৃবৃন্দের চিন্তায় অবশ্যই এটা আসেনি যে সরকার এ ধরনের সর্বগ্রাসী আক্রমণ করে হত্যার মতো জঘন্য পথ বেছে নিবে। তাদের আত্ম বিশ্বাস ছিলো যে সরকার এতো বিশাল জমায়েতে হামলা করবে না। একইসাথে দিনের বেলা যে পরিমাণ লোক সমাবেশে জমায়েত ছিলো রাতের বেলা তার অর্ধেক পরিমাণ লোকও সেখানে ছিলো না। তার চেয়েও চরম বাস্তবতা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সকল বাহিনী একযোগে কোনো সমাবেশে হামলা করলে নিরস্ত্র জনতার পক্ষে তা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। কেউ কেউ ইরানের রেজা শাহ পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর আন্দোলনের কথা বলেন, যেখানে কয়েক হাজার লোক জীবন দেয়ার পর রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুলি করা বন্ধ করেছিলো এবং জনতার বিজয় হয়েছিলো। মানুষ তার বিশ্বাসকে ধারণ করেই বেচে থাকে, সামনে অগ্রসর হয়। তবে বিশ্বাসের সাথে বাস্তবতার মিল থাকা আবশ্যক।
হেফাজত নেতাদের অতি আত্মবিশ্বাস তাদের সামনের দিনের পচলাকে মসৃন করেনি। সরকারের জুলুম নির্যাতন আর মামলা হামলাকে মোকাবিলা করার জন্য যে ধরনের দক্ষ, ত্যাগী এবং সাহসী সংগঠন ও কর্মী বাহিনী দরকার সেটা তারা গড়ে তুলতে পারেন নি। এ তিক্ত সত্যকে স্বীকার করে নেয়াতে সম্ভবত কোনো দোষের কিছু নেই। একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে তার মূল জনশক্তি ছিলো কওমী মাদরাসার তালাবে ইলেমরা। তারা অবশ্যই নিঃস্বার্থভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তোষ লাভের প্রত্যাশায় উস্তাদদের ডাকে সাড়া দিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলো। কওমী মাদরাসার ছাত্ররা স্বাভাবিকভাবেই তাদের ওস্তাদদের প্রতি অতি বেশি আনুগত্যশীল। এমন আনুগত্যশীল ছাত্র বাংলাদেশে প্রচলিত কোনো শিক্ষা ব্যবস্থায় গড়ে তোলা সম্ভব নয়। একটি আন্দোলন সেটা রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক যে ধরনেরই হোক না কেন। যেই সমাজ এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সেই আন্দোলন পরিচালিত হবে সইে সমাজ ও রাষ্ট্রে বসবাসকারী জনগণের মনস্তত্ব, তাদের অভ্যাস, তাদের কর্মকাÐ এবং সেই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার চতুর্মূখী সমস্যা, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার মতো দক্ষ কর্মী বাহিনী তৈরী না হলে সে আন্দোলন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। একদা যে আন্দোলন তুমুল ঢেউ তুলেছিল, তা কেন আজ মৃয়মান, এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে মোকাবিলা করে টিকে থাকার মতো দক্ষ জনবল এবং সকল স্তরে কার্যকর নেতৃত্ব অতি অল্প সময়ে গড়ে উঠতে পারেনি।
সরকারের আহŸানে সাড়া দিয়ে তাদের সাথে একই মঞ্চে বক্তব্য দেয়ার পরেও হেফাজতের বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেফতার বন্ধ হয়নি। সরকার হয়তো একটি আপতকালীন ব্যবস্থা হিসেব হেফাজতের নেতাদের সকলকে জামিনে মুক্তির ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি মামলাও প্রত্যাহার হয়নি। হেফাজতের নেতৃবৃন্দ হয়তো সরকারের আশ্বাসে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন, কিন্তু সরকারের আশ্বাস যে একটি রাজনৈতিক কুটকৌশল এতে কোনো সন্দেহ নেই। হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, কিন্তু তাদের দাবীগুলোর বাস্তবায়ন রাজনৈতিক বিষয়। একইভাবে এটিও চিরন্তন বাস্তবতা- ইসলাম আল্লাহর পক্ষ হতে মনোনীত একমাত্র দীন বা জীবন ব্যবস্থা। দীন ও দুনিয়াকে পৃথক করা কিংবা ইসলামকে রাজনীতি থেকে পৃথক করার কোনো সূযোগ নেই।
কেউ কেউ হেফাজতের আন্দোলন সঠিক ছিল না কি, বেঠিক ছিল তার যৌক্তিকতা খূজতে চান। ফ্যাসিবাদী আস্ফালনের বিরুদ্ধে হেফাজতের ভূমিকা বরং যথার্থ এবং সন্দেহাতীতভাবে ঈমানী দাবী পূরণের জন্য সহায়ক ছিল। তাদের পরবর্তী ভূমিকা কতটুকু যথার্থ এবং সঠিক তা নিয়ে হয়তো প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। সনদের স্বীকৃতি আর মামলা তুলে নেবার আশ^াসে ঈমানী দাবীর আন্দোলন থেকে পিছে হটার সূযোগ কতটুকু সে বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। শাহবাগে যে ফ্যাসিবাদের উত্থান হয়েছে তার মোকাবিলায় হেফাজতের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সূযোগ নেই। অনেকেই বলছেন হেফাজত শেষ হয়ে গেছে। এমনকি সরকারের কোনো একজন মন্ত্রী বলেছেন, (কোড-আনকোড) বেশি বাড়াবাড়ি করলে হেফাজতের মতো এক রাতে সব শেষ করে দিবো। মন্ত্রীর এ কথায় বোঝা যায়, হেফাজতের আন্দোলন নিয়ে সরকার চিন্তিত ছিল। একইভাবে এর সাথে জবাব এসে গেছে ৬ মে রাতে সরকার কি ধরনের ম্যাচাকার করেছে। হেফাজতের ভরা যৌবন আর দেখা যাবে কি না জানি না। তাদের আন্দোলনী জজবার সেই যৌলুস আর ফিরে আসবে বলে সম্ভাবনা কম। তবে তারা শাহবাগী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঈমানদীপ্ত জনতার যে ঢেউয়ের সৃষ্টি করেছিলো, তা যুগ ও কালের ব্যবধানে এই জনপদের মানুষকে আবার জেগে ওঠার প্রেরণা জোগাবে ইনশাআল্লাহ।
সরকারের নির্যাতনের খড়গ আর কারো কারো প্রতি উপহারের ডালি মেলে ধরায় হেফাজতের প্রথম সাড়িতে নেতৃত্ব দেয়া কেউ কেউ সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমূখ। বার বার সরকার শব্দটি আসায় এ কথা বোঝাতে চাচ্ছি না, যে হেফাজত সরকার উৎখাতে আন্দোলনে নেমেছিল। মূলত ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর চির দুশমন শাহবাগীদের উত্থান এবং তাদের সকল অন্যায় কাÐের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার এবং শাহবাগীদেরর রক্ষার জন্য সরকার তার সকল অর্গানকে যেভাবে ব্যবহার করেছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ কারণে বার বার সরকার শব্দটি আসছে। ফ্যাসিবাদী অচরণ এবং ইসলাম নির্মূলে সরকারের ভূমিকা আগের চেয়ে আরো বেশি তরাম্বিত হয়েছে। এমনি সময়ে হেফাজতে ইসলামের দাবীগুলো নিয়ে তাদের আরো বেশি সোচ্চার হওয়া দরকার ছিল, কিন্তু তার নিশ্চুপ, নির্বাক হয়ে আছে। দেশের আলেম সমাজের এই নিশ্চুপ এবং নির্বাক ভূমিকা জাতির জন্য কোনো কল্যাণের বার্তা বয়ে আনে না।
আমরা যদি বিগত শতাব্দীর দিকে তাকাই তবে দেখতে পাই..... কমিউনিজমের সয়লাব এক সময় গোটা দুনিয়ার মুসলিম যুবকদেরকে এর বিধ্বংসী থাবায় আক্রান্ত করেছে। রাশিয়ার আশে পাশের কুড়িটি মুসলিম রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের পেটের মধ্যে ঢুকে গিয়ে এ রাষ্ট্রগুলোর মুসলমানরা নিজেদের আত্ম পরিচয় ভুলে গিয়েছে। ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর মুসলমানরা আবার আত্ম পরিচয়ে জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখছে। এশিয়া এবং আফ্রিকার অসংখ্য মুসলিম দেশের তরুণ যুবকরা কমিউনিজমের থাবায় নিজেদের আত্ম পরিচয় ভুলে গেছে। কমিউনিজমের পতনের পর মুসলিম দেশগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের কলের পুতুলে পরিণত হয়েছে। একদিকে কমিউনিজমের পতন হয়েছে আর এক দিকে সা¤্রাজ্যবাদের গাথুনি মজবুত হয়েছে। কামউনিজম এবং পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের আগমণের আগে গোটা দুনিয়ায় একক আধিপত্য বিস্তার করেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। তারা মুসলিম দেশসমূহ থেকে আস্তে আস্তে ইসলামী আইন কানুন, শিক্ষা, সংষ্কৃতিকে বিতারণ করে নিজেদের রচিত আইন কার্যকর করেছে। এ সময় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আলেমগণ তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করে ঘুমিয়ে ছিল অথবা ফিরকা এবং মাযহাবের মাসয়ালাক নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত ছিল। এই সূযোগে তারা পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম দেশে তাদের নিজস্ব আইন রচনা করে তা বাস্তবায়ন করে গেছে। আলেম এবং ইসলামী পন্ডিতদের নিস্ক্রিয়তা মুসলমানদের এই কথা ভাবতে শিখিয়েছে যে, রাষ্ট্রীয় আইন পরিবর্তন করায় তাদের ঈমান এবং আমলের কোনো ক্ষতি হবে না। ইসলামী শরীয়াহর সাথে রাষ্ট্রের আইনের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ভাবনাগুলো মুসলিম মানসে যায়গা করে নেবার পর আস্তে আস্তে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ সর্বত্র ফিরিঙ্গি আর পশ্চিমা সভ্যতাই শুধু নয়, মুসলিম ঘরে নাস্তিক এবং আল্লাহর দুশমন পয়দা হয়েছে।
শাসকরা হারামকে হালাল, হালালকে হারাম বানাচ্ছে। একদিকে মানব রচিত আইনে শাসন কার্য পরিচালনা করছে অপরদিকে মদীনা সনদের আলোকে দেশ চলছে বলে ঘোষণা দিচ্ছে। নিজেদের ইচ্ছাকে ইসলামের আহকামের ওপর প্রাধান্য দিচ্ছে। মানুষের মৌলিক ও মানবিক অধিকারগুলো পদে পদে লঙ্ঘন করছে। ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতিকে বিতারিত করে সেক্যুলার শিক্ষানীতি চাপিয়ে দিচ্ছে। অন্যায় অশ্লীলতা বেহায়াপনার প্রসার ঘটাচ্ছে। বিদেশি সংস্কৃতি আমাদানীর নামে চরিত্র বিধ্বংসী সিনেমা প্রদর্শন করা হচ্ছে। আলেম ওলামা এবং ইসলামপ্রিয় জনতার ওপর নির্যাতনের মাত্রা দিনে দিনে বাড়িয়ে দিচ্ছে। একদিকে আলেমদের গণভবনে দাওয়াত করে নিয়ে যাচ্ছে আপরদিকে একই সময়ে অসংখ্য আলেমকে কারারুদ্ধ করছে। সরকারের এইসব ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে হেফাজত মাথা উচু করে দাড়িয়েছিল বলেই তো সরকার তাদের গুরুত্ব দিয়েছে। আওয়ামী রাজনীতির বৈশষ্ট্য হচ্ছে, প্রয়োজনে তারা চরম দুশমনকেও আপন করে নিয়ে স্বার্থ উদ্ধারের পর তাকে আবার ছুড়ে ফেলে দিবে। আওয়ামী রাজনীতির এই ছলচাতুরী আলেম সমাজ অনুধাবন করতে না পারলে আগামীর দিনগুলো আরো বেশি কঠিন হবে। আলেমগণ নবীদের ওয়ারিস। তাদের ওপর অনেক দায়িত্ব বর্তায়। এতো সব অন্যায় চলতে থাকবে আর তারা নিশ্চুপ বসে থাকবে এটা ঈমান এবং বিবেকের দাবী হতে পারে না। এ দায়িত্ব তারা এড়িয়ে যেতে পারে না। শুধুমাত্র মসজিদ, মাদরাসার চার দেয়ালের মধ্যেই ইসলামের খেদমতের মাধ্যমে দায়িত্ব আদায় হতে পারে না। যার জ্ঞান এবং যোগ্যতা যেমন তাকে আল্লাহর দরবারে তেমন জবাবদিহী করতে হবে। হৃদয়ে আল্লাহর ভালবাসা এবং তার প্রতি ভয় এবং হুব্বে রাসূলের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে তারা যথার্থ ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন এটাই প্রত্যাশা।
লেখক : মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান

পঠিত : ২০১ বার

মন্তব্য: ০