Alapon

নির্বাচন ১৯৮৬: কতকথা ও জামায়াত

নির্বাচনের ঘোষণার পর ১৫ ও ৭ দলীয় জোট এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে লিয়াজোঁ পর্যায়ে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কে যোগাযোগের মাত্রা আরো বেড়ে গেল।

প্রাথমিক আলোচনায় এ বিষয়ই প্রাধান্য পেল যে, এরশাদ সরকারের পরিচালনায় নির্বাচনে আদৌ সামান্যতম নিরপেক্ষতা ও থাকবে কি না? সবাই এ আশঙ্কা প্রকাশ করলেন যে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনাই নেই। এ অবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ অর্থহীন।

জামায়াতের পক্ষ থেকে দুই জোটকে বলা হলো, এরশাদকে পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানাতে পারলে নির্বাচন বর্জন করার অজুহাত সৃষ্টি হতে পারে। আমরা এরশাদের পদত্যাগ দাবি না করলে নির্বাচন বয়কট করার পক্ষে কোনো যুক্তিই থাকে না। এরশাদকে ক্ষমতাসীন রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তাঁকে ক্ষমতায় স্থিতিশীলই করা হবে।

এরশাদের পদত্যাগ দাবি না করায় রাজনৈতিক দলগুলো সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে রীতিমতো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেল।
পরস্পর সন্দেহ করাও শুরু হলো। জোট ও জামায়াত যখন লিয়াজোঁতে বসে তখন সবাই নির্বাচনের বিরুদ্ধেই মত প্রকাশ করে। নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই; নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে এরশাদের গদি আরো মযবুত হবে বলে মন্তব্য করা হয়।

১৫ দলীয় জোটে বাম দলগুলোও শরীক ছিল। তাদের কারণেই জোটে দলের সংখ্যা এত বেশি হয় । নির্বাচন হলে বামদের তেমন কোনো সুবিধা হবে না বলে তারা সচেতন । তাদের পক্ষ থেকে একটা চাল ময়দানে চালাতে চেষ্টা করা হয়েছে। সিপিবির সভাপতি কমরেড ফরহাদ আহমদ দাবি জানালেন, একটা প্রতীকী নির্বাচন হোক । শেখ হাসিনা ও বেগম জিয়া সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে প্রত্যেকে দেড় শ' আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তারা যদি অধিকাংশ আসনে বিজয়ী হন তাহলে তারাই সরকার গঠন করবেন । এরশাদের দল পরাজিত হলে তিনি পদত্যাগ করবেন।

ভাবসাবে মনে হলো দুই নেত্রীই এ প্রস্তাব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। এরশাদ আতঙ্কিত হয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করলেন, কোনো প্রার্থী একসাথে পাঁচটির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এভাবে ফরহাদ সাহেবের কূটচাল বানচাল হয়ে গেল ।

নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কেউ উড়িয়ে দিতে পারছিলেন না । গণ-আন্দোলন করে এরশাদকে অপসারণ করার মতো পরিস্থিতি যুগপৎ আন্দোলন দ্বারা সৃষ্টি না হওয়ায় সবাই অনুভব করছিলেন যে, এ নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। কিন্তু আন্দোলনরত জোট ও দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে সিদ্ধান্তে না পৌছায় এবং নির্বাচনবিরোধী মনোভাব প্রকাশ পেতে থাকায় রাজনৈতিক পরিবেশ সন্দেহযুক্ত হয়েই রইল ।

এ পরিস্থিতিতে কমরেড ফরহাদের প্রস্তাব প্রধান দুই দল বিবেচনাযোগ্য মনে করায় স্বাভাবিক কারণেই জামায়াত অত্যন্ত বিস্মিত ও বিক্ষুব্ধ হয়। যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ময়দানে জামায়াতের অগ্রগতিতে হিংসা ও বিদ্বেষের বশবর্তী হয়েই কমরেড ফরহাদ এমন এক প্রস্তাব পেশ করলেন, যাতে জামায়াত সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগই না পায়। এরশাদ এ প্রস্তাব সমর্থন না করায় ঐ ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায় ।

নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জামায়াতের সাথে বিএনপির নির্বাচনী সমঝোতার প্রয়োজন উভয় দলই অনুভব করল। এ উদ্দেশ্যে বিএনপির অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা কর্নেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমানের বাসভবনে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে আমার প্রাথমিক আলোচনা হয়। আমি বেগম সাহেবার নিকট প্রস্তাব রাখলাম, বিএনপি ২০০ আসনে প্রার্থী দিক এবং জামায়াতকে ১০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দিক। বেগম সাহেবা বললেন, কতক ছোট ছোট দলের জন্যও কিছু আসন রাখতে হবে।

আমি বললাম, ১৫/২০ আসন রেখে ৮০টি জামায়াতকে ছেড়ে দিন । তিনি বললেন, বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াতের সাথে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য কর্নেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমানের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ।

কেয়ারটেকার ফর্মুলা দুই জোট গ্রহণ না করায় নির্বাচন বর্জনের পক্ষে আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে জামায়াতের মনে হয়নি। এরশাদ অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন এবং তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে বলে দাবি করাই আন্দোলনের প্রধান বিষয় হওয়া উচিত ছিল। এটাই জনগণের নিকট একমাত্র বোধগম্য ইস্যু হতে পারত । কিন্তু পদত্যাগের পরে ক্ষমতা কার হাতে যাবে, এর কোনো প্রস্তাবনা কারো কাছেই ছিল না। কেয়ারটেকার ফর্মুলাই একমাত্র যুক্তিপূর্ণ দাবি হতে পারত ।

রাজনৈতিক ময়দানে কোনো দলের পক্ষ থেকে পেশ করা বড় ধরনের কোনো ইস্যুকে সমর্থন করা বড় দলগুলোর জন্য অত্যন্ত কঠিন। এতে ঐ ইস্যুর প্রবক্তার মর্যাদা স্বীকার করে নেওয়া হয় বলে বড় দল এটাকে দলীয় প্রেস্টিজের জন্য ক্ষতিকর মনে করে থাকে । জামায়াতকে ঐ মর্যাদা দিতে কেউ রাজি হলেন না; অথচ তাদের নিকট কোনো বিকল্প প্রস্তাবও ছিল না।

দুই জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সাথে জামায়াতের নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমেই আন্দোলনের কর্মসূচি পৃথকভাবে ঘোষণা করা হতো। দুই জোট ও জামায়াত একমঞ্চে সমবেত হতো না । দুই জোটও এক মঞ্চে কর্মসূচি পালন করত না । একমত হয়ে একই কর্মসূচি আলাদাভাবে ঘোষণা করা হতো। সাংবাদিকরা দুই জোটকে জিজ্ঞেস করতেন, আপনাদের কর্মসূচি গ্রহণের বেলায় কি জামায়াতও শরীক থাকে? জবাবে উভয় জোটই অস্বীকার করত এবং বলত, কোনো দল আমাদের কর্মসূচি অনুকরণ করলে আমরা বাধা দিই না । এ কথা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দুই জোট জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে তখনো প্রকাশ্য স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত ছিল না ।

আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণে জামায়াত লিয়াজোঁ পর্যায়ে দুই জোটের সাথে নিয়মিত শরীক থাকা সত্ত্বেও তারা জামায়াতকে রাজনৈতিক স্বীকৃতি দিতেই প্রস্তুত ছিলেন না। জামায়াতের পেশ করা কেয়ারটেকার ফর্মুলা গ্রহণ করা তাদের পক্ষে কেমন করে সম্ভব?

রাজনৈতিক জোটভুক্ত দলসমূহ ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, অপরদিকে প্রকাশ্যে নির্বাচনবিরোধী বক্তব্যও দিয়ে যাচ্ছিল। বড় দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকাই স্বাভাবিক। কোনো দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা না বলায় পারস্পরিক সন্দেহ বিরাজ করছিল। এ পরিবেশে শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম লালদিঘি ময়দানে দলীয় জনসভায় বলেন, এরশাদ সরকারের পরিচালনায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা অর্থহীন। যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এরশাদের গদি মযবুত করবে তারা 'জাতীয় বেঈমান' হিসেবে গণ্য হবে।

অথচ ময়দানে গুজব রটেছে যে, ১৫ দলীয় জোটের শরীক দলগুলো নির্বাচনে আসন দাবি করে রীতিমতো দর কষাকষি চালাচ্ছে।

তখন জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে নির্বাচনী সমঝোতার আলোচনা চলছে। বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে কর্নেল মুস্তাফিজ ও জামায়াতের লিয়াজোঁ কমিটির মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকাদি চলল। প্রথমে বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াতকে মাত্র ২০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কয়েক দিনের দর কষাকষির পর কর্নেল মুস্তাফিজ ৫০টি আসন জামায়াতকে ছেড়ে দিতে সম্মত হলে শেষ পর্যন্ত জামায়াত তা মেনে নেয়।

পরে জানা গেল, জামায়াতকে এত বেশি আসন ছেড়ে দিতে সম্মত হওয়ায় নিজ দলীয় বৈঠকে কর্নেল মুস্তাফিজ রীতিমতো নাজেহাল হন। ফলে বিএনপির সাথে নির্বাচনী সমঝোতার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে রাজনৈতিক জোট ও দলসমূহের কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত ঘোষণা না হওয়ায় জেনারেল এরশাদ ধমকের সুরে ঘোষণা করলেন, ১৯ মার্চ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। ২০ মার্চ তিনি জাতির উদ্দেশে নির্বাচন সম্পর্কে ভাষণ দেবেন। যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না তাদেরকে নির্বাচনবিরোধী কোনো তৎপরতা চালাতে দেওয়া হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার খবর তিনি হয়তো জানতেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিরোধী কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ময়দানে না থাকায় এরশাদ পূর্ণ আস্থার সাথেই ঐ সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেন।

ধমকে কাজ হলো,এরশাদের এ ধমকে কাজ হলো। জানা গেল, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ১৯ মার্চ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উদ্দেশ্যে বৈঠকে বসবে। জামায়াতও ঐ একই তারিখে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিল ।

১৯ মার্চ (১৯৮৬) আমার সভাপতিত্বে কর্মপরিষদের বৈঠক শুরু হলো। কর্মপরিষদ তো পূর্বেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, দুই জোটের এক জোটও যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে জামায়াত অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তাই বৈঠকে আলোচনার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমরা যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলাম তা-ই যথেষ্ট ছিল । আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই ঘোষণাপত্র প্রস্তত করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রইলাম। জামায়াতের লিয়াজোঁ কমিটির আহ্বায়ক জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন।

আমাদের সিদ্ধান্ত পত্রিকায় পাঠানোর পূর্ণ প্রস্তুতি সত্ত্বেও ঐ দুই দলের সিদ্ধান্ত না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বাধ্য ছিলাম। রাত ১১টা পর্যন্ত তাদের সিদ্ধান্ত জানা গেল না। তাই আমি বৈঠক সমাপ্ত ঘোষণা করে লিয়াজোঁ কমিটিকে দায়িত্ব দিয়ে বাড়িতে চলে এলাম। ঐ দুই দলের সিদ্ধান্ত জানার পর আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পত্রিকায় খবর দেওয়ার কথা।

দৈনিক সংগ্রামের দুজন সাংবাদিক ৩২ নং ধানমন্ডির বাড়িতে আওয়ামী লীগের সংবাদ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। বিএনপির খবর মুজাহিদ সাহেব ফোনে নিচ্ছিলেন। রাত ২টার সময় দৈনিক সংগ্রামের সাংবাদিকদ্বয় মোটর সাইকেলে খবর নিয়ে এলেন। খবর এল যে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে; কিন্তু বিএনপি তখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌছেনি। বিএনপির তদানীন্তন সেক্রেটারি জেনারেল ওবায়দুর রহমানের সাথে মুজাহিদ সাহেব অব্যাহতভাবে ফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন। রাত তিনটায় ওবায়েদ সাহেব মুজাহিদ সাহেবকে জানালেন, একটা টেকনিক্যাল কারণে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না । আগামীকাল সিদ্ধান্ত নেব। আপনাদের সিদ্ধান্ত পত্রিকায় দিয়ে দিন ।

সকল পত্রিকা অফিস তখন পর্যন্ত খবরের প্রতীক্ষা করছিল। দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক জনাব আবুল আসাদ রাত তিনটায় এ খবর পত্রিকায় প্রকাশের নির্দেশ দিয়ে বাড়িতে গেলেন।

২০ মার্চ (১৯৮৬) বড় বড় হেডিং-এ পত্রিকায় খবর বের হলো, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং বিএনপি এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি । বিএনপির টেকনিক্যাল কারণটি কী?

মুজাহিদ সাহেব ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করে ঐ কারণটি জেনে নিলেন। বিএনপির প্রথম সারির নয়-দশজন নেতা প্রেসিডেন্ট আবদুস সাত্তারের মন্ত্রী ছিলেন। সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ সামরিক শাসন কায়েম করার পর তাদের বেশ কয়েকজনকে কারাবদ্ধ করেন এবং তাদেরকে পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য বলে অন্যায়ভাবে অর্ডিন্যান্স জারি করেন। তাদের মধ্যে ওবায়দুর রহমানও একজন ।

বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করার উদ্দেশ্যে ঐ অর্ডিন্যান্স বাতিল করে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার ওয়াদাও নাকি এরশাদ সাহেব করেছিলেন। ১৯ মার্চ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় পর্যন্ত ঐ ওয়াদা পূরণ না করায় বিএনপি সমস্যায় পড়ে গেল। পরের দিন ওয়াদা পূরণের অপেক্ষায় থাকার পর বিএনপি বুঝতে পারল, এরশাদ সাহেব তাদের ধোঁকা দিয়েছেন। তখন বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিল এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কারণে হাসিনার দেওয়া 'জাতীয় বেঈমান' উপাধিটি আওয়ামী লীগের প্রতি সার্থকভাবে প্রয়োগ করল। আসল যে কারণে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারল না, তা তো জনগণের নিকট প্রকাশ করা চলে না।

উভয় জোট এতদিন পর্যন্ত এরশাদ সরকারের পরিচালনায় নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে প্রচার করেছে। এখন বিএনপি অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে নির্বাচন বর্জনকে গৌরবের সাথে প্রচার করতে থাকল; স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন দল হিসেবে আবির্ভূত হলো । 'জাতীয় বেঈমান' গালি খেয়ে আওয়ামী লীগ দাবি করল, বিএনপি তাদের সাথে প্রতারণা করেছে। তারা আরো দাবি করল, বিএনপির সাথে তাদের নির্বাচনী প্রার্থীদের তালিকার

বিনিময়ও হয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানতাম না।



জামায়াত বিএনপির সাথে এবং তাদের সেক্রেটারি জেনারেলের সম্মতি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের খবর পত্রিকায় পরিবেশন করেছে। তাই জামায়াতের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে বিএনপি কোনো বিরূপ মন্তব্য করেনি। জামায়াত তো নিশ্চিতই ছিল যে, বিএনপিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

উক্ত নির্বাচনে ১১৯টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের নিকট প্রতীকের আবেদন জানালেও শেষ পর্যন্ত ৭৯টি দল নির্বাচনে প্রার্থী দাঁড় করায়; কিন্তু মাত্র ১১টি দলের প্রার্থী বিজয়ী হয়।

তাদের আসনসংখ্যা নিম্নরূপ :

১. জাতীয় পার্টি (সরকারি দল) ১৫৩ আসন
২. আওয়ামী লীগ ৭৫ আসন
৩. জামায়াতে ইসলামী ১০ আসন
৪. সিপিবি (কমিউনিস্ট পার্টি) ৫ আসন
৫. ন্যাপ (ভাসানী- মশিউর রহমান) ৫ আসন
৬. মুসলিম লীগ ৪ আসন
৭. জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- রব) ৪ আসন
৮. জাসদ (সিরাজ) ৩ আসন
৯. বাকশাল ৩ আসন
১০. ওয়ার্কার্স পার্টি ৩ আসন
১১. ন্যাপ (মুজাফফর) ২ আসন

*এছাড়া অবশিষ্ট ৩৩টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়।

তথ্যসুত্রঃ
জীবনে যা দেখলাম, ষষ্ঠখন্ড
অধ্যাপক গোলাম আযম

পঠিত : ৭২৭ বার

মন্তব্য: ০