Alapon

আমাদের যুহদের নামে ধোকা দেয়া হয়েছে



আমাদের যুহদের (দুনিয়া বিমুখতার) নামে ধোকা দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছেও। অবাঞ্চিত জ্ঞানের চর্চা করতে করতে আমাদের মৌলিক জ্ঞানের ঘাটতি প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে (সবক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম আছে,তবে তা ব্যাপক নয় বলেই এই অবস্থা)। দুনিয়াবিমুখ ইসলামপন্থী সম্প্রদায় গড়ে তোলা হয়েছে। যা অনেক সময় সঠিক পন্থাকে ধারণ করে না।

দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনের কথা সামনে আসলে ইমাম আবু হানিফার (র.) দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি এবং তৎপরবর্তী নির্যাতনের কথা উল্লেখ করি। আমরা হয়তো ভুলে যাই আবু হানিফার একনিষ্ঠ ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ এর কথা। যিনি একই খেলাফতের অধীনে কাযিউল কুযাত তথা প্রধান বিচারপতি ছিলেন। কারণ ইমাম আবু হানিফার দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকৃতির কারণ তা ছিলো না,যার ওয়াজ করে অকর্মণ্য জাতি গঠনে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

আমাদের এক শ্রেণীর আলেমেরা জাতীয় উন্নতি কিংবা দুনিয়াবি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করাকে একেবারে হারাম ঘোষণা করে বসে থাকেন বলে, তাদের মধ্যে স্পষ্টবাদিতা, সৎসাহস, তেজস্বিতা এবং আত্মসম্মানও আরামের সাথেই ঘুমিয়ে আছে। তার প্রত্যক্ষ ফল- ক্রমশ তাঁরা জ্ঞানে-মানে হীন এবং দীন হয়ে পড়ছেন।যেই ধর্মের মুনাজাতে আখিরাতে মঙ্গলের আগে দুনিয়ায় মঙ্গলের দুয়া করা হয় তার অনুসারীরা কিভাবে দুনিয়াবিমুখ হতে পারে!? আমরা কেনো ভুলে যাই দুনিয়ার মালিক হওয়া আর দুনিয়ার দাস হওয়া একই কথা নয়?

ইসলাম দুনিয়াবিমুখ কোনো জীবন ব্যবস্থা নয়, যা তার অনুসারীদের দুনিয়ার কাজকর্ম বাদ দিয়ে পাহাড়ের গুহায় বসে শুধু আল্লাহর ধ্যান করতে শিক্ষা দেয়। বরং ইসলাম এ ধরনের চর্চার ঘোর বিরোধী। ইসলাম মানুষকে এক স্বাভাবিক এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের পথে উৎসাহিত করে যেখানে একজন ব্যক্তি আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখার ভিতরে থেকে সামাজিক জীবনযাপন করবে, তার প্রতি আল্লাহর যে হক তা আদায় করে নিজের প্রতি নিজের হক ও অন্যান্য সৃষ্টিকুলের প্রতি তার হক আদায় করবে। ইকবালের ভাষায় - ‘ধর্ম কোনো মতবাদ নয়, কোনো পৌরহিত্য নয়, কোনো অনুষ্ঠান নয়, বরং ধর্ম এমন একটি জীবনবিধান যা মানুষকে বিজ্ঞানের যুগেও তার দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত করে এবং তার প্রতীতিকে দৃঢ় সক্ষম করে দেয়, যার ফলে সে সত্যোপলব্ধিতে সক্ষম হয়ে উঠে।"

যে মাইকে আযান দেওয়াকে তারা হারাম বলেছিলেন ওয়াজ করার সময় এখন সেই মাইক ২-৩ কিলোমিটার বিস্তৃত করে প্রচার করেন। টেলিভিশন কে শয়তানের বাক্স হিসেবে প্রচার করেছেন যারা, তারাই আজ টকশো করে বেড়ান। হুম বলতে পারেন তারা ইজতেহাদী ভুল করেছেন। কিন্তু ভাই আপনাদের এই ভুল এবং তার ব্যাপক প্রসার তো কওমকে কঠিন আবর্তে নিয়ে এসেছে। আপনাদের ভুল আর উদ্যোগের অভাবের কারণে তো ময়দান দখল হয়ে গিয়েছে। মিডিয়াকে আপনারা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক প্রমাণে ব্যস্ত ছিলেন, যখন ভুল বুঝতে পারলেন ততক্ষণে তো ময়দান আপনার জন্য নেই,প্রবেশ করাটাও যেখানে সুদূর পরাহত। বাংলা ভাষাকে হিন্দুয়ানী ভাষা বলে অবজ্ঞা করে বাংলাদেশেই এর চর্চা না করে অন্য বিষয়ে মজেছিলেন ততোদিনে তো সাহিত্যের মাঠও আপনার হাতছাড়া। ছেলে-পিলেরা তাই পড়েছে যাতে সে মজা পায়। কারণ সেখানে আপনার উপস্থিতি ছিলো না বললেই চলে।

ফেসবুক আর অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের এজেন্ডা বলে এসেছিলেন আর এখন ঠেকে গিয়ে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম এর অভাবও বোধ করছেন। এরিইমধ্যে যাদের আপনি গাল মন্দ করে, তারা প্লেটে ভাত খায় বলে আপনি কলা পাতায় খাওয়ার দলে ছিলেন তারা কিন্তু এইসময়ে বসে ছিলোনা। আপনার জন্য কোনো ময়দান খোলা রাখেনি।

ভুলটা বুঝেছি আমরা কিন্তু তা বড় দেরীতে আর ভুল সময়ে বুঝেছি। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।

পঠিত : ২৬৬ বার

মন্তব্য: ২

২০২৩-০৬-২০ ০১:১০

User
Tamzid Farhan

দুনিয়ার জীবনপদ্ধতির উপরেই আখেরাতে কল্যান-অকল্যান নির্ধারিত হবে।
এই কথাটা বুঝার ক্ষেত্রে লিখনীটা সহায়ক বলে মনে করি।

submit

২০২৩-০৬-২০ ০১:১৫

User
রাকিন ফাইয়্যাদ :

জাযাকাল্লাহ খাইরান

submit