ফ্রান্সে বর্ণবাদ ও মুসলিম বিদ্বেষ বিরোধী জনপ্রতিরোধ
তারিখঃ ৪ জুলাই, ২০২৩, ১২:২০
বিশ্বের সবচেয়ে বর্ণবাদী, স্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী, ফ্যাসিস্ট ও মুসলিম বিদ্বেষী কোনো রাষ্ট্র যদি থেকে থাকে, তবে সেটা ফ্রান্স। বিগত কয়েক শতাব্দি ধরে এই দেশটি আফ্রিকার বিভিন্ন রাষ্ট্র সহ সারা পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে আগ্রাসন চালিয়েছে, সেসব রাষ্ট্রকে নিজেদের উপনিবেশে পরিণত করেছে। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের অত্যাচারের কথা আমরা জানলেও ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন ও অত্যাচারের কথা আমরা যারা ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করি, তারা বাদে খুব বেশি কেউই জানে না। তবে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদীদের ব্যাপারে যদি বর্তমান সভ্য দুনিয়ার সাধারণ মানুষরা জানতো, তবে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের ফেরেশতা মনে হতো তাদের কাছে। ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসন নিয়ে অন্যদিন আলোচনা করা যাবে।
আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হলো, সভ্যতা ও শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বর্তমান মুখোশের আড়ালে এক তীব্র বর্ণবাদী, স্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী, ফ্যাসিস্ট ও মুসলিম বিদ্বেষী ফ্রান্সের ব্যাপারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যান্য ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যগুলোর মতো ফরাসি ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যেরও পতন হয়। আস্তে আস্তে ফ্রান্সের উপনিবেশের অধীনে থাকা বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে আফ্রিকার রাষ্ট্র সমূহ স্বাধীনতা লাভ করে। যদিও প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হয় নি। কারণ এসব রাষ্ট্রের অর্থনীতি, রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি ও সমরনীতি থেকে শুরু করে সব কিছুই এখনো ফ্রান্সের ইশারায় চলে। এমনকি এসব দেশে ফ্রান্সের সামরিক ঘাটিও আছে।
শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স নিজ দেশেই একটি কল্যানমূলক রাষ্ট্রের ভেক ধরলেও আসলে তারা ব্যাপক ভাবে একটি শ্বেতাঙ্গ-আধিপত্যবাদী ও বর্ণবাদী রাষ্ট্র। আর ঐতিহ্যগত ভাবেই তারা মুসলিম অভিবাসী ও কৃষ্ণাঙ্গ বিরোধী। বিভিন্ন সময়েই এই ফ্রান্সের পৃষ্টপোষকতাতেই তথাকথিত “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা”র নাম নিয়ে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। এর ফলে ফ্রান্সের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের মুসলিম ঘৃণা আরো বেড়েছে। এরই বহিঃপ্রকাশ ফ্রান্সের শ্বেতাঙ্গ ট্রাফিক পুলিশ সদস্য কর্তৃক গাড়ি থামাতে বলার পর গাড়ি না থামানোতে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে গুলি করে নির্মম ভাবে ১৭ বছর বয়েসি আলজেরিয়ান বংশদ্ভুত কিশোর ‘নাহেল মারজুক’ কে গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা।
এরই প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে ফ্রান্সে অবস্থানরত মুসলিম ও কৃষ্ণাঙ্গরা। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে ফ্যাসিবাদ ও বর্ণবাদ বিরোধী ফরাসি জনগণ। পুরো ফ্রান্স যেনো এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। পুরো ফ্রান্স জুড়ে আগুন জ্বলছে। বিক্ষোভকারী প্রতিবাদী জনগণের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হচ্ছে বর্ণবাদী পুলিশের। পুলিশ হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করছে, পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। এই ধরণের ঘটনাই প্রমাণ করে যে, সভ্যতার মুখোশের আড়ালে এক ভয়ংকর নব্য-নাৎসিবাদী ফ্রান্সের। যাই হোক, ৫০ হাজার দাঙ্গা পুলিশ প্যারিসে নামিয়েও জনগণের জোয়ার থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
বলাই বাহুল্য, ফরাসি বিপ্লবের পর এতো বড় গণবিপ্লব ফ্রান্স আর দেখে নি। এ যেনো শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ, বর্ণবাদ, মুসলিম বিদ্বেষ ও নব্য-ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এ যেনো
“দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব”। এই বিপ্লবের আগুণে পুড়েই অবসান হোক শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী, বর্ণবাদী ও তীব্র মুসলিম বিদ্বেষী ফ্যাসিস্ট ফরাসি রাষ্ট্র ব্যাবস্থার – এই কামনাই করি।
লেখাঃ জোহেব শাহরিয়ার

মন্তব্য: ০