ছোটোগল্প: শাসকের অনুমতি ছাড়া হাগু করলে খারেজি
তারিখঃ ৯ জুলাই, ২০২৩, ২১:৫৯
১.
আরবের সিসিমপুর রাজতন্ত্রের ক্রাউনপ্রিন্স হালুম বিন সালমান আল-ইজরায়েলীর অনুমতি ক্রমে নতুন গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শায়েখ শিকু আল-মাদখালী। নিয়োগ পেয়েই তিনি পুরো সিসিমপুর ঘুরে ঘুরে শাসকের আনুগত্যের প্রয়োজনীয়তা বুঝাচ্ছেন।
আজ বিকেলে তেমনি এক হালাকা বসিয়েছেন শায়েখ শিকু। পরন্ত বিকেলে সিসিমপুর কেন্দ্রিয় মসজিদের সামনের মাঠে সিসিমপুরের সাধারণ জনগণ বসে শায়েখের বয়ান শুনছে। শায়েখ চেয়ারে বসে হাত পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলছেন, “শাসকের আনুগত্য করা শুধু ফরজ না। ফরজের উপর ফরজ। শাসক কাফের হোক, মুশরিক হোক, চোর হোক, বাটপার হোক, মদখোর হোক। যা ইচ্ছা হোক। শাসকের বিরুদ্ধে যাওয়া দূরে থাক, সমালোচনার কথা মাথায় ও আনা যাবে না। আনলেই খারেজি। শাসক যা বলে শুনতে হবে। মনে রাখতে হবে, ‘সবার উপরে শাসক সত্য তাহার উপরে নাই’। শাসককে দেখা মাত্র মাথা নিচু করে কুর্নিশ করতে হবে। শাসকের সামনে চোখ নিচু রাখতে হবে। শাসকের কতো মর্যাদা জানো? শাসক হাগু করার পর তোমার যদি মনে হয় যে শাসকের হাগু থেকে গন্ধ আসছে, তবুও তুমি খারেজি। সব সময় মনে করতে হবে যে, শাসকের হাগু থেকে মেশক-আম্বরের গন্ধ আসে, এবার যতোই দূর্গ্ধ আসুক। ”
এতো কথা বলে হাপিয়ে গেছেন শায়েখ শিকু। পাশে থেকে সরবতের গ্লাস নিয়ে চুমুক দিয়ে পুরো শরবতটা খেয়ে নিলেন। এরপর আবার শুরু করলেন, “সবচেয়ে পবিত্র টাকা হলো পেট্রো-ডলার। ডলার পেলে সালাম করতে হবে। আমেরিকার বিরুদ্ধে বলা যাবে না। ইজরায়েলের বিরুদ্ধে বলা যাবে না। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বলা যাবে না। বললেই খারেজি।”
এমন সময় সিসিমপুরের শেরালি দাঁড়িয়ে বললো, “আচ্ছা শায়েখ, কেউ যদি আমাকে ধরেন যে ঠ্যাঙ্গায় তাহলে কি আমি তাকে পাল্টা ঠ্যাঙ্গানি দিতে পারবো?”
শায়েখ শিকু আৎকে উঠে বললেন, “নাউযুবিল্লাহ, শেরালি। তুমি তো খারেজিদের মতো কথাবার্তা বলছো। এটা কেমন কথা? তোমাকে কেউ ঠ্যাঙালে তুমি যদি পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলো, তাহলে তুমি খারেজি। খবরদার! এসব করবে না। মাইর সহ্য করবে।”
শেরালি বসে যাওয়ার পর গ্রোভার উঠে বললো, “আচ্ছা শায়েখ, ধরেন কোনো মহিলাকে কেউ উত্যক্ত করছে। এই ক্ষেত্রে কি প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাবে না?”
শায়েখ শিকু, “আস্তাগফিরুল্লাহ, জনগণের মনে এতো খারেজিপনা আসলো কই থেকে? চারপাশ দেখি খারেজিতে ভরে গেছে। শুনো, উত্যক্ত কেনো, যদি ধর্ষণও করে, তবুও তুমি প্রতিহত করতে যাবে না। কারণ গেলেই তুমি খারেজি।”
গ্রোভার বসে যাওয়ার পর গলা খাঁকারি দিয়ে শায়েখ শিকু বলে উঠলেন, “শুনো, প্রত্যেক কাজের আগে শাসকের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। নাহলে খারেজি হয়ে যাবে। উঠতে, বসতে – সব কাজে শাসকের অনুমতি লাগবে।”
ঠিক এই সময়ই মসজিদের বাথরুম থেকে হাগু সেরে বের হচ্ছিলো ইকরি। ইকরিকে দেখেই লাফিয়ে উঠলেন শায়েখ শিকু। বলে উঠলেন, “ইকরি, তুমি যে হাগু করেছো, শাসকের অনুমতি নিয়েছো?”
ইকরির চোখে মুখে ভয়। ভয় ভয় নিয়েই ইকরি বলে উঠলো, “মাফ করবেন শায়েখ, আমি ভুলে গেছিলাম।”
শায়েখ বলে উঠলেন, “নাহ, না। এই ভুলের কোনো ক্ষমা হয় না। তুমি এখন খারেজি। কই হে পেয়াদারা, ইকরিকে নিয়ে যাও।”
পেয়াদারা ইকরিকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়ার পর আরেক বাথরুম থেকে বের হলো টুকটুকি। শায়েখ শিকু বললেন, “কি হে টুকটুকি, হাগুর আগে শাসকের অনুমতি নিয়েছো তো?”
টুকটুকি খুশির সাথেই বললো, “জ্বি শায়েখ, আমি হাগুর আগে আমাদের মহান শাসক ‘আমিরুল মুনাফিকিন হালুম বিন সালমান আল-ইজরায়েলীর’ থেকে অনুমতি নিয়েছি”।
“আচ্ছা, ঠিকাছে টুকটুকি। হাগুর অনুমতিই না তুমি নিয়েছো। হাগু শেষে পানি ব্যাবহারের অনুমতি কি নিয়েছো?”।
টুকটুকির পুরো শরীর যেনো ঠান্ডা হয়ে গেলো। অনেক কষ্টে বলে উঠলো, “না শায়েখ।”
শায়েখ বলে উঠলো, “তুমিও খারেজি হয়ে গেছো, পেয়াদারা নিয়ে যাও টুকটুকিকে।”
টুকটুকিকেও নিয়ে যাওয়া হলো। এবার শায়েখ বলে উঠলেন, “প্রতি কাজের আগে শাসকের অনুমতি বাধ্যতামূলক। না হলে খারেজি হয়ে যাবে।”
২.
শায়েখ শিকুর এই ঘোষণার পর থেকে জনগণ যে কোনো কাজ করার আগে তাদের শাসক আমিরুল মুনাফিকিন হালুম বিন সালমান আল-ইজরায়েলীর অনুমতি নেয়। উঠতে বসতে প্রতি কাজের আগে হালুম বিন সালমানের থেকে অনুমতি নেয়। এই দিকে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষের ফোন আসতেই থাকে হালুম বিন সালমান এর ফোনে। সারাদিন এতো এতো ফোন ধরে অনুমতি দিতে দিতে তার জীবন অতিষ্ঠ। এখন আর নাইটক্লাবে গিয়ে যুদ্ধ টুদ্ধ হচ্ছে না। তাই তার মন খারাপ। এখন ঘুমালেও ফোন বেজে উঠে, ফোনের অপর পাশ থেকে কন্ঠভেসে আসে, “ইউর এক্সিলেন্সি, আমি হিসু করতে বসেছি। হিসুর বেগ বেশি। কিছুক্ষণেই কাপড়ে চোপড়ে হয়ে যাবে। আপনি অনুমতি দিন। আমি হিসুটা করি।”
নীরসকন্ঠে হালুম বিন সালমান বলে উঠেন, “অনুমতি দিলাম।”
এভাবেই চলছে দিন। একদিন হালুম বিন সালমান গ্রান্ড মুফতি শায়েখ শিকুকে ডেকে বললেন, “তুমি তো মিয়া এক ওয়াজ করে আমার জীবন অতিষ্ঠ করে দিলা মিয়া। শান্তি মতো সারাদিনের কাজের শেষে নাইটক্লাবে যে একটু খেলাধুলা করবো, সেই উপায় টাও নাই। ফোন বেজে উঠে।”
শায়েখ শিকু বলে উঠলেন, “কি করবো বলেন, আপনি তো শাসক। আর শাসকের একমাত্র কাজই তো হলো জনগণকে অনুমতি দেয়া। যাতে করে তারা খারেজি হয়ে না যায়।”
৩.
প্রতিদিনের মতো আজ বিকেলেও শায়েখ শিকু আল-মাদখালী বক্তব্য রাখছেন কেন্দ্রিয় মসজিদের মাঠে। তার সামনে হাজার হাজার শ্রোতা। সবার সামনে বক্তব্য রাখতে রাখতে শায়েখের হঠাৎ হাগু ধরে গেলো। শায়খে তখন শাসক হালুম বিন সালমানকে ফোন দিলেন। তবে তখন পুরো সিসিমপুর থেকে কোটি কোটি মানুষ নানা কাজের অনুমতির জন্য হালুম বিন সালমানকে একাধারে কল দিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে তার ফোন ব্যাস্ত দেখাচ্ছে। অনেকক্ষণ হাগু চেপে বসে ছিলেন শায়েখ। পরে আর টিকতে না পেরে উঠে দৌড় দিলেন বাথরুমের দিকে।
তবে জনতাও নাছোড়বান্দা, তারা শায়েখের আলখাল্লা টেনে ধরে আটকে রেখেছে শায়েখকে। শায়েখ শিকু কাতর কন্ঠে বলে উঠলেন, “ওরে, তোরা আমায় ছেড়ে দে রে। না হয় যে কাপড়ে চোপড়ে হয়ে যাবে।”
জনগণ বলছে, “না, আপনি শাসকের অনুমতি নেন নি। শাসকের অনুমতি ছাড়া হাগু করলে আপনি খারেজি হয়ে যাবেন। আপনি আমাদের প্রিয়ো শায়েখ। আপনাকে তো আর খারেজি হতে দিতে পারি না।”
অবশেষে শায়েখের কাপড়ে চোপড়ে হাগু হয়ে গেলো। জনসাধারণের মধ্য থেকে একজন বলে উঠলো, “আরেহ, শাসকের অনুমতি ছাড়া শায়েখের হাগু হয়ে গেছে। শায়েখ তো খারেজি হয়ে গেলেন। কই পেয়েদা, এবার শায়েখকে নিয়ে চলো।”
অবশেষে পেয়াদা গ্রান্ড মুফতি শায়েখ শিকু আল-মাদখালীকে কোমড়ে দড়ি দিয়ে জেলখানার দিকে টেনে নিয়ে চললো।

মন্তব্য: ০