Alapon

পরিবারের অভিভাবকদের কেমন হওয়া উচিত?



পরিবারের অধিন্যস্তদের কাছে নিজেকে 'মূর্তিমান আতঙ্ক' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন না, যাতে আপনি বাড়িতে প্রবেশ করলেই সবাই অকারণে ভয়ার্ত হয়ে যায়, কিংবা আপনি বাড়িতে থাকেন এটাই কেউ চায়না। কথা বলতে বসলেই 'কৌশলে খোচা মেরে' হক্ব কথা শুনিয়ে দেন, এমন ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করবেন না। খোচা দিয়ে হয়তো নিজের প্রশান্তি লাগে, কিন্তু যারা খায় তাদের হৃদয় এফোড় ওফোড় হয়ে যায়।

'আমি কাউকে ছেড়ে কথা বলিনা' এমন ব্যক্তিত্বকেও কেউ ভালোবাসেনা। বরং এমন মানুষদেরকে আশেপাশের সবাই রীতিমতো ভয় পায়। আপনার কথার আঘাতের ভয়ে যদি সবাই আপনাকে এড়িয়ে চলে, সেটা কোন উত্তম ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক নয়। যুক্তির ধারে কাছেও যান না, কোন সঠিক যুক্তি বা রেফারেন্স দিয়েও আপনার অবস্থান থেকে সরানো যায় না, এমন অযৌক্তিক ধাচের 'গোয়ার' হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবেন না। এমন গোয়ার মানুষের পরামর্শ তো পরিবারেএ কেউ নেয়ই না, সঙ্গও খুব একটা পছন্দ করেনা। স্থান, কাল ও সময়ের সাথে যারা নিজেদের ইতিবাচকভাবে এডাপ্ট করে নিতে পারে, পারিবারিক পরিমণ্ডলে তারাই পছন্দনীয় হয়। (অবশ্যই দ্বীনের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া বোঝাইনি, এ ব্যাপারে অনমনীয়তাই বেস্ট) অমুক তমুকের সাথে তুলনা দিয়ে নিজ পরিবারের সদস্যদের ছোট করবেন না, আপনাকে কেউ অন্যের সাথে তুলনা করলে আপনারও ভালো লাগতো না।

প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের মতামতের সাথে আপনার বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে। পরিবারের মঙ্গল চেয়ে আপনি আপনার পক্ষ থেকে উত্তম পরামর্শটা দিতে পারেন। তবে আপনার 'পরামর্শটাই বেস্ট' এমন ভেবে অন্যের উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না, নিজেকে অতিমাত্রায় ডমিন্যান্ট হিসেবে প্রমাণ করবেন না। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে পরামর্শ দেয়া যায়, জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া যায়না, দিলে কেউ মন থেকে গ্রহণও করেনা। উলটো 'বিরক্তিকর ব্যক্তিত্ব' হিসেবে আপনাকেই এড়িয়ে চলে। পরিবারের সদস্যদের উপর মার্সি করে ক্ষণে ক্ষণে খোটা দেবেন না। উদ্দেশ্য যদি আল্লাহর সন্তুষ্টিই হয়, তাহলে এই খোটা তো আপনার সাওয়াব কেটে নিচ্ছে। কারও উপর করা মার্সির বোঝা এমনভাবে চাপিয়ে দেবেন না, যে দুনিয়া উজাড় করে দিলেও সে আপনাকে খুশি করতে পারেনা। এমন ব্যক্তিত্ব কখনোই পছন্দনীয় হতে পারেনা।

পরিবারের কেউ কারও ভুল ধরে গিট্টু দিয়ে রাখবেন না, যত বেশি পারেন, মাফ করে দিন। মনে রাখবেন, আপনি যাদের ভুল ধরছেন, তাদের কাছে আপনার করা রাজ্যের ভুলেরও নথি আছে। বাইরের মানুষের কাছে আপনি সাধু-সন্ন্যাসী হলেও ঘরের মানুষেরা কিন্তু আপনার নাড়িনক্ষত্র জানে। সবাই সবাইকে মাফ করে দিলেই সহজ হয়, ধরে রাখলেই কাঠিন্য বাড়ে।

আপনার সন্তান মানেই আপনার কার্বন কপি হবে, এমন না। বড় হতে হতে প্রত্যেকের একটা নিজস্ব ব্যক্তিত্ব দাঁড়িয়ে যায়, তা বাবা বা মায়ের একদম বিপরীতও হতে পারে। অথচ প্রত্যেক ধরণের ব্যক্তিত্বের মাঝেই কিছু মন্দের পাশাপাশি কিছু ভালো দিকও থাকে। দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে পরস্পরের ব্যক্তিত্বের প্রতি সম্মান রাখুন। আপনি নিজেও তো আপনার বাবা-মায়ের মত না!

এই দুনিয়ায় আমরা বাচি কয়দিন? ৬০ থেকে ৭০ বছর। এতটুকু সময় কাছের মানুষদের কাছে নিজের খারাপটুকু উপস্থাপন করে কী লাভ? মৃত্যুর পর আমার ভালো আচরণের সাথে এই 'খারাপ'টুকুও তাদের ক্ষণে ক্ষণে কষ্ট দেবে, অনেকে তো মৃত্যুতে খুশিও হবে যাদের উপর আমি 'জুলুম' করাকে হক্ব মনে করতাম।

মৃত্যুর পর একসময় আমাদের সবাই ভুলে যাবে। হাত তুলে যদি কেউ দুয়া করে, তা ঐ পরিবারই- মা-বাবা, স্পাউজ, সন্তান। সেই মানুষগুলোর কাছে আমার ব্যক্তিত্ব এমন হওয়া দরকার, যেন দুয়ার হাত তুললেই আমার সুন্দর আচরনের কথা মনে পড়ে। আমার কথা মনে করলে তাদের বিরক্ত লাগুক, এমনটা কেন চাইবো?
হ্যা, শত চেষ্টার পরও সবসময় পরিবারের সবাইকে সন্তুষ্ট করা যায়না। সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভবও হয়না, কিছু মানুষকে কলিজা কেটে দিলেও সেখানে ভুল ধরবে। অন্যের মনের উপর আমার নিয়ন্ত্রণ নেই, তবে আমার আচরণের উপর আমার নিয়ন্ত্রণ আছে। আমি যেন আমার খারাপ আচরণের কারণে অন্যদের বিরক্তির কারণ হয়ে না উঠি।.....

পঠিত : ২১২ বার

মন্তব্য: ০