Alapon

তালিবান কি আল-কায়েদাকে আশ্রয় দিচ্ছে?



আফগানিস্তান থেকে পরাজিত হয়ে আমেরিকা যখন বিদায় নেয়, তখন তালিবানের সাথে চুক্তি করে— তারা আল-কায়েদার কাউকে আশ্রয় দেবে না। তখন অনেকেই বলছিলো, “এটা তালিবানের পরাজয় না?” কিন্তু এটা খুব দূর্বল একটা কথা। কারণ তালিবান বলেছে সন্ত্রাসী সংগঠনের কাউকে আশ্রয় দেবে না। সেটা তালিবান ২০০১ এও বলেছে। তালিবান যদি দাবি করে আল-কায়েদা বাইয়াতের মাধ্যমে আসলে তালিবানই হয়ে গেছে? বা আল কায়েদার কাউকে নাগরিকত্ব, এসাইলাম দেয়, বা বিয়ের মাধ্যমে আল-কায়েদার কেউ যদি আফগানিস্তানের নাগরিক হয় তাহলে কী করবে আমেরিকা?

সময় গেলো। এ কথাই সত্য প্রমাণ হলো। তালিবান তাদের ভাই আল-কায়েদা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত জাতিসংঘের ASSM টিমের রিপোর্ট অনুসারে, তালিবান সরকার ও প্রশাসনের অনেক পদে আল কায়েদার নানা সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। আল কায়েদা সদস্যরা আফগানিস্তানে গণহারে আশ্রয় পাচ্ছে। আফগানিস্তান একমাত্র দেশ যেখানে আমেরিকার ব্ল্যাকলিস্টেড এতো “সন্ত্রাসী” ঘুরে বেড়াচ্ছে মুক্তভাবে। একই সাথে আল কায়েদার সাথে গভীর সম্পর্ক রাখা হাক্কানি ধরণের মানুষরাও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছে।

হাক্কানিদের মতো বেশ কিছু সদস্য আছে যারা “দ্বৈত টুপি”র। এরা মূলত তারা যারা আফগান, একই সাথে আল-কায়েদায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। আবার আল-কায়েদার অনেকে আছে যারা আগে থেকেই তালিবানে দায়িত্ব পালন করছে। এরা আবার ইসলামিক মুভমেন্ট অফ উজবেকিস্থানেও কাজ করেছে। ক্বারি জিয়া রহমান, হাক্কানি, শাইখ মোহাম্মদ আমিনুল্লাহ ইত্যাদি নেতৃবৃন্দ এমন। এরাও আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে ভূমিকা পালন করছে। এরা মূলত দেশের বিভিন্ন স্থানে গভর্নরের দায়িত্বে আছে।

শুধু তাই নয়, আল কায়েদা আফগানিস্তানের পাচঁটি প্রভিন্সে রীতিমতো ট্রেইনিং ক্যাম্প চালাচ্ছে। এগুলো হলো, দক্ষিণের হেলমান্দ, দক্ষিণ-পূর্বের যাবুল, পূর্বের নানগাহার, উত্তর-পূর্বের নুরিস্থান ও পশ্চিমের বাঘদিস। এছাড়াও জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুসারে তারা তাদের আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করেছে ফারাহ, হেলমান্দ, হেরাত ও আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে। হেরাতে নিজেদের মিডিয়া অপারেশন খুলেছে আল-কায়েদা। আল কায়েদার কমপক্ষে সিনিয়র ৩০-৬০ নেতা আফগানে আছে।

তারা আছেন কাবুল, কান্দাহার, হেলমান্দ ও কুনারে। এছাড়াও প্রায় ৪০০ আল-কায়েদা যোদ্ধা ও তাদের প্রায় ১৬০০ জন পরিবারের সদস্য দক্ষিণে (হেলমান্দ, যাবুল ও কান্দাহার), কেন্দ্রে (গজনী, কাবুল ও পারওয়ান) ও পূর্বে (কুনার, নানগারহার ও নুরিস্থান) আছেন।

তালিবান ও আল কায়েদা সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানের টিটিপিকে সমর্থন দিচ্ছে। তালিবান টিটিপিকে ইমারাহর অংশ মনে করে ও পাকিস্তানকে আক্রমণ করলে তাতে সমর্থন দেবে। জাতিসংঘের মতে, কুনারে আল কায়েদা টিটিপি যোদ্ধাদেরকে প্রশিক্ষণ ও শারঈ দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়াও ৪০০০-৬০০০ টিটিপি যোদ্ধা আফগানিস্তানের নানগারহার, কুনার, লোগার, পাকতিয়া ও খোস্তে ট্রেনিং নিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, টিটিপি নেতা নুর ওয়ালি মেহসুদ হাক্কানি নেটওয়ার্কের ঘাঁটি পাকতিয়ায় আছেন। তার ডেপুটি কারি আমজাদ আলি আছেন কুনারে।

এগুলো কোনো গোপন তথ্য না। জাতিসংঘের রিপোর্ট এসব। আমেরিকা এসব জানে, জাতিসংঘও জানে। অথচ একসময়ের মহা সুপারপাওয়ারদের এখন বসে বসে দেখা ছাড়া কিছু করার নেই। তাদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তালিবান-আল কায়েদা হাতে হাত মিলিয়ে দেশ চালাচ্ছে, প্ল্যান করছে। প্রভাব বিস্তার করছে পাকিস্তানেও। প্রশ্ন এসে যায়, আমেরিকা কি চুড়ান্তভাবে পরাজিত হলো?

পঠিত : ২০০ বার

মন্তব্য: ০