Alapon

বাঁচার উপায় চারটি



আল্লাহ তাআলা যত কিছু সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্যে দুইটি সৃষ্টি কিয়ামতের দিন প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। একটি হলো মানবজাতি, অন্যটি জ্বিন জাতি। প্রত্যকের জন্য ঐদিন দুটি ফলাফলের একটি নির্ধারিত হবে। একটা সফলতা; যা অনন্তকাল ধরে সুখের রাজ্যে নিয়ে যাবে।
অন্যটি ব্যর্থতা; যা নিয়ে যাবে অনন্তকাল অমানুষিক কষ্টের দিকে।
কুরআনে বলা হয়েছে, সেদিন দুটি দল হবে ।একটি দল সফলতার অধিকারী।অন্যটি ব্যর্থতার। এই সফলতা আর ব্যর্থতা নির্ভর করবে দুনিয়ায় যাপিত জীবনের উপর।দুনিয়া হচ্ছে একটি বাস্তব ময়দান। এই ময়দানে থেকে জীবনকে যারা সঠিকভাবে কাজে লাগাবে, তারা সফল হবে। আর যারা শয়তানের অনুসরণ করে নিজেদের মনগড়া মতবাদ অনুযায়ী চলবে, তারা হবে ব্যর্থ।

সুতরাং ব্যর্থতা থেকে বাঁচার জন্য প্রত্যেকের চেষ্টা করা উচিত। ব্যর্থতা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তাআালা চারটি ফর্মূলা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআালার দেয়া চারটি ফর্মূলা ঘোষণার আগে তিনি শপথ করে বলছেন, নিশ্চয় সমগ্র মানবজাতি ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তবে তারা ছাড়া, যারা চারটি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এই চারটি বৈশিষ্ট্য যাদের মধ্যে থাকবে, তাঁরাই একমাত্র ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারবে। চূড়ান্ত বিচারের দিনে সফলতার অধিকারী হবে। সুতরাং ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তাআালা যে চারটি উপায় বলে দিয়েছেন, তা অবলম্বন করা প্রত্যেক সচেতন মানুষের কর্তব্য। উপায়গুলো হলো-

এক. প্রথম উপায় হলো, ইমান। ইমান হলো অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। না দেখে না বুঝে কিছু বিষয়কে দৃঢ়ভাবে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে নেয়া। যেমন, আল্লাহ তাআলা এক। তাঁর কোন শরিক নেই। তাঁর জন্মও নেই, মৃত্যুও নেই। তাঁর নেই কোন পরিবার, পরিজন, সন্তান সন্ততি। সমগ্র জাহানের মধ্যে যখন কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিল না, তখন তিনি ছিলেন। আবার যখন সবকিছু বিলীন হয়ে যাবে, তখনও তিনি থাকবেন। সূরা আর রহমানের ২৬-২৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,সবকিছু নিঃশেষ হয়ে যাবে,ধ্বংস হয়ে যাবে।অবশিষ্ট থাকবে শুধু মহামহিম আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব। এগুলো বিশ্বাস করা।

মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অসংখ্য নবি- রাসূল কিতাবসহ পাঠিয়েছেন। তাঁদেরকে না দেখে তাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহ তাআলা তাঁর হুকুম পালনের জন্য অসংখ্য ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বিশ্বাস করা। পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত কিছু ঘটবে আল্লাহ তাআলা তা আগেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন,যাকে তাকদীর হিসেবে আমরা জেনে থাকি। তার উপর বিশ্বাস করতা।সুতরাং,এভাবে অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করাকে ইমান বলা হয়।
পরকালীন ক্ষতি থেকে যদি কেউ বাঁচতে চায়,তাহলে তার উপর আবশ্যক এসব বিষয়ের উপর ইমান আনা।

দুই: বাঁচার দ্বিতীয় যে উপায়টি আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তা হলো, আমলে সালেহ তথা সৎ কাজ করা। পবিত্র কুরআনে যত জায়গায় ইমানের কথা বলেছেন তত জায়গায় আমলে সালেহ'র কথা বলেছেন।

ইমানের ঘোষণা দিয়ে বসে থাকলে হবে না, বরং ইমানের সাথে সাথে সৎ কাজ করতে হবে। সৎ কাজের পরিধি অনেক বিশাল। এখানে অপর মুসলিম ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলা যেমন আছে,তেমন আছে জালিম অবাধ্য শাসকের সামনে দাড়িয়ে সত্য কথা বলা। মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দেয়ার পাশাপাশি রয়েছে অন্যায় কাজ থেকে সামর্থ্যের আলোকে বাধা দেয়া।নামাজ রোজা থেকে শুরু করে আল্লাহর প্রতিটি হুকুম যথাযথভাবে পালন করা হলো আমলে সালেহ বা সৎ কাজ।

তিন. তৃতীয় হলো, হকের উপদেশ দেয়া। নিজেরা শুধু সৎ কাজ করে ক্ষান্ত হবে; বরং অন্যদেরকেও সৎ কাজ করার উপদেশ দিবে, আহ্বান জানাবে।
হক শব্দটি বাতিল শব্দের বিপরীতে ব্যবহার হয়।সত্যের বিপরীত সমস্ত কাজ বাতিল তথা মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত।তাঁরা মিথ্যা থেকে বিরত থেকে সৎ,সত্য ও সুন্দরের প্রতি মানুষকে আহ্বান জানায়। যে পথে আহ্বান জানিয়েছেন অসংখ্য নবি-রাসূল ও তাঁদের অনুসারীরা। আবার হক বলতে অধিকারকেও বুঝিয়ে থাকে। যেমন,আল্লাহর হক,বান্দার হক ইত্যাদি। সুতরাং ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর হক আদায় করার পাশাপাশি বান্দার তথা, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, পাড়াপড়শি সবার যথাযথ অধিকার আদায় করতে হবে।

চার. চতুর্থ উপায়,ধৈর্যের উপদেশ দেয়া। হকের দাওয়াত দেয়া, নিজে এর উপর অবিচল থাকা। এটা মূলত নবি রসূলদের কাজ ছিল। একাজে সবাই বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে এবং যারা এ কাজে নিজেদের নিয়োজিত করবে তারাও একই ধরনের বিরোধিতার সম্মুখীন হবে। এজন্য ক্ষতি থেকে বাঁচার চতুর্থ উপায় বলা হলো, যারা পরস্পরকে সবরের তথা ধৈর্যের উপদেশ দিবে। বিপদাপদে নিজেরা দিশেহারা হয়ে পড়বে না, হতাশ হয়ে ভেঙে পড়বে না। বরং নিজেরা ধৈর্য ধরে অটল থাকবে, স্থির থাকবে। পাশাপাশি অন্যদেরকেও ধৈর্যের উপদেশ দিবে। আর এই চারটি কাজ যারা করতে সক্ষম হবে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। আর এই ক্ষতি থেকে কেউ বেঁচে থাকতে পারলেই মহাসাফল্যের দেখা পাবে।

পঠিত : ১৮৯ বার

মন্তব্য: ০