মুসলমানদের খলিফা/ শাসক/ আমির নির্ধারন করবেন আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদের শূরা সদস্যরা
তারিখঃ ১৯ জুলাই, ২০২৩, ০১:৩৬
মুসলমানদের খলিফা/ শাসক/ আমির নির্ধারন করবেন আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদের শূরা সদস্যরা
==================================
আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ’ কারা?
ইমাম ইবনে নুজাইম মিসরি রহ. বলেন :
أَهْل الْحَلِّ وَالْعَقْدِ مِنْ الْعُلَمَاءِ الْمُجْتَهِدِينَ وَالرُّؤَسَاءِ.
আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ হলেন, মুজতাহিদ (বিশেষজ্ঞ) উলামায়ে কিরাম ও নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। (বাহরুর রায়েক : ৬/২৯৯, প্রকাশনী : দারুল কিতাবিল ইসলামি, বৈরুত))
ইমাম নববী রহ.বলেন :
أَهْل الْحَلِّ وَالْعَقْدِ مِنْ الْعُلَمَاءِ وَالرُّؤَسَاءِ وَوُجُوْهِ النَّاسِ.
অর্থাৎ ‘আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ’ হলেন উলামা, নেতৃত্বস্থানীয় ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ। (মিনহাজুন তালিবিন : পৃ. ২৯২, প্রকাশনী : দারুল ফিকর, বৈরুত)
‘আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ’ এর বৈশিষ্ট্যাবলী :
‘আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ’ হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত থাকা আবশ্যক।
১. ন্যায়পরায়ণতা : ফুকাহায়ে কেরাম ন্যায়পরায়ণতার যে সকল শর্ত বর্ণনা করেছেন, সেগুলো তার মাঝে বিদ্যমান থাকা। যেমন, প্রকাশ্য সব ধরনের কবিরা গোনাহ ও হারাম, মাকরুহে তাহরিমি ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
২. খলিফা হওয়ার শর্তগুলো জানা থাকা : উক্ত ব্যক্তির এতটুকু ইলম থাকা আবশ্যক, যার ভিত্তিতে তিনি বুঝতে পারবেন যে, খিলাফতের শর্তগুলোর ওপর ভিত্তি করে কে খলিফা হওয়ার যোগ্য আর কে অযোগ্য।
৩. রায় ও হিকমত : প্রজ্ঞা ও সিদ্ধান্ত প্রদানের যোগ্যতা থাকা, যার মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তি এমন একজন খলিফা নির্ধারণে সক্ষম হবেন, যিনি এ ইমামতের অধিক উপযুক্ত এবং উম্মাহর কল্যাণে অধিক উপযুক্ত ও জ্ঞাত হবেন।
‘আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ’ এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনায় আল্লামা মাওয়ারদি রহ. বলেন :
فَأَمَّا أَهْلُ الِاخْتِيَارِ فَالشُّرُوطُ الْمُعْتَبَرَةُ فِيهِمْ ثَلَاثَةٌ: أَحَدُهَا: الْعَدَالَةُ الْجَامِعَةُ لِشُرُوطِهَا وَالثَّانِي: الْعِلْمُ الَّذِي يُتَوَصَّلُ بِهِ إلَى مَعْرِفَةِ مَنْ يَسْتَحِقُّ الْإِمَامَةَ عَلَى الشُّرُوطِ الْمُعْتَبَرَةِ فِيهَا.وَالثَّالِثُ: الرَّأْيُ وَالْحِكْمَةُ الْمُؤَدِّيَانِ إلَى اخْتِيَارِ مَنْ هُوَ لِلْإِمَامَةِ أَصْلَحُ، وَبِتَدْبِيرِ الْمَصَالِحِ أَقْوَمُ وَأَعْرَفُ
অর্থাৎ আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদের যোগ্য হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত, পূর্ণ ন্যায়পরায়ণতা। দ্বিতীয়ত, এতটুকু ইলম থাকা আবশ্যক, যদ্বারা তিনি বুঝতে পারবেন, খিলাফতের শর্তগুলোর ভিত্তিতে কে খলিফা হওয়ার যোগ্য। তৃতীয়ত, সিদ্ধান্ত প্রদানের যোগ্যতা ও প্রজ্ঞা থাকা, যার মাধ্যমে অবগত হওয়া যায়, কে খলিফা হওয়ার উপযোগী এবং উম্মাহর কল্যাণ বিষয়ে অধিক উপযুক্ত ও সজাগ। (আল-আহকামুস সুলতানিয়্যা : পৃ. নং ১৭-১৭, প্রকাশনী : দারুল হাদিস, কায়রো)
মুসলিম খলিফা/ শাসক/ আমিরের শর্তাবলি নিম্নরূপ :
======================================
মুসলিম হওয়া।[9]
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।[10]
সুস্থ বিবেকসম্পন্ন হওয়া।[11]
স্বাধীন হওয়া।[12]
পুরুষ হওয়া।[13]
ন্যায়পরায়ণ হওয়া।[14]
কুরাইশ বংশের হওয়া।[15] তবে একান্ত কুরাইশ বংশের যোগ্য কাউকে না পাওয়া গেলে অন্য কেউও খলিফা হতে পারবে।[16]
লোভী, প্রার্থী বা ক্ষমতালিপ্সু না হওয়া।[17]
উপরিউক্ত শর্তগুলো সর্বসম্মত। সুতরাং এর কোনোটি অবিদ্যমান থাকলে ব্যক্তি খলিফা হওয়ার যোগ্য থাকে না। আর দুটো শর্ত রয়েছে মতবিরোধপূর্ণ :
ইজতিহাদের যোগ্য হওয়া। ইমাম শাতেবি[18], ইমাম রামালি[19] রহ. প্রমুখ ফকিহগণের মতে খলিফা হওয়ার জন্য মুজতাহিদ হওয়া শর্ত। তবে ইমাম শাহরাসতানি[20], ইমাম গাজালি[21] রহ. প্রমুখ বিদগ্ধগণের মতে এটা শর্ত নয়। তবে তাদের মতানুসারে খলিফা নিজে যদি মুজতাহিদ না হন তাহলে নিদেনপক্ষে তার এতটুকু ইলম থাকা বাঞ্ছনীয়, যতটুকু একজন শাসকের ইসলামি তরিকায় শাসনকার্য চালানোর জন্য জরুরি আর এক্ষেত্রে তার সঙ্গে আলিম ও ফকিহ উপদেষ্টা থাকা অপরিহার্য, শরয়ি বিষয়াদিতে যার পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা অনুসারে তিনি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন।
দোষ-ত্রুটিমুক্ত হওয়া। অর্থাৎ তার পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও আত্মা সর্বপ্রকার দোষত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া; যাতে তিনি শাসন ও বিচারকার্য, রাজনীতি ও সমর সবকিছুই সুচারুরূপে পরিচালনা করতে সক্ষম হন। ইমাম মাওয়ারদি[22] ও ইমাম আবু ইয়ালা[23] রহ. এ শর্তটির কথা উল্লেখ করেছেন। তবে এটা কোনো সর্বসম্মত শর্ত নয়। সুতরাং এটাকে চূড়ান্ত অপরিহার্য বলাও সমীচীন নয়।
[9] সুরা নিসা : ৪১; সুরা নিসা : ৫৯; আহকামু আহলিয যিম্মাহ, ইবনুল কায়্যিম : ২/৭৮৭; শরহু সহিহ মুসলিম, নববি : ১২/২২৯
[10] সুরা নিসা : ৫; আল-ফাসল, ইবনু হাজম : ৪/৮৯
[11] মারাতিবুল ইজমা, ইবনু হাজম : ১৫৪
[12] ফাতহুল বারি : ২০/১৬০
[13] আল-ফাসল, ইবনু হাজম : ৪/৮৯
[14] আল-জামি লি আহকামিল কুরআন, কুরতুবি : ১/২৭০
[15] সহিহ বুখারি : ৭১৩৯, ৭১৪০; মুসনাদু আহমাদ : ২০/২৪৯; শরহু সহিহ মুসলিম : ১২/২০০
[16] মুসনাদুল বাযযার : ৬১৮১; তারিখে তাবারি : ২/৫৮০; ফাতহুল বারি : ১৩/১১৯; আত-তাহরির আলাল মুখতার : ১/৬৮
[17] সহিহ বুখারি : ৬৭৩০; সহিহ মুসলিম : ১৭৩৩
[18] আল-ইতিসাম : ২/১২৬
[19] নিহায়াতুল মুহতাজ : ৭/৪০৯
[20] আল-মিলাল ওয়ান-নিহাল : ১/১৫৩
[21] ফাজায়িহুল বাতিনিয়্যাহ : ১৯১
[22] আল-আহকামুস সুলতানিয়্যাহ, মাওয়ারদি : ১/৫
[23] আল-আহকামুস সুলতানিয়্যাহ, আবু ইয়ালা : ২০
কুফরিতে লিপ্ত শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
=============================
উবাদাহ বিন সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নিকট থেকে আমাদের খুশী ও কষ্টের বিষয়ে, স্বস্তি ও অস্বস্তির বিষয়ে এবং আমাদের অগ্রাধিকার নষ্ট হলেও আনুগত্য ও আদেশ পালনের উপর এবং ক্ষমতাসীন শাসকের বিদ্রোহ না করার উপর বায়আত (প্রতিশ্রুতি) গ্রহণ করেছেন। বলেছেন, “তবে হ্যাঁ, যদি তোমরা প্রকাশ্য কুফরী হতে দেখ, যাতে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন দলীল বর্তমান থাকে (তাহলে বিদ্রোহ করতে পার)।” (বুখারী ৭০৫৬, মুসলিম ৪৮৭৭ নং)
হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৮৩০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
ইমাম নববী রাহ: বলেন:
আল-ক্বাদ্বি ‘ইয়াদ্ব বলেছেন, ‘উলামাদের ইজমা হল নে(তৃ)ত্ব (ইমামাহ) কখনো ক।ফিরের উপর অর্পণ করা যাবে না, আর যদি (কোন নেতার) তার পক্ষ থেকে কু(ফ)র প্রকাশিত হয় তবে তাকে হটাতে হবে… সুতরাং যদি সে কু(ফ)র করে, এবং শারীয়াহ পরিবর্তন করে অথবা তার পক্ষ থেকে গুরুতর কোন বিদ’আ প্রকাশিত হয়, তবে সে নেতৃত্বের মর্যাদা হারিয়ে ফেলবে, এবং তার আনুগত্য পাবার অধিকার বাতিল হয়ে যাবে, এবং মুসলিমদের জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে তার
বিরে।ধিতা করা, বিদ্রে।হ করা, তার পতন ঘটানো এবং তার স্থলে একজন ন্যায়পরায়ণ ইমামকে বসানো – যদি তারা (মুসলিমরা) সক্ষম হয়। যদি একটি দল (তাইফা) ব্যাতীত অন্যান্য মুসলিমদের পক্ষে এটা করা সম্ভব না হয়, তবে যে দলের (তাইফা) সক্ষমতা আছে তাদের জন্য এই ক।ফিরের (শ।সকের) বিরোধিতা করা, বিদ্রে।হ করা এবং তার প(ত)ন ঘটানো অবশ্য কর্তব্য। আর যদি শাসক ক।ফির না হয়ে শুধুমাত্র বিদ’আতী হয় তবে, এটা বাধ্যতামূলক হবে না, যদি তারা (তাইফা) সক্ষম হয় তবে তারা তা করবে। আর যদি কেউই সক্ষম না হয় এ ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়, তবে বিদ্রে।হ করা আবশ্যক না, তবে তখন মুসলিমদের সেই ভূমি থেকে অন্য কোথাও হিজরত করতে হবে, নিজেদের দ্বীনের সংরক্ষণের জন্য।”[সাহিহ মুসলিম বি শারহ আন-নাওয়াউয়ী, ১২/২২৯]
হাফিয ইবনে হাজার আল আসকালানী রাহ: বলেন:
“আদ দাউদী বলেছেন, “উলামাদের ইজমা হল, অত্যাচারী (মুসলিম) শ।সককে যদি ফিতনাহ (যু/দ্ধ) ব্যতিত অপসারণ করা সম্ভব হয় তবে তা করা ওয়াজিব; কিন্তু যদি এতে ফিতনাহ (যু/দ্ধ)শুরু হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে ধৈর্য ধারণ করা বাধ্যতামূলক। এবং কোন কোন আলিমগণের দৃষ্টিভঙ্গি এমন যে, ফাসিক ব্যক্তিও শ।সন কার্যের জন্য অনুমোদিত নয় যদি সে পূর্বে থেকেই ফ।সিক হয়ে থাকেন। কিন্তু যদি এমন হয় যে, তাকে শ।সক বানানোর সময় তিনি ফ।সিক ছিলেন না পরবর্তীতে ফিস্কে লিপ্ত হয়েছেন তবে এমন ফাসিক শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রে।হ করার ব্যাপারে আলিমগণ মতভেদ আছে। এক্ষেত্রে সঠিক মত হলো তার বিরুদ্ধে বিদ্রে।হ নিষিদ্ধ।
কিন্তু যে শাসক ‘কু(ফ)র’ এ লিপ্ত হন তার বিরুদ্ধে বিদ্রে।হ ওয়াজিব।” (ফাতহুল বারী ১৩/১০)
ইবনে হাজার রাহ: সালাফগণ থেকে বর্ণনা করেন:
“(তাওহীদীবাদী মুসলিম)ফাসিক শ।সকের আনুগত্য এবং তার পক্ষ নিয়ে জিহ।দ করা বৈধ এ ব্যাপারে ফকিহগণের ইজমা’ আছে। তার বিরুদ্ধে বিদ্রে।হ করা এবং অনেকের র/ক্ত ঝরানোর চেয়ে বরং তার আনুগত্য করাই উত্তম। শ।সকদের থেকে সুস্পষ্ট কু(ফ্)র প্রকাশ পাওয়া ব্যতিত এক্ষেত্রে আনুগত্যের ব্যাপারে ফকিহগণ কোন ছাড় দেননি। অপরদিকে
শ।সকের থেকে কু(ফ)র প্রকাশিত হলে সেই কুফরের ওপর তার আনুগত্য করা যাবে না, বরং তার বিরুদ্ধে জিহাদ করা প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। (ফাতহুল বারী ৯/১০)
যে শ।সকেরা ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের থেকে জি(যয়া)হ আদায় করেনা, এবং কুফ্ফ।রদের বিরুদ্ধে জিহ।দকে নিষিদ্ধ করে তাদের ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহঃ বলেছেন –এসব কাজ করতে অস্বীকৃতি জানানো যেকোন দলের বিরুদ্ধে যু/দ্ধ করতে, তারা যদি এসব কাজের আবশ্যিক হওয়াকে স্বীকারও করে, তবুও। এবং এ ব্যাপারে এর বিপরীত কোন মত আমার জানা নেই।(মাজমু আল-ফাতাওয়া, ২৮/৫০৩,৫০৪)
মন্তব্য: ০