Alapon

কারা অগ্নিসন্ত্রাসের জন্মদাতা আজও কারা অগ্নিসন্ত্রাস করে?



১৯৯৬ সালের ১৭ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ৯ম দিনে রাজধানীতে বাসে পেট্রোল বোমায় ২ জন নিহত, চট্টগ্রাম ও সিরাজগঞ্জে আরো ২ জন নিহত হয়েছে বলে সে সময়কার পত্রিকার খবর।

২০০৪ সালের ৪ জুন তৎকালীন শেরাটন হোটেলের (রূপসী বাংলা) উল্টো দিকে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে আগুন দিয়ে ১১ জনকে পুড়িয়ে মারা হয়। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় সরকার। ৪ জুন হরতাল ডেকেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ।(সূত্র প্রথম আলো)

শাহবাগে ২০১৪ সালে একজন আওয়ামী লীগ নেতা তাঁর নিজ পরিবহনে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে ১১ জনকে হত্যার ঘটনার সত্যতা এখন অন্য আওয়ামী নেতাদের মুখ থেকেই বেরিয়ে আসছে। আসল সত্যকে কখনোই আড়াল করে রাখা যায় না।

অগ্নিসন্ত্রাসের যাত্রা শুরু যেভাবে,
তখন হরতালের সময় গাছের গুঁড়ি অথবা ট্রাকের টায়ার জ্বালিয়ে ব্যারিকেড (প্রতিবন্ধকতা) তৈরির প্রচলন ছিল না। ঢাকা শহরের চারপাশে নির্মাণ কাজ চলতে থাকে সারা বছর ধরে। এক ইঞ্চি, দুই ইঞ্চি ফাঁকে ফাঁকে ইট বিছিয়ে কিছু কিছু জায়গায় পেট্রোল ঢেলে দিয়ে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হতো। হরতালের আগের রাতে ছোট ছোট লাঠির মাথায় কাপড় অথবা পাট জড়িয়ে তাতে আগুন জ্বেলে মিছিল করা হতো, যা পরবর্তীকালে মশাল মিছিল নামে পরিচিতি পায় । খণ্ড খণ্ড মিছিল করে হরতালের প্রচার করা হতো। শ্রমিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে এলাকার ছাত্রলীগ ও 'নিউক্লিয়াস'-এর সদস্যরা গোপনভাবে হরতালকারী শ্রমিকদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতো। কেন্দ্র থেকে তাদেরকে এভাবেই নির্দেশ দেওয়া হতো ।

ঢাকা শহরে ছাত্রলীগ কর্মীদের তিন থেকে পাঁচজনের খণ্ড খণ্ড গ্রুপ সরকারি ইপিআরটিসি-র (বর্তমানে বিআরটিসি) বাসগুলোর ওপর আক্রমণ চালাতো। তার আগে বাস থামিয়ে যাত্রীদের নেমে যেতে বলতো। মুসলিম লীগের গুণ্ডাপাণ্ডারা বা পুলিশ হামলা করলে হরতালকারী ছাত্র-শ্রমিকরা কখনও কখনও সেসব বাসে অগ্নিসংযোগ করতো। সে সময়ে প্রাইভেট বাস বলতে গেলে ছিলোই না, ট্রাকেরও তেমন ব্যবহার বা চলাচল চোখে পড়ত না। হরতালের আগের দিন প্রাইভেট গাড়িসহ ঢাকা শহরের প্রায় ৫০টি জায়গায় গাড়ি থামিয়ে হরতালের কথা বলা হলো। অনুরোধ করা হলো কেউ যেন হরতালে গাড়ি বের না করেন। শহরে অসংখ্য খণ্ড মিছিল বের করা হলো। পিকেটিং করার জন্য ৫০/৫৫টি স্থান নির্দিষ্ট করা হলো ।

হরতালের দুদিন আগে থেকে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হলো। দোকানপাট বন্ধের ব্যাপারে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীরা বিরাট ভূমিকা রাখলো। ৭ জুন হরতাল । অথচ ৬ জুন দুপুর ২টা থেকে ঢাকার রাস্তা গাড়িশূন্য হয়ে যায়। দোকানপাটগুলো ৫টা বাজতেই বন্ধ হয়ে গেল। সারা শহরে রিকশার সংখ্যা তখন হাজার-পঞ্চাশ। তাদেরকে হরতালের পক্ষে সংগঠিত করতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। ট্রেন চলাচল বন্ধের জন্য রাতেই কয়েকটি জায়গায় রেললাইন তুলে ফেলা, স্লিপার ও ফিশপ্লেট খুলে ফেলা এবং লাইনের উপরে আড়াআড়িভাবে লোহার রেল ফেলে রাখা হলো। এসবের ফলে ৭ তারিখ সকাল পাঁচটা থেকে আটটার মধ্যে গোটা ঢাকা শহর যেন এক যুদ্ধবিধ্বস্ত নগরীতে পরিণত হলো। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এলো। ছাত্রদের ও শ্রমিকদের খণ্ড খণ্ড মিছিল সেদিন ঢাকা শহরকে এক ভিন্ন চেহারা দেয় ।

ঢাকার বাইরেও স্থানীয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা শহর এবং ছোট ছোট শিল্প এলাকাগুলোতে হরতালের পক্ষে প্রচার ও মানুষকে সংগঠিত করার কাজ হয়। হরতালের দিন সেসব এলাকায় যেমন চট্টগ্রাম বন্দর, সীতাকুন্ড শিল্পাঞ্চল, খুলনার খালিশপুর ও উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুরে জনজীবন অচল ও স্বাভাবিক কর্মপ্রবাহ থমকে দাঁড়িয়ে যায়। ১৯৬৬ সালের ঐ দিন পর্যন্ত সারা দেশে 'নিউক্লিয়াস'- এর সদস্য সংখ্যা দেড় থেকে দুই হাজারে দাঁড়িয়েছিল। ঢাকার বাইরে হরতাল সফল করতে এই 'নিউক্লিয়াস' সদস্যরাই আসলে প্রধান ভূমিকা রাখে। সেদিন নদী-বন্দরগুলোয় কোনো নৌকা বা লঞ্চ যাতায়াত করেনি। পুরো প্রদেশে ট্রেন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা শহর ছিল অচল। দোকানপাট, শিল্পকারখানা ও স্কুল-কলেজ ছিল বন্ধ। দুপুরের পর থেকে ঢাকা শহর জনতার শহরে পরিণত হয়। ছাত্র-শ্রমিকরা এক হয়ে এটিকে মিছিলের নগরীতে পরিণত করে ।

তথ্যসুত্রঃ
https://shorturl.at/dlzPU

https://shorturl.at/glvU5

https://shorturl.at/kAMV9

[আমি সিরাজুল আলম খান]
শামসুদ্দিন পেয়ারা®
https://shorturl.at/kOU39

পঠিত : ২২৪ বার

মন্তব্য: ০