Alapon

নিকট ভবিষ্যৎ রাজনীতির সাতকাহন

১. আওয়ামী লীগকে হটানোর সামর্থ্য বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামী এককভাবে অর্জন করতে পারে নাই। আবার বিএনপি-জামায়াত জোটকে ঠেকানোর সামর্থ্য আওয়ামী লীগের নাই। তাই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় টার্গেট ছিলো বিএনপি ও জামায়াত জোট ভেঙ্গে দেয়া এবং যাতে আর ঐক্যবদ্ধ হতে না পারেন সে চেষ্টা অব্যাহত রাখা। আওয়ামী লীগ সে প্রচেষ্টায় সফলতা পাচ্ছেন।

২. আওয়ামী লীগের অঙ্গ ছাত্র সংগঠন 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগ' সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ছাত্র সমাজকে জিম্মি করে ফেলেছেন। ছাত্রলীগ অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট। বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতিতেও তারা বেশ এগিয়েছে। কিন্তু বিপরীত দিকে ছাত্রদল ধ্বসে পড়েছে। অছাত্রদের নিয়ে কমিটি করায় ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। ছাত্র শিবির অন্য সময়ের চেয়ে যেন পিছিয়ে না থাকলেও ছাত্রলীগের সাথে পাল্লা দেয়ার মত যথাযথ নেতৃত্ব তৈরি করতে ব্যর্থ। তবে তাদের সাবেক টিম মিলিয়ে তারা অনেকদূর এগোতে পারেন।

৩. সরকার বিরোধী বড় দুটো ছাত্র সংগঠন ঘুরে দাঁড়াতে না পারায় ছাত্র সমাজ রাজপথে নেই। কিন্তু ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আধিপত্য বিস্তার করে ত্রাসের রাজ্য পরিণত করেছে। যা সরকারের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে সবচেয়ে বড় নিয়ামক। যতক্ষণ পর্যন্ত না, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে না ওঠবে ততক্ষণ পর্যন্ত সরকার হটানো অসম্ভব প্রায়।

৪. আওয়ামী লীগ দেশীয় কোনো শক্তিকে পরোয়া করে না। বিদেশি শক্তি নিজের অনুকূলে নেয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের যত কল্পনা। পশ্চিমারা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য স্যাংশন ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে সোচ্চার হয় নাই। তারা একাট্টা হয়েছেন, বাংলাদেশের উপর চীন-রাশিয়ার আধিপত্য ঠেকাতে। শেখ হাসিনা পশ্চিমাদেরকে ম্যানেজ করতে পারলে শেষ জীবনটা ক্ষমতায় কাটাতে পারবেন। কিন্তু পশ্চিমাদের ম্যানেজ করতে কতটুকু সফল হবেন সেটাই বিবেচ্য বিষয়।

৫. শেখ হাসিনার ২য় আতঙ্ক হলো বহির্বিশ্বে অবস্থান কারী বাংলাদেশী প্রভাবশালী প্রফেসর, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ প্রমুখ ব্যক্তিগণ। সেসব ব্যক্তিগণ শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে আন্তর্জাতিক শক্তির কাছে যার পর নাই তদবির করছে। এই মহলটার প্রচেষ্টার ফলেই মূলত আন্তর্জাতিক মিডিয়া গুলো সোচ্চার হয়েছে এবং পশ্চিমাদের দ্বারা আওয়ামী লীগ সরকার হেনস্তার শিকার হচ্ছে।

৬. নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক দল গুলো তত মরিয়া হয়ে উঠছে। কেউ পিঠ বাঁচাতে ক্ষমতায় থাকতে চায়, আবার কেউ পিঠ রক্ষা করতে ক্ষমতা চায়। রাজনৈতিক দল গুলোর মরিয়া ভাব দেশকে যেকোন দিকে ঠেলে দিতে পারে। সামনের দিন গুলো সব অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৭. নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় আমলারা কিছুটা মধ্যপন্থা অবলম্বনের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা তা করতে পারবেন না। গত পনেরো বছরে যে পরিমাণ মধু খেয়েছেন তার হিসাব আওয়ামী লীগ বুঝে নিবে। বড় আমলাদের এমন কাউকে পাবেন না, যিনি নারী ও অর্থভোগের কারণে আওয়ামী লীগের নিকট জিম্মি না আছেন। নিজের কুকর্ম লুকানোর জন্য হলেও তারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিতে বাধ্য হবেন।

৮. দেশের অবস্থাটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কেউই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় চায় না। কিন্তু সবাই কোথাও না কোথাও আওয়ামী লীগের নিকট জিম্মি থাকায় কিছু করতে পারছেন না।

৯. ৭৫ সালের ঘৃণ্য কান্ডের পরবর্তী শেখ হাসিনার দেশে প্রত্যাবর্তনের মূলমন্ত্র ছিলো, পিতৃ ও পরিবার হত্যার প্রতিশোধ নেয়া। সেটা তিনি সুদে আসলে মিটিয়ে নিয়েছেন। তিনি বেশ ক্ষমতা প্রিয় মানুষ হওয়ায় ক্ষমতার স্বাদ ভোগের ইচ্ছেটাও মিটিয়ে নিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের পাহাড় সম অর্থ দিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ পাকাপোক্ত করে দিয়েছেন। এখন আর তার তেমন কিছু পাওয়ার নেই। তবে শেষ বেলায় তিনি বিশ্ব নেতৃত্বের জায়গায় অমর হয়ে থাকার খায়েশ দেখছেন বটে। সেটা পূরণ করতে তিনি শেষ চেষ্টা চালাবেন নিশ্চয়ই। তিনি শান্তিতে নোবেলটা পেয়ে গেলে হয়তো দেশবাসীকে তিনি এতোদিনে মুক্ত করে দিতেন।

১০. শেখ হাসিনা অন্য সময়ের মত এখন আর ততো আত্মবিশ্বাসী নেই। যার কারণেই মূলত আত্মীয় স্বজন সবাইকে তিনি 'সেফ জোনে' পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু শেখ হাসিনার মৃত্যু ভয় বলতে কিছু নেই। যার কারণে তিনি অতো সহজে হার মানবেন না। শেখ হাসিনা স্বাভাবিক মৃত্যুর চেয়ে দুর্বৃত্তের হাতে খুন হওয়াকে নিজের জন্য উত্তম মনে করেন। যাহা বরাবরই তাহার বিভিন্ন বক্তৃতায় ফুটে ওঠে।

----------------------------------

এতদ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে হটাতে বৃহত্তর ঐক্যের বিকল্প নেই। বিএনপি জামায়াতসহ সকল সমমনা রাজনৈতিক দল মিলে একসুরে, সমস্বরে স্লোগান তুললে আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না। কিন্তু বিএনপি আন্তর্জাতিক মহলের উপর অত্যধিক আস্থা রাখায় বৃহত্তর ঐক্য হবে কিনা সন্দিহান। বৃহত্তর ঐক্য ব্যতিত আওয়ামী লীগ সরকার হটানো যাবে না। বৃহত্তর ঐক্যে সরকার হটাতে পারলে সবচেয়ে বেশি লাভ ভোগী হবে বিএনপি। তবে পুণরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে জামায়াতে ইসলামী। এখন শেষ দেখার পালা।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, "মানুষ সিদ্ধান্ত নেয়, আল্লাহ তায়ালাও সিদ্ধান্ত নেন। দিনশেষে আল্লাহর সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড়।"

লেখক,
ত্বোহা
কলামিস্ট

পঠিত : ২৫৫ বার

মন্তব্য: ১

২০২৩-০৮-০২ ০৮:৪৭

User
Masum Billah Bin Nur

যথার্থ‌ই বলেছেন।

submit