Alapon

ক্ষমতাসীনের ক্ষমতার সাতকাহন।

আওয়ামী লীগ দেশটাকে চেটেপুটে চুষে খাইলো। জুসের পাইপে শেষ টানের মত শেষ চুমুকও দিয়ে ফেললো। আর কিছুই বাকি নাই। তয় শরবতের গ্লাসের নিচে জমে থাকা শেষ চিনিটুকুতে পানি মিশিয়ে খাওয়ার জন্য ঐ চিনির মত টুকটাক কিছু আছে অবশ্যই। নয়তো আবারো জোর করে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হতো না। আওয়ামী লীগ কি পরিমাণ খেয়েছে সেটা সকলের জানা, বুঝা ও হৃদয়ঙ্গম করা।

আওয়ামী লীগ দেশটাকে চেটেপুটে খেয়েই শেষ করে নাই বরং মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছে। ট্রাক-লরির ড্রাইভারের নিকট আজ সমাজের শিক্ষিতজন জিম্মি। এমন কোন সেক্টর নাই যেখানে আওয়ামী প্রভাব নাই। বাজার, ব্যাংক, শিল্প প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেটের কথা নাইবা বললাম।

আওয়ামী লীগের অঙ্গ ছাত্র সংগঠন 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগ' প্রতিষ্ঠান গুলোতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। ভিসি ও অধ্যক্ষগণের হাতের ক্ষমতাও ছাত্রলীগ কাইড়া নিয়েছে। যেখানে শিক্ষকগণ জিম্মি সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরাতো দাসের জীবনই যাপন করবে।

এমন কোনো স্বৈরাচারী কুকর্ম নাই, যা আওয়ামী লীগ করে নাই। এতোসবের কারণেই মূলত আমজনতা আজ আওয়ামী বিদ্বেষী।

এখন কথা হইলো, আওয়ামী লীগ খারাপ। তারা দেশের জনগনের শত্রু। আচ্ছা, তাহলে দেশের পূর্বোক্ত সরকার গুলো কি ভালো ছিলো? তারা কি জনগনের বন্ধু ছিলো? না! মোটেই নয়। কখনও নয়।

স্বাধীনতাত্তোর যারাই ক্ষমতায় আসছে, সবাই দেশটাকে নিজের পকেটের সম্পদ মনে করেছে। ২০০১-২০০৫ সাল বিএনপি জামায়াতের জোট সরকারও তার ব্যতিক্রম নয়। তারেক রহমানের আধিখ্যেতায় লুৎফুজ্জামান বাবরের মত লোকেরা দেশটাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিলো। তারেক রহমানকে খাম্বা তারেক বলার নেপথ্যে কি কোনো কারণ নেই? তারেক রহমান কি দুধে ধোয়া তুলসীপাতা? আজকের আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপির দুর্নীতি নস্যি ছিলো৷ কিন্তু সে সময়ের আলোকে সেটা ছিলো অনেক বড় ইস্যু। বিএনপির অতীত বিবেচনায় ভবিষ্যৎ ভালো আশা করা যায় না। তবে বেগম জিয়ার বর্তমান ত্যাগ প্রশংসাযোগ্য এবং ভুলবার মত নয়।

জামায়াতে ইসলামীর নেতারা গাল বড় করে বুক ফুলিয়ে বলে থাকেন, "আমাদের মন্ত্রী ছিলো কিন্তু তাদের দু'টাকার দুর্নীতি ছিলো না।" এটা অবশ্যই এদেশে জামায়াতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জনের একটি। কিন্তু জামায়াতের শরীক দল বিএনপি যখন দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেছে, তখন কি জামায়াতে ইসলামী প্রতিবাদ করেছিলো? সংসদে জামায়াত নেতাদের নানান বিষয়ে অসাধারণ বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ পাই কিন্তু সেসময়কার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোর বক্তব্যতো তেমন পাই নাই। পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় জামায়াতের কোনো নেতা সেদিন কি বিএনপির অপরাজনীতি বিষয়ে কলাম লিখেছিলেন? আমার দেখা মতে নাই। জামায়াত নিজেরা দেশের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে মন্ত্রণালয় চালিয়েছে কিন্তু জোট সরকারের দায় কি এড়াতে পারবেন? জোট সরকারের আমলে জামায়াতের কথিত নেতারা মাল্টিপারপাস জাতীয় বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে সাধারণের টাকা হাতিয়ে নেন নাই?

বিএনপি আমলে ছাত্রদলের অপ-রাজনীতির গল্প কে না জানে!কি না করেছিলো তারা? চক্ষুষ্মান সাক্ষী ভুরি ভুরি। সেসময়কার পত্রিকা গুলোতে নজর বুলালেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। আচ্ছা, জোট সরকারের আমলে ছাত্রশিবির কি কম করেছে? বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে কি জিম্মি করে নি? ভার্সিটির হল গুলোতে সাধারণ ছাত্রদের স্বাধীন ভাবে চলতে দিয়েছে কি?

আরেকটু পিছনে গেলে জনাব এরশাদ সাহেবের গল্প সামনে আসে। তিনি কি দেশের বারোটা বাজান নাই? দীর্ঘ শাসনামলে ভোগ বৈ আর কি করেছেন? সংবিধানে বিসমিল্লাহ ইস্যুতে সে তো সুফি সাধক হিসেবে আবির্ভূত। মুসলমানের দেশে ইসলামের প্রতি টান থেকে বিসমিল্লাহ ইস্যু তৈরি করলে তাকে স্যালুট। কিন্তু তার ইতিহাস থেকে অনুমেয় যে, ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে সিম্পাথি আদায় ছিলো তার কৌশল।

শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধ্যাত্মিক সম্পদ। কিন্তু তিনি "ল অব ইনডেমনিটি'' কালো আইন বাস্তবায়ন করে বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে পার পাইয়ে দেন নি? এ-র দ্বারা তিনি খুনকে প্রশ্রয় দেন নাই?

শহীদ জিয়ার পূর্ববর্তী খুনি মোস্তাক সরকারের বক্তব্য তুলে ধরে তাকে স্বীকৃতি দেয়া বেমানান। তাই এককথায় তাকে খুনি হিসেবেই জানি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষের আস্থা, প্রীতি, ভালোবাসা ও সম্প্রীতির প্রতিমূর্তি। তার তর্জনীর ইশারায় দেশের সাত কোটি মানুষ নিজেদের ঘুরিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কুণ্ঠিত হয় নাই এই জাতি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সমালোচনা করা অন্যায় বটে। তথাপিও বলতে হয়, ৭১ পরবর্তী বাকশাল তৈরি করা কি দেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়া ছিলো না? জহির রায়হান স্যার গুম হওয়ার দায় কে নেবেন? ৭৪ সালে দুর্ভিক্ষে যখন মানুষ না খেয়ে মরেছিলো, তখন কি অফিসার্স ক্লাবে ইউরোপীয় স্টাইলে রাজ পরিবারের সন্তানের বিয়ে হয় নাই?

কেউ কেউ বলতে পারেন, বাম নিয়ে লেখি নাই কেন? আসলে এদেশের জন্য বড় অভিশাপ হলো বাম দল। তাই তাদেরকে মোস্তাক বাহিনীর কাছাকাছি দেখি। ওদের নিয়ে আলোচনা সময় নষ্ট বৈ আর কিছু না।

-------------------------------
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটা অত্যন্ত দুর্ভাগা। এর সাথে সবাই দুই নাম্বারি করে বেড়ায়। এদেশের মানুষ গুলো অবলা। রাজনৈতিক দল গুলো সে অবলা মানুষের মাথা বিক্রি করে খাচ্ছে। খাইতে থাকুক সবাই। আল্লাহর ধরা সবচেয়ে বড়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা নূন্যতম অবদান রেখে মারা গেছেন, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাত দান করুক। আর যারা বেঁচে আছে তাদেরকে সঠিক বুঝ দিয়ে সঠিক ভাবে দেশ পরিচালনার তাওফিক দান করুক।

পঠিত : ৩৮২ বার

মন্তব্য: ০