Alapon

ইকামাতে দীনের ক্ষেত্রগুলো কী কী?




ইকামাতে দীন নিয়ে আমরা অনেকেই একটা ভুল কনসেপ্টের মধ্যে আছি। আমরা কেউ কেউ কেবল একটা জিনিসকেই ইকামাতে দীন মনে করি। অথচ ইকামাতে দীন খুবই বিস্তৃত একটা বিষয়ের নাম। ইকামাতে দীনের ক্ষেত্র হচ্ছে :

১. ব্যক্তিগত জীবন।
০২. পারিবারিক জীবন।
০৩. সামাজিক জীবন।
০৪. রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন।

সবার আগে গুরুত্ব বেশি কোনটার?
- অবশ্যই তা হচ্ছে ব্যক্তিগত জীবন।

ব্যক্তিগত জীবনকে দীন অনুযায়ী ঢেলে সাজানোর জন্যই সিলেবাস অধ্যয়ন। রিপোর্ট রাখা। রাত্রি জাগরণ। তাহাজ্জুদ আদায়। নফল ইবাদাত। তালিম-তারবিয়াত।

ব্যক্তিগত জীবনটা যদি দীন অনুযায়ী না হয়, তাহলে তো রাষ্ট্র পরের বিষয় আমার পরিবারেও দীন কায়েম সম্ভব নয়। সর্বোপরি আমার মুক্তিও সম্ভব নয়।

দীন কায়েমের কাজ তো এজন্যই করা, যেন আমি আল্লাহর কাছে মুক্তি পাই। পরকালে নাজাত পাই। নাকি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে?

এখন যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে দীন কায়েম করতে চান, তারা যদি ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যারা কাজ করেন, (যেমন তাবলীগ, মাদরাসা, পীর বুযুর্গ, লেখক, ওয়াজিন) তাদেরকে অবজ্ঞা করেন, তাহলে বুঝতে হবে হয় তাদের মধ্যে খোদার দীনের বুঝ ফয়দা হয়নি, অথবা তারা কেবল তাদের কাজকেই দীন সাব্যস্ত করছেন। তারা দীনের নামে নতুন একটা ফিরকা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন।

একই কথা তাবলীগ, মাদরাসা, খানকা, ওয়াজীন, লেখক, পীর-বুযুর্গ ইত্যাদির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তারা মানুষের বক্তিগত জীবনের দীন নিয়ে কাজ করছেন। মানুষকে দীনের ব্যাপারে আগ্রহী করছেন। দীন অনুশীলনের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করছেন। এজন্য তারা কৃতজ্ঞতা প্রাপ্ত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা অবশ্যই তাদের বিনিময় দেবেন।

তবে তারা যদি মনে করেন তারাই দীনের একমাত্র ব্রান্ড এম্বাসাডর, তাহলে নিশ্চিত তারাও বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন। (আল্লাহ যেন আমাদেরকে হেফাজত করেন)।

আমি আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে অগণিত মানুষকে দেখেছি, যারা তাবলীগের মাধ্যমে দীনের পাবন্দ হয়েছেন। অগণিত মানুষকে দেখেছি যারা পীর বুযুর্গদের উছিলায় আল্লাহর দীনকে ভালোবাসতে শেখেছে।

আর মাদরাসা মক্তব কিংবা খানকাহগুলোর কথা না-ইবা বললাম। ওয়াজ-মাহফিলগুলো কেমন প্রভাবিত করে মানুষকে, তা তো শাইখ মিজানুর রহমান আজহারী সাহেবের মাহফিলগুলোর দিকে নজর দিলেই বুঝা যায়। অনেক উচ্ছৃঙ্খল ছেলেপেলেও, উচ্চবিত্ত পরিবারের ব্যক্তিবর্গও তার মাহফিল বা আলোচনার দ্বারা হুট করেই প্রভাবিত হবার শুরু করেছে। নিজেদেরকে পরিবর্তন করা শুরু করেছে।

মুহতারাম শাইখ খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ. স্যারের কথা মনে আছে? এই যে আমাদের সমবয়সী বা আমাদের থেকে একটু সিনিয়র যেসব ভাইয়েরা এখন ইসলাম নিয়ে লেখালেখি করেন, দাওয়াতের ময়দানে কাজ করেন; এসব ভাইদের অধিকাংশই স্যার রাহিমাহুল্লাহর দ্বারা কী ভীষণভাবে প্রভাবিত; তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?

এরপর পলিটিকাল অঙ্গনের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখতে পাই, চরমোনাই পীরের দলের দ্বারাও অগণিত মানুষ আল্লাহ প্রেমি বা রাসূল প্রেমি হয়েছেন।

ইসলামী ছাত্রশিবির বা জামায়াতে ইসলামী সাধারণ শিক্ষিত মানুষের মধ্যে যেভাবে আর যে পরিমাণ দীনের ব্যাপারে জোয়ার তৈরি করেছিলো এক সময়, সেটা তো কোনোভাবেই আমার এই ক্ষুদ্র লেখায় ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়।

আমরা যদি কেবল কবি আল মাহমুদ বা চিত্র নায়ক শেখ আবুল কাশেম মিঠুনের দিকেই তাকাই, তাহলে এর ভালো একটা নজির দেখতে পাবো। আল মাহমুদ নিজেই তো আল্লামা সাঈদীর ওয়াজ নসিহত শোনার কথা বলছিলেন। সেই মাহফিলের আলোচনাগুলো দ্বারা প্রভাবিত হবার কথাও জানিয়েছেন।

শেখ আবুল কাশেম মিঠুন তো উস্তাদ মওদূদীর বইয়ের দ্বারা জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন ছাত্রশিবিরের প্রভাব না থাকায় স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কী অবস্থা, ছাত্রদের নৈতিক অবক্ষয় কী পরিমাণ হয়েছে- তা তো দেখাই যাচ্ছে। যদি ছাত্রশিবির-প্রভাবশালী থাকতো, তাহলে কি আমাদেরকে এই পরিমাণ অবক্ষয় দেখতে হতো?

ছাত্রী অঙ্গনে কাজ করা ছাত্রী সংস্থা নামক সংগঠনটি তরুণী বা যুবতী বোনেদের মাঝে পর্দা, হিজাব-নিকাব, মাহরাম-ননমাহরাম মেইনটেইনের যে ভীষণ একটা জোয়ার তুলেছে, সেটা কি আর অন্য কেউ পেরেছে ওরকমভাবে? অগণিত পর্দাহীনকে তারা পর্দার অন্তর্ভুক্ত করেছে। সালাত সিয়াম ও তিলাওয়াত শিক্ষা দিয়েছে। আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত করেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাঁর রহমত দিয়ে তাদেরকে ঢেকে রাখুন।

এভাবে আল্লাহ দীনের জন্য সবাই কাজ করছেন। করে যাচ্ছেন। কথা হলো আমরা সবাই কেমন যেন সংকীর্ণমনা হয়েছে গেছি। কেউই যেন কাউকে স্বীকৃতি দিতে পারছি না। কাউকে সহ্য করতে পারছি না।

সবাই যদি সবাইকেই কেবল হকের মানদণ্ডভাবে, নিজের কাজকেই কাজ এবং অন্যের কাজকে খইভাজা মনে করে, তাহলে আমরা আল্লাহর দীনকে বিজয়ী করবো কীভাবে?

আমরা তো সবাই দীনের স্বার্থেই বিভিন্ন দলে বা আন্দোলনে যুক্ত হই। এরচেয়ে তো বেশি কিছু না। এখন আমি যে দলে আছি, সে দলকেই যদি দীন মনে করি বা সে প্ল্যাটফর্মকেই দীন বানিয়ে ফেলি, তাহলে তো সমস্যা। এর পাশাপাশি আমি রাষ্ট্রের দীন নিয়ে অস্থির, কিন্তু আমার ব্যক্তিগত জীবনে যতটুকু দীন কায়েমের সুযোগ আছে, আমি সেটা করছি না। তাহলে তো কথা তো উঠবেই। প্রশ্ন তো থাকবেই।

কারণ, রাষ্ট্রে আমার দীন কায়েমের সুযোগ নেই এখন অবধি। কিন্তু নিজের পরিবারে তো সুযোগ আছে। নিজের ব্যক্তিগত জীবনে তো আছে। আমি তো হিংসা বিদ্বেষ বন্ধ করতে পারি। আমি তো গালাগালি বন্ধ করতে পারি। সালাত কাজা বাদ দিতে পারি। হারাম রিলেশন ছাড়তে পারি। মিউজিক বা বাদ্যযন্ত্র ত্যাগ করতে পারি। চোগলখোরি-গীবত বন্ধ করতে পারি। এখানে তো আমার সুযোগ আছে। নাটক সিনেমা দেখা বন্ধ করর সুযোগ আছে। সাধ্য আছে। আমি কি সেটা করছি? মানে ব্যক্তিগত জীবনে দীন কায়েম করছি?

দীনের প্রধান দাবিই হচ্ছে একতা। সংগবদ্ধতা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাঁর সকল বান্দাকেই একটা রজ্জুকে আঁকড়ে ধরতে বলেছেন, সেই রজ্জুটা হচ্ছে দীন। সেই রজ্জু হচ্ছে ইসলাম।

আসুন, ইসলামকে আঁকড়ে ধরি। আমাদের ঠিকানাই হচ্ছে ইসলাম। ইসলামকে না ধরলে আমরা নানাভাবে পথ হারাবো।


~রেদওয়ান রাওয়াহা
০৮.০৮.২৩ ইং

পঠিত : ৪১৫ বার

মন্তব্য: ০