Alapon

গান-বাজনা কি সত্যই হারাম?

মহান আল্লাহর হাজারও সৃষ্টির ভিতরে মানব কন্ঠ নিসৃত সুললিত সুর আর বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসা মিষ্টি ঝংকার বোধ হয় সবচেয়ে যাদুময় সৃষ্টি । এই দুইয়েরর মিশ্রণ আমাদের আবেগের সাগরে যে উত্তাল ঢেউ এর সৃষ্টি করে তার রহস্য মানুষের কাছে আজও অজানা । ভালোবাসার গান আমাদেরকে কাছের জনকে আরও বেশী করে ভালবাসতে শিখাই , স্বাধীনতার গান জাতীকে সংগ্রামী করে তুলে । যে হৃদয় অন্ধকারে হারিয়ে যায় সুন্দর একটা গান তাকে আলোর দিশা দেখায় । গান শুনে মানুষ প্রেমে পড়ে, হাসে , কাদে , আবেগী হয় , বিদ্রোহী হয় ।
মনের রাজ্যে সুর-মূর্চ্ছনার এরূপ রহস্যময় প্রভাব ….. যা মহান আল্লাহরই ইচ্ছারই এক বহিঃপ্রকাশ – তা কিভাবে ইসলামে হারাম হয় ?
কোরআনে তন্য তন্য করে খুজেও একটা আয়াতও খুজে পাইনি যার দ্বারা গান বাজনা কে হারাম ঘোষনা করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে । মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
“আপনি বলুনঃ আল্লাহর যা কিছু উত্তম তিনি বান্দাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র খাদ্রবস্তুসমূহকে কে হারাম করতে পারে ? আপনি বলুনঃ এসব নেয়ামত আসলে পার্থিব জীবনে মুমিনদের জন্যে এবং কিয়ামতের দিন খাঁটিভাবে তাদেরই জন্যে। এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি তাদের জন্যে যারা বুঝে।” (৭:৩২)
“তোমাদের মুখ থেকে সাধারনতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে তেমনি করে তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বল না যে, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করে, তাদের মঙ্গল হবে না।” (১৬:১১৬)
তাই মহাজ্ঞানী আল্লাহ্‌ যা হারাম করেননি তা হারাম করার এখতিয়ার কাউকে উনি দেননি । কুরআনের কোথাও গান বাজনা কে হারাম ঘোষণা করা হয়নি , অতএব মুমিনদের জন্য তা উপভোগ্য ও হালাল ।
পরিশেষে এইটুকু বলে রাখা দরকার মনে করি যে সকল প্রকার অশ্লীলতা , অশালীনতা ও বেহায়াপনা ইসলামে নিষিদ্ধ ও নিন্দিত (কুরআনঃ ৩.১০৪,২৫.৭২,৩৩.৭০,৩৯.১১ ইত্যাদি) । তাই গান বাজনার দ্বারা যদি এরূপ বেহায়াপনা প্রকাশ পাই বা অশ্লীলতার সাথে সম্পৃক্ততা থাকে তবে তা অবশ্যই নিষিদ্ধ , যেমনটা কিনা ফলের রস হালাল কিন্তু ফলের রস দিয়ে মদ বানিয়ে তা পান করা হারাম ।

পঠিত : ৩২১ বার

মন্তব্য: ২

২০২৩-০৮-২৭ ০৯:৫৩

User
জোহেব শাহরিয়ার

গান-বাজনা কেন ইসলামে নিষিদ্ধ হারাম?
----------------------------------------------
নাস্তিকসহ কিছু মডারেট মুসলিমদেরকেও বলতে শুনা যায় যে, ইসলামে গান-বাজনা কেন নিষিদ্ধ! গান-বাজনা শুনতে সমস্যা কোথায়! এই লেখাটিতে গান-বাজনার ক্ষতিকর দিক, ইসলামে গান-বাজনা হারাম হওয়ার রেফারেন্স এবং কেন গান-বাজনা হারাম তা তুলে ধরা হয়েছে।

আল-কোরআনে গান-বাজনা হারাম

● মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ

একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। [1]

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা:) বলেন, "এ আয়াতে 'অবান্তর কথাবার্তা (لَهُمْ عَذَابٌ) বলে গান-বাজনা ও অন্যান্য মন্দকে বোঝানো হয়েছে। [2] এমনিভাবে জাবির, ইকরিমা, সাঈদ ইবনু জুবাইর, মুজাহিদ, মাকহূল, আমর ইবনু শুআইব এবং আলী ইবনু নাদীমা (রহ:) থেকেও এই একই ব্যাখ্যা বর্ণিত আছে। বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরি (রহ:) বলেন, 'গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে এই আয়াত নাযিল হয়েছে। [3] আব্দুর রহমান সা'দি (রহ:) উল্লেখিত শব্দের ব্যাখ্যায় যাবতীয় অশ্লীল কাজকর্ম, অনর্থক কথাবার্তা, গীবত, চোগখুরী, গালি-গালাজ, মিথ্যা, কুফর, ফিসক, পাপাচার, অবৈধ খেলাধুলা, গান-বাজনা ও সব রকমের বাদ্যযন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। [4]

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ:) বলেন, সাহাবী ও তাবিয়িদের ব্যাখ্যা থেকে জানা ও সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়, এই আয়াতে 'অবান্তর কথাবার্তা' বলে গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে। আবুস সাহাবা (রহ:) বলেন, 'আমি এই আয়াত সম্পর্কে ইবনু মাসউদ (রা:)-এর কাছে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, "আল্লাহর কসম করে বলছি, এর মাধ্যমে কেবলমাত্র গান-বাজনাকেই বোঝানো হয়েছে। "এই কথাটি তিনি তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন। [5] আল্লাহ তায়ালা সূরা লুকমানে বলেন, এদের জন্য রয়েছে অবমানকর শাস্তি। অর্থাৎ যারা গান-বাজনা শুনে তাদের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ কঠিন শাস্তি রয়েছে।

গান-বাজনা শয়তানের সুর

● মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

قَالَ اذْهَبْ فَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ فَإِنَّ جَهَنَّمَ جَزَاؤُكُمْ جَزَاءً مَوْفُورًاوَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَأَجْلِبْ عَلَيْهِمْ بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكْهُمْ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ وَعِدْهُمْ ۚ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا

আল্লাহ (শয়তানকে) বলেন: ঠিক আছে, তুমি যাও, এদের মধ্য থেকে যারাই তোমার অনুসরণ করবে, তুমি-সহ তাদের সবার জন্য জাহান্নামই হবে পূর্ণ প্রতিদান। তুমি যাকে-যাকে পারো তোমার আওয়াজের মাধ্যমে বিভ্রান্ত করো। তাদের ওপর অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীর আক্রমণ চালাও। ধন-সম্পদে ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যাও। এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতির জালে আটকে ফেলো। আর শয়তানের প্রতিশ্রুতি ধোঁকা ছাড়া আর কিছু নয়।[6]

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ:) বলেন, 'যারা আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতাপূর্ণ কথা বলে এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে, যেমন: বাঁশি, নিষিদ্ধ জাতের দফ, ঢোল-তবলা ইত্যাদি এগুলো হলো শয়তানের আওয়াজ। [7]

● মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

أَفَمِنْ هَٰذَا الْحَدِيثِ تَعْجَبُونَ. وَتَضْحَكُونَ. وَأَنْتُمْ سَامِدُونَ

তোমরা কি এই বিষয়ে আশ্চর্যবোধ করছ? এবং হাসছ-ক্রন্দন করছ না? ররং তোমরা খেল-তামাশায় লিপ্ত রয়েছ! [8]

ইবনু কাসীর (রহ:) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, "সুফ্ইয়ান সাওরি (রহ:)-এর পিতা ইবনু আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, '(সূরা নাজমের ৬১ নম্বর) আয়াতে ব্যবহৃত 'খেলা-তামাশা' (سَامِدُونَ) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গান-বাজনা। এটি ইয়ামানি শব্দ। যেমন 'ইসমিদ লানা (اِسْمِدْ لَنَا)-এর অর্থ হলো, আমাদের জন্য গান গাও৷" ইকরিমা (রহ:) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। [9] কুরআন অনুযায়ী গান-বাজনা স্পষ্টভাবে হারাম নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা গান-বাজনাকে হারাম করেছেন। যারা গান-বাজনা শুনবে তারা এর জন্য কঠোর শাস্তি ভোগ করবে।

হাদীসের গান-বাজনা হারাম

'আবদুর রহমান ইবনু গানাম আশ'আরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমার নিকট আবূ আমির কিংবা আবূ মালিক আশ'আরী বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ্‌র কসম! তিনি আমার কাছে মিথ্যে কথা বলেননি। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে। [10]

এই হাদিসে দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে মিউজিক হারাম হওয়ার বিষয় ফুটে উঠেছে:

রাসূল (সা:) বলেছেন, তারা একে হালাল মনে করবে। অর্থাৎ এটি হারাম, তারা এটি হালাল মনে করবে। সুতরাং এই হাদিসের মাধ্যমে উল্লেখিত প্রত্যেকটি বিষয় (যিনা-ব্যভিচার, রেশমি কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্র) হারাম হওয়ার ব্যাপারটি প্রমাণিত।
রাসূল (সা:) বাদ্যযন্ত্রকে সেসব বিষয়ের সাথে একত্রে উল্লেখ করেছেন, যেগুলো নি:সন্দেহে ও সুস্পষ্টভাবে হারাম। যেমন, যিনা-ব্যভিচার এবং মদ। যদি গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র হারাম না হতো তা হলে তিনি অন্যান্য হারাম বিষয়ের সাথে একত্রে এটি উল্লেখ করতেন না। [11]
গান-বাজনা হারাম হওয়ার জন্য এই একটা হাদিসই যথেষ্ট। সুতরাং কোরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, গান-বাজনা হারাম নিষিদ্ধ।

গান-বাজনার ব্যাপারে চার মাযহাব ও অন্যান্য ইমামদের মতামত

হানাফী মাযহাব।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহ:) বলেন, বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা (রাহ:) এর মাযহাব সবচেয়ে কঠোর। ইমাম আবু হানিফা (রাহ:) এর ছাত্ররা সুস্পষ্ট ভাবে বাদ্যযন্ত্র হারাম ঘোষণা করেছেন এবং যারা গান-বাজনা শুনে তাদেরকে ফাসিক ঘোষণা করেছেন ও তাদের সাক্ষ্য অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। এমনকি অনেকে বলেছেন, গান-বাজনা শোনা ফাসিকি এবং উপভোগ করা কুফরি। যদিও এই উক্তির সমর্থনে তারা মুরসাল হাদিস পেশ করেছেন। [12] তারা আরো বলেছেন, কোন জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় গান-বাজনা শুনতে পেলে, না শোনার চেষ্টা করতে হবে। ইমাম আবু ইউসুফ (রাহ:) বলেছেন, যদি কোন বাড়ি থেকে গান-বাজনার আওয়াজ শুনা যায়, তবে সেখানে প্রবেশের জন্য অনুমতি গ্রহণের প্র‍য়োজন নেই৷ কারণ সৎকাজের আদেশ ও মন্দকাজের নিষেধ ফরজ। এ ক্ষেত্রে অনুমতি গ্রহণ করতে গেলে লোকেরা সৎকাজের আদেশ ও মন্দকাজের নিষেধের এই ফরজ বিধান পালন করতে পারবে না। কেউ যদি প্রতিনিয়ত গান বাজাতেই থাকে, তা হলে শাসক তাকে আটকও করতে পারে বা চাবুকও মারতে পারে। [13]

মালিকী মাযহাব।
যারা ঢোল-তবলা ও বাশিঁ বাজায় তাদের ব্যাপারে ইমাম মালিক (রাহ:) এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাদের কাছ দিয়ে যাবার সময় এগুলো উপভোগ করা যাবে কী না? তিনি বললেন, ওইসব মজলিস থেকে অবশ্যই উঠে যেতে হবে। তাদেরকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবে কেউ যদি খুবই জরুরি কোন কারণে সেখানে বসতে বাধ্য হয় এবং সেখান থেকে উঠে যেতে অপারগ হয়, তা হলে ভিন্ন কথা। আর যদি চলতি পথে বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শুনতে পায়, তবে দ্রুতগতিতে সামনে বা পিছনে চলে যেতে হবে। [14] তিনি বলেছেন, গান-বাজনা ফাসিকদের কাজ। [15] ইবনু আবদিল বার (রাহ) বলেছেন, আলিমগণ যেসব বিষয় নিষিদ্ধ হবার ব্যাপারে একমত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাদ্যযন্ত্র এবং সব রকমের অনর্থক কাজ। [16]

শাফেয়ী মাযহাব।
ইমাম শাফেয়ী (রাহ:)-এর ছাত্ররা এবং তার মাযহাবের অনুসারীদের মধ্যে যাদের প্রকৃত ইলম ছিল, তারা সকলেই সুস্পষ্ট ভাবে গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্রকে হারাম ঘোষণা করেছেন। গান বাজনাকে যারা হালাল মনে করে, ইমাম শাফেয়ী তাদের মত খন্ডন করেছেন। যে ব্যক্তি বেশী-বেশী গান-বাজনা শুনে, সে প্রকৃত নির্বোধ। তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। [17]

হাম্বলী মাযহাব।
ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল (রাহ:) এর পুত্র আব্দুল্লাহ তার পিতা ইমাম আহমদকে গান-বাজনা সম্পর্কে জিগ্যেস করেছিলেন। ইমাম আহমদ উত্তরে বলেছিলেন, এটি অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে; আমি এটি অপছন্দ করি। এরপর তিনি ইমাম মালিক (রাহ:) এর উক্তি উল্লেখ করে বলেন, শুধুমাত্র ফাসিকদের কাজ গান বাজনা শুনা। [18] ইবনু কুদামা (রাহ:) হাম্বলি মাযহাবের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একজন ইমাম। তিনি বলেছেন, তার দিয়ে নির্মিত বাদ্যযন্ত্র, শিঙা, বাঁশি, ঢোল-তবলা ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র হারাম। যারা এগুলো শুনে, তাদের সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যাত। [19] এরপর তিনি বলেছেন, "বিয়ে-শাদির দাওয়াতে উপস্থিত হয়ে যদি বাদ্যযন্ত্র ও মদের মতো হারাম বস্তু দেখতে পাও আর সেগুলো থামানোর সক্ষমতা থাকে, তা হলে থামাবে। অন্যথায় সেই দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে সেখান থেকে চলে আসবে। [20] শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা (রাহ:)-ও চার মাযহাবের ইমামগনের মতো সুস্পষ্ট ভাবে বলেছেন, সমস্ত বাদ্যযন্ত্র হারাম। কেননা, সহীহ হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, "যারা বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে, তাদের একদলকে বানর-শুকরে রূপান্তরিত করা হবে। [21] তিনি গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেছেন, চার ইমামের অনুসারীদের কেউই এ বিষয়ে দ্বিমত করেননি। [22] ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা (রাহ:) আরো বলেছেন, " বাদ্যযন্ত্র অন্তরের মদ। মদের মতো এটিও অন্তরে নেশা সৃষ্টি করে। [23] ইমাম তাবারি (রাহ:) বলেছেন, সকল স্থানের আলিমগণ একমত হয়েছেন এ ব্যাপারে যে, গান-বাজনা অপছন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য। আবুল ফারজের উক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আমাদের মাযহাব হতে কাফ্ফাল (রাহ:) বলেছেন, "যারা গান-বাজনা ও নৃত্যে অংশ নেয় বা শ্রবণ করে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়"। কেননা এগুলোর কোন অনুমতি নেই। সুতরাং আমি বলবো, যখন প্রমাণিত হলো, এসব কাজ হারাম তখন এসব কাজের বিনিময়ে মজুরি গ্রহণ করাও হারাম হবে। [24] কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (রাহ:) বলেন, " গান-বাজনা হলো ভ্রান্ত-বাতিল"। আর ভ্রান্ত-বাতিলের স্থান হলো জাহান্নাম। [25] বিশিষ্ট তাবেয়ি হাসান বসরি (রাহ:)-ও গান-বাজনা হারাম বলেছেন। [26] ইমাম তাইমিয়্যা (রাহ:) বলেছেন, অধিকাংশ আলিমগণের মতে বাদ্যযন্ত্র ধব্বংস করা জায়েজ। এটা ইমাম মালিক (রাহ:) এর মাযহাব এবং হাম্বলী মাযহাবের শীর্ষ দুইজন আলিমের মতামত। তিনি আরো বলেন, বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুত করা জায়েজ নয়। [27] ইমাম আবী শাইবা (রাহ:) বর্ণনা করেন, "জনৈক ব্যক্তি আরেকজনের বাদ্যযন্ত্র ভেঙে দিলো। এ বিষয়ে কাজীর কাছে বিচার এল। কাজী রায় দিলেন, বাদ্যযন্ত্রের মালিক কোন ক্ষতিপূরণ পাবে না, কেননা এটি হারাম যন্ত্র, যার কোন মূল্য নেই। [28] বাহায়ি (রাহ:) সমস্ত বাদ্যযন্ত্র হারাম ঘোষণা করে ফাতওয়া জারি করেছিলেন। বাদ্যযন্ত্র ধব্বংস না করে বিক্রি করাও নিষিদ্ধ বলেছেন। গান-বাজনার ক্ষেত্রে সেসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা যাবে না, তবে সেগুলো ভেঙে কাঠ বা ধাতব অংশ বিক্রি করা যেতে পারে। [29] এই গান-বাজনার নেশার ঘোরের কারণে মানুষ আল্লাহ তায়ালা-কে ভুলে যায়। একজন মানুষের অন্তরে এই গান-বাজনার প্রতি যত বেশী আগ্রহ সৃষ্টি হয়, সে দ্বীনদারী থেকে তত বেশী দূরে সরে যায়। ইসলামকে সে আর হৃদয় দিয়ে অনুভব করে পারে না। কুরআনের তিলাওয়াত শুনে মজা পায় না। নিফাকে জর্জরিত অন্তর থেকে একটা সময় আল্লাহর ভয় পুরোপুরি বিদায় নেয়। হারিয়ে যায় ঈমানের শেষ বিন্দুখানি। তাই সময় থাকতে এসব পরিহার করুন।



গান-বাজনা কেন হারাম বা নিষিদ্ধ

ইসলামে ক্ষতিকর সবকিছুই হারাম তা গান-বাজনা হোক বা অন্য কিছু। যেসকল কারণে ইসলামে গান-বাজনা হারাম এর কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো:

গান-বাজনা অন্তর থেকে আল্লাহ সম্পর্কে সকল ভয় দূর করে দেয়।
গান-বাজনা মানুষকে শির্কের দিকে ধাবিত করে।
গান-বাজনা মানুষকে কুফরি কর্মকাণ্ডে দিকে উৎসাহিত করে।
গান-বাজনা মানুষদের ফাসিক বানাই।
গান-বাজনা মানুষের মধ্যে উগ্রতা সৃষ্টি করে।
গান-বাজনা শুনিয়ে মানুষকে পথভ্রষ্ট করা শয়তানের কাজ।
গান-বাজনা অন্তরে অন্যান্য কুফরি ও হারাম কাজের বীজ বপন করে দেয়।
গান-বাজনা মানুষের স্মৃতি-শক্তি হ্রাস করে।
গান-বাজনার অনুভূতি মানুষকে সকল কিছু ভুলিয়ে দেয়। অন্য এক জগতে নিয়ে যায়।
একজন ব্যক্তি গান-বাজনায় যা শুনে তা নিয়েই কল্পনার জগতে হারিয়ে যায়।
অশ্লীল দৃশ্যের গান-বাজনা মানুষকে অশ্লীল দৃশ্যের কল্পনা করতে উৎসাহিত করে।
অশ্লীল ভাষার গান-বাজনা মানুষকে গালাগালি শিখায় ও মন্দ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে।
উগ্রতাপূর্ণ গান-বাজনা মানুষের মাঝে উগ্রতা ছড়াই।
গান-বাজনা মানুষকে দ্বীন-ইসলাম থেকে দূরে নিয়ে যায়।
গান-বাজনা মানুষের সময় অপচয় করে।
গান-বাজনা শয়তানের অন্যতম হাতিয়ার।
গান-বাজনা মানুষকে আখিরাতের স্মরণ করা হতে বিমুখ করে।
গান-বাজনা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। গান-বাজনার রয়েছে ভয়াবহ ক্ষতিকর দিক।
গান-বাজনা মানুষের অন্তরে ভয়াবহ আবেগ-অনুভূতি সৃষ্টি করে।
গান-বাজনা মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর

অপরাধ-মূলক ও উগ্রবাদী গান।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হিংসাত্মক গান শোনার পর মানুষ আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ে। বিস্তারিত পড়ুন সেখান থেকে। বিভিন্ন যুদ্ধে বিপক্ষের শত্রুদের প্রতি হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার জন্য উৎসাহিত করতে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক গান শুনানো হয়। কারণ আপনি যেই-প্রকারের গান শুনবেন আপনার অনুভূতি-আবেগ সেরকম হবে। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে গান-বাজনা কীভাবে মানুষকে অপরাধে উৎসাহিত করে। আপনি যখনই মন্দ বা অপরাধ-মূলক কোন গান শুনবেন তখন আপনার অনুভূতি সে-রকমই হবে। মিউজিক আপনাকে সেই অপরাধ-মূলক কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে। আপনি সেই গানের অপরাধ মুলক শব্দের কল্পনার জগতে হারিয়ে যাবেন। অপরাধ মূলক গান আপনাকে অপরাধের দিকে আকৃষ্ট করবে। উগ্রবাদী গান আপনাকে উগ্র স্বভাবের করে দিবে। সহজেই আপনি যেকোন বিষয়ে খবুই দ্রুত রাগান্বিত হয়ে যাবেন। [30]

অশ্লীল নগ্ন গান।
অশ্লীল গান আপনার যৌন-উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়ে আপনাকে ব্যভিচার ও ধর্ষণের দিকে নিয়ে যাবে। বর্তমানে প্রত্যেক দেশেই অশ্লীল গানের প্রসার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমেই বেড়ে চলছে ধর্ষণ ও ব্যভিচার। অংশীদারদের চিন্তাভাবনা, আবেগ এবং একই বা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আচরণের উপর যৌন-আক্রমণাত্মক গানের সামগ্রীর প্রভাবকে কেন্দ্র করে এই ডকুমেন্টটি পড়ে ফেলুন। অশ্লীল গান শোনার মন্দ প্রভাব খুবই বেশী। আপনি যখনই অশ্লীল কাজ শুনবেন তখনই আপনি আপনার কল্পনার জগতে অশ্লীলতা নিয়ে চিন্তায় ডুবে যাবেন। অশ্লীল গান-বাজনা সমাজের জন্য এক বিরাট হুমকি। একটি সভ্য সমাজকে অসভ্য করে দিতে নগ্ন-অশ্লীল গানই যথেষ্ট।

পড়াশোনার ক্ষতি।
গান-বাজনা একজন মানুষের পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। পড়াশোনায় গান-বাজনার ক্ষতি নিয়ে মনে হয় না কিছু লিখতে হবে।

আবেগ-অনুভূতি।
গান-বাজনা মানুষের মধ্যে আবেগ বাড়িয়ে দেয়। মানুষকে কল্পনার জগতে নিয়ে যায়। ফলে মানুষ সেটা নিয়েই ভাবতে থাকে। হিংসাত্মক গান মানুষের মধ্যে হিংসা বাড়িয়ে দেয়। এক কথায় মিউজিক মানুষকে পথভ্রষ্ট করে।

মিউজিক নিয়ে CNN-এর রিপোর্ট

CNN নিউজে মিউজিক নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় লিখা হয়েছে গান-বাজনা বা মিউজিক নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে যে, এটি আক্রমণাত্মক চিন্তাভাবনা বা অপরাধকে উৎসাহিত করতে পারে। [31]

CNN report পড়ার পর এটা বললে ভুল হবে না যে, মিউজিক সমাজের মানুষের জন্য এক বিরাট হুমকি। আলহামদুলিল্লাহ ১৪০০ বছর আগেই ইসলাম এই গান-বাজনা হারাম নিষিদ্ধ করেছে।

Journal of Personality and Social Psychology জার্নালের মে মাসে প্রকাশিত একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, গানের সহিংস গীত বা শব্দ গুলি নেতিবাচক আবেগ এবং চিন্তা-ভাবনা গুলিকে আগ্রাসনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। (Vol. 84, No. 5). [32]

মিউজিক গায়কদের আত্মাহত্যা

পাঠকগণ জানেন কিনা জানি না, প্রতি বছর অসংখ্য Music Singer হতাশায় ভোগে আত্মাহত্যা করে। এই তালিকা অনেক লম্বা। আগেই বলেছি মিউজিক আপনাকে ধব্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। কয়েকজন খ্যাতিমান গায়কদের তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলো যারা আত্মাহত্যা করেছেন।

Chester Bennington.
Stuart Adamson.
Simone Battle.
David Berman.
Champignon.
Chris Cornell.
Smiley Culture.
Brad Delp.
Goo Hara.
Charles Haddon.
Ludwig Hirsch.
Scott Hutchison
Marcel Jacob
Antonie Kamerling
Kazuhiko Katō
Kim Jonghyun
Lee Hye-Ryeon
Jon Lee
Dave Lepard
Mark Linkous.
Ellen Joyce Loo
২১ জনের নাম উল্লেখ করলাম। যারা সবাই গায়ক ছিলেন। সবাই আত্মাহত্যা করেছেন। প্রতি বছর অসংখ্য Music Singer আত্মাহত্যা করে। কিন্তু কেন আত্মাহত্যা করে এই বিষয়ে পাঠগণ একটু খোঁজ নিন উত্তর পেয়ে যাবেন। মিউজিক নিয়ে আরো অনেক Document রয়েছে। উল্লেখ করলে লেখা বড় হয়ে যাবে তাই করছি না। পরিশেষে এটুকু বলতে চাই যে, মিউজিক থেকে দূরে থাকুন। নাস্তিকরা সমাজের সবচেয়ে বড় হুমকি। তারা সকল অনৈতিক কাজকে হালাল বানাতে চায়। তাই তারা মিউজিক নিয়েও ইসলাম-বিদ্বেশী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত আছে। গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র আপনাকে ধব্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। তাই এগুলো থেকে আমি পাঠকদেরকে দূরে থাকতেই বলবো। গান-বাজনা একজন মানুষকে উগ্রবাদী করে তোলে। গান-বাজনার আবেগের জালে একবার জড়িয়ে পড়লে তার থেকে বের হওয়া বড়ই কঠিন কাজ। একজন মুসলিম কখনোই নিজের মূলব্যান সময় গান-বাজনা শুনে অপচয় করতে পারে না। তাই গান-বাজনার মতো ভয়াবহ ক্ষতিকর বিষয় থেকে দূরে থাকুন।



➪ ????????????????????????????????????:-

[1] (সূরা: লোকমান, আয়াত: ৬)।
[2] তাবারি, আত-তাফসীর, ২০/১২৭-১২৮।
[3] ইবনু কাসীর, আত-তাফসীর, ৩/৪৫১।
[4] সা'দি, তাফসীর ৬/১৫০।
[5] ইবনুল কাইয়্যিম, ইগাসাতুল লাহফান, ১/২৪০।
[6] (সূরা: বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৬৩-৬৪)৷
[7] ইবনুল কাইয়্যিম, ইগাসাতুল লাহফান, ১/২৫৫-২৫৬।
[8] (সূরা: আন-নাজম, আয়াত: ৫৯-৬১)।
[9] ইবনু কাসীর, আত-তাফসীর, ৭/৪৬৮।
[10] সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৫৯০।
[11] আলবানী, বাদ্যযন্ত্রের হুকুম: ১/১৭৬।
[12] https://cutt.ly/jmoZV3I
[13] ইগাসাতুল লাহফান: ১/২২৭।
[14] কাইরাওয়ানি, আল জামি: ২৬২-২৬৩।
[15] কুরতুবি, আত-তাফসীর: ১৪/৫৫।
[16] আল-কাফি: ৩৪২।
[17] ইগাসাতুল লাহফান: ১/২২৭।
[18] ইগাসাতুল লাহফান: ১/২৩০।
[19] আল-মুগনি: ১০/১৭৩।
[20] আল কাফি: ৩/১১৮।
[21] সহীহ বুখারি, হাদিস ৫৫৯০।
[22] মাজমূউল ফাতওয়া: ১১/৫৭৬।
[23] মাজমূউল ফাতওয়া: ১০/৪১৭।
[24] কুরতুবি, আত-তাফসীর: ১৪/৫৬।
[25] কুরতুবি, আত-তাফসীর: ১৪/৫২।
[26] কুরতুবি, আত-তাফসীর: ১৪/৫২।
[27] মাজমূউল ফাতাওয়া: ২২/১৪০।
[28] ইবনু আবী শাইবা,মুসন্নাফ: ৫/৩৯৫।
[29] শারহুস সুন্নাহ: ৮/২৮।
[30] https://medium.com/behavior-design/can-music-have-negative-effects-on-people-fa1a4d59144f
[31] https://edition.cnn.com/2019/02/08/health/music-brain-behavior-intl/index.
[32] https://www.apa.org/monitor/julaug03/violent
Share this:

submit

২০২৩-০৮-২৭ ১০:৫০

User
Abrar

সংক্ষেপে বলি:

১। কোরানের যে আয়াতগুলো তুলে ধরেছেন তার কোথাও الْمَعَازِفَ বা غِنَاءِ বা مِزْمَارَةُ শব্দগুলো নেই। তাই এই আয়াতগুলো গান বাজনা সম্পর্কিত নয়।

২। বুখারীর যে হাদিসটি তুলে ধরেছেন তা একটা মুয়াল্লাক হাদিস। আবার এই হাদিসের দুইজন রাবী هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ এবং عَطِيَّةُ بْنُ قَيْسٍ কে নিয়ে মুহাদ্দিস দের মতবিরোধ আছে।

৩। বুখারীর অনেক হাদিসে দেখা যায় রাসুল( সা:) গান বাজনা শুনেছেন বা তার অনুমতি দিয়েছেন। যেমন :

ক) ১৯৫০-(১৯/...) হারূন ইবনু সাঈদ আল আয়লী ও ইউনুস ইবনু আবদুল আ'লা (রহঃ) [শব্দগুলো হারূনের] ...... আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে দেখেন, আমার কাছে দুটি বালিকা জাহিলিয়্যাত যুগে সংঘটিত বু'আস যুদ্ধের গান গাইছে। তিনি বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিলেন। এমন সময় আবূ বকর (রাযিঃ) প্রবেশ করলেন। তিনি (এ দৃশ্য দেখে) আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে শাইতনের বাদ্য চলছে? (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে ফিরে বললেন, হে আবূ বাকর! এদেরকে ছেড়ে দাও। এরপর তিনি যখন অন্যমনস্ক হলেন, আমি বালিকাদ্বয়কে আস্তে খোচা দিলাম। তারা বের হয়ে চলে গেল। এটা ঈদের ঘটনা।

খ) ২৭০৬। ইসমাঈল (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। সে সময় দু‘টি বালিকা বু‘আস যুদ্ধ সম্পর্কীয় গৌরবগাঁথা গাইছিল। তিনি এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন এবং তাঁর মূখ ফিরিয়ে রাখলেন। এমন সময় আবূ বকর (রাঃ) এলেন এবং আমাকে ধমক দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর রাসূলের কাছে শয়তানের বাদ্য? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দিকে ফিরে বললেন, ওদের ছেড়ে দাও। তারপর যখন তিনি অন্য দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমি বালিকা দু’টিকে (হাত দিয়ে) খোঁচা দিলাম। আর তারা বেরিয়ে গেল।

গ) ৩২৭৮। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ... 'আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, মিনায় অবস্থানের দিনগুলোতে (অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ তারিখে) আবূ বকর (রাঃ) আমার গৃহে প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর নিকট দু'টি বালিকা ছিল। তারা দফ (একদিকে খোলা ছোট বাদ্যযন্ত্র) বাজিয়ে এবং নেচে নেচে (যুদ্ধের বিজয় গাথা) গান করছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন চাঁদর দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে ছিলেন। আবূ বক্‌র (রাঃ) এদেরকে ধমকালেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মুখ থেকে চাঁদর সরিয়ে বললেন, হে আবূ বক্‌র এদেরকে গাইতে দাও। কেননা, আজ ঈদের দিন ও মিনার দিনগুলির অন্তর্ভুক্ত। আয়িশা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর আমি (তাঁর পিছনে থেকে) হাবশীদের খেলা উপভোগ করছিলাম। মস্‌জিদের নিকটে তারা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা করছিল। এমন সময় 'উমর (রাঃ) এসে তাদেরকে ধমকালেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে 'উমর! তাদেরকে বানূ আরফিদাকে নিরাপদে ছেড়ে দাও।

৪। উপর এর কারণগুলো সামনে রেখে বহু মুজতাহিদ ইমাম গান বাজনা কে ইসলাম এ জায়েজ বলে ফতুয়া দিয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনের নাম উল্লেখ করছি:

ক) আব্দুল্লাহ বিন জাফর বিন আবি তালিব (রা:)
খ) ইমাম গাজ্জালী
গ) ইমাম সাওকানী
ঘ) ইমাম ইবনে হাজাম
প্রমুখ

submit