The Satanic Verses : আসল দোষী কে বা কারা ?
তারিখঃ ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১০:১৪
সালমান রুশদির স্যাটানিক ভার্সেস (Satanic Verses) উপন্যাসের কথা কম বেশি সবারই জানা । ১৯৮৮ সালে তার এই গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পর সালমান রুশদি মুসলমানদের রোষানালে পড়ে , তাকে হত্যা করার বহু চেষ্টা করা হয় , তার শিরচ্ছেদের ফতুয়া দেয়া হয় এবং কোন কোন দেশ মোটা অংকের পুরস্কার ধার্য করে তার মাথার বিনিময়ে । সালমান রুশদির দোষ ? সে ইসলামের এক গৃন্য ইতিহাস ‘দ্যা স্যাটানিক ভার্সেস’ টাইটেলের মাধ্যমে নাটকিক ভাবে তুলে ধরেছিল । কোন সন্দেহ নাই যে সে ইসলাম বিদ্বেষি , কিন্তু এই স্যাটানিক ভার্সেস কি তার নিজের বানানো ?
কথিত আছে শয়তান ধোকা দিয়ে নবী মুহাম্মদ(সাঃ) এর উপর উপর নিচের কথাগুলো নিয়ে আসেঃ
أَفَرَأَيْتُمُ اللَّاتَ وَالْعُزَّى
তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে।
وَمَنَاةَ الثَّالِثَةَ الْأُخْرَى
এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে?
تلك الغرانيق العلى
তারা উচ্চকিত উচ্চাসিন (পুজ্য)
وإن شفاعتهنّ لتُرتجى
তাদের শিফাওয়াত সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর তরফ থেকে নাযিল হয়েছে ভেবে তা মক্কাবসীদের কাছে প্রকাশ করেন এবং পৌত্তলিক মক্কাবাসীরা খুব খুশি হয়ে যায় যে মুহাম্মাদ তাদের দেব দেবীর পুজা মঞ্জুর করেছেন । খুব শীঘ্রই ফেরেশতা জিবরীল সুরা নজমের আয়াত নিয়ে নাজিল হন এবং নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে ধিককার দিতে থাকেন যে কেন তিনি শয়তানের বানীকে আল্লাহর বানী মনে করে তার প্রচার প্রসার শুরু করে দিয়েছেন ।
সুরা নজমের ১৯-২৩ আয়াতগুলো নিম্নরুপঃ
أَفَرَأَيْتُمُ اللَّاتَ وَالْعُزَّى
তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে।
وَمَنَاةَ الثَّالِثَةَ الْأُخْرَى
এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে?
أَلَكُمُ الذَّكَرُ وَلَهُ الْأُنثَى
পুত্র-সন্তান কি তোমাদের জন্যে এবং কন্যা-সন্তান আল্লাহর জন্য?
تِلْكَ إِذًا قِسْمَةٌ ضِيزَى
এমতাবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বন্টন।
إِنْ هِيَ إِلَّا أَسْمَاء سَمَّيْتُمُوهَا أَنتُمْ وَآبَاؤُكُم مَّا أَنزَلَ اللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَانٍ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَى الْأَنفُسُ وَلَقَدْ جَاءهُم مِّن رَّبِّهِمُ الْهُدَى
এগুলো কতগুলো নাম বৈ নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষদের রেখেছ। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে।
এই ঘটনা সালমান রুশদি তার উপন্যাসে ব্যবহার করার জন্য মুসলমানদের কঠোর রোষানলে পতিত হয়েছিল । মুক্তমনা পাঠক শুনে বিস্মিত হবেন যে এই ঘটনা সুন্নি জগতের বিখ্যাত মুহাদ্দেশ ও সিরাত ইমামদের দ্বারা লিখিত ও সত্যায়িত হয়েছে । উদাহরণ স্বরুপ নিচের উৎস গুলো দেখুনঃ
১- সিরাতুন্নবি-ওয়য়াকাদি
২- সিরাতুন্নবি- ইবন সাদ
৩- সিরাতুন্নবি-আল-তাবারী
৪- সিরাতুন্নবি-ইবন ইসহাক
৫-তাফসির দূর আল মানসুর
৬-তাফসির ঘারাইব আল কুরান
৭- তাফসির আল কুরতুবি
৮-তাফসির মাঝহারি
৯- গুনিওয়াত্ত তালেবিন
১০-তাফসির আল কাসাফ
১১-আহকাম আল কুরান
১২- তাফসির আলা তাবারি
১৩-ইরশাদ আল শারি শারহে বুখারি (কাস্তালানি)
১৪- ফাতহুল বারী (হাজার আস্কালিন)
১৫- তাফসিরে জালালাইন
১৬- মিনহাজ আস সুন্নাহ ( ইবনে তামিওয়াহ)
১৭- মাজমা আল যাওয়াদি .
উপরে বর্নিত এই সমস্ত বরেণ্য ইমামরা শুধু স্যাটানিক ভার্সেস এর বিষদ আলোচনা করেই ক্ষান্ত হননি , বরং শয়তান নবী মুহাম্মদ কে সত্যিই ধোকা দিয়েছিল তার সহিহ সনদের সত্যায়ন্ও করেছেনঃ
১- আল বাজ্জার , আল তাবরানী , ইবনে মারদাএহ এবং আল-জিওয়া বলেছেন যে স্যাটানিক ভার্সেস এর ঘটনা বিশ্বস্ত সূত্রে (থিকা- সাইদ ইবনে জুবাইর-ইবন আব্বাস) বর্নিত হয়েছে ।
২- আল্লমা জালালুদ্দিন সুয়তি নিনোক্ত সহিহ সূত্রে স্যাটানিক ভার্সেস এর সত্যতা যাচাই করেনঃ
“ ইবন জারির , ইবনে মনজুর ও ইবনে আবি হাতিম সাইদ ইবনে জুবাইর হতে সহিহ ইসনাদে ইহা বর্নান করেন...... ”
“ ইবন জারির , ইবনে মনজুর ও ইবনে আবি হাতিম আবি আল আলিয়াহ হতে সহিহ ইসনাদে ইহা বর্নান করেন...... ”
“আবদ বিন হামিদ ও ইবন জারির ইউনুস হতে এবং সে ইবনে সাহাব হতে মুরসাল ইসনাদে বর্ননা করেন....’
৩-কাজি সানাউল্লাহ পানিপথি বলেনঃ
“ যাই হোক , উপের বর্নিত ঘটনা যা আল বাজ্জার , আল তাবরানী , ইবনে মারদাএহ ইবনে সাইদ হতে নিয়েছেন তা মুতাওঅতুর এবং গাওই ( বহুল ধারাবাহিক ও শক্তিশালী) ”
৪- ইবনে হাজার আসকালিন বলেনঃ
“ এই ঘটনার এত বহু সূত্রে বর্ননা আছে যে তাতে অবশ্যই কিছু সত্যতা আছে ” (ফাথুল বারী ৮:৪৩৯)
৫- ইবন আবু বকর হাইতামি এই ঘটনার মতন ও ইস্নাদকে সহিহ মনে করেন.
৬- ইমাম আবি তাইমিয়াহ তার মিনহাজ সুন্নাহ (২:৪০৯) বলেনঃ
“ সুরাতুল নজমের ব্যপারে যা ঘটেছিল তা আমাদের পূর্ববর্তি সালাফদের কাছে সুপ্রসিদ্ধ ছিল এবং নবী তা পাঠ করেছিলেন যদিও আল্লাহ তা রহিত করে দিয়েছিলেন ”
আশা করি পাঠকের আর বুঝতে বাকী নাই যে এই স্যাটানিক ভার্সেস এর মূল হোতা হচ্ছে সুন্নি জগতের এই সমস্ত বড় বড় ইমাম যারা আমদেরকে হাদিস শাস্ত্র, সিরাত আর শরিয়া শিক্ষা দিয়েছে ।
পরিশেষে সবার বিবেক নামক আদালতে আমার প্রশ্নঃ
স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস লিখার জন্য যদি সালমান রুশদির মৃত্যুদণ্ড জারি করা হয় তবে এই একই স্যাটানিক ভার্সেস প্রসার ও প্রচার করার জন্য এই সমস্ত সুন্নি ইমামাদের কি শাস্তি নির্ধারন করা উচিৎ ? তাদের দেয়া হাদিস , সিরাহ ও ইসলামের হুকুম আহকাম কতখানি নির্ভরযোগ্য?
বিঃদ্রঃ এতদ্ববিষয়ে সহিহ বুখারী থেকে কয়েকটা হাদিস উল্লেখ না করেই পারছিনা ।
ইমাম বুখারী তার সহিহতে বলেছেন যে ঘণ্টার শব্দ শয়তান থেকে আসে । কারো সাথে ঘণ্টা থাকলে ফেরেশতা তার সংগ ছেড়ে দেয় । এক কথায় ঘণ্টা ও ঘণ্টার শব্দ শয়তানের সৃষ্ট ।
একই সহিহতে তিনি বলেছেন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে যখন ওহী নাজিল হতো তখন মাঝে মাঝে তা ঘণ্টার মতো শোনাত এবং মাঝে মাঝে ফেরেশ তারা তার সাথে কথা বলার সময় তাদের আওয়াজ ঘণ্টার ন্যায় শ্রুত হতো ।
পাঠকরা এখন সহজেই দুই এ দুইয়ে চার মিলিয়ে নিতে পারেন যে আসলে বুখারী বোঝাতে চেয়েছে যে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে শয়তান ওহী নিয়ে আসত আর যাদের তিনি ফেরেশতা মনে করতেন আসলে তারা ছিল শয়তান ।
সহিহ বুখারী/৩৮/২২
৫৩৬৬। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘন্টা শয়তানের বাদ্যযন্ত্র।
সহিহ বুখারী ১/২
২. উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট ওয়াহী কিরূপে আসে?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ [কোন কোন সময় তা ঘণ্টা বাজার মত আমার নিকট আসে। আর এটি-ই আমার উপর সবচেয়ে বেদনাদায়ক হয় এবং তা শেষ হতেই মালাক (ফেরেশতা) যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই, আবার কখনো মালাক মানুষের রূপ ধারণ করে আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই।] ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি তীব্র শীতের সময় ওয়াহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওয়াহী শেষ হলেই তাঁর ললাট হতে ঘাম ঝরে পড়ত।
সহিহ বুখারী ৫৯/৬
৩২১৫. ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নিকট ওয়াহী কিভাবে আসে? তিনি বললেন, ‘সব ধরনের ওয়াহী নিয়ে ফেরেশতা আসেন। কখনো কখনো ঘণ্টার আওয়াজের মত শব্দ করে। যখন আমার নিকট ওয়াহী আসা শেষ হয়ে যায়, তখন তিনি যা বলেছেন আমি তা মুখস্থ করে ফেলি। আর এভাবে শব্দ করে ওয়াহী আসাটা আমার নিকট কঠিন মনে হয়। আর কখনও কখনও ফেরেশতা আমার নিকট মানুষের আকারে আসেন এবং আমার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই।’
মন্তব্য: ২