Alapon

মাওলানা মওদূদী রহ. কি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন?



উস্তাদ মওদূদীর রহ. এর বিরুদ্ধে একটা জঘন্য মিথ্যে অপবাদ হলো তিনি নাকি পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন। এই অপবাদ দিয়ে জামায়াতে ইসলামীকেও অনবদমিত করার চেষ্টা করা হয়।

জামায়াতে ইসলামী নামক সংগঠনটির অনেক যৌক্তিক সমালোচনা করা যায়। এবং করা উচিৎও। কারণ যৌক্তিক সমালোচনাই মানুষকে সঠিক পথে আনে। যদি মানুষট সঠিক হয় আরকি। কিন্তু মিথ্যে অপবাদ হলে সঠিক সমালোচনাও গুরুত্ব হারায়। মানুষ বা উক্ত দলকে সংশোধন করার ইচ্ছে থাকলে প্রথমত মিথ্যাচার ছাড়া অতিগুরুত্বপূর্ণ।

যা হোক, বলছিলাম মাওলানা মওদূদীর রহ. এর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার কথা। আপনি যদি ওনার রচিত “মাসলায়ে কওমিয়াত” (যেটা ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ নামে বাংলায় প্রকাশিত), পড়ে দেখেন, তাহলে দেখবেন যে, তিনি এটা লিখেছেনই যারা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে, তাদের বিরুদ্ধে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী সেকুলার মুসলিম নেতারা উক্ত বইটাকে বহুল প্রচারও করেছেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ভিত্তিকে মজবুত করছে এই বইটাই। তবে মাওলানা মওদূদী পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের অনেক ভ্রান্তির বিরুদ্ধেও কলম ধরেছেন। কথা বলেছেন। এখন প্রশ্ন হলো মাওলানা মওদূদীর বিরোধিতা কী নিয়ে ছিলো? জানেন তা? সেটার এক কথায় জবাব হচ্ছে— আপনি ওনার “ইসলামী বিপ্লবের পথ/ ইসলামী রাষ্ট্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়?” বইটা পড়ুন। ( আমি কমেন্ট বক্সে বইটির পিডিএফ লিংক দিয়ে দেব)।

তিনি মুসলমানদের হাতে একটা ভূখণ্ড আসলেই সেটা ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে যাবে, তা মনে করতেন না। বা এভাবেও বলা যায় যে, মুসলমানরা সংঘবদ্ধ হয়ে গেলেই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে না বলে মনে করতেন তিনি। এবং এটা প্রমাণিতও হয়েছে যে, মুসলমানদের হাতে রাষ্ট্র আসার পরেও তা ইসলামী রাষ্ট্র হয়নি। আল্লাহর দীন সেখানে কায়েম হয়নি। কিছু মুসলিম এক হয়ে একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া বা করা, তিনি এটাকে স্রেফ জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা বলেছেন। এবং বলেছেন জাতীয়তাবাদী চিন্তা দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় না।
মাওলানা মওদূদীর কথা হচ্ছে—
“আমরা যে বিশেষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, সে প্রকৃতির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সে রকম আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে । সে রকম ব্যক্তিগত, দলীয় ও সামাজিক চরিত্র , প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নেতৃত্ব এবং সামাজিক কার্যক্রম ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।”

এই কথাগুলোই ইসলামী বিপ্লবের পথ বইয়ের ভূমিকাতেও রয়েছে। কথাগুলো হচ্ছে এরকম :
“মুসলমানরা একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিল, যেখানে সর্বক্ষেত্রে কার্যকর হবে কুরআন সুন্নাহ বিধান। কিন্তু যারা এই রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তাদের মধ্যে না ছিল ইসলামের যথার্থ জ্ঞান, না ছিল ইসলামী চরিত্র আর না ছিল নিরেট ইসলামী সমাজ গড়ার মন মানসিকতা। তাদের মধ্যে মুসলিম জাতীয়তাবাদী একটি চিন্তা ছিল মাত্র। স্রেফ মুসলমানদের হাতে ক্ষমতা আসাটাকেই কোন একটি দেশ ইসলামী রাষ্ট্র হবার জন্যে যথেষ্ট বলে তারা ধরে নিয়েছিল। সে দেশের আইন কানুন, শিক্ষা সংস্কৃতি, অর্থনীতি রাজনীতি যা-ই হোক না কেন?
এটা ছিল একটা চরম ভ্রান্ত ধারণা। এই অবাস্তব পন্থায় কিছুতেই একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বা ইসলামী বিপ্লব সাধনের একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম পন্থা রয়েছে।”

এবার খেয়াল করুন, মাওলানা মওদূদী রহ. কীসের এবং কার বিরোধিতা করেছেন, আর ওনার প্রতি বিদ্বেষ থেকে সেটা কী বানিয়ে দেওয়া হয়েছে!
তিনি তো বিরোধিতা করেছেন তাদের, যারা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছিলো, তিনি তো বিরোধিতা করেছেন তাদের,যারা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে অথচ সেই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে।
তিনি এভাবেই বলেছেন যে, আপনারা একটা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, অথচ আপনাদের চরিত্রে, আচরণে, কাজেকর্মে, কর্মসূচিতে ইসলামের ছিটেফোঁটাও নেই। এই অবস্থায় কী করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে?
যাদের ভেতর ইসলামী চেতনা নেই, ইসলামের শিক্ষা নেই, ইসলামী চরিত্র নেই, এমন লোকদের হাতে ক্ষমতা গেলে অবস্থাটা কেমন হবে, সেটা বর্ণনা করে তিনি বলেন—
“মুসলিম দেশে এ ধরণের লোকদের হাতে নেতৃত্ব আসার অর্থ হচ্ছে আমরা ঠিক সে জায়গায়ই অবস্থান করবো, যেখানে অবস্থান করছিল অমুসলিম সরকার। বরং এ ধরণের মুসলিম সরকার আমাদেরকে তার চাইতেও নিকৃষ্ট অবস্থায় নিয়ে যাবে। কেননা, যে “জাতীয় রাষ্ট্রের” উপর ইসলামের উপর লেবেল প্রদর্শন করা হবে, ইসলামী বিপবের পথ রোধ করার ক্ষেত্রে তার দুঃসাহস হবে অসুমলিমদের চাইতেও অধিক। যেসব কাজে অমুসলিম সরকার কারাদন্ডের শাস্তি প্রদান করে, সেইসব ব্যাপারে এ ধরণের “মুসলিম জাতীয়তাবাদী সরকার” ফাঁসি ও নির্বাসনের শাস্তি প্রদান করবে। এরপরও এধরণের রাষ্ট্র ও সরকারের নেতারা বেঁচে থাকা অবস্থায় থাকবেন। ‘গাজী’ আর মরণের পর ‘রহমাতুল্লাহি আলাইহি’। এধরণের “জাতীয় রাষ্ট্র” ইসলামী বিপ্লবের পক্ষে সামান্যতম সহায়ক হবে বলে চিন্তা করাটাও মারাত্মক ভুল।”

এই যে ওপরের কথাগুলো, এগুলো পরে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হবার পরে বাস্তবেও ঘটেছে। কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করে বই লেখার কারণে তাঁকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। ইসলামী শাসনতন্ত্র ও সংবিধান রচনার আন্দোলন করার কারণে তাঁকে কারাগারে বন্দি হতে হয়েছে।

এসব কারণেই তিনি প্রতিষ্ঠা হবার আগেই খুব স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন :
“ইসসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার জন্যে প্রথমে এমন একটি আন্দোলনের প্রয়োজন, যার বুনিয়াদ নির্মিত হবে সেই জীবন দর্শন, সেই জীবনোদ্দেশ্য, সেই নৈতিক মানদন্ড এবং সেই চারিত্রিক আদর্শের উপর, যা হবে ইসলামের প্রাণশক্তির সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল।”


তিনি কখনোই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা না হোক, তথা পাকিস্তানের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেননি। বরং স্রেফ জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার কারণেই মুসলিম অধ্যুষিত একটা রাষ্ট্র— পাকিস্তান রাষ্ট্র— প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদানকারী নামকাওয়াস্তের মুসলিম ব্যক্তিবর্গ ও নেতৃবৃন্দের বিরোধিতা করেছেন। তাদেরকে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের সঠিক ফফর্মুলা বাতলে দিয়েছেন। তাদের আচার-আচরণ, চলন-বলন, নীতি-নৈতিকতা, চিন্তাধারা দেখে তিনি বলেছেন— লেবু গাছ লাগিয়ে যেভাবে আমের আশা করা যায় না, ঠিক সেভাবেই এক ধরনের রাষ্ট্রের তৎপরতা চালিয়ে অন্য ধরনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা বা আশা মূর্খতা, খামখেয়ালী, অসাড় ও অবাস্তব কল্পনা।

আর ঠিক এটাকেই কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক বানিয়েছে তিনি নাকি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন।

[বি: দ্র: কমেন্ট বক্সে ইসলামী বিপ্লবের পথ ও ইসলামী রাষ্ট্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, বই দুটোর পিডিএফ লিংক দেওয়া হয়েছে। ]

পঠিত : ৩১৬ বার

মন্তব্য: ৪

২০২৩-০৯-০৭ ১১:৫৫

User
রেদওয়ান রাওয়াহা

1. https://www.bjilibrary.com/144?fbclid=IwAR109zlK-M9KxWCpRxzzkoqb2yY3a3qJI1PZFZ4KAkS6xx7v1aml2MaI_14

2. https://www.icsbook.info/read-full-book/305?fbclid=IwAR3e7ht4gD4LvOuvz_ew-oLXPTvDfkcb8TahZ8x2LqlnovwTXShUUHZbxsg

submit

২০২৩-০৯-০৭ ২২:১৪

User
Abrar

মাওলানা মাওদুদীর মতো চিন্তাশীল জ্ঞানী আলেম যদি পাকিস্তান এর মতো একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেও থাকেন তাতে উনার দোষের কিছু না।

submit

২০২৩-০৯-০৭ ২২:৫১

User
রেদওয়ান রাওয়াহা :

দোষ গুণ বিষয় না। বিষয় হচ্ছে উনি যা করেননি, তা ওনার নামে চালিয়ে দেওয়া হবে কেন??

submit

২০২৩-০৯-০৭ ২৩:১৬

User
Abrar

উনি যে বিরোধিতা করেছেন তার প্রমানও যে নাই তা নয়।
https://fateh24.com/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%80-%E0%A6%93-%E0%A6%AE%E0%A6%93%E0%A6%A6%E0%A7%82%E0%A6%A6%E0%A7%80-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6/
https://jobayerbd.wordpress.com/2020/07/02/maulana-maududi-opposes-the-islamic-state/

submit