Alapon

হামাসের অভিযানে ২২ ইসরাইলি সেনা নিহত



ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। ‘অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম’ শীর্ষক অভিযানের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটি গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ডে পাঁচ হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছে। বড় ধরনের এই হামলার পর ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ ঘোষণা করেছে ইসরাইলের সশস্ত্র বাহিনী।

ফিলিস্তিনের ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল হামাস ইসরায়েলে আজ শনিবার ভোর থেকে আকস্মিক অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। হামলার পর এক ব্রিফিংয়ে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচট বলেছেন, হামাসের যোদ্ধারা প্যারাগ্লাইডার ব্যবহার করে স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে গাজা থেকে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছে।

ইসরায়েলের যেসব জায়গায় যুদ্ধ হচ্ছে তা হলো, এরেজ ক্রসিং, নাহাল ওজ, ম্যাগেন, কিবুতজ বিরি, রেহিম সেনা ঘাঁটি, জিকিম সেনা ঘাঁটি এবং ফার আজ্জ।

আইডিএফ-এর কাছে হামলার বিষয়ে আগাম সতর্কতা ছিল কিনা সে সম্পর্কে সাংবাদিকদের বারবার প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেন হেচট। ইসরায়েল কি যুদ্ধে আছে, আইডিএফ নিজেকে যুদ্ধের মধ্যে বিবেচনা করে কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে হেচট বলেন, ‘ইসরাইল যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকা একটি রাষ্ট্র।’

হামাস দাবি করেছে, তারা গাজা থেকে ইসরায়েলে পাঁচ হাজার রকেট ছুড়েছে। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুই হাজার ২০০ রকেট হামলার ঘটনা ঘটেছে।

টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতে এখন পর্যন্ত ২২ জন নিহত ও অন্তত ১০০ জন আহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যে একে ইসরায়েলের জন্য অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি বলে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ নিয়ে এরই মধ্যে যুদ্ধ প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। সেইসঙ্গে সেনা সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে।

দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল এ যুদ্ধে জিতবে। আজ সকালে হামাস বড় ধরনের ভুল করেছে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। প্রতিটি জায়গা থেকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। আমি সকলে ইসরায়েলিদের বলব তারা যেন নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে চলে। ইসরায়েল রাষ্ট্র এ যুদ্ধে জিতবে।

অন্যদিকে গাজাতেও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল বাহিনী। ফিলিস্তিন স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েল বাহিনীর হামলায় একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অনেকে। ইসরায়েল বলছে, গাজায় হামাসের স্থাপনা লক্ষ্য করে যুদ্ধ বিমান দিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া সুকুত উৎসবকে কেন্দ্র করে- যা শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার। সুকুত ইয়াহুদিদের জন্য পবিত্র একটি অনুষ্ঠান। সুকুতের ৫ম দিনে এসে কয়েকশ ইয়াহুদি জোর করে দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত পবিত্র আল আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই উগ্র ইয়াহুদিরা মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতরে বিভিন্ন জায়গাতে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে।

আন্তর্জাতিক আইন তো বটেই, ইয়াহুদি আইন অনুযায়ী আল আকসা মসজিদের কম্পাউন্ডের কোনো স্থানে ইয়াহুদিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই মসজিদের পবিত্র অবস্থান ও গুরুত্ব বিবেচনায় বহু আগে থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু ধর্মীয় ও আইনী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বেশ কিছু ইয়াহুদিরা বিগত কয়েকদিন ধরেই মসজিদের পূর্ব গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকে তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করে।

ইসরায়েলী পুলিশ তাদেরকে কোনো বাধা না দিয়ে বরং ইয়াহুদিরা মসজিদের ভেতর থাকা অবস্থায় ফিলিস্তিনের মুসলিমদের প্রবেশের জন্য বয়সসীমা নির্ধারন করে দেয়। বিশেষ করে ফিলিস্তিনি যুবকদেরকে কোনোভাবেই এ সময়ে মসজিদে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, গেইটের পাশে মুসলিমদের যে কয়েকটি দোকান ছিল সেগুলো ইসরায়েলী আর্মিরা জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়। এমনকী মসজিদের নিয়মিত স্টাফদেরকেও এ সময়ে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। মসজিদে দর্শনার্থী হিসেবে আসা খৃষ্টানদেরকেও এই উগ্র ইয়াহুদিদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়।

এর আগে গত সপ্তাহেও ইসরাইলী পুলিশেরা আল আকসা মসজিদের ভেতরে ঢুকে মুসুল্লীদের গ্রেফতার করে। এর আগে ২০২১ সালেও ইয়াহুদি পুলিশেরা এভাবেই মসজিদে ঢুকে গ্রেফতার অভিযান চালিয়েছিল।

আল আকসায় ইয়াহুদিদের অন্যায্য প্রবেশ নিয়ে ফিলিস্তিনিরা গত কয়েকদিন ধরেই ক্ষোভে ফুসছে। তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে হামাস গত কয়েকদিনে ইসরাইলে ব্যাপক রকেট হামলা চালিয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি রকেট হামলার কথা হামাস জানিয়েছে। ইসরাইলীরা আড়াই হাজার রকেট মোকাবেলার কথা স্বীকারও করেছে। হামাস শুধু ইসরাইল নয়, বরং সৌদি আরবসহ আরো যেসব আরব দেশ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা ভাবছে তাদেরকে বার্তা দেয়ার জন্যই এ হামলা চলছে বলে জানিয়েছে হামাসের মুখপাত্র গাজি হামাদ।

হামাস বলছে তারা দখলদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। আর নেতানিয়াহু এরই মধ্যে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের কথা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিন সীমান্ত থেকে ভেতরের দিকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে ইসরাইল। ইউক্রেন এরই মধ্যে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। হামাস এবার শুধু রকেট হামলা চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি বরং চেকপোস্ট ভেঙে তারা ইসরাইলের নিরাপত্তা চৌকি দখলে নিয়েছে। কয়েকশ ইসরাইলী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত হয়েছে ২০ জনের বেশি ইসরাইলী সেনা। কাসসাম ব্রিগেড ইসরাইলী নিরাপত্তা পোস্ট দখলে নেয়ার ভিডিও প্রকাশ করেছে। আল কাসসামের পাশাপাশি হিজবুল্লাহও এই আক্রমনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনকে এই হামলা পরিচালনায় সহায়তা করে যাবে।

হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া চলমান লড়াইকে আল আকসা রক্ষার লড়াই হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের সাহসী ভাইয়েরা তাদের জীবনের সবচেয়ে সোনালী সময়গুলো আল আকসার মুক্তির জন্য ব্যয় করছেন। এই ঐতিহাসিক মুহুর্ত, এই ঐতিহাসিক লড়াই সবটাই আমাদের প্রিয় আল আকসা, আমাদের পবিত্র সব স্থাপনা সংরক্ষণের জন্য এবং সর্বোপরি আমাদের মজলুম কারাবন্দীদের মুক্তির জন্য।

হামাস প্রধান বলেন, দুষ্কৃতিকারী গত কয়েকদিন ধরেই আমাদের সম্মানিত আনবিয়াদের কবর এবং তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানে এসে তাদের ধর্মীয় আচারাদি পালন করছে। যদি সারা পৃথিবী এগুলো দেখেও এরকম চুপই থেকে যায়, তারপরও আমরা কখনোই নীরব থাকবো না ইনশাআল্লাহ।”

পঠিত : ২৭০ বার

মন্তব্য: ০