Alapon

ফিলিস্তিনের কয়েকটি খবর এবং আমার মতামত




আপনারা জানেন বিশ্বসন্ত্রাসী আমেরিকা আরব অঞ্চলে আরেক সন্ত্রাসী ও দখলদার ইয়াহুদিদের সাহায্যার্থে অস্ত্র ও অর্থসরঞ্জমাদি পাঠিয়েছে। এরপর জার্মান তাদের ড্রোন দিয়েছে।

ফ্রান্স অধিবাসী নাগরিকরা আজকে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং  ইসরাঈলিদের সন্ত্রাসী ও মানবতাবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে  মিছিল-সমাবেশ করেছিল। কিন্তু সেই মিছিল-সমাবেশ ফ্রান্সের প্রশাসন পণ্ড করে দেয়। বিক্ষোভকারীদের গুলি-টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে এবং কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটকও করেছ।

বর্তমানে প্রায় পুরো পশ্চিমা জগতের চিত্রই এটি। সবাই সন্ত্রাসী ইসরাঈলিদের প্রতি সহমর্মী আর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের প্রতি আগ্রাসী।

কিন্তু এর বিপরীতে মুসলিম বিশ্বের চিত্র দেখুন, কেমন দেখতে পাচ্ছেন? অবশ্যই হতাশাজনক। পুরো মুসলিম বিশ্বের চিত্র বাদ দিয়ে কেবল আরবের চিত্রটাই দেখুন। তারা কি ফিলিস্তিনের নিরীহ জনগণের পক্ষাবলম্বন করতে পেরেছে? ইসরাঈলিদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? নামকাওয়াস্তেও কোনো হুঙ্কার দিয়েছে? উত্তর: না।

ইরান আরব রাষ্ট্র না হয়েও এবং শিয়া হবার পরও সামান্য হলেও কিছু ভূমিকা রেখেছে।

আর বাকী সবাই ইসরাঈল ও আমেরিকার কাছে পদানত। তাদের যেসব সামরিক সরঞ্জাম আছে, সেগুলোর ৫-১০% করে গাজাবাসীর জন্য পাঠালেও ইসরাঈলি সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করা হামাসের জন্য আরো সহজ হতো। দখলদারদের কবর রচনা না হলেও পারতপক্ষে তারা কিছুটা হলেও পিছু হটতো। কিন্তু না, কোনোভাবেই সহযোগিতা পাচ্ছে না ফিলিস্তিনের অধিবাসীরা।

এছাড়া সামান্য কিছু খাদ্য এবং ঔষধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র গাজার উদ্দেশ্যে মিশর প্রেরণ করলেও ইহুদিবাদীদের হুমকি ধামকি ও বিমান হামলায় সেই সহায়তাটুকুন ফেরত নিতে নিয়ে যায় মিশর।

এর বাহিরে এখন জনগণ যদি ফিলিস্তিনের মুজাহিদদের জন্য কিছু করতে চায়, সেখানে আরবের মুনাফিক রাষ্ট্র নেতারা সেটায়ও বাধ সাধে। দমনপীড়নের আশ্রয় নেয়।

যেমন ফিলিস্তিনি মুজাহিদদের সাথে যোগ দিতে জর্ডানের জনতা যখন সীমান্ত অভিমুখে রওনা করেছে, তখন জর্ডানের বাদশা আব্দুল্লাহ তাদেরকে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রতিহত করেছে। গুলি-টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।

দেখুন, এই সেনাবাহিনী, এই গুলি কার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত  হবার কথা ছিল? অত্যাচার, জুলুমবাজ, নিপীড়ক ও ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবার কথা ছিলো না? কিন্তু হচ্ছে কার বিরুদ্ধে? যারা নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তাদের বিরুদ্ধেই। তাহলে এমন কোমর ভাঙা ধ্বজভঙ্গ মুসলিম নেতা ও সেনাবাহিনীর প্রয়োজনটা কী?এ হচ্ছে আরব নেতাগুলো ও রাষ্ট্রের অবস্থা।

এবার দেখুন, মধ্যপ্রাচ্য বা আরব অঞ্চলজুড়ে কি ইসলামিক মুভমেন্ট বা জিহাদি আন্দোলনগুলো নেই? আরো স্পষ্ট করে বললে আরব-বিশ্বে কি ইখওয়ান ধারার সংগঠন এবং আল-কায়দা ধারার আন্দোলনগুলো নেই?

অবশ্যই আছে। যেভাবে গাজার সকল প্রতিরোধ আন্দোলন এক হয়েছে, সেভাবেই যদি ওই অঞ্চলের সব ইসলামিক মুভমেন্ট এক হয়ে তাদের একটা অংশ চুপিচুপি ফিলিস্তিনে চলে আসে, কেমন হবে বিষয়টা?

আমি তো মনে করি সকলেরই এখন বাইতুল মাকদিসকে মুক্ত করার মিশনে ঝাপিয়ে পড়া উচিৎ। যেহেতু এই আন্দোলনগুলো স্ব স্ব জন্মভূমিতে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাচ্ছে না, বা আন্দোলনকে তাদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে পারছে না, সেহেতু আপাতত একটা বড় টার্গেট হতে পারে ফিলিস্তাইন বা আল আকসাকে দখলদার ইহুদি সন্ত্রাসীদের থেকে মুক্ত করা।

সবাই যেতে পারবে না ঠিক, কিন্তু বড় একটা অংশকে যোদ্ধা হিসেবে তৈরি করে যদ্দুর সম্ভব অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পাঠানো উচিৎ। এতে সেখানের মুজাহিদদের শক্তি কিছুটা হলেও বাড়বে হয়তো।

এমনকি আমি মনে করি এখন হামাসেরও গেরিলা যুদ্ধের দিকে আরো ভালোভাবে মনোনিবেশ করা উচিৎ। যেভাবে আফগানিস্তানে তালিবান মার্কিনীদের বিরুদ্ধে করেছে। যেভাবে পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙে আজকের বাংলাদেশ তৈরির সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানিরা করেছে।

ইসরাঈলিদের জায়গায় জায়গায়, প্রত্যেকটা ক্যান্টমেন্টে বোমা মিসাইল ও রকেট হামলা পরিচালনা করা উচিৎ। প্রয়োজন সাপেক্ষে ইস্তেশহাদি/ফিদায়ী হামলাও পরিচালনা করা উচিৎ। এটা দিনদিন বাড়িয়ে তা  একেবারে ইসরাঈলের ভেতরের শহরগুলোতেও নিয়ে যাওয়া উচিৎ।

এতে ইসরাঈলিদের মধ্যে আতঙ্ক আরো তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়বে, অগণিত ইহুদি নিরাপত্তার অভাবে দখলকৃত অবৈধ রাষ্ট্রটি ত্যাগ করবে। অবৈধ রাষ্ট্রটিতে বিশ্বের বিনিয়োগও কমবে। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়বে।

এখন কথা উঠবে, জবাবে ফিলিস্তিনের ওপর কি প্রতিশোধ কি নেওয়া হবে না?
আমার কথা হলো নেওয়া তো হচ্ছেই।

ফিলিস্তিনের মানুষেরা কোন দিনটিতে সুখে আছে? কোন দিনটায় সন্ত্রাসী ইসরাঈলিদের বর্বরতা থেকে নিরাপদ আছে? নেই তো।

তারা তো মরেই। সব কিছু তারা তো হারাতেই আছে। তাদের তো আর হারাবার কিছু নেই। এখন থেকে তাদের যেই পরিণতি হচ্ছে, সেই একই পরিণতি যদি দখলদার ইহুদি সন্ত্রাসীদেরও হয়, এতে লস কী? ফিলিস্তিনিরা এতদিন যা ভোগ করেছে, ইসরাঈলিরাও তা ভোগ করুক।
আমি মনে করি এ দিকেই মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক মুভমেন্টগুলোর নজর দেওয়া উচিৎ।

তবে সৌদি-কাতার এসব রাষ্ট্রের ইখওয়ানিদের উচিৎ সেসব দেশের সরকারের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা। কাতার এখন যেভাবে ইসলামিক মুভমেন্টগুলোকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়, সহযোগিতা করে, নিজেদের অদূরদর্শিতায় রাজতন্ত্রের সাথে খোঁচাখুচিতে সেটা যেন বন্ধ না হয়। আর সৌদি আরব পূর্বে যেভাবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে স্বোচ্চার ছিল, ইসরাঈলিদের বিরুদ্ধে বজ্রকঠিন ছিল, ইসলামিক মুভমেন্টগুলোকে সহযোগিতা করেছে, সেই অবস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করা। এটাই হবে আপাতত কাজের কাজ।

এগুলো কেবল আমার মতো একেবারেই অখ্যাত  সাধারণ একটা মানুষের মত। জানি, আমার চেয়েও অধিক ভাবনাওয়ালা তুখোড় মেধাবী লোক আছে হামাস ইখওয়ান কিংবা আল কায়দায়  মানে গোটা আরব অঞ্চলের সবগুলো মুভমেন্টে। তবুও নিজের মনে ঘোরাফেরা করা কথাগুলো বললাম আরকি। উপকারী হলে হয়তো ছড়িয়ে যেতেও পারে। হতে পারে গ্রহণযোগ্যও। কিন্তু বাস্তবতা কি এটা আদৌ গ্রহণ করার মতো বিষয়? 

~রেদওয়ান রাওয়াহা
১৩.১০.২৩

পঠিত : ১৫২ বার

মন্তব্য: ০